somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি মৃত্যুদণ্ডের গল্প

২৮ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিবাদী পক্ষের উকিলঃ- আপনি যখন আপনার বোন রিশিতা আফরোজের সাথে রাজিন খন্দকার সাহেবকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় আপনাদের ঘরে দেখতে পেলেন,তখন আপনি কি করলেন?
শিহাবঃ- আমি আপনার রাজিন সাহেবের গলা জড়িয়ে ধরে আলতো করে উনার ঠোঁটে একটি চুমো দিয়েছিলাম শালা মাগীর পুত…

(এজলাসে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে চাপা হাসির দমক উঠে)
বিচারকঃ- হোয়াট ননসেন্স…অর্ডার অর্ডার

উকিল ফরেনসিক রিপোর্টসহ আরো কিছু কাগজপত্র পেশ করে আদালতে।
উকিলঃ- মাননীয় আদালত,আসামী শিহাব আহমেদ আদালতের সামনে ঠাট্রা-মশকরা করার মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগকে পরোক্ষভাবে শিকার করেই নিলেন…উনি এখন ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট করছেন

আরো এক ঘন্টা শুনানী হয়েছিলো সেদিন…বোনের ছেলেবন্ধু রাজিন খন্দকারকে রাগের মাথায় কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ। রায়ের দিন দেয়া হয় আরো এক মাস পর,ফাঁসির সাজা হয় শিহাবের।
আগামীকাল ফাঁসি কার্যকর করা হবে শিহাবের। আগের দিন সে ডাহুকের মাংস দিয়ে বিনি ভাত খেতে চেয়েছিলো। তার মা-বাবা এসে এখন খাইয়ে দিচ্ছেন তাকে…বোন রিশিতা আসেনি; হয় ক্ষোভে,নয়তো লজ্জায়।
-----------------
রিশিতা বের হবে একটু পরেই,মেকআপ নিচ্ছে এখন। বিকেলবেলার জন্যে হালকা মেকআপ মানানসই,সেও তাই করছে। টিয়ে সবুজ রঙের শর্ট কামিজের সাথে সাদা ধুতি স্যালোয়ার,কানে ছোট ছোট হোয়াইটগোল্ডের কানফুল,চুল পেছনে করে বেঁধে নিয়েছে…বেশ মানিয়ে গিয়েছে রিশিতাকে।
আজ ভালোবাসা দিবস,ভালোবাসার রঙ নাকি লাল…ভালোবাসার সাথে হৃৎপিণ্ডে প্রবাহমান ঊষ্ণ রুধিরধারার সম্পর্ক রয়েছে বলেই হয়তো ভালোবাসা সম্পর্কিত যেকোন কিছুতে লাল রঙের প্রভাব থাকে,যেমন রিশিতাকে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে রাজিনের দেয়া সাদা মগটিতেও লাল রঙের দুটো পাখির ছবি রয়েছে। রিশিতার কোন লাল কাপড় নেই,তার পছন্দ না।
রিশিতা এখন যাবে রাজিনের সাথে দেখা করতে,রিশিতাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে…তাদের বাসায় এখন কেও নেই,তার মা-বাবা গিয়েছে এক আত্নীয়ের বাসায়,আর ছোট ভাই শিহাব পিকনিকে। রিশিতা দরজা তালা মেরে বেরিয়ে যায়,সময় এখন সোয়া চারটা।
রাজিনের সাথে রিশিতার সম্পর্ক ছয় মাসের,বিভিন্ন সময় তারা ঘুরতে গেলেও একান্তে সময় পার করার সুযোগ তেমন আসেনি,আজ ও হয়তো হবেনা…ক্যাম্পাসে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করেই ফিরে আসবে সে।
রাজিনকে দেখতে পায় রিশিতা,গায়ে কমলা পাঞ্জাবী ও হাতে একতোড়া লাল গোলাপ…রিশিতার গাল ঈষৎ লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
বেশ অনেকক্ষণ তারা হাঁটাহাঁটি করলো ক্যাম্পাসে,ক্যাফেটেরিয়ায় বসে নাস্তা করলো…যাবার সময় রাজিন বললো সে রিশিতাকে নামিয়ে দিয়ে আসবে,রিশিতাও রাজী। রিকশা করে বাসায় ফিরবার সময় রিশিতার মনে হলো রাজিন কেমনভাবে যেন তার দিকে তাকাচ্ছে,কাঁধে-হাতে হাত বুলাচ্ছে। সেও কিছু বললো না…রাজিন জিজ্ঞেস করলো বাসায় কে আছে,রিশিতা বললো যে কেও নেই…
রিশিতাদের বাসা চার তলায়,রাজিন রিকশা ভাড়া দিয়ে রিশিতার পিছু পিছু উঠে এলো এপার্টমেন্টে। রিশিতার এখন কিছুটা ভয় লাগছে,যা হতে যাচ্ছে তার নয়; হঠাৎ কেও চলে আসতে পারে তার ভয়…
রিশিতাঃ- তুমি সোফায় বসো,আমি চেঞ্জ করে আসছি
রাজিন সোফায় বসলোনা,রিশিতার পিছু পিছু তার রুমে চলে গেলো,এদিকে দরজা বন্ধ করতে খেয়াল নেই কারোরই…
সন্ধ্যা ৭টায় শিহাব পিকনিক থেকে বাসায় এলো,এসে দেখে দরজা হাঁ করে খোলা…ভেতর থেকে গোঙানীর আওয়াজ শুনে সে গিয়ে রিশিতা ও রাজিনকে অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখতে পেলো…তারাও শিহাবকে দেখে তড়িঘড়ি করে কাপড়চোপড় ঠিক করার চেষ্টা করে…
মাথায় খুন চেপে গিয়েছে শিহাবের,রান্নাঘর থেকে বঁটি দা এনে এলোপাতাড়ী কোপাতে থাকে রাজিনকে,রিশিতা ততক্ষণে বাথরুমে ঢুকে ছিটকিনি দিয়ে দিয়েছে…তাকেও হয়তো সেদিন রাগের মাথায় খুন করে ফেলতো শিহাব। টানা ২ ঘন্টা বাথরুমে বসে থাকে রিশিতা…তাদের বাবা মা এসে রিশিতার রুমে ঢুকে দেখে সারা মেঝে রক্তে একাকার,শিহাব দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে,পাশে রাজিনের নগ্ন মৃতদেহ,কোপের চোটে পাকস্থলী আর একটি চোখ বেরিয়ে এসেছে…মায়ের চিৎকার শুনে লোকজন জড়ো হলো…রিশিতাকে বের করা হলো বাথরুম থেকে…
পুলিশ এসে গিয়েছে,শিহাব তখন থেকে কাওকে আর একটি কথাও বলেনি…বাথরুম থেকে বেরিয়ে রাজিনের মৃতদেহ দেখে যখন রিশিতা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো তখনই তেড়ে গিয়ে তার তলপেটে লাথি বসিয়ে দেয় শিহাব,ছিটকে মেঝেতে পড়ে যায় রিশিতা…শিহাবকে নিয়ে যায় পুলিশ…ঘড়িতে সময় এখন ৯টা…
-----------
শিহাবঃ- আব্বা-আম্মা,আমি যাইতেছি…আপনারা ভাল থাইকেন…আমি গুণাহ করছি,তাই আমি সাজা পাইতেছি,কাইঁদেন না
(বাবা আলফাজ ও মা শিরীন কোন কথা বলেন না…সম্ভবত তাঁরা গুণাহ-সউয়াবের হিসেব মেলাতে পারছেন না…অনবরত কেঁদে চলছেন)
শিহাবঃ- আফারে আমার সালাম দিয়েন,কিন্তু এডিও বইলা দিয়েন যে তারে আমি মাফ করুম না…আল্লাহর দরবারে বিচার দিমু আমি…
মাফ করুম না,মাফ করুম না…
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×