বিশ্ব জয়ের স্বপ্নঃ সবাই মিলে!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত লেখালেখির এক আশ্চর্য জগতের মধ্যে ডুবে ছিলাম, কাঁধে চটের ব্যাগ ঝুলিয়ে পত্রিকা অফিসে যাই, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ছাদে গুরু-গম্ভীর আড্ডা দেই, চারু কলায় গিয়ে গলা ছেড়ে গান গাই বন্ধু নিয়ে। সাহিত্য-সাংবাদিকতা করে সৃষ্টিশীল জীবন পার করে দেবো এই রকম একটা লক্ষ্য নিজের অজান্তেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্ত সেই সুখ বেশীদিন সইলো না। বাবা বিজ্ঞানের লোক বলে মোটামুটি ধরে বেঁধে ভর্তি করে দিলেন বেসরকারী বিশ্ববদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানে।
প্রোগ্রামিং তো দূরে থাক, সারা জীবনে কম্পিউটারও অন করে দেখিনি। সুতরাং আমি পড়লাম অথৈ সাগরে। কম্পিউটার ল্যাবে গিয়ে পাশের সহপাঠিটিকে অনুরোধ করি টার্বো প্যাসকেলের নীল স্ক্রীণটা এনে দিতে। টীচার এসে ক্লাসওয়ার্ক দেন। সবাই খটাখট প্রোগ্রাম লেখা শুরু করে। আমি ঘামতে থাকি, ঢোঁক গিলতে থাকি, তাতে কোন বিশেষ সুবিধা হয় না। প্রোগ্রামিং-এর সাথে ঘামানো বা ঢোঁক গেলার কোন সম্পর্ক নেই। শুকনো মুখে প্রায় খালি স্ক্রীণ রেখে ক্লাস শেষ করি।
প্রথম কয়েকটা ক্লাস এভাবেই গেল। আমার একটা সমস্যা হলো যেকোন জিনিস চট করে ধরতে পারি না। একটু সময় লাগে (এখনো কেউ নতুন কিছু বুঝিয়ে বললে প্রথম কতোক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে থাকি)। তবে খানিকটা লেগে থাকলে যে কোন বিষয় ধরা দিতে থাকে আমার কাছে। প্রোগ্রামিং-এর ক্ষেত্রেও তাই হলো। আস্তে আস্তে এখানে স্বচ্ছন্দ বোধ করতে থাকলাম। মনুষ্য সাহিত্যের চাইতেও কম্পিউটারের জন্যে গল্প-গাঁথা তৈরি কম ইন্টারেস্টিং মনে হলো না।
আমার প্রোগ্রামিং-এর প্রতি এই গভীর ভালোবাসা তৈরির পেছনে যেক'জনের অবদান আছে তাদের একজন মশিউর ভাই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র ভাই। এসিএম প্রোগ্রামিং টিমের দলপতি ছিলেন, দেশে বিদেশের বড় বড় প্রতিযোগিতায় ভালো অবস্থান দখল করেছেন। তখন সবেমাত্র পাশ করে লেকচারার হিসেবে জয়েন করেছেন। তার প্রথম ছাত্রদের মধ্যে আমিও একজন। প্রোগ্রামিং-এ আগ্রহ দেখে নানা উৎসাহ দিতেন। একদিন মশিউর ভাই বড় ধরণের একটা চমক দিলেন। সিঙ্গাপুর থেকে একটা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ফেরার পথে আমার জন্যে একটা সুন্দর নোটবুক আর দামী কলম নিয়ে এলেন। নোট বুকে লিখে দিলেন - "To My First & Best Student"। উপহার পেয়ে আমি ঘাবড়ে গেলাম। সাধারণত ছাত্ররা বেশী গ্রেডের আশায় টিচারকে উপহার দেয়, এখানেতো দেখি ঘটনা উলটো! কী তার করা, বেশী করে প্রোগ্রামিং করতে থাকি, কোনভাবেই সাধারণ রেজাল্ট করা যাবেনা।
সে সেমিস্টারে মশিউর ভাই'র সি প্রোগ্রামিং-এর কোর্সে ১০০ তে ১২৮ পেয়েছিলাম (সি প্রোগ্রামিং-এ ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যপক ফেল রোধে ভালো-খারাপ সবাইকে ১০ করে তিনবার গ্রেস দেয়া হয়েছিল!)।
প্রোগ্রামিং ভালো লাগার করণে পুরো কম্পিউটার বিজ্ঞান স্নাতক শেষ করতে আর বেগ পেতে হয়নি।
এরপরে দেশে প্রায় ন'বছর কাটিয়ে দিলাম। এই নাতিদীর্ঘ সময়টিতে অনেকের মধ্যেই এই নেশাটি সঞ্চারিত করেছি। তবে একটা সময়ে একঘেঁইয়েমিও পেয়ে বসতে থাকলো। কারণ এখানকার প্রোজেক্টের চ্যালেঞ্জ সীমিত। ঠিক করলাম বাইরে যাবো।
আমার দেশান্তরী হবার কথা শুনে পেশা জগতের অনেক বন্ধু-শুভাকাঙ্খী দুঃখিত গলায় বলেছিলেন, না গেলেই কি নয়? তাদের হয়ত ধারণা হয়েছিল, আমি চলে গেলে দেশের সফটওয়্যার শিল্পের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। তবে আমার ধারণা, দেশের সফটওয়্যার শিল্পের চাইতেও ব্যক্তিগতভাবে তারা আমাকে পছন্দ করেন বলে এমনটা বলছেন।
তবু মনের ভেতর একটা খচখচ করছিল, গেলাম মশিউর ভাই'র কাছে। মশিউর ভাই হালকা ধমকের গলায় বললেন, বিদেশে বড় আকারের কাজ করলে তোমার যে অভিজ্ঞতা হবে, সেটা দিয়ে দেশকে অনেক কিছু দিতে পারবে, এবং সেটা তুমি ফিরে এসে কিংবা বিদেশে বসেই করতে পারবে। আর কোন দ্বিধা থাকলো না। পা দিলাম প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর একটিতে।
এতোক্ষণ ভূমিকা করলাম। এবার আসল কথায় আসি। আমার অনেকগুলো স্বপ্নের একটি হলো দেশে আন্তর্জাতিক মানের একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান তৈরি করা। আমাদের দেশে অনেক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান থাকলেও "ট্রু" সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান একটিও নেই, যেটি মাইক্রোসফট, গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর মানের সাথে পাল্লা দিতে পারে।
আমি জানি দেশের প্রেক্ষিতে এরকম একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু অসম্ভব নয়। এজন্যে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার পাশাপাশি দেশের প্রেক্ষিতে কিছু কাজও শুরু করেছি। এর মধ্যে একটি হলো, বিভিন্ন পলিসি মেকারদের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাজ করা, যেন দেশে বিশ্বমানের ডেভেলপারদের একটা নিয়মিত যোগান তৈরি হয়। পত্রিকায় কিছু লেখা লেখিও শুরু করেছি। সামনে কিছু ভার্চুয়াল (এবং দেশে থাকার সময়টিতে কিছু একচুয়াল) ইভেন্ট করার ইচ্ছা আছে।
এরকম একটি প্রতিষ্ঠান তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটিতে অনেককেই দরকার হবে আমার পাশে। এক্ষেত্রে কারো মতামত বা পরামর্শ থাকলে ইনবক্সে বা কমেন্টে জানাতে পারেন। দেশে এধরণের প্রতিষ্ঠান কেউ করতে চাইলেও যোগাযোগ করতে পারেন আমার সাথে। সামনেই দেশে আসছি। চাইলে কথা হতে পারে সামনা সামনি!
যারা সবে মাত্র কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়ছেন কিংবা মাত্র পেশা জীবনে ঢুকেছেন, যোগাযোগ রাখতে পারেন তারাও। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী কিছু দিক-নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করবো। তবে শর্ত একটাই সফটওয়্যার প্রকৌশলে লং টার্ম কমিটমেন্ট থাকতে হবে।
শুরুটাতো আগে করি। দেখা যাক, কতোদূর যাওয়া যায়!
সবার জন্যে শুভ কামনা। শুভ চিন্তার জয় হোক!
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন