গত মাসে শুরু হওয়া শাহাবাগ গনজাগরন মঞ্চ দেড় মাস পার করলো।
শাহাবাগ আন্দলনের প্রথম দুইহপ্তা আন্দলনের মুল অর্জন টি হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সামনে নিয়ে আসা।
স্লোগান তো নয় .. যেন সঙ্গীতের মুর্ছনা!
মুল দাবিতে (কাদের মোল্লার ফাঁসি) মিল থাকায় ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন ২য় দিন থেকেই আন্দলনে একাত্বতা ঘোষনা করে এবং সাথে থাকে। পরে জাসদ, সিপিবিও আসে, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটও আসে।
আন্দোলন সংগঠিত হওয়ার পর সরকারি কিছু নির্বোধ নেতা ছাত্রলিগের সহায়তায় আনাড়ী ভাবে আন্দলোনের দখল নেয়ার চেষ্টা চালায় এদের বোতল কাগজ প্রভৃতি ছুড়ে ও তীব্র জয়বাংলা স্লোগানের মাধমে বিতারিত করা হয়েছিল। এসব মোটেই অভিনয় ছিলনা, লাইভ টেলিভিশনে সবাই দেখেছে। সরকারি নেতাদের মাইক থেকে নামিয়ে দেয়ার পর জনসমাগম দ্রুতই বৃদ্ধি পেয়েছিল। প্রথম দুইশপ্তাহ জনমনে তীব্র প্রভাব ফেলেছিল।
বাঙ্গালির প্রানপ্রিয় স্লোগান 'জয় বাংলা' আওয়ামীলিগের হাত থেকে ছিনিয়ে আনা হয়েছে। ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা পেয়ে প্রায় সার্বজনিন হয়ে গেছে। আরো আছে - "তুমি কে আমি কে? - বাঙ্গালি বাঙ্গালি"। সাধারন পাবলিককে ১৭ দিন একাত্ত করে জনমত তুঙ্গে রাখা সম্ভব হ্য়ছে। সরকারের সমর্থন বা মদদ ছিল বলে এতটা সফল হয়েছে এটা ভাবা ভুল হবে, কারন আন্দোলন শুরুই হয়েছিল "আঁতাতের রায় মানবোনা" স্লোগান দিয়ে।
প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শাহবাগের কর্মসুচীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা হয়েছিল, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়েছিল।
বিশেষ করে একদিন বিকেল চারটায় ৩ মিনিট নিরবতা ব্যাপক ভাবে পালিত হয়েছিল। সারা দেশের রাস্তায় গাড়ীগুলো থেমে গিয়েছিল। সবাই গাড়ীথেকে নেমে নিরবতা পালন করে, বহুতল অফিস ভবনগুলো থেকে লোকজন রাস্তায় নেমে আসে, বাসাবাড়ী, এপার্টমেন্ট থেকে মহিলাদের কোলেশিশু নিয়েও নামতে দেখেছি, অবিশ্বাস্য, অবিশ্মরনীয়!
সরকারি মদদে এতকিছু কোনভাবেই সম্ভব নয়। বরং সরকার গনজাগরন মঞ্চের সম্পুরক দাবিগুলোর একটিও মানেনি। মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে দাঙ্গা বাধানো প্রতিক্রীয়াশীল আমারদেশ পত্রীকা নিসিদ্ধ ও সম্পাদক গ্রেফতার, যুদ্ধাপরাধীদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা ইত্যাদি মানেনি।
অনেকে বলছে এটা সরকারের নিজস্য অর্গানাইজড মঞ্চ, সরকারি ছত্রছায়ায় সরকারি পুলিশ পাহারা দিচ্ছে, খাওয়া দিচ্ছে!
হ্যা দিচ্ছে, বিএনপির বা অন্যদলের মিটিং মিছিলেও রাস্তার উভয় দিকেই পুলিশ পাহারা থাকে, নাশকতা এড়াতে হউক, ভাংচুর এড়াতে হউক। যে কোন বড় জামায়েতে এমনকি ঈদের জামাতেও পুলিশ পাহারা থাকে।.
আলোচিত গনজাগরন মঞ্চ বিরোধী জামাত-শিবিরের আক্রোশের শিকার হতে পারে এটা সবারই জানা, সরকার জেনে শুনে এতবড় ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটতে দিতে পারে না কোনমতেই, সঙ্গত কারনেই শক্ত পাহারা দিয়ে উচ্চ নিরাপত্তার দেয়ার ব্যাবস্থা করেছে। সরকারের নিজের ভালর জন্যই করতে বাধ্য হয়েছে।
হ্যা, খাওয়া অনেকেই দিচ্ছে, বিচ্ছিন্ন ভাবে, আবার সঙ্গবদ্ধ ভাবেও। পুরোনো ঢাকার এক ধনী মহিলা নিজেই প্রতি দিন দশ ডেকচি খিচুড়ী রান্না করে আনতেন, আমার নিজের চোখে দেখা। ছাত্রলীগ তাদের কর্মিদের খাবারের ব্যাবস্থা হাতখরচের ব্যবস্থা করেছে সত্য, ছাত্রলীগের আনা খাবারের প্যকেট সিপিবি বা বাসদ কে দিবেনা নিশ্চই। ছাত্রইউনিয়ন, বাসদ ও জাসদ-সিপিবিও তাদের পোলাপানদের খাবারের ব্যাবস্থা করেছে বিচ্ছিন্ন ভাবে। FBCCI এর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও BNP নেতা (পরবর্তিতে আওয়ামীপন্থি) আজাদ প্রোডাক্টস এর মালিক নিয়মিত খাবার সাপ্লাই দিয়েছেন, এটা ওপেন সিক্রেট, গার্মেন্টেস মালিকদেরকে চাঁদাবাজি করে হঊক বা নিজের পকেটের টাকা হউক, দিয়েছেন। সব সরকার করেছে বললে ভুল হবে।
দেশের প্রতিটি বড় শহরে, জেলায়-উপজেলায় গনজাগরন মঞ্চ হয়েছে। আমি চট্টগ্রাম থেকে বাসে ঢাকা আসতে রাস্তার ধারে অসংখ্য ফাসির মঞ্চ দেখেছি। জটলার ভেতর গাড়ী বার বার স্লো হয়ে থেমে থেমে যাচ্ছিল, স্লোগান শুনেছি, এসব সরকারের সাজানো নাটক বলা যাবেনা কোনমতেই। এছাড়াও প্রতিটি স্কুলে একযোগে জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত হয়েছে.. চোখের পানি বের হয়েছিল!
কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে রাজপথ। -50c হিমশীতল ঝঞ্ঝা উপেক্ষা করে
দেশের বাইরে বিদেশেও তাই, বিশ্বে প্রায় প্রতিটি শহরে যেখানে বাঙ্গালি ছিল সেখানেই গনজাগরন মঞ্চ হয়েছে, এমন কি ছোট ডাউন্টাউনেও যেখানে ১০-১২ জন বাঙ্গালি ছিল সেখানেও গনজাগরন হয়েছে! বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙ্গালি পোলাপান রাস্তায় নেমেছে, ফেসবুকে দিয়েছে।
এগুলোও কি সরকারি বা ভারতীয় মদদে?
ইকোনমিষ্ট, বিবিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়ার ও কিছু বিদেশী কলাম লেখক, যারা লিখেছিল "গনজাগরন মঞ্চ ভারতীয় মদদে হচ্ছে"। কিছু দেশী বুদ্ধিজিবী নামের শুয়রের বাচ্চাদের পয়শা খাইয়ে কিছু ফরমায়েসি রিপোর্ট ছাপানো হয়েছিল যা কখনো এদেশে গ্রহনযোগ্যতা পায় নি। এইসব আবর্জনা সুধু ছাগুদের ও নিরোপেক্ষ নামের মাদারচোদদের খাদ্য হিসেবে আছে।
কি পেলাম?
১। বাঙ্গালির প্রানপ্রিয় স্লোগান 'জয় বাংলা' আওয়ামীলিগের হাত থেকে ছিনিয়ে আনা হয়েছে।
২। শাহাবাগের জনমত তাজা থাকতেই দ্রুততার সাথে ৪টি আইন সংশোধন ও সংযোজন করে ফেলে।
যেমন দল (জামাত) নিসিদ্ধের আইন, দ্বিমুখি আপিল অধিকার।
৩। এর মধ্যে অতি গুরুত্বপুর্ন আইনটি হচ্ছে - রায় ঘোষনার ২ মাসের ভেতর আপিল আবেদন ও নিস্পত্তি সারতে হবে, যা বাধ্যতামুলোক।
তার মানে খেলা ফাইনাল জুলাই-আগষ্টের ভেতরই।
বিচার চলাকালিন দ্রুত সংসদে আইন উত্থাপন। ভয়াবহ আইন পরিবর্তন হচ্ছে, বিরোধী পক্ষের তীব্র প্রতিবাদ হওয়ার কথা, কিছুই হয়নি কারন সাহাবাগ তখন অবিশ্বাস্য ভাবে তুঙ্গে।
আন্দোলনের মুল জয় এটাই।
৪। সবচেয়ে বড় জয় চেতনাকে ফিরিয়ে আনা।
অনেকের কাছে সন্দেহ হইছিল, সরকার আঁতাত করছে, জামাতের সাথে। অথবা ভয় পেয়েছে, জামাতের মারমুখি তান্ডোবকে বা আন্তর্জাতিক অভিভাবককে। তাই আঁতাতের বিরুদ্বেই হোক বা ভয় ভাংগাতেই হোক, সবাই মনে করেছিল সাহাবাগে যাওয়া দরকার, সে কারনেই সাহাবাগ হয়েছে, গনজাগরন হয়েছে।
আগে কিছুটা দ্বিধায় থাকলেও সরকার এখন বদ্ধপরিকর বিচার দ্রুত শেষ করার জন্য।
বিএনপি-জামাত (রাজাকার পক্ষ) ঘুরে দাঁড়ায় ১৭ দিন পর সিংগাপুর থেকে ম্যাডামের ওকে বার্তায়।
তাদের নৈরাজ্য আন্দলন, আক্রমন শুরু করে ২২ সে ফেব্রুয়ারী শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর। নাস্তিকতার ধুঁয়া তুলে। এটা দুদিন পর চুপসে যায় কাওমি ও সুফিরা সরে আসাতে।
এরপরের হরতালে বগুড়া, গোদাগাড়ী, চাপাই, বাশখালী সহ ৯ টি জেলায় সর্বাত্বক ধ্বংশকান্ড চালায়। একটা ফাউল বিষয় নিয়ে সাধারন মানুষকে উষ্কে দেয়া হয়েছিল, সায়েদি্র ছবি চাঁদে দেখা গেছে। ভোরে ফজর নামাজের পরপর পবিত্র মসজিদের মাইক ব্যাবহার করে "সায়েদির ছবি চাঁদে" ঘোষনা করা হয়েছিল। (যদিও ইসলামে ছবি বা প্রতিকৃতি হারাম) এটা দুদিন চললো। শতাধিক প্রানহানি, পুড়িয়ে দেয়া হল উপজেলা, প্রকৌশলি হত্যা, বিদ্যুতকেন্দ্রে আগুন,
কিন্তু ২য় দিন সন্ধার পর ব্যাপক নৈরাজ্য ম্লান হয়ে আসে, সরকারি প্রপাগান্ডা মেসিন সাক্সেসফুলি সায়েদি-মুন ফোবিয়া কাউন্টার দিয়েছে।
এর পরও না না ভাবে চেষ্টা করে চান্গা করতে কিন্তু বৃথা. গতকাল ২ দিন হরতালের প্রথম দিন বিরোধী দলীয় নেত্রী মুনশিগঞ্জ জনসভায় আরো অনেক মানুষ মারা যাবে বলেছিলেন কিন্তু বিধি বাম। ফ্লপ হরতালের আগের রাতে সিলেটে রেললাইন উপড়ে ফেলেছিল, কিন্তু ড্রাইভারের বিচক্ষনতায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়, ৪ ঘন্টার ভেতর লাইন মেরামত করে রেল যোগাযোগ পুনস্থাপন করা হয়েছিল।
বিএনপি-জামাতের এই হাঙ্গামা বেশীদিন চালানো সম্ভব হবে না। কারন ম্যাডাম অনেক লেট রেসপন্স ১৭ দিন। আজ বৃহস্পতিবার সহ লাগাতার হরতাল হবে বলা হয়েছিল, কিন্তু প্রানহানী না হওয়াতে আর সম্ভব হয়নি।
নাস্তিকতার ধুঁয়া, সায়েদির ছবি চাঁদে দেখিয়ে ধর্মপ্রান মানুষকে খেপিয়ে তোলা, একজন সায়েদিকে কয়বার চাঁদে দেখাবে? এরপর কি?
শাহাবাগ ফুরিয়ে যায় নি, যেতে পারে না। কৌশলগত কারনেই বিএনপির হরতালে মুখমুখি থাকা এড়িয়ে চলা হচ্ছে, তাই সমাবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। শাহাবাগে নেক্সট বড় সমাবেশ হবে শুক্রবার। এরপর হয়তো আবার বিরতিতে যাবে।
এর মানে এইনা যে আমরা ভুলে যাব ফাঁসির দাবির কথা।
আবার উল্টা পাল্টা রায় আসলে আরেকটা শাহবাগ তৈরী হতে ১ ঘন্টার বেশি লাগবে না। জয় বাংলা।
জয় বাংলা।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৩