প্রিয় গল্পটা আবার বলি, বারবার বলা যেতে এমন গল্প। কাহিনীটা, বলে রাখা ভালো, তলস্তয়েরও খুব প্রিয় গল্প ছিল, সেটা বোঝা যাবে পুনরুজ্জীবন নামের তার জীবনের শেষ উপন্যাসটার শুরুতে এর শিক্ষাটুকু উদ্ধৃত করা থেকে।
পয়গম্বর ঈসা একদিন বসে আছেন পাহাড়ের ওপর একটা গাছের নিচে। তাকে জ্বালাতন করার জন্য ফরিসীরা এক বেশ্যাকে নিয়ে হাজির। ফরিসীরা তাকে বললেন, ওহে মরিয়মের পুত্র, তুমি না মুসার শরিয়ত কার্যকর করতে চাও! এবার সেই শরিয়ত মোতাবেক এই বেশ্যার বিচার কর।
মুসার শরিয়তে ব্যাভিচারীর শাস্তি পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড।
ঈসা নবী মাথা তুললেন না। মাটিতে আঁকিবুকি করতে থাকলেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর ফরিসীরা আবার তাকে বলল, কি হে, চুপ মেরে আছো যে! বিচার করো! খুব তো আমাদের জ্বালাও, আমরা কেন মুসার শরিয়তের গাফিলতি দেখেও না দেখার ভান করি, এবার তোমার কাছেই আমরা বিচারের ভার ছেড়ে দিলাম। দ্রুত বিচার চাই।
ঈসা মাটি থেকে মুখ না তুলেই বললেন, ঠিক, ওর মৃত্যুদণ্ডই পাওনা। তোমাদের মাঝে যে সবচেয়ে' বেশি নিষ্পাপ, সেই প্রথম পাথরটা ছোড়ো।
ফরিসীরা অনেকক্ষণ নীরব হয়ে বসে থেকে এক একে চলে গেল। সেই বেশ্যানারী একাকী রয়ে গেল পয়গম্বর ঈসার সাথে।
হজরত ঈসা আরও অনেকক্ষণ পর মাথা তুলে তাকে বললেন, ওরা কেউ কি তোমাকে পাথর ছুড়ে মারার মত নিষ্পাপ নিজেকে মনে করেনি?
না, প্রভু।
আমিও তো নিজেকে ততটা যোগ্য মনে করি না।
প্রভু!
...
বুঝতেই পারছেন, দুটো বার্তা আছে গল্পটাতে। একটা বার্তার বিস্তার আছে তলস্তয়ের মহাকাব্যিক উপন্যাসটাতেই: ওহে ক্ষমতাবান, এত আয়োজন করে যাদের বিচার করছো, সেই অপরাধীদের তুমি শাস্তি দেয়ার কতখানি এখ্তিয়ার রাখো! তুমি নিজেই কি এদের অপরাধী বানানোয় ভূমিকা রাখোনি?
আরেকটা বার্তা, ফরিশীদের রাগ পয়গম্বরের ওপর, মুসার শরিয়ত না মানার জন্য হযরত ঈসা কেন বিদ্রুপ করতেন মহাজনী কারবারী আর ক্ষমতাবানদের। ঈসা জানিয়ে দিলেন, ধর্মের করুণাটুকু ছুড়ে ফেলে তারা শুধু সমারোহে পালন করছিল অনুষ্ঠানটুকু, আর উদযাপন করছিল শাস্তির আয়োজনগুলো। ঈসা তাই বাইতুল মোকাদ্দাসে ঢুকে সুদী কারবারীদের গদি উলটে ফেলেছিলেন, কারণ তারা সাধারণ মানুষকে লুণ্ঠন করে, মুসা নবীর শরিয়তের এটাই সত্যিকারের লঙ্ঘন। কিন্তু একই সাথে ওই নারীর প্রতি পয়গম্বর ঈসা দেখিয়েছিলেন অগাধ করুণা। এমনি এমনি তাকে শূলবিদ্ধ হতে হয়নি। নিঃসহায়ের প্রতি ভালবাসা আর ক্ষমতাবানের প্রতি বিদ্রুপ, উভয় গুনেই তাকে সহ্য করা মুশকিল ছিল তাদের পক্ষে।
চলছে তো নতুন জাহেলী রাজত্ব।
ঈসা নবীর বাণী মন দিয়ে শুনুন: এই মানবশত্রুদের হাত থেকে সবই কেড়ে নিতে হবে, ফিরিয়ে দিতে হবে সাধারণের হাতে। কেড়ে নিতে হবে তাদের ডাকাতির কারবারের গদি। কাঁটার মুকুট পড়বার ঝুঁকি নিয়েও।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:০৯