ভ্রমনকালীন স্বাস্থ্য সতর্কতা
ভ্রমণ বলতেই কমবেশি সবার জন্য আনন্দের। হোক তা দেশে কিংবা বিদেশে। তবে ল রাখা উচিত ভ্রমণটা যেন উপভোগ্য হয়। আর ভ্রমণকে উপভোগ্য করার অন্যতম উপায় হলো ভ্রমণকালীন সময়ে নিজেকে সুস্থ এবং সতেজ রাখা। সুস্থতা এবং সতেজতার জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্য বিষয়ক জ্ঞান এবং সতর্কতা। কেননা, ভ্রমণকালীন সময়ে সুস্থ না থাকলে ভ্রমণকে খুব বিরক্তিকর লাগবে। তা ছাড়া ভ্রমনকালীন সময়ে স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় ঘটলে বড় ধরনের তির সম্ভাবনা থাকে। গাড়িতে ভ্রমণের সময় অনেকেরই মাথাব্যথা, বমি হওয়া কিংবা বমি বমি ভাব দেখা দেয় । আমাদের দেশে সাধারণত নারী এবং শিশুদের এ সমস্যাটা বেশি দেখা যায়।এ ধরনের অস্বস্তিকর অবস্থায় নিজের এবং সঙ্গীর উভয়েরই ভ্রমণের সময় অসহনীয় এবং অস্বস্তিকর। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে রা পেতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। ভ্রমণের সময় কখনো কখনো ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাবধানতা আবার কখনো কখনো এ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং প্রয়োজনীয় জিনিস সেসব দুর্র্ঘটনাকে এড়িয়ে ভ্রমণকে করে তুলতে পারে সফল এবং আনন্দদায়ক। ভ্রমণকালীন সময়ে নিম্নোল্লিখিত বিষয়সমূহের প্রতি ল রাখা উচিত।
১। গাড়িতে ভ্রমণকালীন সময়ে অনেকেরই বমির ভাব হয়। এর কয়েকটি কারণের মধ্যে অন্যতম হলো মাথা ঘোরা। আর এটি এড়ানোর জন্য পাশের জানালা দিয়ে দৃশ্য না দেখে সামনের উইন্ডোস্ক্রিন দিয়ে দেখুন।
২। গাড়িতে চলন্ত অবস্থায় বই, খবরের কাগজ কিংবা ম্যাগাজিন পড়বেন না। গাড়ির ঝাঁকুনিতে বর্ণগুলোর ওপর চোখের ফোকাস স্থির থাকে না। ফলে চোখে খুব চাপ পড়ে এবং এর পরিণামে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব এমনকি বমিও হয়।
৩। দিনের বেলায় যাত্রা করলে অতিরিক্ত আলো এবং ধুলোবালি থেকে চোখকে রা করতে সানগ-সি ব্যবহার করুন।
৪। গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভকালীন সময়ে যতটা সম্ভব ভ্রমণ না করাই উত্তম। ভ্রমণের ইচ্ছা থাকলে ৪ থেকে ৬ মাস অন্তঃসত্ত্বাকালীন সময়ে ভ্রমণ করুন। কারণ ৪ মাস সময়ের আগে গর্ভধারণজনিত শারীরিক কিছু অসুবিধা থাকে, ভ্রমণে যা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ৬ মাসের পর ভ্রমণ অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ । কারণ এ সময় গর্ভপাত হতে পারে। তবে একান্ত প্রয়োজন হলে ভ্রমণকালীন ব্যবস্থা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
৫। ভ্রমণের আগে কখনোই ভরপেট খাবেন না। বিশেষ করে চর্বিজাতীয় খাবার কোনোমতেই নয়। ভ্রমণকালীন সময়ে হালকা নাশতা সর্বাপো উপযোগী। এ ছাড়া বিস্কুট, ফল কিংবা ফলের রস খাওয়া যেতে পারে।
৬। ভ্রমণকালীন সময়ে আদা কিংবা এ জাতীয় মসলা মুখে রাখলে বমি বমি ভাবটা দূর হয়ে যায়। আবার অনেকের লেবু কিংবা লেবু পাতা শুকলে বমি ভাব দূর হয়। তেমনটি হলে ভ্রমণকালীন সময়ে লেবু কিংবা লেবুর পাতা সঙ্গে রাখতে পারেন। অবশ্য বমি ভাব এড়ানোর জন্য ভ্রমণের আগে সিনারিজিন জাতীয় ট্যাবলেট ৩০ মি. গ্রা. দুটি একত্রে খেয়ে নিতে পারেন । ৫-১০ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে এ মাত্রা অর্ধেক করতে হবে।
৭। ভ্রমণের সময় সঙ্গে অল্প বয়সের শিশু থাকলে তাকে কিছুটা হেলান দিয়ে শুইয়ে রাখুন। ভ্রমণকালীন সময় শিশুকে যতটা সম্ভব কম খাবার দিন । শিশু যদি ঘুমাতে চায় তাহলে তাকে ঘুমানোর প্রতি প্ররোচিত করুন।
৮। অনেকেরই গাড়িতে এসি বেশ সমস্যা সৃষ্টি করে। এর একমাত্র কারণ হলো গাড়ির এসি অ্যাডজাস্ট সিস্পেম দূর্বল থাকে বলে জানালা বন্ধ করে এসি চালানোর ফলে গাড়ির ভেতরে কার্বন ডাই-অক্সাইড জমা হতে থাকে এবং সমস্যা দেখা দেয়। তাই গাড়ি চলার সময় এসি বেশিণ চালিয়ে রাখবেন না।
৯। দীর্ঘ ভ্রমণে সিটে একভাবে বসে থাকার ফলে শরীরের রক্ত ঠিকমতো সঞ্চালনের সুযোগ পায় না। তাই দীর্ঘ ভ্রমণে সিটে বসে পা দুটো যথাসম্ভব ছাড়িয়ে বসুন । মাঝে মাঝে পা নাড়াচাড়া করবেন, যাতে রক্ত সঞ্চালনে অসুবিধা না হয়।
১০। ভ্রমণে সব সময় ঢিলেঢালা পোশাক ব্যবহার করুন।
১১। গাড়ির ভেতর কখনোই ধুমপান করবেন না বা কাউকে করতেও দেবেন না । হাতের নাগালে বিশুদ্ধ পানির বোতল রাখুন এবং মাঝে মাঝে দু-এক ঢোক খেয়ে নেবেন।
১২। আপনি যদি নিজে গাড়ি ড্রাইভ করেন তাহলে এন্টি হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ কিংবা অ্যালকোহল অবশ্যই বর্জনীয়।
১৩। দীর্ঘ ভ্রমণে গাড়ির সামনের দিকে বসার চেষ্টা করুন। কেননা, পেছনে ঝাঁকি বেশি লাগার ফলে বমি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
১৪। আকাশ ভ্রমণে বাতাসের চাপের তারতম্যের কারণে অনেকেই অস্থির কিংবা কানে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা অনুভব করে থাকে। এ থেকে রা টেতে নাক ও মুখ দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিন এবং নিঃশ্বাস ছাড়–ন । এতে দেহের ভেতর বাইরে বাতাসের তারতম্য দূর হয় এবং সমস্যা অনেকটা কাটিয়ে ওঠে।
১৫। ভ্রমণের আগে নিজের রক্তের গ্রুপটা জেনে নিন। গর্ভবতী মহিলারা গর্ভাবস্থা সংক্রান্ত কাগজপত্র সঙ্গে রাখুন। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা তাদের নির্দিষ্ট ওষুধ সঙ্গে রাখুন।
১৬। ভ্রমণকালীন সময়ে নিজের সঙ্গে একটি প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্স রাখুন। বাক্সে নিম্নোল্লিখিত জিনিসগুলো অবশ্যই থাকবে-# এন্টিসেপটিক লোশন
# কয়েক প্যাকেট খাবার স্যালাইন
# গজ,ব্যান্ডেজ ও লিকোপাস্ট
# জ্বর/ ব্যথার জন্য এসপিরিন কিংবা প্যারাসিটামল ট্যাবলেট
# অম্লাধিক্যের জন্য এন্টাসিড ট্যাবলেট
# বমির জন্য এভোমিন জাতীয় ওষুধ সঙ্গে রাখুন
# সর্দি কাশি কিংবা এলার্জির জন্য হিস্টাসিন জাতীয় ওষুধ রাখুন
# হার্টের রোগী, পেটের পীড়ার জন্য মেট্রোনিডাজল জাতীয় ওষুধ এবং অ্যাজমা রোগীরা প্রয়োজনীয় ওষুধ নিতে ভুলবেন না।
# একটি ফোল্ডিং হাত পাখা
# ছোট একটি কাঁচি
# পানির বোতল
# পরিস্কার বড় রুমাল।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:২৯