এক রাজকন্যা আর সাধারণ এক ছেলের মাঝে ভালবাসাবাসি ছিল ।যথারীতি রাজা জেনে আগুন, হইল ছেলেটার গর্দান নেওয়ার হুকুম । ছেলেটাকে ধরে আনা হল। রাজকন্যা কেঁদেকেটে একাকার, নিজের প্রাণের বিনিময়ে হলেও সে ছেলেটার জীবন ভিক্ষা চায় । মেয়ে অন্তপ্রাণ রাজা, একেবারে অবিবেচক হতে পারল না, ছেলেটাকে বলল, "তুমি আমার মেয়েকে কোনদিনও বিয়ে করার সুযোগ পাবে না, কিন্তু তোমাকে তোমার ভাগ্য পরীক্ষা করার সুযোগ দিচ্ছি । সামনে যে দুটো দরজা দেখছো, এর একটি দিয়ে গেলে তুমি পাবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মেয়েকে, সে হুরদের চেয়ে সুন্দর, সে তোমাকে এত ভালবাসা দিবে পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটাই তোমার জন্য হবে স্বর্গবাস । আর অন্য দরজার পরে আছে ছয়মাস অনাহারে থাকা ক্ষুধার্ত সিংহ, সে তোমাকে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে খাবে । তুমি জান না কোন দরজার পরে কি আছে । এখন তোমাকে যে কোন একটা দরজা দিয়ে যেতে হবে । বেছে নাও ।" একথা শুনে ছেলেটা খুশি হয়ে উঠল । সে জানত সঠিক দরজাটা রাজকন্যার জানা। তার প্রেমিকা তাকে ইশারায় দরজাটা দেখিয়ে দিবে, সে প্রাণ ফিরে পাওয়া অপার সৌভাগ্যবান যুবক হয়ে বেঁচে থাকবে । রাজকন্যা সত্যি ইশারা করার সুযোগ পেয়েছিল । এখন প্রশ্ন হচ্ছে সে কোন দরজাটা ইশারা করেছিল? সেই দরজাটা, যেখানে তার প্রেমিক অন্য মেয়ের বাহুবন্ধনে তাকে ভুলে স্বর্গবাস করবে? নাকি সেই দরজাটা, যেখানে ক্ষুধার্ত সিংহ তাকে ছিঁড়ে খাবে? আপনাদের কি মনে হয়?
গল্পের পেছনের কথা: এ গল্পটা যখন শুনি তখন আমি নিতান্তই বাচ্চা একটা মেয়ে, সম্ভবত ক্লাস সেভেনে পড়ি (আমি চঞ্চল ছিলাম, কিন্তু ইঁচড়ে পাকা না, সেই কারণে বাচ্চা মেয়ে বলা)। গল্পটা শুনে পাশের বাসার আন্টি বলল, সে হলে তার প্রেমিককে সিংহের খাঁচায় পাঠাবে, সে প্রাণ দিবে কিন্তু অন্যের বাহুবন্ধনে প্রেমিককে দিবে না (পরে শুনলাম তখন সেই আন্টি প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল, আন্টি সেই ছেলেকেই বিয়ে করেছে) । আর একজন বলল, সত্যি ভালবেসে থাকলে রাজকন্যার উচিত ছেলেটাকে বাঁচানো (ইউনিভার্সিটিতে অনেক জুটি দেখে মনে হত এদের মত করে কেউ কখনও ভালবাসতে জানেনি। পাস করতে না করতেই দেখলাম, জুটি-ফুটি সব ভেঙ্গে অনেকেই বিয়ে করে ফেলল! অনেক ভাঙ্গনের পেছনে নিশ্চয়ই দুঃখ মাখা থাকে, কিন্তু কাউকে কাউকে দেখলাম, "তোমাকে এতই ভালবাসি যে তোমার সুখের জন্য আমি সরে গেলাম, তুমি সুখে থেকো ।" বলেই দিব্যি অন্য কাউকে হাসিমুখে বিয়ে করে ফেলল, প্রাক্তন ভালবাসার কথা ভুল করেও স্বীকার করে না! ) । আজ হঠাৎ করে গল্পটা মনে পড়ল, আপনাদের সাথে শেয়ার করতেও ইচ্ছে হল ।
ওহ্, আর একটা কথা । লেখার শেষের দিকে পাকা পাকা কথা বলে মনে হচ্ছে নিজের মাঝে তুলসী পাতার ভাব নিয়ে আসছি । কোন এক পত্রিকায়, কিংবা বই-এ, কিংবা কোন বন্ধুর মুখে একটা গল্প শুনেছিলাম । একজন ভীতু আর একজন সাহসী মেয়ের (কিংবা ছেলে) গল্প । মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্থানিদের হাতে ধরা পড়ে ভীতু মেয়েটা শত অত্যাচারের মুখেও কিছু বলল না, আর সবার কাছে সাহসী বলে পরিচিত মেয়েটা সহজেই ভয়ে সব বলে দিল । নিজেকেও চেনার উপায় নাই, ভাই। সর্ষের মাঝেও ভূত থেকে যায় ...। গল্প বলতে এসে হাবিজাবি কথার বন্যা বয়ে দিলাম । ক্ষমাপ্রার্থী । ভাল থাকবেন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১২ সকাল ১০:৩০