somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি করলে ভালো হবে ? কনফিউজড !

২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আমার জন্য সঠিক রাস্তা কোনটা? – বিদেশ, স্বদেশ, ব্যাবসা, চাকরি শ্রম বিক্রি (কামলা)?



অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে – আমি দেশেই কিছু করবো নাকি বিদেশ যাবো (কোনটা করলে যে ভালো হয়) বুঝতে পারছি না। নিজেকে খুশি করবো? নাকি পরিবারকে? আমার মন চায় এটা, কিন্তু সবাই বলে অন্যটা ... ...
আমরা খুব সহজে বলে ফেলি – এটা আমার স্বপ্ন। কিন্তু কেন ? – সেটা জিজ্ঞেস করলে অনেকেই থমকে যাবে। মাথা চুলকোবে। “এই লাইনে টাকা আছে” অই লাইনে ওটা আছে, এ জাতীয় কথা খুব লেইম অথবা সস্তা শোনায়, তাই আমরা এটা স্বীকার করতে লজ্জা পাই। আমাদের মাঝে মহা পণ্ডিতের অভাব নাই।
দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদেরকে বড় করা হয় এভাবে – আমরা নিজেদের জন্য কোন দিকটা ঠিক, এটা নিজেরা কখনো ঠিক করার সুযোগ পাই না। শতকরা আশি ভাগ ছাত্রছাত্রী বাবা-মার চাপে, বড় ভাই-বোনের চাপে, বন্ধুদের চাপে কিংবা গত কয়েক বছরের ট্রেন্ডের চাপে সিদ্ধান্ত নেয়। পুরো মনোযোগ দিতে পারে না, নিজেকে খুঁজেও পায় না বলে হতাশায় ভোগে। অনেকের বাবা-মা জানেনই না যে ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন পেশা আছে।

আমরা বাংলাদেশীরা হুজুগে জাতি। গত কয়েক বছরে প্রচণ্ড পাবলিসিটি করে ডিপ্লোমা বস্তুটিকে আকাশে তুলে দেয়া হয়েছে বলে এখন গণহারে সবাই এটার পেছনে ছোটে – অনেক সময় দুঃখজনকভাবে নিজের স্বপ্ন , ইচ্ছা, কী ছিল এবং কেন ছিল সেটা ভুলে গিয়েই ছোটে, কারণ বাজার বড় কঠিন। ডিপ্লোমা পাশ করলেই চাকরি করা যায়, এখানে ভবিষ্যৎ আছে ইত্যাদি নানান ঝাপসা কথা বলা হয়। বাস্তবতা হল এই – চাকরি করতে গিয়ে শুরুতেই কয়েকজোড়া জুতা ক্ষয় করে নাম মাত্র চাকুরির দেখা মেলে, করতে হয় চাকরগিরি। কিন্তু বছর খানেক পরে অনেকেরই বিবেক বেশ দুর্বল হয়ে যায় সিস্টেমের খপ্পরে পড়ে। আর যারা ধান্দাবাজ, তাদের কথা বলাই বাহুল্য (এ সংখ্যাটি নেহায়েত কম নয়, অনেক পরিবারেই সততা বিষয়টি শেখানো হয় না)। খাবার টেবিলে বাবা-মায়ের, বা সোশ্যাল অকেশনগুলোতে আত্মীয়স্বজনদের বাঁকা কথার ক্রমাগত চাপে পড়েও অনেকে ভাবে, সরকারী চাকরি ছাড়া আসলে গতি নেই, নিশ্চিন্ত পথ অবলম্বন করাই সমীচীন। আরও আছে। “উদ্যোক্তা” শব্দটি খুব Cool শোনায় – কিন্তু এর রিস্ক, প্রয়োজনীয় জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা এসব চিন্তা করলে অনেক আপাত-আগ্রহী যুবকই পিছিয়ে আসবে।
লেখাপড়া করতে যারা বিদেশে যায়, তারাও যে স্বপ্ন তাড়া করতে যায় কথাটি সবক্ষেত্রে সত্যি নয় (“স্বপ্ন” শব্দটি আজকাল বাজারে খুব চলে!)। লেখাপড়া করতে গিয়ে অনেকে বিরক্তির একশেষ হয় – কারণ সে লেখাপড়া করতে বাইরে আসে নি, এসেছিল টাকা কামাতে; শোনা কথা এই ছিল যে বড় ভাইয়া-আপুরা বিদেশে, তারা অনেক টাকা উপার্জন করে, বিদেশি টাকা পায়, কাজেই বিদেশী টাকা জমিয়ে দেশে আনলে অঙ্কটা অনেক বড় দেখায়! আমি কী করবো – এটা খুব কম মানুষ নিশ্চিত হয়ে বলে, বেশীরভাগ খুব আগ্রহ নিয়ে বলে সে মাসে কত টাকা করে পাবে!
তাহলে উপায় কী?
এক্ষেত্রে সম্ভবত একজন ফ্রেশার ছাত্রছাত্রীর “অন্যের দেখাদেখি” স্বভাব বাদ দিয়ে নিজের সঠিক অবস্থা এবং দুর্বলতা যাচাই করা ভালো কৌশল হবে। মজার ব্যাপার হল, আমরা অন্যদের বিষয়ে আলোচনা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকি যে নিজের অবস্থা এবং দুর্বলতা যাচাই করতে বসার সুযোগ তেমন পাই না! নিজের দুর্বলতা নিয়ে চিন্তা থেকে আমরা বেশী চিন্তিত থাকি সহপাঠীর সবলতা নিয়ে। আমরা যখনি দেখি কেউ চাকরীর আবেদন করছে আমরাও চাকরীর জন্য পড়া শুরু করছি। যদি দেখি কেউ বিদেশ যাচ্ছে, তখুনি ভাবি – আমারও বিদেশ যাওয়া দরকার। অর্থাৎ, এটা করা দরকার, ওটা করা দরকার। “কেন করা দরকার” –এটার উত্তর যদি নিজের কাছে থাকে, তাহলেই সে নিজের রাস্তাটা খুঁজে পাবে (এটাই মূল কথা !)। দুম করে কোথাও ঢুকে পড়া ফ্রেশার ছাত্রছাত্রীদের বদভ্যাস, এটা করার আগে একটু সময় নিয়ে চিন্তাভাবনা করা দরকার। আজ আমি কোথায় আছি তার চেয়েও বড় কথা হল দশ বছর পরে নিজেকে কোথায় দেখতে চাই। মন কী চায় তার চেয়ে বড় কথা, লজিকলি চিন্তা করলে মন কী চায়? সবকিছুই আমার জন্য – এটা ভাবা যেমন ভুল, কিছুই আমার জন্য নয় – এটা ভাবাও ভুল।
টেনশন হ্যান্ডল করার অ্যাবিলিটি একজন মানুষের বড় ক্ষমতা। অস্বস্তি নিয়েও যে নিজের প্ল্যান ঠিকঠাক ফলো করতে পারে, সে সাধারণত ঠিক জায়গায় পৌঁছায়। আমরা সবকিছু তৈরি অবস্থায় চাই, এবং কিছুদিন মাঝামাঝি ঝুলে থাকতে হলে অস্থির হয়ে পড়ি। পরিপাকতন্ত্রে গোলমাল দেখা দেয়, পেট নেমে যায়, ভাবতে থাকি – অমুক তো চাকরি পেয়ে গেলো। তমুক তো ভিসা পেয়ে গেলো। আমি এখন বাসা থেকে বের হই কী করে, সবাই তো জিজ্ঞেস করে আমি কী করি! কাজেই খুব দ্রুত কিছু একটা (অপটিমাম না, যা তা হোক কিছু একটা) করা বা পাওয়া দরকার। এমন অনেক আছে যে, ছেলেটি বাইরে যাবার জন্য মন দিয়ে পড়ছিল। হঠাৎ মোটামুটি বেতনের একটা চাকরি পেয়ে যাবার কারণে কাঁচা টাকার লোভে থেকে গেলো। ভাবল, আপাতত এক বছর জব করি, পরের বছর আঁটঘাঁট বেঁধে বাইরে যাবার ট্রাই করবো। কিন্তু পরের বছর সেই ট্রাই করার তেল-চর্বি-মাখন কিছুই অবশিষ্ট থাকে না – আধা-পচা প্রয়াস সাধারণত ব্যর্থ হয়, হওয়াই স্বাভাবিক। চোখের দেখায় প্রেম, হুট করে বিয়ে বা একটা ঝগড়া থেকেই ডিভোর্স – এসব ব্যাপার যেমন লাভের চেয়ে ক্ষতিই করে, তেমনি ঝোঁকের মাথায় বড় কোন ক্যারিয়ার ডিসিশনও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জীবন কাউকেই সুখের স্বর্গ তৈরি করে দেয় না। জীবনের কিছু অংশ সবাইকেই ভীষণ দুশ্চিন্তায় ও দোটানায় কাটাতে হয় – এটাই আমাদেরকে শক্ত করে। যে খুব সফল এবং সুবিধাজনক পজিশনে আছে ভাবছেন, খুঁজে দেখলে পাবেন তার দুশ্চিন্তা আরও বেশী। কন্ডিশন শুধু ভিন্ন। বাইশ বছর বয়সের একটা ছেলে অনেক জায়গাতেই পাকেচক্রে পড়ে শিখে যায় একটা আস্ত সংসার কী করে টানতে হয়। আবার অনেক পরিবারেই একটা বাইশ বছরের ছেলে শুধুমাত্র শেখে কী করে ডায়াপার ছাড়া চলতে হয়!
কিছু কঠিন এবং কষ্টকর সিদ্ধান্ত নিতে শেখাই অনেক সময় ব্যবধান গড়ে দেয় –নিজের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত সবসময় কিন্তু আরামদায়ক, সুখকর, বা অন্য সবার জন্য আনন্দময় না-ও হতে পারে! কয়েকটা রাস্তার মধ্য থেকে একটা বেছে নিতে হবে, বাকিগুলো ছাড়তে হবে (একটা বেছে নেয়া অনেক আরাম, কয়েকটা ছেড়ে দেয়া কিন্তু খুব কষ্ট!)। অনেকে স্বদেশ-বিদেশ সমস্ত কিছু হাতে রাখতে গিয়ে সবকিছুতেই আধাখাপচাভাবে এগোয়, এবং শেষ পর্যন্ত মনে করে, কষ্ট তো করলাম কিন্তু ফল পেলাম না কেন? মনে রাখতে হবে, আজকের যুগে কষ্ট করলেই যে ফল পাওয়া যাবে এমন কোন কথা নেই – কষ্ট কোথায়, কীভাবে, কেন, কে করছে এগুলোর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। এবং এটাও মনে রাখতে হবে, এভারেজ মানুষদের জন্য জীবন কঠিন রূপেই আসবে।
সফল হলে অন্যরা অভিনন্দিত করবে, বিফল হলে সেই তারাই আবার বিদ্রূপ করবে – এটাই নিয়ম। এটা মেনে নিতে হবে। জীবনের কাঠিন্য মেনে নেয়া এবং রিয়েলিস্টিকভাবে নিজের গোল সেট করা – এটাই হল কৌশল। আমরা বড় বড় স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি, বড় বড় গোল সেট করতে ভালোবাসি, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে লেগে থাকতে ভালোবাসি না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে যে মানুষ লেগে থাকতে পারে, স্বভাবতই সে যুক্তিসঙ্গত উঁচু গোল সেট করতে পারে।
মানুষকে সম্ভবত ধৈর্যের চেয়ে বড় কোন শক্তি দেয়া হয় নি। সবাই শুধু শুরু আর শেষটা দেখে, যাত্রাপথ দেখে না বলেই যত ভুল ধারণার সূত্রপাত হয়। সবাই দেখবে আপনি একটা ভালো চাকরি পেয়ে গেছেন অথবা বাইরে যাবার ভিসা পেয়ে গেছেন – কেউ দেখবে না আপনাকে এর জন্য কতটা খাটতে হয়েছে, কত ঘণ্টা লেগে থাকতে হয়েছে কিংবা ক’টা কোম্পানিতে অ্যাপ্লাই করেছিলেন যারা আপনার খোঁজও নেয় নি। অন্যদের দেখাদেখিতে অবশ্য কিছু যায় আসে না – যায় আসে আপনার মানসিকতাতে। কাজেই, সেটিতে মনোযোগ দেয়াই কর্তব্য। ভালো সুযোগ বুঝেশুনে নেয়াটা যেমন বুদ্ধির পরিচয়, খারাপ সুযোগগুলো (অর্থাৎ ট্র্যাপগুলো) ভেবেচিন্তে ছেড়ে দেয়াটাও অনেক বিবেচনা এবং ম্যাচিউরিটির পরিচয়। যে পৌঁছে গেছে সে তো গেছেই। যে পৌঁছে যায় নি কিন্তু দড়ি ধরে ঝুলে আছে, তার হাতের জোর এবং মনের জোরই কিন্তু বেশী।

সবাই নিজের জন্য সঠিক দিকটা খুঁজে পাক। শুভকামনা।
A realistic plan is always better than a fancy dream.
JR Sikder
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:১২
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×