মাটিতে শুয়ে শুয়ে আকাশের তারা গুনছে সুমন। এতো সুন্দর !
কালপুরুষের দিকে এগোল। তাঁর কোমরবন্ধনীতে তিনটা তারা, এন্ড্রোমিডা, ভারগো। অতো চেনে না সুমন। শুধু গুণে যেতে লাগল।
একশটা তারা গোণা শেষ হচ্ছে, এ সময় ঘাড়ের কাছে মৃদু হাঁটার শব্দ। ঘাড় না ঘুরিয়েই শুনতে পেল। তাকালো না। কারণ কে এসেছে সে জানে।
-কি করছো?
-তারা গুণি।
-তাই? ক’টা গুণলে?
-এই সেঞ্চুরি করলাম।
ধীরে ধীরে নারীকন্ঠ তার পাশে বসে পড়ে। পরণে শাড়ি। শাড়ির রঙ নীল। সুমনের খুব প্রিয় রঙ নীল।
-তোমাকে নীল শাড়িতে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে... নীলা।
-তাই? তোমার জন্যেই পড়েছি। সাথে নীল চুড়ি।
ঝনঝন করে কাঁচের চুড়ি বাজিয়ে সুমনকে শোনালো নীলা। তারপর সুমনের কপালে এঁকে দিল একটি চুমু। যে ঠোঁটে আগুনের রঙ, ঠোঁটটাও উত্তপ্ত আগুনের মতন। চোখ বুজে সুমন অনুভব করল সেই চুম্বন-স্পর্শ।
ফিসফিস করে তাঁর কানে নীলা বলল , “ আমার সকল প্রেম তোমায় দিয়েছি সুমন, হৃদয়ের জমানো সব অনুভূতি আর ভালোবাসা তোমায় দিয়েছি। আমায় ছেড়ে যেও না”।
এরপর সুমনের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল সে।
-একটা গান শোনাবে।
-শোনাবো।
-গাও।
মৃদু কন্ঠে গাইতে লাগল নীলা,
“কতবারো ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া
তোমারো চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া
কতবারো ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া।
চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি
গোপনে তোমারে,সখা,কত ভালোবাসি”।
আকাশের তারারাও যেন গাইতে লাগলো তাঁর সাথে সাথে। সেই মৃদু সংগীত শুনতে শুনতে চোখ বুজলো সুমন।
যখন ঘুম থেকে উঠলো তখন আর নীলা নেই তাঁর পাশে। হঠাৎ বেজে উঠল তাঁর সেলফোন।
নাম্বারটা দেখল সুমন। বাইরের। ইউ এস এ।
- হ্যালো।
-হ্যালো! সুমন! আমি নীলা!!
- বল, কী খবর?
- এইতো ভালো। তোমাকে অনেক মিস করছি।
- আমিও অনেক মিস করছি।
একটু চুপ থেকে নীলা বলল,
-সুমন, একটা কথা বলি?
- বল।
- আজকেও সেদিনের মতন স্বপ্ন দেখেছি।
- কী স্বপ্ন?
- আমি নীল শাড়ি পরে, কাঁচের চুড়ি পরে তোমার পাশে। তোমাকে গান শুনাচ্ছি। দিনের বেলায় ঘুমের ভেতর স্বপ্ন।
- তাই? হতেও পারে তুমি আমাকে গান শুনিয়ে গিয়েছ। সাবকনসাস মাইন্ডে যে কোন কিছু ঘটতে পারে।
- যাহ। তুমি না আগের মতই আছো। আজব সব কথা বল। কিন্ত রোজ রোজ এই স্বপ্ন দেখার মানে কী?
- সবকিছুর মানে খোঁজার কি দরকার নীলা?
- আচ্ছা।
চোখদুটো আবার বুজলো সুমন। জানে আগামীকালও নীলা যথাসময়ে এসে পড়বে। তাকে স্পর্শ করে যাবে। কারণ সে নিজেই তাকে টেনে এনেছে। মানুষের মন খুব অদ্ভুত। শরীরকে আনতে না পারলেও মন দ্বিতীয় সত্তা তৈরি করতে পারে। সুমনের টানে নীলা সেই দ্বিতীয় সত্তা তৈরি করেছে। যেখানে আসল সত্তা কখনো সুমনকে “পছন্দ করি” এটুকু বলেনি, সেখানে আরেক সত্তা সবসময় “ভালোবাসি, ভালোবাসি” বলে যায়।
একটা নিঃশ্বাস ফেলে সুমন। হালকা স্বরে এবার গুনগুণ করে নিজেই গান ধরে-“গোপনে তোমারে কতো ভালোবাসি।।