somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এলোমেলোভাবে বিদায়,অতঃপর হাতছানি

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুরবানীর সপ্তাহখানেক আগে থেকেই উত্তেজনা কাজ করতো,কবে যে গরু কিনতে যাবো সব ভাই,চাচারা মিলে! গরু নিয়ে বাড়ীতে আসলে গরুর খাবার দেয়া,গোসল করানো এসব নিয়ে মেতে থাকতাম,সন্ধ্যায় গরুকে সামনের ঘরে ঢুকিয়ে ভেজা খড় জ্বালিয়ে ধোঁয়া দেয়া হতো। প্রায় সারাদিন গরুর পাশে ঘুরঘুর করতাম আর একে ওকে ডেকে এনে গরু দেখাতাম…

বিজয় দিবস,স্বাধীনতা দিবসের প্রায় ১০/১৫ দিন আগে থেকে স্কুলে মার্চ/ডিসপ্লে'র মহড়া চলতো স্কুলে। ক্লাসের নির্ধারিত সময়ের এক ঘন্টা আগে আসতে হতো অনুশীলন চলাকালীন সময়ে। অপেক্ষায় থাকতাম,কবে আসবে সে কাঙ্খিত দিন! হাই স্কুলে উঠার পর মার্চ করতাম না আর,তাও এসব জাতীয় দিবসের আগমন উপলক্ষে অন্যরকম আনন্দ কাজ করতো,ভালো লাগতো দিনের প্রথম প্রহরে ধারাবাহিক তোপধ্বনি শুনতে,ভোরবেলায় ড্রামের তালে তালে স্কুলগুলোর ছেলেমেয়েদেরকে পায়ে পায়ে তাল মিলিয়ে স্টেডিয়ামে আসতে দেখতে,ভালো লাগতো পুরো শহরকে লাল-সবুজে ঢেকে যেতে দেখতে,মুখে পতাকা আঁকা,হাতে পতাকা নেয়া,মাথায় ব্যাণ্ড বাঁধা শিশু,কিশোর,তরুণ,মধ্যবয়েসী ও বৃদ্ধদের দেখতে
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষেও একসময় কেনাকাটা করতাম,নতুন পাঞ্জাবী,জুতো। নববর্ষের আগে বাসায় পান্তা-ইলিশ বানানোর ফরমায়েশ করে রাখতাম,বর্ষবরণের মেলায় ঘুরে বেড়াতাম…বাঁশী,ঘুড়ি,মাটির ব্যাঙ্ক কিনতাম…পুতুল নাচ দেখতাম,নাগরদোলায় চড়তাম…নানা রঙে রঙীন লোকগুলোকে দেখতে ভালোই লাগতো বেশ,আমিও রঙীন…বড় কথা এই যে নববর্ষের সব রঙ কেমন যেন জীবন্ত লাগতো…

ইংরেজী নববর্ষের শেষ দিন,থার্টি ফার্স্ট নাইট। আত্মীয়স্বজনের সাথে রাতে বের হয়ে সাগরপাড়ে ঘুরতে যেতাম,২৫/৩০ জনের বহর…সাগরপাড়েই হতো পারিবারিক আনন্দ অনুষ্ঠান,চটপটি-ফুচকা খাওয়া হতো,সবাই একসাথে সাগরের পাড় ঘেঁষে হাঁটা হতো ক্রোশের পর ক্রোশ…এরপর কোন রেস্টুরেন্টে ঢুকে জম্পেশ ভোজ চলতো…
ঈদের সম্ভাব্য আগের দিন পাড়ার সব ছেলে মিলে দূরে ধানক্ষেতের মাঝে চলে যেতাম চাঁদ দেখতে,চাঁদ না দেখা গেলে চাঁদের উপর অভিমান করে ফিরে আসতাম…ঈদ আরো একদিন পরে হবে,মন যেন আর মানতেই চায়না…তবে পরেরদিন চাঁদ দেখার নিশ্চয়তা নিয়ে চাঁদ দেখতে যেতাম পটকা,বাজী আর 'লাদেন বোমা' নিয়ে…চাঁদ দেখা গেলে ৩০/৪০ জন ছেলে সবাই মিলে পাড়ায় এসে বাজী ফোটাতাম আর চিৎকার চেঁচামেচি করতাম। ঈদের দিন তখন আক্ষরিক অর্থেই 'ঈদের দিন' ছিলো। সেলামী পাওয়া,সব আত্মীয়কে একসাথে পাওয়া,খাওয়াদাওয়া,নতুন কাপড়…আনন্দের উৎসের কোন অভাবই ছিলোনা…

এখন আমার সেই শৈশব আর নেই…এখন কুরবানীর গরু কিনতে যাইনা হাটে,বিজয় দিবস কোন দিক দিয়ে যায় খেয়াল থাকেনা,থার্টি ফার্স্ট নাইট মানে এখন কেবলই বছরের শেষ,নববর্ষ মানে এখন শুধু অন্য ছুটির দিনের মতো ঘুরতে বের হউয়া আর ঈদ মানে কেবলই লম্বা ছুটি…আমি আর শিশু নেই,পৃথিবীটাও আমার চোখে আর রঙীন নেই…

অনেকে বলে যে তারা তাদের শৈশব ফিরে চায়,আমি চাইনা। শৈশব মানে আমার কাছে ঘোরের মাঝে থাকা,শিশুরা সব কিছুতেই আনন্দ খুঁজে পায়; কারো ঘর পুড়তে দেখলে হোক বা সাঁতার না জানা কাওকে পানিতে পড়তে দেখলে বা কাওকে ছাদ থেকে পড়ে যেতে দেখলে হোক। সেক্ষেত্রে শৈশবের বিদায়ের সাথে সাথে আনন্দের সীমারেখা সংকীর্ণ হয়ে আসা আমার জন্যে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু নয়…বিদায় শৈশব,অন্য শিশুদের সংস্পর্শে ভালো থেকো…স্বাগতম যৌবন…
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×