somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বস্ত্রবিসর্জন ও জরায়ু বিতরণে নারীমুক্তি!!

২৪ শে মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন চোর বা ডাকাতদল যখন কোন গৃহস্থের বাড়ীতে চুরী বা ডাকাতি করতে ঢুকে তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা জানেনা যে বাড়ীতে কি কি সম্পদ কি পরিমাণে আছে। তবে তারা নিশ্চিত থাকে যে সম্পদ আছেই,কারণ তারা সেসব সম্পদ অন্যকে ব্যবহার করতে বা প্রদর্শন করতে দেখেছে…
চোর ডাকাত টিভির শোরুম,কম্পিউটারের শোরুম দেখে এবং রাস্তাঘাটে অন্যকে মোবাইল/ট্যাব ব্যবহার করতে দেখে জানতে পারে যে মানুষ এসব মূল্যবান জিনিস সাথে নিয়ে ঘুরে এবং বাসায় এসব রাখে,রাস্তায় রমণীর গলায় স্বর্ণালঙ্কার দেখে জানতে পারে যে এসব অলঙ্কার বাসাতেই সংরক্ষিত থাকে…
গৃহস্থেরাও জানে যে তাদের বাড়ীতে সংরক্ষিত এসব সম্পদের প্রতি চোর/ডাকাতের লোভ আছে,তাই তারা সম্পদ রক্ষার জন্যে কতো কিছুই না করে,স্টীলের আলমারী,সেফটি ডোর,সিসিটিভি,গার্ড ইত্যাদি ইত্যাদি…
ব্যপারটা কেমন হতো যদি সম্পদশালীরা তাদের সম্পদের স্তুপ রাস্তার পাশে দিনরাত সাজিয়ে রেখে বলতো ''আমি আমার সম্পদ কোথায় রাখবো তা আমাকে শিখিও না,তোমার সন্তানকে শিক্ষা দাও সে যেন আমার সম্পদ চুরী না করে''...???

তেমনি আমরা কিছু আত্মস্বীকৃত 'প্রগতিশীল' ও 'আধুনিকা' দের মুখে একটি অমিয় বচন খৈয়ের মতো ফুটতে দেখি ''ডোন্ট টিচ মি হাউ টু ড্রেস,টিচ ইউর সন নট টু রেইপ'' অর্থাৎ ''আমি কি কাপড় পরবো তা আমায় শিখিয়ো না,তোমার ছেলেকে ধর্ষণ না করতে শিক্ষা দাও''।
পুরুষ কেন নারীর প্রতি আকর্ষিত হয়? মেয়েদের যেসব বিশেষত্ব আছে তার কারণে নয় কি? একজন মেয়ে নিজেকে 'মুক্ত' করতে গিয়ে আগে নিজের দেহকে কাপড়চোপড়ের আচ্ছাদন থেকে যথেচ্ছভাবে মুক্ত করে,এতেই নাকি নারীমুক্তি!
একজন মেয়ে ছোট কাপড় পরে অন্যের কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে,নিজের রূপকে অন্যের চোখে প্রকট করে তুলতে…এ বিষয়ে একটি মার্কিন কৌতুক আছে ''বিকিনি হলো কাঁটাতারের বেড়ার মতো যা আপনাকে সম্পদে প্রবেশ করতে দেবেনা অথচ দেখতে দেবে''…আর দেখা মানেই সম্পদের প্রতি আকর্ষণ,সম্পদ যতো বেশী আকর্ষণীয়,আকর্ষণের মাত্রাও ততো বেশী হউয়া স্বাভাবিক। আর নারী পুরুষের মধ্যেকার যে আকর্ষণ তা সৃষ্টির শুরু থেকে ধ্রুবক; আদি ও অনন্য…এতোশত বছর পরেও নারী ও পুরুষ একে অন্যের প্রতি আসক্তির হার বিন্দুমাত্র কমাতে সক্ষম হয়নি; এটি স্বয়ং ঈশ্বর কতৃক নির্ধারিত একটি প্রক্রিয়া যা মানবজাতিকে বংশবিস্তারের দিকে এগিয়ে নেয়।
তথাপিও নারী ও পুরুষের মধ্যেকার ক্ষমতার প্রধান সীমারেখা এই যে,একজন পুরুষ না চাইলে নারী জোর করে তার সাথে কোন যৌনসম্পর্ক গড়তে পারেনা,অথচ পুরুষ তা পারে এবং আমরা সচরাচর তা ঘটার খবর পাই (ধর্ষণ)…
ধর্ষণ একটি ঘৃণ্য অপরাধ,জঘণ্যতম সামাজিক ব্যধি…তাও সব দোষ যে ধর্ষকের একার- একথা পুরোপুরি মিথ্যে। ধর্ষক ধর্ষণে প্রভাবিত হয় নারীর পোষাকআশাক,চালচলন,কথাবার্তা ইত্যাদির কারণে প্রলুব্ধ হয়ে,নারীদের মধ্যে যারা উগ্র চালচলনে অভ্যস্ত তারা এটাই চায় যে পুরুষেরা তাদের দেখে প্রলুব্ধ হোক,লালা ঝরাক এবং কামাগ্নিতে ভস্ম হোক এবং নারী এই ভস্মীভূতকরণের দৃশ্য কল্পনা করে আনন্দ পায়। কিন্তু কথা তো এমন নয় যে রাস্তায় জিন্সের প্যান্ট পরা,গেঞ্জি পরা সব মেয়েই ধর্ষণের শিকার হয় কিংবা এদের দেখলেই যে কেও ধর্ষণ কর; কারণ ধর্ষণ মানুষ করেনা,পশুরা করে। একজনের মধ্যে যখন ধর্ষণের প্রবৃত্তি জেগে ওঠে সে তখন আর মানুষের পর্যায়ে অন্তর্ভূক্তির যোগ্য থাকেনা…সে তখন দেখেনা তার সামনে কে আছে…আমরা এমন অনেক খবর পেয়েছি যে সন্তানের হাতে মা ধর্ষিত হয়েছে (নাউজুবিল্লাহ),ভাইয়ের হাতে বোন ধর্ষিত হয়েছে (নাউজুবিল্লাহ),বাবার হাতে মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে (নাউজুবিল্লাহ),ছেলেশিশু ধর্ষিত হয়েছে,৬ মাসের কনায় ধর্ষিত হয়েছে…কিন্তু এসব ঘটনা কি ধর্ষণের পেছনে পোষাকআশাক ও চালচলনের দায়কে মিথ্যা প্রমাণিত করে???
এটি বিবেচনা করতে আপনাকে আমার লেখার প্রথম প্যারায় ফিরে যেতে হবে যেখানে সম্পদশালী গৃহী আর তক্ষকের কথা বলা আছে। সেটির মতো একজন নারীর যেসমস্ত অঙ্গের প্রতি পুরুষের আসক্তি থাকে,প্রত্যেক মেয়েকে উলঙ্গ অবস্থায় না দেখেও একজন পুরুষ জানে যে সব মেয়েরই সেসব আছে। কারণ পুরুষ রাস্তায় বের হলে যৌন উত্তেজক পোষাক ও অঙ্গভঙ্গী করা মেয়েদের দেখতে পায়,টেলিভিশনে দেখতে পায় যৌন উত্তেজক আইটেম গান,বিলবোর্ডে দেখে অর্ধনগ্ন তরুণীদের মোহনীয় ভঙ্গীমার দৃশ্য…
ক্যাটরিনা,সানি লিওনরা ধর্ষিত হয়না,ধর্ষিত হয় কাজ থেকে ফেরা গার্মেন্টসের মেয়েটি,ধর্ষিত হয় বাসার কাজের মেয়েটি,ধর্ষিত হয় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যাওয়া গ্রামের গৃহবধূটি। মার্কেটে,গাড়ীতে লেগিংস,জিন্স,গেঞ্জি পরা মেয়েদের দেখে একজন পুরুষের মনে যে কল্পনা জন্ম নেয়,সে তা বাস্তবায়ন করে তুলনামূলক অসহায় ও দুর্বলের ওপর,তাও না পারলে সমলিঙ্গের ওপর। পর্ণ ভিডিওর এবং আইটেম গানের দৃশ্যগুলো একজনের মাথায় ঘুরতে থাকে,স্বল্পবসনা 'মডার্ণ' মেয়েদের দেখলে তার মস্তিষ্ক পর্ণ এবং সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া 'মডার্ণ' মেয়েটির শারিরীক সাদৃশ্য মিলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে…কিন্তু যেহেতু জনসম্মুখে সেই 'মডার্ণ' মেয়েটিকে কিছু করা হয়ে উঠেনা কিংবা টিভি ভেঙে সানি লিওনকে বের করে আনা সম্ভব হয়না,একজন পুরুষ তার লালসা মেটায় সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা গার্মেন্টসের মেয়ের ওপর কিংবা ৬ মাসের বাচ্চার ওপর।
একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার খেয়াল করুন। স্তনকে প্রাণীবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় 'এক্সটার্নাল সেক্সুয়াল অর্গান' বা 'বাহ্যিক যৌনাঙ্গ'…কিন্তু ৬ মাসের বাচ্চার স্তন,চেহারা বা অন্যান্য অঙ্গ কি এমন অবস্থায় থাকে যা দেখে একজন পুরুষ যৌন উত্তেজনা পেতে পারে? তবু কেন সে শিশু ধর্ষিত হয়?
এখানেই আসল বোঝার বিষয় যে ধর্ষণের পারিপার্শ্বিক প্রভাবক হিসেবে মেয়েদের স্বল্প পোষাকআশাক,চালচলনের উগ্রতা,অশ্লীল ভিডিও,অশ্লীল কথাবার্তা,অনৈতিক জীবনযাপন ইত্যাদি অত্যন্ত মারাত্মক ভূমিকা পালন করে। ধর্ষণের পেছনে অমানুষে পরিণত হউয়া পুরুষের দায় যদি থাকে ৭০ শতাংশ,তাহলে বাকী ৩০ শতাংশ দায়ভার অবশ্যই সে স্বল্পবসনা মেয়েটির যে অশ্লীল পোষাক ও অঙ্গভঙ্গীর দ্বারা পুরুষকে আকর্ষিত করার চেষ্টা করেছে,দায় সেসব ফ্যাশন হাউজ ও চিত্রপরিচালকদের যারা মেয়েদের পরনের পোশাক কমিয়ে তাদেরকে শোকেসে আবদ্ধ পণ্যে পরিণত করেছে,দায় সেসব অভিভাবকদের যারা নিজের মেয়েকে চোখের সামনে বেড়ে উঠতে দেখেও তাকে চালচলন ও পোশাকের ব্যপারে সতর্ক করেন নি।

পরিশেষে একটি ভারতীয় বিজ্ঞাপনের কথা বলি।
গতকাল হোমপেইজে সাকিবকে নিয়ে অনেকের পোস্ট দেখে খেলা দেখতে বসেছিলাম। খেলার ফাঁকে কোকাকোলার একটি বিজ্ঞাপন দৃষ্টি আকর্ষণ করলো-

দীপিকা পাডুকোন পেছনে ফিরে কোক খাচ্ছে,ক্যামেরা তার চুল সরানো উলঙ্গ ঘাড়ে ফোকাস করে রাখা। দীপিকা পেছন ফিরে বলে "আমার ঘাড়ে কি দেখা হচ্ছে? সঠিক দাম তো কোকাকোলার বোতলের গায়ে লেখা থাকে"

এই বিজ্ঞাপনের সারমর্ম হলো যে নারী আর কোকাকোলা দুটোই অর্থের সাথে বিনিময় করা গেলেও দামটা কেবল কোকের বোতলেই লেখা থাকে। এভাবেই প্রকাশ্য নোংরামীর মাধ্যমে নারীকে পণ্য হিসেবে ঊপস্থাপন করছে কর্পোরেশনগুলো।

নারী তার প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য শত্রুদের চিনে নিক,এই কামনা রইলো।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×