জীব দেহের প্রায় পুরোটাই প্যারাসাইটিক...
একজন মানুষের শরীরে ১০০ ট্রিলিয়ান কোষ থাকে। ট্রিলিয়ান একটি বিরাট সংখ্যা। এক কোটি লিখতে গেলে একের পর সাতটি শূণ্য দিতে হয়, আর এক ট্রিলিয়ান লিখতে হলে একের পর বারোটি শূণ্য বসাতে হবে।
মজার ব্যাপার হলো, এর মধ্যে ৯০ ট্রিলিয়ান কোষ আপনার নয়। আপনার দেহে যত জীবাণু আছে, মানে ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস, ভাইরাস ইত্যাদি- তাদের কোষের মোট সংখ্যা হল ঐ ৯০ ট্রিলিয়ান। ১০০ ট্রিলিয়ানের মধ্যে মাত্র ১০ ট্রিলিয়ান কোষ আপনার নিজের। মানে, রোজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে যে তারিফ করেন, ও তারিফের মাত্র ১০% আপনার প্রাপ্য। সেভাবে দেখলে এই শরীর আপনার নয়, এ শরীরের আসল মালিক জীবাণুরা, আপনাকে তারা থাকতে দিয়েছে দয়া করে!
উত্তেজিত হবেন না, জীবাণু মারতে স্যানিটাইজার গলায় ঢালবেন না। এই সমস্ত জীবাণু আপনার বন্ধু, শত্রু নয়। এরা নানাভাবে আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে, পরিবর্তে আপনার থেকে পুষ্টি পায়। এই যে আজকাল আপনি জীবাণু মারায় মেতেছেন; মাস্ক পরছেন, স্যানিটাইজারে হাত ধুচ্ছেন, আপনার অতিথি থেকে ফল সব্জি কেউ সেই জীবাণুনাশী তরলের থেকে বাঁচতে পারছে না; যদি সফল হতেন, কি হত জানেন? আপনার দেহের সব জীবাণু মারা গেলে আপনিও মারা যেতেন!
জীবজগতে সবার থাকার জায়গা নির্দিষ্ট করা আছে, জীবাণুদেরও। কিন্তু ধরুন কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদের প্রজাতি মানুষের অত্যাচারে বিলুপ্ত হয়ে গেল। তাহলে তাদের দেহে জীবাণুর যে প্রজাতিরা থাকত, এবার তারা কোথায় যাবে? গবেষণা বলছে, তারা নতুন বাসস্থান খুঁজে নিয়েছে। আর তা হল মানবদেহ। যদি আপনার অকারণে গা চুলকোয়, তবে জানবেন এক খতরনাক প্রজাতির ভাইরাস আপনার পেটে বাসা বেঁধেছে। সে বেঘর হয়ে পড়েছিল, তাই এখন পৃথিবীতে যে প্রাণীটি সর্বাধিক পাওয়া যায় তার শরীরে বাসা বেঁধেছে।
আপনি জেনে রাখুন জীবাণুর প্রায় দশ হাজার প্রজাতি এইভাবে আপনার শরীরে বাস করে, যার মধ্যে আড়াই হাজার প্রজাতি থাকে আপনার নাক-গলা-মুখে। এই যে নাকে কাঠি ঢুকিয়ে করোনা ভাইরাস পেলে আপনি ওষুধ খাচ্ছেন, একই যুক্তিতে বাকি কয়েক হাজার অন্য প্রজাতির জীবাণুর জন্যও আপনার ওষুধ খাওয়া উচিত নয় কি?
ছাত্রাবস্থায় পড়েছিলাম infection and disease are not the same, সংক্রমণ মানেই রোগ নয়। সংক্রমণের চিকিৎসা লাগে না, রোগের লাগে। অর্থাৎ, গলায় করোনা ভাইরাস পেলেই ওষুধ খেতে হবে না, যদি সে ভাইরাস শরীরে রোগ করে তবে খেতে হবে। কাল যদি বাদুড় বিলুপ্ত হয়ে যায়, আর করোনা ভাইরাস পাকাপাকিভাবে মানবদেহে এসে বসবাস করতে শুরু করে, তখন তো সবাই করোনা পজিটিভ বেরোবে। তখন কি আপনি সবাইকে ওষুধ খাওয়াবেন?
ভরপেট নাও খাই ওষুধটা খাওয়া চাই!
বিজ্ঞান ব্যক্তিগত বিশ্বাস দিয়ে চলে না, যুক্তি ও প্রমাণ দিয়ে চলে। বিজ্ঞান জানুন, সুস্থ থাকুন।
(হিউম্যান সাইন্স ম্যাগাজিনের 'হিউম্যান প্যারাইট' অংশ থেকে আমার নিজের মতো ভাষান্তর। দুই বছর আগে ফেসবুকে লিখেছিলাম)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৯