বই বিশ্লেষণ: মিসমিদের কবচ
লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম প্রকাশ: ১৯৪২
ধরণ: গোয়েন্দা উপন্যাস
পৃষ্ঠা: ৪৯
সুশীল রায়, কলকাতার বিখ্যাত প্রাইভেট ডিটেকটিভ নিবারন সোমের অধীনে শিক্ষানবিশি করে। সুশীল মামাবাড়িতে বেড়াতে এসে মামার সাথে নিমন্ত্রণ খেতে যায় পাশের গ্রাম শ্যামপুরের চৌধুরী বাড়িতে। সেখানে গিয়ে পরিচয় হয় হরিশ গাঙ্গুলির সাথে। হরিশ গাঙ্গুলি শ্যামপুরের বাসিন্দা। ছেলেরা থাকে কলকাতায়। তিনি একা শ্যামপুরে পড়ে থাকেন। নিজেই রান্নাবান্না করে খান। অনেক টাকার মালিক তিনি, টাকাপয়সা ব্যাংকে রাখেন না, বাড়িতে মাটির নীচে পুঁতে রাখেন। নগদী লেনের কারবারও করেন, প্রায় তিন হাজার টাকার ওপর। লোকটি প্রচন্ড কৃপণ আর নিজের হাজার হাজার টাকার গল্প সবার কাছে করতে ভালোবাসেন।
সুশীল কলকাতায় চলে আসে। কলকাতায় আসার কয়েকদিন পরে মামার জরুরি টেলিগ্রাম পায়, তাকে তাড়াতাড়ি মামাবাড়ি যেতে বলা হয়েছে। সুশীলও আর দেরী না করে মামাবাড়ি চলে যায়। গিয়ে জানতে পারে, শ্যামপুরের হরিশ গাঙ্গুলি খুন হয়েছেন সাত-আটদিন আগে। মামা, সুশীলকে শর্ত দেয় যে তাকে(সুশীলকে) এই হত্যারহস্য উদঘাটন করতে হবে। যদি সে পারে তাহলে সে নিবারণ সোমের অধীনে শিক্ষানবিশি করতে পারবে। আর যদি সে ব্যর্থ হয়, তাহলে মামা আর সুশীলকে গোয়েন্দাগিরি করতে দেবে না। নিবারণ সোমের কাছেও আর সুশীল যেতে পারবেনা।
সুশীল পড়ে গেলো মহাবিপদে। এমনিতেই মামার কঠিন শর্ত, এছাড়া সাত-আটদিন আগে হরিশবাবু খুন হয়েছেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ সূত্রও এতদিনে নষ্ট হয়ে গেছে। এমনকী লাশটাও সুশীল দেখতে পারেনি। পুরোপুরি অন্ধ অবস্থায় এই রহস্য উন্মোচনের কাজ সুশীল শুরু করে।
হরিশ গাঙ্গুলির বাগান থেকে সে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পায়। একটি হলো শেওড়াগাছের ভাঙ্গা ডাল আর আরেকটি হলো কাঠের গোলাকৃতি পাত। পাতের গায়ে খোদাই করা একটা ফুল আর ফুলের নীচে শেয়ালের মতো একটা জানোয়ার। পরে জানা গেলো ওটা মিসমিদের কবচ।
আস্তে আস্তে রহস্য উন্মোচন হচ্ছে। কিন্তু, মাঝেমাঝেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।একদিকের অঙ্ক মিললে অন্যদিকে ভুল হয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছুদিন কেটে গেলো। হরিশ গাঙ্গুলির ছেলে শ্রীগোপাল, সুশীলের ওপর ভরসা করতে না পেরে আরেকজন গোয়েন্দা নিয়োগ করলেন, জানকী বড়ুয়া।
এক কাহিনীতে দুই গোয়েন্দা! সুশীল কী পারবে হরিশ গাঙ্গুলির হত্যারহস্য উদঘাটন করতে? না কি জানকী বড়ুয়াই মাঝখান থেকে বাজিমাত করে দেবে? মিসমিদের কবচের সাথেই বা এ কাহিনীর সম্পর্ক কী?
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় যে ডিটেকটিভ উপন্যাসও লিখেছেন, এটাই জানতাম না। আর সব গোয়েন্দাকাহিনীর মত এই উপন্যাসেও আস্তে আস্তে রহস্যের জট খুলেছে, ক্লাইম্যাক্স এ টুইস্টও আছে। অন্যসব গোয়েন্দাদের মত সুশীল রায়েরও রিভলবার আছে। কিশোর উপন্যাস, কিশোরদের উপযোগী করেই লেখা হয়েছে। আমার কাছে ছিমছাম, সুন্দর, গোছানো লেগেছে "মিসমিদের কবচ।
আফসোস, এই গোয়েন্দাকে নিয়ে লেখক আর কোনো কাহিনী লিখলেন না।