পিট সাম্প্রাস, বিয়ন বোর্গ কিংবা হালের রজার ফেদেরার আখ্যায়িত হন সর্বকালের সেরা টেনিস তারকা হিসেবে। কিন্তু আজকের যুগের টোটাল পাওয়ার টেনিসের সাথে তারা কতটুকু মানিয়ে নিতে পারতেন? পাওয়ার টেনিস বলতে বোঝায় স্কিল+স্ট্যামিনার সংমিশ্রন। একটা সময় ছিল, যখন ছেলেদের টেনিসে মাত্র ৩টা সেট হত। ম্যাচগুলো হত বড্ড একপেশে। ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে জয় তুলে নেয়া যেত। একজন পেশাদারের মাত্র এই সময়ের মধ্যে দম ফুরিয়ে যাবার কথা নয়। তাই ম্যাচে শারীরিক শক্তিমত্তার বদলে খেলোয়াড়দের স্কিলই পারস্পরিক ব্যবধান গড়ে দিত। সর্বকালের সেরারা ঐ সময়টার ছাত্র। কিন্তু রজার ফেদেরারের সাম্রাজ্যে প্রথম হানা দেন নাদাল। যাকে পাওয়ার টেনিসের জনক বললে অত্যুক্তি হবে না। স্কিল খুব একটা ছিল না এই খেলোয়াড়ের প্রথম দিকে। কিন্তু জীবনিশক্তি ছিল ভরপুর। টানা ৩-৪ ঘণ্টা লড়ে যেতে পারতেন এক নাগাড়ে। আর সেকারণেই চমৎকার স্কিল সত্ত্বেও বারবার তার কাছে হার মানতে হয়েছে ফেদেরারকে।
এ তো গেল গত দশকের মাঝামাঝির কথা। এই দশকের শুরুর দিকে উত্থান ঘটেছে আরও ৩ জনের। জোকোভিচ, দেল পোত্রো আর মারে। এই ৩ জন আজকাল একটা ম্যাচকে ৬ ঘন্টা অব্দি টেনে নিয়ে যেতেও সক্ষম। এরা আবার 'ম্যারাথন টেনিস' এরও জনক। তবে এই ম্যারাথন থুত্থুড়ে গতির নয়। ঘন্টায় ৪০ মাইল বেগে দৌড়ে টানা ৬ ঘন্টা লড়ে যাওয়ার টেনিস। আর এখানেই বাজিমাত করেছেন জোকোভিচ আর নাদাল। তারা এক নাগাড়ে এত সময় খেলেও কখনো লড়াই থেকে সরে আসেন না। সেকারণেই তো মেধার দিক থেকে তাদের চেয়ে অগ্রগামী খেলোয়াড়েরাও তাদের কাছে হার মানেন। যেমন রজার ফেদেরার অসংখ্য ম্যাচ হেরেছেন এই দুইজনের কাছে। অনেকে হয়ত বলতে পারেন, ফেদেরার এখন বুড়িয়ে গেছে বলে তাই! কিন্তু তা না। গত দশকে পাওয়ার টেনিস খেলত একা নাদাল। আর তার কাছেই বারংবার ধরাশায়ী হয়েছেন ফেদেরার। তবু নাদালের অধারাবাহিকতায় নিয়মিত গ্র্যান্ডস্লাম জিতে গেছেন তিনি। কিন্তু তখন নাদাল ছিলেন একা। আর এখন পাওয়ার টেনিসে উত্থান ঘটেছে যে চতুষ্টয়ের! তাদের সাথে পেরে ওঠেননি ফেদেরারের।
আপনি শুধু একবার ভেবে দেখুন, ফেদেরারের গোটা ক্যারিয়ারে কয়টা ৫ ঘন্টার ম্যাচ আছে? কিন্তু গত আড়াই বছরেই মারে খেলে ফেলেছেন গোটা চারের ৫ ঘন্টার ম্যাচ। এখানেই লুকিয়ে আছে ফেদেরারের সাম্প্রতিক ব্যর্থতার রহস্য। নিশ্চিন্ত থাকুন, শেষ বয়সে এসে ফেদেরার আর পারবেন না টোটাল পাওয়ার টেনিসের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে আরও একটা গ্র্যান্ডস্লাম জিততে।
তাহলে এখনকার সময়ে সেরা বলা যেতে পারে কাকে?
৩টি অপশন আছেঃ নাদাল, জোকোভিচ, মারে।
প্রসেস অব এলিমিনেশনে নাদাল বাদ! বয়স মাত্র ২৭ হলেও ইনজুরির কারণে তার ক্যারিয়ার হয়ত খুব একটা দীর্ঘায়িত হবে না। জোকোভিচকেও বাদ দিতে পারি। গত দুই বছরে হয়ত অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। কিন্তু আপাতত তার সাফল্যের গতি কিছুটা শ্লথ হয়েছে। আর এটাই সু্যোগ মারের জন্য। ইউএস ওপেনে হয়ত ভাল করতে পারেন নি, কিন্তু ভবিষ্যতে যদি এরকম ভুল বারবার না করেন, তাহলে হয়ত তিনিই হবেন আগামী নাম্বার ওয়ান। তবে নিশ্চিতভাবেই জোকোভিচ তার পিছু ছাড়বেন না! নাদাল-ফেদেরার দ্বৈরথের পর এবার পৃথিবী দেখবে মারে-জোকোভিচ দ্বৈরথ!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৯