ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ বাংলাদেশে শুরু হওয়া হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে রচিত কিশোর উপন্যাস, প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে।
পিন্টু আর রতন দুজন দুজনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাদের ঘনিষ্ঠতা এমনই চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে যেন তারা দুজন হরিহর আত্মা। একজন অন্যজনকে ছাড়া অচল। রতনের দুনিয়ায় যেমন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পিন্টুর, তেমনি পিন্টুর ক্ষেত্রেও তাই। তাদের এই বন্ধুত্ব পারিবারিকভাবেও তাদের দুই পরিবারকে অনেক কাছাকাছি এনে দিয়েছে। দুই পরিবার মিলে যেন একটাই পরিবার, আর এই দুই বন্ধু মিলে যেন একটাই অস্তিত্ব। সত্যি না হোক, এমনটাই ভাবত তারা দুজন। কিন্তু একসময় তাদের ভুল ভাঙে। কল্পনার রঙিন দুনিয়া ছেড়ে কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয় তাদের। তারা বোঝে, আসলে তাদের অস্তিত্ব এক না। তাদের অস্তিত্বের মাঝে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে জিনিসটা, তা হল ধর্ম। ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছে আর তার প্রতিবাদে বাংলাদেশের হিন্দুরা যেরকম নিপীড়িত হতে থাকল, তা তাদের দুজনের মধ্যে একটা বিশাল মনস্তাত্বিক বিরোধ গড়ে তুলল। সনাতন ধর্মালম্বী রতন আবিষ্কার করল, এই দেশটা বোধ হয় তার না, তাদের না। এদেশটা হয়ত শুধুই পিন্টুদের। আর মুসলমান পিন্টুও চলমান পরিস্থিতিতে বড্ড অসহায় বোধ করতে থাকল, নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী মনে হতে থাকল। সে বুঝতে পারল না, এক দেশে থেকেও কেন রতন আর তার মধ্যে এতটা ফারাক থাকবে? কেন সে মুসলমান হওয়ায় নিজে ইচ্ছেমত নির্ভীক চিত্তে ঘুরে বেড়াতে পারবে গোটা শহরজুড়ে, আর হিন্দু হওয়ায় প্রাণের ভয়ে রতনকে গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকতে হবে ঘরের কোণে?
সেসব যাইহোক, পিন্টু-রতনরা কিন্তু এই সত্য কখনো ভুলে যায়নি যে ধর্ম তাদেরকে যতটাই আলাদা করুক, প্রথমত তারা মানুষ। এই বিশ্বাস শুধু তাদের মধ্যেই না, গড়ে উঠেছে আরও অনেক সচেতন মানুষের মধ্যে। তারা সকলে মিলে সচেষ্ট হল এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে রুখে দিতে। সাময়িকভাবে নিজেদের এলাকায় হয়ত তারা দাঙ্গা রুখতে পারল, কিন্তু মানসিকভাবে তাদের মধ্যে ধর্মসংক্রান্ত বিভেদের জের ধরে যে চিড় দেখা দিয়েছে, তা কি শেষ পর্যন্ত আলাদা করে দেবে রতন আর পিন্টুকে? নাকি পারস্পরিক বন্ধুত্ব তাদের মধ্যকার বন্ধন অটুট রাখবে? সাম্প্রদায়িক কারণে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটবে নাকি বন্ধুত্বের জোরে সবকিছু ভুলে একসাথে তারা আবারো সোনালি দিনের স্বপ্ন দেখবে? তারা কি বাস্তবিকই হয়ে উঠতে পারবে আলোর পাখি?