মেয়েরা যখন অন্তঃসত্ত্বা বা গর্ভবতী হয় তখন একশ' জনের মধ্যে ২০ জনের গর্ভপাত হয়ে যায়৷ এটা একটা স্বাভাবিক নিয়ম, প্রাকৃতিক নিয়ম৷ গাছের যেমন ২০ ভাগ ফল পরিপুষ্ট হয় না, তেমনি ২০ ভাগ ভ্রুণ পরিপুষ্ট হয় না৷ এগুলোর প্রধান কারণ হচ্ছে জিনগত, ক্রোমোজমাল অ্যাবনর্মালিটি, মেয়েদের বা ছেলেদের ডিম্বানু বা শুক্রানুর ভেতরে যে ফলটা হয়, সেখানে যদি কোনো ‘ডিফেক্ট' থাকে, তখন এমনটা হতে পারে৷ এটাকেই মেইন কারণ হিসেবে ধরা হয়৷ এছাড়াও অনেক কারণ আছে৷ জরায়ুতে যদি কোনো ডিফেক্ট থাকে বা মহিলাদের ডায়াবেটিস, কিডনিতে, থাইরয়েডে সমস্যা বা ভাইরাল জ্বর হয়, এমনকি মানসিক কারণেও গর্ভপাত হতে পারে৷ অনেক সময় দেখা যায়, গর্ভপাতের কোনো কারণই খুঁজে পাওয়া যায় না৷ এটা প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারেই হয়ে থাকে৷
গর্ভপাত কী হত্যার শামিল?
প্রশ্নটা ভিন্ন৷ যেটা অটোমেটিক হয়ে যাচ্ছে, সেটা তো আর হত্যার শামিল বলা যাবে না৷ অ্যাবনরমাল শিশুগুলোই সাধারণত ঝড়ে যায়৷ আমরা ডাক্তাররা কোনো মহিলার শারীরিক কারণ, স্বাস্থ্যগত কারণ, এছাড়া এমন কোনো কারণ আছে যেখানে মেডিক্যাল ইনডিকেশন আছে, সেখানে মেডিক্যাল টার্মিনেশন অব প্রেগনেন্সিও আছে৷ এখানে আগে মাকে বাঁচানোর চেষ্টা করি৷ মায়ের স্বাস্থ্যগত সমস্যা, কিডনির সমস্যা বা লিভারের সমস্যার কারণে এমন পরিস্থিতির তৈরি হয় যেখানে, সেখানে আমরা মেডিক্যাল টার্মিনেশন করতে পারি৷ কিন্তু যেখানে অবৈধভাবে গর্ভাপাত করায়, সেখানে অনৈতিকতার প্রশ্ন আছে৷
চিকিৎসা বিজ্ঞানে গর্ভপাতকে কতটা সমর্থন করা হয়?
চিকিৎসা বিজ্ঞান গর্ভপাতকে সেভাবে সমর্থন না করলেও মেডিক্যাল টার্মিনেশনে এটা করতে হয়৷ এটাকে আমরা সমর্থন করি৷ যার অনেকগুলো ইন্ডিকেশন আছে৷ সামাজিক কারণও রয়েছে৷ ধরুন, ধর্ষণ বা খারাপ কোনো দুর্ঘটনা অথবা ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের কোনো ফেইলর মেথডেও মেডিক্যাল টার্মিনেশন বা গর্ভপাত এখন অনেক দেশেও সরকারই করার অনুমতি দিয়েছে৷ আমাদের দেশেও আমরা মেডিসিনের মাধ্যমে গর্ভপাত করে থাকি৷ অথবা সার্জিক্যাল এমআরের মাধ্যমেও করা যেতে পারে৷ যেখানে পরিবারপরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যর্থ হয় অথবা আনপ্ল্যান্ড প্রেগনেন্সি বা ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, সেখানে তো এটার মূল্য কিছুটা থাকেই৷
‘শরীরটা আমার নিজের’ – ফিলিপিনো মেয়েরা এখনো স্বাধীনভাবে এ কথা ভাবতে পারেন না৷ গর্ভপাত এখানে নিষিদ্ধ৷ তা সত্ত্বেও গর্ভপাত চলছে৷ ২০ বছর বয়সি এ্যামি গর্ভপাত ঘটিয়েছেন, তারপর নিজের শরীরে এঁকেছেন উল্কি, সেখানে লেখা, ‘স্বাধীনতা’
যারা অবৈধভাবে গর্ভপাত করান বা আনহাইজেনিকভাবে গর্ভপাত করান, তাদের বা আনসেফ গর্ভপাতকে অবশ্যই নিরুৎসাহিত করা উচিত৷ তবে একটা পার্ট রয়ে গেছে মেডিক্যাল টার্মিনেশন৷ এটা ডক্টরদের কাছে থেকে যাবে৷ এটার প্রয়োজন থাকলে আমরা ডক্টররা সব সময় নেব৷ যারা অনৈতিকভাবে বা অবৈধভাবে এটা করাচ্ছে, সেটা আমরা সব সময় নিরুৎসাহিত করব৷ সেটা সামাজিক অবক্ষয়, শারীরিক বা মানসিক সব দিক থেকেই ক্ষতিকর৷
আগত সন্তানকে মৃত মাংশপিন্ড দেখাটা সত্যিই ভয়ানক খারাপ স্মৃতি।
যারা সন্তান নিতে চান, গর্ভপাত এড়িয়ে চলুন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:১৩