somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি প্রতারণার গল্প

২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন স্টাফ আপিসারের দায়িত্ব পালন করিতেছি। কাজের মধ্যে রহিয়াছে এস্টিমেট চেক করা, লাল চা পান করা, দু একটা অজরুরী মিটিং এ গিয়া ইটিং করা, আর এক্সেন স্যার ডাকিলে তাহার সম্মুখে নোটখাতা খুলিয়া মনোযোগী ছাত্রের মত নোট করা। ই/এম কলিগ আসিয়াই উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর দায়িত্ব পাইয়া গিয়াছেন। তাই তাহাকে ভাঙ্গা গাড়ি কিম্বা উপ-সহকারী প্রকৌশলীর মোটরবাইকের পিছনে চড়িয়া দৌড়ঝাঁপ করিতেই বেশি দ্যাখা যাইতে লাগিলো। আর আমি কলিগের সাথে দু মুঠো ভাত দেশি মুরগির সালুনসহ খাইয়া দুদণ্ড ঝিমাইয়া এক্সেন স্যারের পিছুপিছু সুড় সুড় করিয়া নামিয়া আসিতাম। এমনিই এক ঝিম ধরা দুপুরে এক ফেসবুকে পরিচিতা ধপাস করিয়া একটি স্ট্যাটাস এর লিংক দিয়া বসিলো। খুলিয়া দেখিলাম না। রাত্রের জন্যে বাঁচাইয়া রাখিলাম। রাত্রে লিংক খানা ক্লিকাইলাম ও দেখিলাম জান্নাতুন নাহের নামধারী এক রমণী তাহার নারী জীবনের কিছু আকাঙ্ক্ষার কথা সুনিপুন ভাবে লিখিয়া রাখিয়াছে। হলফ করিয়া আজ বলিতে পারি, বোধ করি সেদিনও পারিতাম, এই আফসোস অনেক নারীই আড়ালে, আবডালে, ভূতলে জীবনের কোন না কোন দিন করিয়াছে। তো সেই ফেসবুক পরিচিতাকে জিজ্ঞাস করিলাম ইনি কিনি? উত্তর আসিলো তাহার ভার্সিটির এক বড় আপু, আম্রিকা থাকে। সুধালেম, খালি আছে? উদ্দেশ্য বুঝিয়া কিনা কে বলিবে, উত্তর করিলো, কি জানি! স্ট্যাটাস দেখিয়া তো মনে হয় কেহ থাকিলেও থাকিতে পারে।
আর আগাইলেম না। তদ্দিনে কাঠখড় পুড়াইয়া আমিও আসিয়া উঠিয়াছি মার্কিন মুলুকে। ঠাট্টার সম্পর্কের এক বান্ধবীর কাছে আম্রিকা নিবাসী সম্ভাব্য ও বর্তমান এফ-১ পাত্রীর লিস্টি চাহিয়া বসিলাম। বলাই বাহুল্য যে একজন ক্যাডার পাত্র হিসেবে স্বদেশে বসিয়াই আমি বিবাহ সম্পর্কে ব্যাপক ঝটিকা অভিযান চালাইয়াছি এবং শেষ ভরসা হিসেবে ১৪ সনের শুরুতে এফ-১ পাত্রীর প্রতি মনোযোগী হইয়াছি। বান্ধবী সিনিয়র এক আপুর প্রফাইল দিয়া বসিলো যিনি কিনা সেই লেভেলের আঁতেল। তিলমাত্র দেরী না করিয়া, না করিয়া দিলাম! দ্বিতীয় চান্সে আসিয়া পড়িলো জান্নাতুন নাহের। বলিলাম ইনি কোন ব্যাচ? ০৫ জানিতে পারিয়া প্রফাইল এইবার কালে খুঁটিয়া খুঁটিয়া পড়িলাম। ভারি একখানা সাধাসিধে মুখ। তাতে জগতের সমস্ত নিরীহ-পনারা আসিয়া ভর করিয়াছে। নীল রঙ্গা শাড়ি আর গলদেশ থেকে নেমে আসা পেন্ড্যান্ট, সমস্তটি মিলিয়া অনির্বচনীয় অনুভূতি আনিয়া দিলো। লেখালিখির তেমন কিছুই পাব্লিক নয়, ফ্রেন্ড রিক্যু পাঠিয়ে দিলাম। ঠাট্টার বান্ধবীকে বলিলাম এবার আড়মোড়া ভাঙ্গিয়া পড়িবো।
ঘটনাসূত্রে তখন টেক্সাস। বন্ধুবর তপসেকে বলিলাম ইহাকে চিনিস? বললো আলবাৎ চিনি! এ যে আমার ল্যাবেরই টিএ কলিগ। ইস্কুল বন্ধুদের যাহারা তাহার ক্লাসমেট সবাই জানাইলো মেয়ে অতিশয় ভদ্র। কবিতায় পাকা হাত। ২ জানুয়ারী রাত্রে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট গৃহীত হইলো। প্রফাইলের সব ছবি আর কবিতা ঘাঁটা শেষ। লেখার হাত আছে। শুনেছি লেখো, কবিতা চাই। এই ভাবে কথা শুরু হইয়াছিলো। প্রতারণার সে ছিলো শুরু। সে তাহার প্রিয় কবিদের একজন বলিয়াছিলো পুর্ণেন্দু পত্রীকে। সাহিত্যে আনাগোনা আমার যৎসামান্য। নাম শুনিলেও কোন কবিতার নাম বলিতে পারিবো না। সে জানাইলো পুর্ণেন্দুর ‘কথোপকথন’ তাহার খুব প্রিয়। পড়িয়াছি কিনা বালিকা সুধাইলো। ইজ্জতের ব্যাপার! কোনদিন পড়িয়াছি মনে করিতে পারি না।
আগপাছ না ভবিয়া চ্যাট উইন্ডোতে লিখিলামঃ
-হ্যাঁ হ্যাঁ খুব সুন্দর কবিতাটা। সমস্তই পড়িয়াছি!
আমি তখন প্রমাদ গুনিতেছি এই চাপাবাজির।
গুগল ক্রম অন করিয়া সপাটে সার্চ দিয়া দেখিলাম কথোপকথন আছে সিরিজ আকারে।
সার্চকৃত জ্ঞান আহরণ শেষ করিয়া এই সিরিজের প্রতি ভালো লাগা আছে জানাইলাম।
সে দুখানা লাইন টাইপ করিয়া যেনো শুনাইলো।
আমিও কপি পেস্ট করিয়া গুগলি করিয়া বলিলাম কথোপকথন-২ থেকে উক্ত উক্তি করা হইয়াছে।
সে সায় দিলো। কি প্রতারণাই না করিয়াছিলাম সেদিন!
অবশ্যি প্রেমে ও যুদ্ধে সকল স্ট্রাটেজি হালাল বলিয়া গণ্য।
সেই বাবুবউকে ছাড়িয়া প্রতারক এই আমি আগামীকল্য চলিয়া যাইতেছি পাশের শহর শার্লোট এ। সংসারটাকে চিরিয়া। যেই মেয়েটা সংসার করিবে বলিয়া সুদূর সাউথ ডাকোটা হইতে নারিকেল শলার ঝাঁটা লইয়া আমার এখানে আসিয়া উঠিলো, আসার ঠিক ঠিক সপ্তম দিনে সমস্ত রান্নাবাটি করিয়া স্টুডেন্ট কম্যুনিটির এন্তার লোকদিগকে খাওয়াইলো, সেই সুলক্ষণা অর্ধাঙ্গিনীকে রাখিয়া আমি চলিয়া যাইতেছি ৮৫ মাইল দূরে। সেই আমাকে শিখাইয়াছে সংসার সুখের হয় নমনীয় গুণে। আর আজ বিদায়ের ক্ষণ উপস্থিত। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থণা এই নারীটি যেনো সদা সুহাগান রাহে -_-
সকলের দুয়াপ্রার্থী।


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:০৬
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×