"মাদ্রাসায় সমকামীতার হার বেশী"-
ওপরের মূল্যায়নটি আংশিকভাবে সত্য এবং আংশিকভাবে একচোখা।
আংশিকভাবে কেন সত্য আমি সে আলোচনায় যেতে চাইনা,আমি বলবো এটি কেন একচোখা দৃষ্টিভঙ্গী সেটি।
সমকামীতার উৎপত্তি কি মাদ্রাসায়? অবশ্যই না…আল কুরআন থেকে আমরা জানতে পারি যে আলাহতায়ালা লূত (আ) এর কউমকে ধ্বংস করেছিলেন এই সমকামীতার কারণে…
এ ছাড়াও হিন্দুপুরাণ ও রোমান-গ্রীক পুরাণে দেবদেবীদের সমকামীতার অল্পবিস্তর কিছু ঘটনার উল্লেখ পাই। সেসব কল্পকথা কতটুকু সত্য তা গবেষণার বিষয়,কিন্তু এটি স্পষ্ট যে সমকামীতার ধারণাটি নতুন নয়।
আলোচ্য বিষয়ের গভীরে গিয়ে একটি ক্ষেত্রে অনেকে আলোকপাত করেন যে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদেরকে বিপরীতলিঙ্গের মানুষ হতে সম্পূর্ণ আলাদা রাখা হয়,যার কারণে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তাদের একটি কৌতুহল জাগ্রত হয়। সে কৌতুহল এবং সময়ের সাথে বেড়ে চলা শারিরীক চাহিদা তারা সমলিঙ্গের ওপর মেটায়- আমার আপত্তিটা এখানেই
সুইজারল্যান্ড,জার্মানী,আমেরিকার মতো 'মুক্তমনা' ও ধনী দেশসমূহে বিকৃত যৌনাচারের এমন কোন ঊপাদানের দেখা পাওয়া যাবেনা যার উপস্থিতি নেই।
সেগুলোর মধ্যে থেকে কিছু ঊদাহরণঃ-
* পশু পতিতালয় (টাকার বিনিময়ে পশুর সাথে যৌনাচারের সুযোগ)
* ইনচেস্ট পার্ক (রক্তের সম্পর্কের আত্নীয়ের [মা-বাবা-ভাই-বোন] সাথে যারা সম্পর্কে জড়ায় তাদের জন্য বিনোদনকেন্দ্র)
* বয়ঃবৃদ্ধ সঙ্গম
* প্রতিবন্ধী সঙ্গম
* গে/লেসবিয়ান ক্লাব
* গে/লেসবিয়ান ইউনিয়ন/সোসাইটি
* মৃতদেহ সঙ্গম
* শিট পর্ণোগ্রাফী (মলত্যাগের সময় সঙ্গমের ও মলমূত্র গলঃধরণের দৃশ্য ধারণ)
* মেন্সট্রুয়েশন পর্ণোগ্রাফী (ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে শারীরিক মিলন ও রক্তপানের দৃশ্য ধারণ)
* প্রেগনেন্ট পর্ণোগ্রাফী (৭-৮ মাসের গর্ভবতী নারীর সাথে সঙ্গমের দৃশ্য ধারণ)
* হিজড়া যৌনকর্মী,ইত্যাদি
সেসব দেশে প্রকৃতপক্ষেই নারীপুরুষ উভয়কেই পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়,সেসব দেশের পতিতালয়গুলোর কাচের দেয়াল ঘেরা কক্ষগুলো রাস্তার দিকে মুখ করা থাকে,ছেলে-মেয়ে যৌনকর্মীরা কাচের ভেতর থেকে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গী করে খদ্দের আকর্ষণ করার চেষ্টা করে।
ওসব দেশে কি পর্দাপ্রথা বলবৎ রয়েছে,নাকি মেয়ে-ছেলেকে আলাদা করে রাখা হয়,মুখ দেখার সুযোগ ও দেয়া হয়না? বরং তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় 'সেক্স এডুকেশন' নামে একটি বিষয় অন্তর্ভূক্ত থাকে যার আওতায় ছোটকাল থেকেই শিক্ষার্থীকে যৌনসম্পর্কিত বিষয়াবলীর ধারণা দেয়া হয়,ডিনারের দামে এসকর্ট/যৌনকর্মী পাওয়া যায়। তারা প্রতিদিনকার জীবনে অর্ধোলঙ্গ নরনারী দেখতে দেখতে এসবে অভ্যস্ত হয়ে যাবার কথা,কিন্তু কেন তাদের দেশে ধর্ষণের হার সবচেয়ে বেশী? কেন তারা এরকম অস্বাভাবিক-বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে আসছে?
কারণ হলো বিকৃত রুচিবোধ,নিত্যনৈমিত্তিক কর্মে বৈচিত্র আনার চেষ্টা,সেক্সুয়াল কর্পোরেটদের বাজার সৃষ্টির নিত্যনতুন বিকৃত উদ্ভাবন ও নৈতিক মূল্যবোধের অভাব যা কেবলমাত্র সত্য ধর্মই দিতে পারে।
এবার আসি মাদ্রাসায়…মাদ্রাসা হলো মুসলিমদের বিশেষায়িত ধর্মীয় শিক্ষার প্রতিষ্ঠান। ইসলামের হুকুম অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবেই এসব প্রতিষ্ঠানে নারীপুরুষের অবাধ মিলন সম্পূর্ণরূপে রহিত করার ব্যবস্থা করা হয়। সেকারণেই কি সমকামীতা? এবারেও 'না'…
কোন মানুষ সমকামী/উভকামী হবে কিনা তা তার নিজস্ব চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ। আমাদের চারিদিকে আমরা যাদেরকে দেখি তাদের অনেকেই নিজের অজান্তে বা সজ্ঞানে সমকামী যাদের অনেকে এতে লিপ্ত হন এবং বাকীরা ধর্মীয়-সামাজিক অনুশাসনের ভয়ে নিজেদেরকে বিরত রাখেন। সবচেয়ে যেটি গুরুত্বপূর্ণ,তা হলো যে মাদ্রাসায় ইসলাম শিক্ষা দেয়া হয়,কিন্তু তার মানে এই না যে মাদ্রাসায় মানুষ ইনপুট দিলে ফেরশতা উৎপাদিত হবে আউটপুট হিসেবে।
দুষ্কৃতির দুষ্কর্মের প্রবৃত্তি কোনকিছুই আটকে রাখতে পারেনা…সৌদি আরবেও নারীধর্ষণ হয়,গীর্জার নানরাও মাঝেমাঝে গর্ভবতী হয়ে পড়ে,ক্যাথলিক ধর্মগুরুদের ও মাঝেমাঝে কুকীর্তি ফাঁস হয়,বৌদ্ধভিক্ষুদের কেও কেও মাঝে মাঝে পশুসঙ্গম/সমকামীতায় লিপ্ত হন,পূজারীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ছেড়ে পর্ণ ওয়েবসাইট চালায় কোন কোন মন্দিরের পুরোহিত…ব্যপারটা এমন না যে তাদের ধর্মে সরাসরি এসবে উৎসাহিত করা হয়েছে। গীর্জার নানেরা যীশুখৃষ্টকে তাদের রূহানী স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে এবং আজীবন যৌনাচার থেকে বিরত থাকার শপথ নেয়…বৌদ্ধধর্মের পঞ্চশীলের অন্যতম হলো 'কামে বশীভূত না হউয়া'।
কিন্তু এসব ছাপিয়ে ''মাদ্রাসার ছেলেরা সমকামীতা করে'' একথাটি বেশী বেশী হাইলাইটেড হবার পেছনে যেমন ইসলামবিরোধীদের সরব প্রচারণার ভূমিকা রয়েছে,তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ভূক্তভোগীর স্বীকারোক্তিমূলক সালিশী প্রচারণা।
যতো নিষ্ঠুর আইনই করা হোকনা কেন,যতো উন্নত নৈতিক শিক্ষাই দেয়া হোক না কেন যার ভেতরে কুপ্রবৃত্তি রয়েছে তাকে কখনোই নিবৃত করা যাবেনা।
বিশেষভাবে মাদ্রাসার নামের সাথে এই বিশেষণ লাগানোর কোন যৌক্তিকতার আদৌ কোন অস্তিত্ব নেই। কেননা বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে বেশ কিছু সমকামী কমিউনিটি গড়ে উঠেছে যেগুলোর সদস্য মূলত বিভিন্ন নামীদামী সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও পেশাজীবিরা।
মাদ্রাসায় মানুষের সন্তানেরা পড়ে,মাদ্রাসা থেকে মানুষের সন্তানই বের হয়…সমকামীতা রিপুসমূহের অন্যতম এবং কোন মানুষ রিপুর আওতার বাইরে নয়।