স্যার আইজ্যাক নিউটনের একটা কথা দিয়েই শুরু করি,"পৃথিবীর মানুষ আমাকে কি ভাবে জানিনা কিন্তু নিজের সম্মন্ধে আমি মনে করি আমি একটা ছোট ছেলের মত সাগরের তীরে খেলা করছি আর খুঁজে ফিরেছি সাধারণের চেয়ে সামান্য আলাদা পাথরের নুড়ি বা ঝিনুকের খোলা।সামনে আমার পড়ে রয়েছে অনাবিষ্কৃত বিশাল জ্ঞানের সাগর।"
অ্যারিস্টটল:
৩৮৪ খ্রিস্টপূর্বে থ্রেসের স্তাজেইরা শহরে(গ্রিক উপনিবেশ) অ্যারিস্টটল জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে ছিলেন বিজ্ঞানী,কবি,দার্শনিক,চিন্তাবিদ এবং একজন সার্থক শিক্ষক।
তিনিই প্রথম প্রাণী ও উদ্ভিদের মূল গঠনের কথা উল্লেখ করেন।প্রাণীদের সম্মন্ধে তিনি "Historia animalium" নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন।আধুনিককালে যাকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বা পদার্থবিজ্ঞান বলা হয় তা-ই একসময় ছিল প্রাকৃতিক দর্শন। প্রাকৃতিক দর্শনকে বলা যায় আধুনিক বিজ্ঞানের পূর্বসূরী। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র থেকে শুরু করে অনেক বড়- সকল বস্তুর গঠন এবং কার্যকারিতা নিয়ে জ্ঞানের এই শাখায় আলোচনা করা হতো।
মার্টিন হাইডেগার লক্ষ্য করেছিলেন যে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল প্রকৃতি নামক ধারণাটির জনক এবং এই ধারণাটিই মধ্যযুগে ও আধুনিক যুগের পত্তনের পূর্ব পর্যন্ত প্রভাবশালী ছিল। তিনি বলেন:
"এরিস্টটলের ফুজিকোস আক্রোয়াসেওস (ইংরেজিতে যে বইটি Physics নামে পরিচিত, আক্ষরিক অনুবাদ "প্রকৃতি বিষয়ক বক্তৃতামালা") গ্রন্থটি মূলত একটি বক্তৃতা যাতে তিনি এমন সব বস্তু নির্ণয়ের চেষ্টা করেছেন যারা নিজে থেকেই উদ্ভূত হয়। বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞান বলতে আমরা যা বুঝাই তার সাথে এরিস্টটলের পদার্থবিদ্যার অনেক পার্থক্য। এরিস্টটলের পদার্থবিদ্যা প্রাচীনকালের বিষয় আর আধুনিক ভৌত বিজ্ঞানসমূহ আধুনিক যুগের বিষয়- এই পার্থক্যের চেয়েও বড় পার্থক্য হচ্ছে এরিস্টটলের পদার্থবিদ্যা ছিল দর্শন, যেখানে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান একটি ইতিবাচক বিজ্ঞান যা একটি দর্শনকে প্রথমেই সত্য বলে ধরে নেয়... এরিস্টটলের পদার্থবিদ্যা না থাকলে গালিলেওর জন্ম হতো না।"
৩২২খ্রিস্টপূর্বে এই মহান বিজ্ঞানী মৃত্যুবরণ করেন।
আর্কিমিডিস:
খ্রিস্টপূর্ব ২৮৭সালে সিসিলি দ্বীপপুন্জের অন্তর্গত সাইরাকিউস দ্বীপে(গ্রীস) আর্কিমিডিস জন্মগ্রহন করেন।তিনি বলবিদ্যা,জ্যামিতি, জ্যোতির্বিদ্যায় অবদান রাখেন।
তরলে ভাসমান বস্তুর তত্ত্ব আবিস্কারের জন্য বিশেষভাবে বিখ্যাত।সূত্র:"কোন বস্তুকে তরল পদার্থে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত করলে বস্তুটি কিছু ওজন হারায়।বস্তুর এই আপাত হারানো ওজন বস্তুটি দ্বারা অপসারিত তরল বা বায়বীয় পদার্থের ওজনের সমান।"এই বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আর্কিমিডিসের সূত্র নামে পরিচিত।আর্কিমিডিসের আরেকটি আবিষ্কার পুল ও লিভার।এই আবিষ্কারের ফলে বড় বড় পাথর,ভারী জিনিস,কুয়া থেকে জল তোলার কাজ সহজ হল।একবার আর্কিমিডিস গর্ব করে বলে ছিলেন,"আমি যদি পৃথিবীর বাইরে দাঁড়াবার একটু জায়গা পেতাম,তবে আমি আমার এই লিভার পুলির সাহায্যে পৃথিবীটাকেই নাড়িয়ে দিতাম।"
আর্কিমিডিস ২১২খ্রস্টপূর্বে মৃত্যবরণ করেন।
জাবির ইবনে হাইয়ান:
এই মহান মুসলিম বিজ্ঞানী ৭২২খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি চিকিৎসা শাস্ত্র,রসায়ন,জ্যামিতি,জ্যোতির্বিদ্যা,দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন।
তিনি বস্তুজগৎকে মূলত তিনভাগে বিভক্ত করেন।প্রথম ভাগে স্পিরিট,দ্বিতীয় ভাগে ধাতু আর তৃতীয় ভাগে যৌগিক পদার্থ রাখেন।তার এই আবিষ্কারের উপর নির্ভর করেই পরবর্তী বিজ্ঞানীরা বস্তজগৎকে তিনটি ভাগে ভাগ করেন।যথা-বাষ্পীয়,পদার্থ এবং পদার্থ বহির্ভূত।তিনি প্রথম উদ্বায়ী পদার্থসমূহের ধারণা দেন।জাবির ইবনে হাইয়ানই সর্বপ্রথম নাইট্রিক এসিড ও সালফিউরিক এসিড আবিষ্কার করেন।নাইট্রিক এসিড ও হাইড্রোক্লোরিক এসিডে স্বর্ণ গলানোর পদার্থটির নাম যে 'একোয়া রেজিয়া' এটিও তার প্রদত্ত।
তিনি ৮০৩ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
আল বাত্তানী:
৮৫৮খ্রিস্টাব্দে মেসোপটেমিয়ার অন্তর্গত বাত্তান নামক স্থানে আল বাত্তানী জন্মগ্রহণ করেন।তিনি ছিলেন একজন অঙ্কশাস্ত্রবিদ এবং একজন জ্যোতির্বিদ।
তিনিই সর্বপ্রথম নির্ভুল পরিমাপ করে দেখিয়েছিলেন যে এক সৌর বছরে ৩৬৫দিন ৫ঘন্টা ৪৬মিনিট ২৪সেকেন্ড হয়।তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে সূর্যের আপাত ব্যাসার্ধ বাড়ে ও কমে।সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ সম্মন্ধেও তার বক্তব্য ছিল সুস্পষ্ট।আল বাত্তানী তার নিজস্ব উদ্ভাবিত যন্ত্র দিয়ে প্রমাণ করে দিলেন যে সূর্য তার নিজস্ব কক্ষপথে গতিশীল।
এই মহান মনীষী ৯২৯খ্রিস্টাব্দে ৭২বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।
আল ফারাবী:
আল ফারাবী ৮৭০খ্রিস্টাব্দে তুর্কিস্তানের অন্তর্গত ফারাব নামক শহরের নিকটবর্তী আল ওয়াসিজ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।পদার্থবিজ্ঞান,সমাজবিজ্ঞান,দর্শন,যুক্তিশাস্ত্র,গণিতশাস্ত্র,চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রভৃতিতে তার অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য।
পদার্থবিজ্ঞানে তিনিই প্রথম 'শূন্যতা' এর অবস্থান প্রমাণ করেছিলেন।
এই মনীষী ৯৫৬খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র:উইকিপিডিয়া,''A Ranking Of The Most Influential Persons In History''by Michel H.Heart।
ছবি:গুগল