সুমির মায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা যে কী বা কেমন তা কোনো সংজ্ঞায় ফেলতে পারিনি আমি। কেউ কেউ অবশ্য বলতে চেষ্টা করেছে সম্পর্কটা তো দেবর ভাবি তা গাঁয়ের সবাই জানে। তা অবশ্য জানে সবাই যে আমরা দেবর ভাবি। বাস্তবেও তাই। আমার বয়সে সাত-আট বৎসর বয়সের বড় চাচাতো ভাই গরিবুল্লার স্ত্রী সে। কিন্তু দেবর-ভাবির যে মধুর একটি সম্পর্ক সাধারণত থাকে বা কোনো পরিবারে থাকে সাপে-নেউলে আমাদের সম্পর্কটা তেমন কিছু ছিল না। কেমন একটি অদ্ভুত সম্পর্ক যা কোনো সম্পর্কিত সংজ্ঞায় ফেলা যায় না। প্রথম দিকে তার সঙ্গে হাই-হ্যালো টাইপ আলাপ ছিলো মাত্র। কিন্তু কখন যে তা এমন একটি অদ্ভুত পর্যায়ে এসে ঠেকেছিল তা সঠিক মনে করা আমার পক্ষে কঠিন।
লোকচক্ষুর আড়ালে কোনো বিষয় নিয়ে আমাদের কথা বলবার প্রয়োজন হয়নি কখনো। তার মেয়েরা বা স্বামীও এমন দোষের কিছু খুঁজে পায়নি। একবার নিজের সহোদরের স্ত্রীর সঙ্গে কোনো বিষয় নিয়ে বেশ হাসাহাসি করছিলাম, তা দেখে মা বিরক্ত হয়ে বা রাগ করে বলে উঠেছিলেন, জঙ্গলে যা শয়তানেরা! আরেকবার আরেক ভাবির পাশে শুয়েছিলাম বলে তাও ভালো দৃষ্টিতে দেখেন নি। বেশ কিছু কথা শুনিয়েছিলেন যা অপমান জনক। আমার সেই একই মা সুমির মায়ের সঙ্গে রাতভর উঠোনে বসে কথা বললেও কিছুই বলেন নি বলে অবাকও হয়েছিলাম বেশ।
মাঝে মাঝে আমি অবসর থাকলে সুমির মা’কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে কখনো বা তার বাপের বাড়ি এমন কি আত্মীয়-স্বজনের বাড়িও যেতে হয়েছে। অবশ্য শুরুটা তার শাশুড়ি অর্থাৎ গরিবুল্লা ভাইয়ের মা-ই করেছিলেন। সেবার কী একটা অসুখ নিয়ে ভুগছিল সে। এলোপ্যাথি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করেও কোনো ফল না পাওয়াতে অনেক দূর কোনো এক কবিরাজের বাড়ি নিয়ে যেতে খুব করে ধরেছিলেন। বলেছিলাম, গরিবুল্লা ভাইয়েরে পাঠান না। ভালো হইবো!
-আর গরিবুল্লা। বলেছিলেন চাচি, হ্যায় তো আল্লা-রসুলই মানে না আবার ঝাড়-ফুঁকের কবিরাজ! হ্যায় কইছে যাইবো না। বউডার কষ্ট দেখলে আমার সহ্য হয় না বাপ! যা তুই!
সেই থেকেই শুরু। ধীরে ধীরে নানা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আমাকেই তার সঙ্গী হতে হয়েছে। শেষটায় কোনো কোনো ভাবি আর বোন সম্পর্কের কেউ এ নিয়ে নানা ইয়ার্কি আর টিপ্পনী কাটতে আরম্ভ করলে চাচিকে বলেছিলাম। তার স্বামীকেও বলেছিলাম। কিন্তু তাদের একই জবাব ছিল, আমরা জানি না তুই কিরাম?
তারপর থেকে আর অজুহাত চলে না আমার। সুমির মায়ের একটা ভালো নাম আছে রুবী বলে। কিন্তু সবাই তাকে সুমির মা বলেই ডাকে। এমন কি আমিও তাকে ভাবি বা রুবী বলে ডাকতে পারি নি কখনো। কিন্তু তবু এ নিয়েই একদিন আমাকে তুমুল সংকটে পড়তে হবে কখনো ভাবনায় আসেনি। সংকটটা অবশ্য তৈরি হয়েছিল আমার ঘর থেকেই। যা অন্যান্যদের কাছে নির্দোষ তা-ই আমার ঘরে বিশাল এক সংকটের জন্ম দিয়ে গেল যা থেকে আমার বা আমাদের উত্তরণের কোনো উপায় জানা নেই।
বিশেষ করে ঘরের বউ যখন তার স্বামীর গতিবিধি আর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে সেখানে আর কারো যুক্তি-তর্কের বা সাক্ষী-প্রমাণের কানাকড়ি মূল্য নেই। প্রশ্নটা স্বামী-স্ত্রীর মাঝখানে ঘুরে ফিরে আসবেই। এমন কি কখনো কখনো একটি অদৃশ্য দেয়াল তুলে দেবে দুজনের মাঝে। আমার উত্তর সন্তোষ জনক মনে না হলে আমার স্ত্রীকে আর কিছু বলার আগ্রহ খুঁজে পাই না। তবু তার জিজ্ঞাসা থামে না, কে বেশি ইম্পরট্যান্ট তোমার কাছে, আমি নাকি সুমির মা?
সুমির মায়ের বুকের ভেতর কোন কষ্টের কাঁটা দিনদিন বেড়ে উঠতে থাকে আমার কাছে তা স্পষ্ট হতে থাকে ধীরে ধীরে। কিন্তু আমার স্ত্রীর বুকের খাঁজে কোন ধরনের কষ্ট শিকড় মেলে তা থেকে যায় আমার অজ্ঞাত। যে কারণে আমার স্ত্রীর জিজ্ঞাসার সন্তোষ জনক জবাব আসলে কী হবে আমি ভেবে পাই না। আমার কাছে দুজনের ইম্পর্টেন্স দু রকমের। দুজনের প্রতি আমার বোধও ভিন্ন রকমের। তবু তার প্রশ্ন থামে না। আমি দিনরাত খুঁজে বেড়াই বেড়াই মনের নানা অলিন্দে সেই জিজ্ঞাসার উত্তর। কাপড়ের ওপর দিয়ে বোঝা যায় না কাপড়ের নিচে কোনো দাগ কিংবা ক্ষত আছে কি না। তেমনই সবার দৃষ্টিতে ঢাকা পড়ে থাকে আমার যাবতীয় ব্যক্তিগত সংকট।