আমার দেখা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সমুদ্র সৈকত হচ্ছে কক্সবাজার সৈকত। অবশ্য এ পর্যন্ত দেশ দেখেছি মাত্র চারেক, কাজেই সৈকত নিয়ে আমার এই র্যঙ্কিং খুব রিলায়বল না হলেও, অনেক বাঘা বাঘা পর্যটকেরও একই মত। বিদেশের মাটিতে কক্সবাজারের সৈকত মিস করে এমন কাউকে পাওয়া যাবেনা।
কয়েকদিন আগে সিঙ্গাপুরের এক সমুদ্র পাগল এক দেশী ভাই বললেন, ভাই লাঙ্কা ইউ ঘুরে আসেন। ফাটাফাটি অবস্থা। কক্সবাজার যদি লেটার মার্ক পায়, এইটা কমসে কম ফার্স্ট ডিভিশান পেয়ে যাবে। যাওয়ার খরচও কম। এশিয়া এয়ারলাইন্সের টিকিট ২৫-৩০ ডলার, ৪০ মিনিটের ট্রিপ। ওখানে নিজে ড্রাইভ করার জন্যে গাড়ি পাবেন, বীচের পাশ দিয়ে লং ড্রাইভে যাবেন। গেলে মাথা ঘুরে যাবে।
ভাই সাহেবের কথা শুনে আমি মাথা ঘুরানোর জন্যে ব্যাকুল হয়ে গেলাম। এর প্রথম ধাপ হিসেবে অফিসে ছুটি নিয়ে সপরিবারে চারদিনের ভ্যাকেশন ট্রিপ প্ল্যান করে ফেললাম। চরম উত্তেজনা। আমার উত্তেজনা দেখে আমার সিনিয়র বললেন, যাও ঘুরে আসো, এসে কেমন লাগলো জানিও, আমিও দেখি যাবো ফ্যামিলি নিয়ে।
এক নামকরা বাবুর্চি ডাল রান্না করতে বসেছে। চুলা জ্বালালো, পানি বসালো, লবন-মরিচ সবই দিলো, তবু রান্না করে দেখা গেলো কিছুই হয়নি, কারণ দেখা গেলো সে রান্নায় ডালই দেয়নি, আমারও হয়েছে সে অবস্থা। সব প্ল্যান করা হলেও প্লেনের টিকিটই কাটা হয়নি। যাওয়ার কয়েকদিন আগে টিকিট কাটতে গিয়ে মাথায় বাড়ি পড়ার মতো অবস্থা, আমার ছুটি অনুযায়ি টিকিট কাটতে গিয়ে দেখি একেকটা টিকিট চারশো ডলারের বেশি, এটা দিয়ে আমি আসল কক্সবাজার ঘুরে আসতে পারি।
লাঙ্কা ইউ প্ল্যান বাদ! এই ছুটি নিয়ে আমি কী করিবো ভাবতে ভাবতে মুখ অন্ধকার করে ঘুরতে লাগলাম। এক সহকর্মী উপদেশ দিল, টিওমান আইল্যান্ড ঘুরে আসো, ফাটাফাটি অবস্থা। পুণরায় উল্লাসিত হবার আগে সাবধান হলাম। গেলাম কাছাকাছি ট্রাভেল এজেন্সিতে। অপারেটর দিন তারিখ শুনে সবকিছু চেক করে, মাথা নাড়তে থাকলো, সবই ঠিক আছে, কিন্তু যেদিন যেতে চাচ্ছো সেদিন ফেরির সব টিকিট কোন একটা কোম্পানি তার সব এম্লয়ির জন্যে বুক করে রেখেছে। তুমি এক কাজ করো, মেলাকায় ঘুরে আসো। অসাধারণ জায়গা। আমি খুশিতে লাফ দেওয়ার আগে মহিলার চিন্তিত মুখ দেখে থেমে গেলাম। “তবে চারদিনের না, তিন দিনের ট্রিপ নিতে হবে।” মহিলার উত্তর, “আর ঘুরে বেড়ানোর মতো বীচ নেই। তবে জায়গাটা ভালো। অনেক মিউজিয়াম, হিস্টরিক প্লেস আছে দেখার মতো। একটা ভালো প্যাকেজ আছে, নিয়ে নাও।”
কী আর করা, বীচ না দেখতে পাই, পুরোনো মুর্তি-টুর্টি দেখেই ছুটি পার করবো, তবু “ছুটি যেতে নাহি দেবো হারাতে।”
সপরিবারে রওনা দিলাম, মিউজিয়ামের শহর মেলাকায়।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৫ সকাল ১০:৩৫