অনেক দুঃখের মধ্যেও প্যালেস্টাইন কিংবা সিরিয়ার মতো দেশগুলোর মানুষদের সান্ত্বনা সরাসরি কিছু না করতে পারলেও সারা পৃথিবীর সব বিবেকবান মানুষ তাদের পাশে আছে। নানাভাবে অত্যাচারী পক্ষের ওপর রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক চাপ বাড়ছে। হয়ত একটা সময় তাদের ওপর এই অত্যাচারের অবসান হবে আশা করা যায়।
কিন্তু যে আশা করতে ভরসা হয় না, বছরের পর বছর আমাদের দেশে নিত্য যে গণহত্যা হচ্ছে সেটা একদিন বন্ধ হবে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যান সমিতির হিসেবে শুধু সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে এবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রায় ৩,৮০০ মানুষ নিহত হয়েছেন, আর আহত হয়েছেন ১০,০০০ জনের বেশী। শুধু এই সংখ্যাগুলো পৃথিবীর যেকোন যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে বাৎসরিক নিহতের সংখ্যার চাইতেও বেশী।
এটা শুধু সড়ক পথে দুর্ঘটনার হিসাব। নৌপথে প্রতিবছর লঞ্চডুবির কারণে এই মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে হাজার হাজার প্রাণ। একসাথে কয়েকশত মানুষের মৃত্যু হয় বলে সড়ক দুর্ঘটনার তুলনায় সংবাদে লঞ্চডুবির কভারেজ বেশী হয়। কর্তা-ব্যক্তিরা একটু নড়ে চড়ে বসেন। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। ভাবটা এমন তদন্ত কমিটি করে মোটামুটি বড় একটা দায়িত্ব পালন করা হয়ে গেল। কিন্তু গত কয়েক বছরে এই তদন্ত কমিটিগুলোর অন্তঃসারশূন্যতা সমস্ত ঘটনাগুলোকে নিষ্ঠুর রসিকতায় পর্যবসিত করে।
সত্যি বলতে কি প্রতিটা দুর্ঘটনার পরে যথাযথ তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিৎ। এবং সেই তদন্তের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে যেন একই ঘটনার পুণরাবৃত্তি না ঘটে। প্রথমবার ঘটলে সেটিকে দুর্ঘটনা বলা যায়, কিন্ত আর একবারও যদি তার পুণরাবৃত্তি হয়, সেটিকে বলতে হবে হত্যা, শুধু হত্যা নয়, গণহত্যা।
এক্ষেত্রে সংবাদপত্র ও অন্যান্য মিডিয়াগুলো এগিয়ে আসতে পারে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টগুলোর বিস্তারিত এবং সে অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হলো কিনা সে বিষয়ে কঠোর ফলোয়াপ করতে পারে।
দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের মৃত্যুদন্ডসহ সর্বোচ্চ সাজা দিতে হবে। দুর্ঘটনার শাস্তি মৃত্যুদন্ড শুনতে হাস্যকর শোনাতে পারে, কিন্তু এটাই আমাদের বাস্তবতা। এই বাস্তবতার কারণে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ড হতে পারলে, যে অবহেলা হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়, সেটা যে কোন ভয়ংকর অপরাধকে ছাড়িয়ে যায়, তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না করতে পারলে এরকম "দুর্ঘটনা" হতেই থাকবে। যেকোণ মূল্যে এটাকে বন্ধ করতে হবে।
অন্য দেশের গণহত্যার ছবি দেখে যদি আমাদের বিবেক কেঁপে ওঠে, নিজের দেশেরটিতে শুধু বিবেক নয়, অন্তরাত্মাও কেঁপে উঠত যদি আমাদের দেখার চোখ থাকতো। কারণ নিজের দেশের এই গণহত্যার উত্তাপ নিজের বা নিজের প্রিয়জনের গায়েও লাগতে পারে যেকোন মুহূর্ত। অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ হবে না। নিজেরা সোচ্চার না হলে রাজনীতিবিদরা বড় আকারের দুর্ঘটনার পরে কয়েকশ' ছাগল ক্ষতিপূরণ দিয়ে কয়েককোটি মানুষকে ছাগল বানিয়ে রাখবে, বরাবরের মতোই।