somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : চক্র

০২ রা মে, ২০১৬ দুপুর ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অভ্যেসটা হঠাৎ করেই বদলে গেছে। যদিও অভ্যেস হঠাৎ করে বদলানোর বিষয় না। তবুও বদলে গেছে। ভোর হয় সকাল দশটায়। হাই তুলে আরমোড়া ভাঙতে ভাঙতে এগারোটা বেজে যায়। তারপর ফ্রেশ হয়ে নাশতা করতে করতে ঘড়ির কাঁটা বারোটার ঘরে চলে যায়। জীবন ঘড়িতেও বারোটা বাজতে থাকে অলক্ষ্যে।

পরোটা আর ডিমভাজী অর্ডার করেছিলো রুমেন। পিচ্চি ছেলেটা রুটি আর হালুয়া দিয়ে গেছে। ছেলেটা ভীষণ মায়াবী। মডার্ন ভাষায় বলতে চাইলে ‘কিউটের ডিব্বা’! ছেলেটার মুখের দিকে তাকালেই বুকের ভেতরে অসহ্য একটা যন্ত্রণা হয় রুমেনের। অতটুকুন একটা বাচ্চা শুধুমাত্র পেটের দায়ে খাবারের প্লেট টানাটানি করছে। পেটের দায় পরিশোধ করা সহজ বিষয় নয়। হালুয়া জিনিসটা বরাবরই অপছন্দ রুমেনের। হালুয়া বলতে চিনি আর পানি দিয়ে সুজি সেদ্ধ! মুখে দিলেই সেকেন্ডের মধ্যে গা গুলিয়ে ওঠে। তবুও আজ হালুয়া গলধঃকরণ করার জন্য মানুষিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে রুমেন। জীবনের কত ক্ষেত্রেই তো অন্যের পছন্দ নির্ধিধায় মেনে নিতে হয়। হালুয়াটাকে মেনে দিতে দোষ কি!

কাঠ-ফাটা রোদ না বলে মগজ-ভাজা রোদ বলাটাই যুক্তিযুক্ত। একটা ছোট আজ গাছের ছায়ায় কয়েকটা কুকুর জিহ্বা বের করে হাফাচ্ছে। বড় পুকুরের রাস্তাটা বলতে গেলে ফাঁকাই। এই মগজ-ভাজা রোদেই রুমেন হাঁটতে থাকে রুমেন। টগবগিয়ে উঠুক আজ রুমেনের মগজ। মগজের সাথে বাষ্প হয়ে উড়ে যাক মাথাভর্তী যন্ত্রণাগুলো। ওগুলো আজকাল খুব ভোগাচ্ছে রুমেনকে।

প্যান্টের পকেটে মোবাইলটা বিরামহীনভাবে কাঁপতে থাকে। বিরক্ত হয়ে হয়ে মোবাইলটা বের করে হাতে নেয় রুমেন। মোবাইল ক্রিনে দুটো মায়াবী চোখ ভাসছে। ওগুলো সীমার চোখ। পলকহীনভাবে চোখ জোড়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে রুমেন। তারপর সীমার চোখ সমেত মোবাইলটাকে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ছুড়ে মারে সে। পুকুরের মাঝামাঝী গিয়ে পরে মোবাইলটা। পুকুরেরগর্ভে চুমচুম করে ডুবে যায় সীমার মায়াবী চোখ। পুকুরপাড়ে-পাড়ে সূর্য তাপে গলতে থাকে রুমেনের মগজ। শুধু মগজ না, মগজের সাথে আরো অনেক কিছু!

- তমাল হাসান
২৫/০৪/২০০৮
রাত ২:২৫

নীল মলাটের ডায়েরিটায় আর বিশেষ কিছু লেখা নেই। একটা দীর্ঘঃশ্বাস ফেলেন তমাল হাসান। একসময় রুমেন ছদ্মনামে ডায়েরি লিখতেন তিনি। দশ বছর আগের কিছু স্মৃতি, কিছু অব্যক্ত আবেগ মলাটের কাফনে মমি হয়ে আছে। তমাল সাহেবের কল্পলোকেই শুধু আবেগগুলো প্রাণ ফিরে পায়, জীবন্ত হয়ে ওঠে। ডায়েরিতে তারিখটা আরেকবার দেখে নেন তমাল হাসান। ২৫ এপ্রিল, ২০০৮। সেদিনই শেষ ডায়েরি লিখেছিলেন তিনি।

আজ ২৫ এপ্রিল, ২০১৮! দশ বছর আগের অভ্যেসটা আর নেই। বদলে গেছে। কর্মজীবনে এলে অভ্যেসগুলো স্বেচ্ছায় বদলে যায়। বারোটা বাজার আগেই চোখে ঘুম চলে আসে, আবার সাতটা বাজার আগেই পালিয়ে যায়। ছাত্রজীবনে যে রুটিনের ধার ধারেননি তমাল হাসান, আজ অলৌকিকভাবে সেই রুটিনটাই জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে তার।

গভীর রাতে ফোন করেছিলো মেয়েটা। ঘড়ির কাটায় তখন গুণে গুণে একটা বেজে ছত্রিশ মিনিট। তমাল সাহেবের ঘুম জড়ানো কণ্ঠ শুনে বিব্রত হয়েছিলো সে। কাঁপা কাঁপা গলায় কিসব যেনো বলছিলো মেয়েটা।
- ঘুমুচ্ছিলেন? সরি!
- না না সমস্যা নেই। কে বলছেন?
- একেবারেই অপরিচিত কেউ। বলতে পারেন আপনার মঙ্গলকামী!
- কিছু বলবেন?
- না। শুধু একটা অনুরোধ করবো। যদি আপনি অভয় দেন
- নিসঙ্কোচে করুন
- আপনি বিয়েটা করবেন না।
- কেনো?
- মেয়েকে তো আপনি ঠিকভাবে জানেন না। আমার বান্ধবী। আমি জানি। স্বভাব ভালো না মেয়ের। এর চেয়েও বড় কথা ওর রিলেশন আছে। গভীর রিলেশন। সাত বছরের!
- জানি
- মেয়ে আপনার থেকে বারো বছরের ছোট। আপনার পাশে মানাবে না।
- সেটাও জানি
- আপনি কিছুতেই সুখী হবেন না। ও কোনদিনও আপনাকে ভালোবাসতে পারবে না।
- দেখুন সুখটা আপেক্ষিক। আর মানুষ খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারে। ভাত না পেলে সে রুটি খায়।
- আমাকে দর্শন বুঝাতে আসবেন না। প্লিজ আপনি একবার ভেবে দেখুন। আপনার কোয়ালিফিকেশন ভালো, আপনি অনেক ভালো মেয়ে পাবেন।
- আচ্ছা ভেবে দেখবো। আর কিছু বলবেন?
- না। আমার যা বলার বলেছি। এখন সিদ্ধান্ত আপনার।
- শুভ রাত্রী। মঙ্গলবার্তার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন

শুভ রাত্রীর বদলে বিপ্‌ বিপ্‌ শব্দে কলটা কেটে যায়। কল ডিউরেশন তিন মিনিট বারো সেকেন্ড। লীরা হাসনাত। তমাল হাসানের হবু স্ত্রী। নাম্বারটা সেভ করাই ছিলো। কথা বলার জন্য দিয়েছিলেন লীরার বাবা। আত্নতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে আবার চোখ বোজেন তমাল হাসান।

শেরওয়ানী আর পাগড়ী পড়ে সুসজ্জিত মাইক্রোবাসের ব্যাকসিটে বসে আছেন তমাল সাহেব। লীরা হাসনাত নামের স্বল্পবয়সী মেয়েটা পাশে বসে নিঃশব্দে কাঁদছে। মেয়েটার দীর্ঘদীন ধরে যত্ন করে সাজানো স্বপ্নের গাড়ি দিক পরিবর্তন করে হঠাৎ অন্যদিকে ছোটা শুরু করেছে। তমাল সাহেব মিটিমিটি হাসছেন। একদিন লীরা হাসনাতও হাসবেন। সীমা যেমন এখন খিলখিলিয়ে হাসে ঠিক সেভাবে।

ছবি- ইন্টারনেট

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৬ দুপুর ১:২২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×