লালমনিরহাট এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ঢাকা যাচ্ছি। ট্রেন ছাড়ার বেশ কিছুক্ষণ পর টিটি টিকেট চেক করে গেল, হঠাৎ সামনে শোরগোল শুনতে পাচ্ছি। আমি কৌতূহলী মানুষ নই,তাই এগিয়ে গেলাম না। পরে এক যাত্রীর মাধ্যমে জানতে পারলাম,মুক্তিযোদ্ধা এক বৃদ্ধের সঙ্গে টিটির ঝগড়া লেগেছে।কারণ তিনি এক মুক্তিযোদ্ধার স্লিপে চারটি সিট দখল করে সপরিবারে যাচ্ছেন। টিটি বলেছিল, আপনি মুক্তিযোদ্ধা আপনার সিট ফ্রি, কিন্তু আপনার পরিবারের তো না। তার উপর, উনি অতিরিক্ত যে সিট দখল করেছেন তার দুটি সিটের টিকেট ছিল এক দম্পতির। তারাও তার সঙ্গে পেরে উঠল না।শেষে হয়ত তারা অতিরিক্ত টাকা দিয়ে অন্য সিট নিয়েছে কিংবা দাড়িয়েই পুরো পথ গিয়েছে, সে খোঁজ আমি নেই নি।কারণ আমি কৌতূহলী মানুষ নই।
আমার পাশে আরেক বৃদ্ধ ঘুমাচ্ছিলেন।,ঘুম ভাঙ্গলে গল্প করতে করতে, ট্রেনের ঘটনাটা তাকে জানাই,বৃদ্ধ হাসে। হাসির কারণ জানতে চাইলে বলে- এ লোককে সে চেনে, তারা দুজনেই জয়দেবপুরে নামবে। সে, এও জানায়- লোকটা যুদ্ধ করে নি, যুদ্ধ শেষে সার্টিফিকেট কিভাবে যেন পেয়েছে।
বৃদ্ধ আবার হাসে। এবার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে তার পকেট থেকে টিকিট বের করে দেখায়- বাংলাদেশ রেলওয়ে লেখা।বলে, বাবা এই বাংলাদেশ কথাটা সবখানে দেখার স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করতে আমিও মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমারও সার্টিফিকেট আছে, তবুও টিকেট কিনি।কারণ আমার সামর্থ্য আছে, তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধার স্লিপের জন্য না বরং এই "বাংলাদেশ" লেখাটা দেখতেই দেশ স্বাধীন করেছিলাম।
আমি এক দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকি। এইত আমার সামনে "বাংলাদেশ"
(কোটা সংষ্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে,আমার লেখা একটি রূপক গল্প, লিখার তারিখঃ০৭-০৫-১৮। মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অনস্বীকার্য,তবে সোনার বাংলাদেশ গড়তে কোটা সংষ্কার অপরিহার্য।)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৪৯