শিশু যখন মায়ের গর্ভে বড় হচ্ছে সে সময় তার মধ্যে স্নায়ু, হাড় বা অন্য কোনও রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ এই সমস্যাগুলো জিনগতভাবে, অপুষ্টি বা অন্য বিভিন্ন কারণে এসে শিশুর শরীরের ঠিক ঠিক বৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ শুরুতেই রোগটা ধরে ফেলার জন্য, শিশুর জন্মানোর সময়েই ডাক্তাররা স্ক্রিনিং করে দেখে নেন বাচ্চার শরীরে কোনও এমন ডিসঅর্ডার আছে কি না৷ নিউবর্ন স্ক্রিনিংটা তাই এই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ, ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার যত তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে, বাচ্চাকে সাপোর্ট করা তত সুবিধেজনক হবে৷ যত দেরি করে রোগ ধরা পড়বে, সংশোধন করা ততই জটিল হয়ে যাবে৷ বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ সোমা ভট্টাচার্য বুঝিয়ে বললেন, ‘আসলে এই ব্যাপারটা অ-আ-ক-খ শেখার মতো৷ একটা বাচ্চাকে যদি ছোট বয়সে অ-আ-ক-খ না শিখিয়ে ২০ বছর বয়সে গিয়ে আপনি তাকে শেখাতে যান, সেটা কিন্তু অনেক বেশি সমস্যাজনক হবে৷’
এমন অনেক ডিসঅর্ডার আছে যা শুধুমাত্র ওষুধ দিয়ে সারিয়ে তোলা যাবে না৷ এর চিকিৎসা বিশেষ পদ্ধতির ফিজিওথেরাপি৷ আবার অনেক ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপির সঙ্গে সঙ্গে সাইকোলজিক্যাল থেরাপিও দরকার হয়৷ ডাঃ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘একটা শিশুকে দেখেছি, সে টাচ সেন্সিটিভ৷ বাচ্চাটা চায়ই না যে তাকে কেউ ধরুক৷ তাই সামাজিকভাবে সে মানিয়েও নিতে পারে না৷ এটা কিন্তু কোনও মানসিক রোগ নয়, এটা একটা ডিসঅর্ডার৷ এর থেকে সামলে উঠতে শিশুকে মানসিকভাবে উৎসাহ দিতে হবে৷ এর জন্য আবার নির্দিষ্ট কিছু সেনসরি টেকনিকও আছে৷’
যেহেতু এই চিকিৎসাগুলো এক-আধদিনে হয় না৷ কারণ এই রোগগুলিও পেটে ব্যথা, গ্যাস বা অম্বলের মতো চট করে ওষুধ খেয়ে সেরে যাওয়ার নয়৷ এই সমস্যাগুলো যেতে সময় লাগে৷ আবার অনেক ডিসঅর্ডার কোনওদিনই পুরোপুরি যায় না৷ ধরুন কারও মেরুদণ্ডটা বাঁকাক্ট যদি এটা সারানো সম্ভবও হয়, প্রচুর সময় লাগবে৷ মনে হতে পারে, থেরাপি করে কী লাভ যদি রোগটা নাই সারেঞ্জ আসলে থেরাপিটা যদি রোগী না নেন, তাঁর মেরুদণ্ড বাঁকা হওয়ার ফলে মাসকুলার ডেভেলপমেন্ট এবং ডিসট্রিবিউশনও অস্বাভাবিক হবে৷ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে ব্যথা, চলাফেরার ক্ষমতা কমতে থাকবে৷ হয়ত ৫০ বছর বয়সে বিছানায় পড়তেন, সে জায়গায় ২০-তেই তিনি চলৎশক্তি হারিয়ে ফেলবেন৷
আসলে ফিজিওথেরাপির লক্ষ্য হল রোগীর অবস্হাকে উন্নত করা, যাতে তিনি সুস্হভাবে বাঁচতে পারেন৷ অনেক ক্যান্সারই সারে না যখন, রোগীকে সাপোর্টিভ কেয়ারটা দেওয়া হয়৷ যেমন ব্যথাটা কমানো হয়, যাতে মানুষটা হেঁটে-চলে বেড়াতে পারেন, নিজের কাজগুলো নিজে করতে পারেন৷ এক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তেমনই৷ ডাঃ সোমা ভট্টাচার্য বলছেন, ‘সব চিকিৎসার লক্ষ্য সম্পূর্ণ সুস্হতা রাখা হয় না, হওয়া সম্ভবও নয়৷ এই ধরনের চিকিৎসায় তাই ছোট ছোট লক্ষ্য রেখে প্রতিদিন এগোনো হয়৷ আজকে যে শিশু সেরিব্রাল পলসিতে ভুগছে, তার হয়ত লক্ষ্যটা হবে সে নিজে একটা ফল তুলে খেতে পারল৷ এই সমস্যাগুলিতে ভোগা শিশুরা ছোট কোনও একটা কাজ নিজে করার লক্ষ্যপূরণ করলেও সেটা তার আর তার পরিবারের কাছে অনন্য এক প্রাপ্তি হয়৷’
(সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৬ রাত ২:৫২