পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গল্প, মাত্র ৬ শব্দের....
সবচেয়ে ছোট গল্পগুলোর মধ্যে বিখ্যাত একটি হলো আর্নেস্ট হোমিংওয়ের গল্পটি। মাত্র ছয় শব্দের গল্প। গল্পটা প্রায় সকলেরই জানা।
হোমিংওয়ে গল্পটা লিখেছিলেন বাজি ধরে। এখন মনে প্রশ্ন জাগছে নিশ্চয়ই! কার সঙ্গে বাজি ধরেছিলেন হ্যামিং? প্রচলিত আছে বাজি ধরেছিলেন অপর দুই মহারথীর সঙ্গে।
এক গ্রীষ্মে বোটে করে মাছ ধরতে গিয়েছেন তিনজন। হোমিংওয়ে, ফিদেল কাস্ত্রো আর চে গুয়েভরা। অনেকক্ষণ বড়শি নিয়ে বসে থেকেও কোনো মাছের দেখা না পেয়ে বিরক্ত হয়ে উঠছেন সবাই। বিরক্তি কাটাতে চে গুয়েভরা বললেন- আরে ধূর! মাছে খায় না তো কী হয়েছে? আমরা তো খেতে পারি।
বলতে বলতে তিনি স্ন্যাক্সের প্যাকেট খুলে খাওয়া শুরু করলেন। হোমিংওয়ে আর ক্যাস্ত্রোই বা আর বসে থাকবেন কেন। খাওয়া শুরু করলেন তারাও। খেতে খেতে ফিদেল কাস্ত্রো হোমিংওয়েকে বললেন- তা কী এমন গল্প লেখো? এখন একটা গল্প লিখে দেখাও তো। হোমিংওয়ে বললেন- এখন? এই মাঝ নদীতে গল্প লিখব কী করে? নোটবুক খাতাপত্র তো সব রেখে এসেছি।
চে গুয়েভরা তখন খাওয়া শেষে টিস্যু পেপারে হাত মুছছিলেন। হাত মোছা বন্ধ করে তিনি টিস্যু পেপারটা হোমিংওয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন- এই নাও টিস্যু পেপার। ইচ্ছে থাকলে এখানেও লেখা যায়। হ্যামিংওয়ে হাত বাড়িয়ে টিস্যু পেপারটি নিলেন। খাওয়া বন্ধ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন নদীর শান্ত স্বচ্ছ জলের দিকে। তারপর লিখলেন ছয়টি শব্দ।
এই ছয়টি শব্দ পরবর্তীতে পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত ক্ষুদ্র ছোট গল্প হয়ে গেল। তিনি লিখলেন- 'ফর সেল, বেবিস সুজ,নেভার ওরন।' অর্থ্যাত্, 'বিক্রির জন্য, শিশুর জুতো, ব্যবহৃত নয়'।
গল্পটির ভাবার্থ এইরকম- বাচ্চার জন্য জুতো কেনা হয়েছিল। তবে সেই বাচ্চাটি পৃথিবীর আলোই দেখেনি। মায়ের গর্ভেই শিশুটির মৃত্যু হয়। ছয় শব্দে গর্ভে মারা যাওয়া শিশুর জন্য মায়ের অনুভূতি! এ ধরণের গল্পকে বলা হয় 'ফ্ল্যাশ ফিকশন' বা অণুগল্প। মাইক্রো শর্ট স্টোরি নামেও ডাকা হয় এসব গল্পকে। গল্পটি দারুণ পছন্দ হলো ফিদেল কাস্ত্রো এবং চে গুয়েভরা দু'জনেরই। ক্যাস্ত্রো সঙ্গে সঙ্গে ১০ ডলার বের করে বকশিশ দিলেন হোমিংওয়েকে।
তবে এই গল্পটার রচনা নিয়ে আরো একটি গল্প চালু আছে। হোমিংওয়ে একদিন তার অফিসের ছয় কলিগের সঙ্গে গল্প করছিলেন। হঠাত্ তিনি বললেন- মাত্র ছয় টি শব্দ দিয়ে তিনি একটি চমত্কার গল্প লিখতে পারবেন। তার কলিগরা হেসেই উড়িয়ে দিলো। বললো, ঠিক আছে। ১০ ডলারের বাজি। হ্যামিংওয়ে গল্পটা লিখলেন এবং বাজিতে জিতে গেলেন।
মার্কিন সাহিত্যিক আর্নেস্ট হোমিংওয়ে ১৯৫৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন। তিনি সাতটি উপন্যাস, ছয়টি ছোট গল্প সংকলন এবং দুটি নন ফিকশন গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। তার মৃত্যুর পর আরো তিনটি উপন্যাস, চারটি ছোট গল্প সংকলন এবং তিনটি নন-ফিকশন গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছিল। তার প্রকাশিত গ্রন্থের অনেকগুলোই আমেরিকান সাহিত্যের চিরায়ত বা ক্লাসিক গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।
পৃথিবীর আরেকটি ক্ষুদ্রতম গল্প বা ফ্ল্যাশ ফিকশনের কথা জানেন কি? ‘নক’ নামের এ গল্পটির লিখেছিলেন ফ্রেড্ররিক ব্রাউন। এটি এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ভূতের গল্প। এ গল্পের লেখক ফ্রেড্ররিক ব্রাউনও ছিলেন আমেরিকান। গল্পটি নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছা করছে? গল্পটি হলো-
'দ্য লাস্ট ম্যান অন আর্থ সেট আ রুম। দেয়ার ওয়াজ আ নক অন দা ডোর'। এর অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, পৃথিবীর সর্বশেষ মানুষটি একাকী একটা রুমে বসে আছেন। হঠাত্ কে যেন তার দরজায় নক করল।
লাইনটি পড়তে পড়তে আপনার মনে হয়তো অনেক প্রশ্নের উদয় হয়েছে? ভাবছেন পৃথিবীর শেষ মানুষ… তাহলে দরজায় নক করলে কে? এজন্যই এই লাইন দুটি জায়গা করে নিয়েছে ছোট গল্পের তালিকায়।
(কপি, তবে এডিট করে বড়ো করেছি)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩