somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জুল ভার্ন
এপিটাফ nnএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

পালানোর গল্প---------

২০ শে জুন, ২০২২ সকাল ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পালানোর গল্প---------

ছেলেবেলায় আমি বেশ কয়েক বার বাড়ি পালিয়ে ছিলাম...সেইসব ঘটনা ব্লগে এবং ফেসবুকের আমার আগের আইডি তে লিখেছি। আমাকে একজন শিক্ষক পড়াতেন...যার কথা আগেও একাধিক বার বলেছি। আমার ঘর পালানো প্রসংগে সেই গৃহ শিক্ষক একটা গল্প বলেছিলেন। গল্পটা এমন....

ভীষণরকম ভীতু একটা লোক। সব সময় মৃত্যু ভয় তাড়া করে তাকে। ভয় এমনই যে ঘরেও শোয় না, পাছে ভূমিকম্প হয়, ঘর ভেঙে চাপা পড়ে মরে।

সেই ভীতু মানুষটা একদিন উঠোনে খাটিয়া পেতে শুয়ে। মাথার উপর টলটলে রাতের আকাশ। ঝলমল করছে চাঁদ, তারারা। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিল লোকটা, হঠাৎ একটা কথা মনে এলো তার। যদি আকাশটা ভেঙে পড়ে.....তবে?

আকাশের নীচে থাকাও বিপদ! সুতরাং সে ছুটতে ছুটতে এবং হাঁটতে হাঁটতে আকাশের নীচ থেকে পালাতে চাইল।

দিন যায়।
মাস যায়।
বছর যায়।
আকাশের শেষ নেই। হাঁটতে হাঁটতে সে পৌঁছাল এক জনহীন প্রান্তরে। সেখানে এক সন্যাসী একটা গাছের নীচে বসে ধ্যানে মগ্ন। ভীতু লোকটা সেই সাধুর পাশেই বসল।
সান্যাসী চোখ খুললেন। ভীতু লোকটাকে প্রশ্ন করলেন,
"তোমার কী সমস্যা বৎস?"

লোকটা তার ভয়ের কারণ খুলে বলল, "এই আকাশটা এত বড় যে হাজার হাজার মাইল পেরিয়েও এর নীচ থেকে বেরোতে পারলাম না। এখন আকাশ চাপা পড়ে মরাই আমার নিয়তি"।

মৃদু হেসে সন্যাসী বললেন,
"মৃত্যু যখন সুনিশ্চিত, তখন আমার একটা কাজ করে দাও। একটু দূরে একটা গ্রাম আছে। সেখানে অনেক সজ্জন মানুষের বাস। তুমি সেই গ্রামে আমার হয়ে ভিক্ষা চাইতে যাও। ভিক্ষা চাওয়ার সাথে সাথে প্রচন্ড গালিগালাজ করবে। তাতে তোমার হয়ত একটু শারীরিক পীড়া হবে কিন্তু, এই কাজটা করে দিলে আমি তোমাকে আকাশের হাত থেকে মুক্তির উপায় বলে দেব"।

লোকটা ভাবল, এ আবার কেমন কথা। ভিক্ষা চাইতে হবে এ আর এমন কী শক্ত কাজ। কিন্তু তার সাথে খারাপ কথা বলতে হবে! এমন করলে কেউ ভিক্ষা দেয় নাকি?

কিন্তু সন্যাসীর শেষ কথাটাও সে ফেলতে পারল না। অতএব....
গ্রামের ঘরে ঘরে সে ভিক্ষা চাইতে শুরু করল, আর তারপরেই প্রচন্ড কুকথা। কোনো বাড়ির লোক ভিক্ষা তো দিলই না, বরং দু এক জায়গায় জুটল অর্ধচন্দ্র! গ্রামের শেষ মাথায় ছিল এক কুমোরের বাড়ি। ভীতু লোকটা একটু আগেই বেদম প্রহার সহ্য করেছে। কুমোরের বাড়ির সামনে এসে দুদণ্ড ভাবল সাধুর কথা আর শুনবে কিনা। তারপর ভাবল মাত্র একটা বাড়ি বাকি। একটু কষ্ট সহ্য করলেই মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়ার ভয় থেকে মুক্তি। তাই সে কুমোরের বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে প্রথমে ভিক্ষা চাইল। তারপর খুব গালিগালাজ শুরু করল।

কিছুক্ষণ পর, কুমোর পত্নী একটা বড় বাটিতে অনেকটা খাবার এনে ভীতু লোকটাকে দিতে সে প্রশ্ন করল,
"সবাই আমার খারাপ কথা বলার জন্য ভিক্ষা তো দিলই না, উপরন্তু বেশ কয়েক ঘা দিয়েছে। অথচ আপনি আমার গালিগালাজ সত্ত্বেও ভিক্ষা দিচ্ছেন! মহান আপনি"।

"না বাবা। আমি এক গরীব কুমোরের সাধারণ পত্নী মাত্র। আপনার কষ্ট আমি বুঝতে পেরেছি। ক্ষুধায় কাতর হয়ে আপনি এইসব কুকথা বলছেন। আপনি নয়, পেটের জ্বালা আপনাকে দিয়ে এসব বলাচ্ছে। কোন দোষ নেই তাতে"।

অবাক ভীতু লোকটা সাধুকে এসে সব বলল। সাধু এসে হেসে,
"ওই যে কুমোর পত্নী, ওইরকম আরও মানুষ ছড়িয়ে আছে এই পৃথিবীতে। ওরা শুধু মানুষ নন, এক একজন খুঁটি। এই খুঁটিগুলো যতদিন থাকবে তুমি নিশ্চিত থেকো, আকাশ ভেঙে পড়বে না"।

পণ্ডিত মশাই আমার পিঠে হাত রেখে বললেন... "তুমিও আর কখনো বাড়ি ছেড়ে পালাবেনা...., পালিয়ে সমস্যার সমাধান হয়না। জীবন থেকে পালানো যায়না।"

(এই গল্পটা আপনারা অনেকেই হয়ত ভিন্ন ভাবে শুনেছেন- আমিও নিজের মতো করে লিখলাম)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফুফুর চলে যাওয়া

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৪১


স্কুলে ক্লাস করাচ্ছিলাম। হঠাৎ ফোন এলো ফুফুর যায় যায় অবস্থা। আমাকে এখনই যেতে হবে। পকেটে কানাকড়ি নেই। কী করে যাব? কিছুদিন আগে এক জ্যাঠা মারা গেছেন, তখনও যেতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার হাসান মাহবুব

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:০২



প্রিয় ব্লগারগন, কেমন আছেন? সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে আবারও হাজির হলাম আরেকটি ইন্টারভিউপোস্ট নিয়ে। আমি সত্যি বলতে কি মনের খেয়াল থেকেই ব্লগারদের ইন্টারভিউমূলক পোস্ট করা শুরু করেছিলাম। ভেবেছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার হাসান মাহবুবের কাছে প্রশ্ন, "আমার 'পরিশুদ্ধ' হওয়ার কি দরকার আছে?"

লিখেছেন জেনারেশন৭১, ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:০২



**** আমি চাঁদগাজী নিকে ব্লগিং করার সময়, ব্লগার হাসান মাহবুব আমাকে ১টা গালি দিয়েছিলেন; তিনি আমার ১ পোষ্টে মন্তব্য করেছিলেন; মন্তব্যটা ছিলো, "তুমি একটা মাদারচোদ"। আমি বিনিময়ে কিছু বলিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের সুশীল সমাজ ও সংস্কার প্রসঙ্গে

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:০৫


বাংলাদেশের সুশীল সমাজকে নিয়ে চাইলে আপনি ফিল্ম বানাতে পারেন, বই লিখতে পারেন। এরা দেশের একটি অতি আশ্চর্য শ্রেণী। এদের পড়ালেখা বেশি, বই লিখেন, পত্র-পত্রিকায় সমালোচনা করেন, কখনো আমলা কখনো... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুর নতুন মডারেটরদের কাজ কি?

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:১৫

সামুতে মডারেটররা ভালো কিছু উপহার দিতে পারছেন কি? তারা কি যোগ্যতাবলে এই পদপ্রাপ্ত হোন? আমার কাছে প্রশ্নগুলো বেশ ধোয়াশা পূর্ণ। কাভা ভাই থাকা কালে আমি এই ধরনের প্রশ্ন করি নাই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×