বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
পাগলের কারখানা!!
সন্তানদের কাছে আমরা কি চাই? সন্তানদের জন্য আমরা কি চাই? তাদের ভবিষ্যৎ জীবন আমরা কেমন চাই? একজন সফল মানুষ মানে কি? আমাদের চারপাশের চরম সফল বা মোটামুটি সফল, মানুষ গুলোর জীবন কি একি নিয়মতান্ত্রিক ছাঁচে গড়া? চাইলেই কি একজন মানুষের “মেধা” এবং “জ্ঞান অর্জনের ক্ষমতা” নিজের ইচ্ছামত নিয়ন্ত্রন করা যায়?
“Anyone who has never made a mistake has never tried anything new.” – Albert Einstein
বাচ্চারা ভুল করবেই, ভুল করলেই বুঝতে হবে নতুন কিছু করার চেষ্টা আছে তাদের।
“Unthinking respect for authority is the greatest enemy of truth.” – Albert Einstein
আপনার নিয়মকানুন আর স্কুলের নিয়মের অনেক কিছুই তাদের পছন্দ হবে না। তাহলেই বুঝা যাবে বাচ্চাটা সত্য পথেই আছে। এবং সে তার মনের কথা বলতে পারে।
“Great spirits have always encountered violent opposition from mediocre minds. The mediocre mind is incapable of understanding the man who refuses to bow blindly to conventional prejudices and chooses instead to express his opinions courageously and honestly.” – Albert Einstein
আপনার বাচ্চা যদি সকল পরীক্ষায় দশে দশ না পায় তবে হতাশ হবেন না। রবীন্দ্র নাথের মত অনেক মানুষ স্কুল পছন্দ করতে পারেন নাই।
“The difference between genius and stupidity is that genius has its limits.” – Albert Einstein
যে অনেক ভালো ছবি আঁকে অংক তার মাথায় নাও ঢুকতে পারে। হতাশ হবেন না। উল্টা টাও সত্য হতে পারে।
ছোটবেলায় স্কুলে একটা রচনা পড়তে হত, “অধ্যবাসয়”, অসাধারন এক রচনা!! যে রচনার মূল বিষয় বস্তু ছিল, এমন ভাবে ব্রেইন ওয়াস করা, যা পাঠ করবার পর আমি পারিনা বা আমি পারবনা এই কথা বলার বা শুনার ক্ষমতা আমাদের হারিয়ে যায়। যা ভবিষ্যৎ হতাশার বীজ। একজন পূর্নবয়স্ক মানুষ কি তার সমবয়স্ক সকল মানুষের সমান জ্ঞানী বা মেধা সম্পন্ন? নাকি তারা সকলেই একি ধরনের বা মানের বিদ্যা অর্জনে সক্ষম? যদি উত্তরটা “না” হয়, তবে কেন সকল শিশুর পরীক্ষার ফলাফল একি রকমের ভালো হবে? ওদের মস্তিষ্কতো এখন পূর্ণ রূপে বিকাশই হয়নি!!
“Everybody is a genius. But if you judge a fish by its ability to climb a tree, it will live its whole life believing that it is stupid.” – Albert Einstein
জীবনে সফলতা অর্জন করা মানে কি? অর্থবিত্তলাভ? সুখলাভ? ক্ষমতা লাভ? ন্যায়বান ভালো মানুষ হওয়া? ভালো জীবন সঙ্গি পাওয়া? ভালো, সুস্থ, সু সন্তান লাভ? চারপাশের মানুষের সাথে সুসম্পর্ক অর্জন করতে পারা? ঈমানের সাথে মরতে পারা? উত্তর যাই হোক না কেন, এর কোনটাই কি স্কুলের ভালো ফলাফলের মাধ্যমে নিশ্চিত ভাবে অর্জন করা সম্ভব?
“If A is a success in life, then A equals X plus Y plus Z. Work is X; Y is play, and Z is keeping your mouth shut.” – Albert Einstein
বাবা–মায়ের সাথে বাচ্চাদের চেহারা, গড়ন আর স্বভাবে মিল থাকাটা খুব স্বাভাবিক এবং সকলেই তা স্বাভাবিক ভাবেই মেন নেয়, তাহলে মস্তিষ্ক কেন একই ধরনের হবে না? ওদের উপরে কোন মনস্তাত্তিক বোঝা চাপানোর আগে, অপনি কেন চিন্তা করবেন না, যে আপনি বা আপনার স্ত্রী ঐ বয়সে ঐ বোঝা বহনে সক্ষম ছিলেন কি না? কারন ও তো আপনাদের কারো মতই আথবা আপনাদের দুজনের মত। আর আপনি যদি গোবরে পদ্ম ফুল হয়ে থাকেন তাহলে ধরেই নিন আপনার সন্তান আপনার বাবা-মারের মত হয়েছে।
বাচ্চাদের সফল হবার জন্য চুরি শিক্ষা দেবেন কেন? আপনি নিজে চোর হয়ে থাকলে ভিন্ন ব্যাপার,কারন সেই ক্ষেত্রে, আপনার সন্তান ভবিষ্যতে আপনাকে ঘৃনা অথবা অবজ্ঞা করবে কিংবা দুটোই!! কেন প্রশ্ন ফাঁস করার মত ব্যাপার বাচ্চাদের পাবলিক পরীক্ষার নিত্য সংবাদ হবে? না পড়ে ভালো ফল করে জীবনে কি সফল হতে পারবে আপনার সন্তান? নাকি ও ভাবিষ্যতে যে গর্তে পড়বে আপনি নিজেই তা খুঁড়ে দিচ্ছেন?
নিজের বাচ্চাদের কেন অন্যের বাচ্চাদের চেয়ে অক্ষম আর দূর্বল ভাববেন? কেন ৮-৯ বছরের বাচ্চাদের ৬ বছরের বানিয়ে প্রথম শ্রেনীতে ভর্তি করবেন? কেন বয়স চুরির এই বোঝা, বাচ্চাকে সারা জীবন বহন করতে হবে? মনস্তাত্তিক বিদ্যা অনুসারে ৫,৬,৭,৮,৯ বছরের বাচ্চাগুলোর শেখার ক্ষমতায় অনেক পার্থক্য থাকে কিন্তু ১৫,১৬,১৭,১৮ তে এই ক্ষমতা সমান, তাহলে লাভটাকি বাচ্চার জীবনের শুরুতেই চুরি করিয়ে? এবং যাতে তার কোন দায় নাই,সেই বোঝা তার ঘাড়ে চাপিয়ে?
বয়ঃসন্ধির আগের বাচ্চা গুলোকে আদর যত্ন কারার চাইতে পরীক্ষায় ১০০ পাওয়ার জন্য চাপাচাপি করা কি ভালো? নাকি তাদের সদাচার এবং ন্যায়পরায়নতা শেখানো উত্তম? কি তাদের জীবনে বেশী কাজে দিবে, কোচিংয়ে দিন যাপন এবং পরিবারের থেকে দূরে ঠেলে দেয়া, নাকি মা-বাবার সাথে বা পরিবারের সাথে দিন যাপন? কি তাদের জীবনে বেশী কাজে দিবে, ১০০ পাওয়ার অভ্যাস এবং জীবনে হেরে যাবার ভয়, নাকি “সদাচার” “ন্যায়পরায়নতা” এবং জয়ী হবার ইচ্ছা?
বয়ঃসন্ধিতে সন্তানদের সাথে দূরত্ব তৈরি করাটা ভালো হবে নাকি তাদের মন মস্তিষ্কে খানিক বিচরন করার ক্ষমতা থাকলে ওদের জন্য জন্য ভালো হবে? ওদের আত্নবিশ্বাস তৈরি করবেন, নাকি ক্ষনে ক্ষনে তাদের ছোট প্রমানের চেষ্টা করবেন? বাচ্চাদের কি শেখাবেন নিজে জেতার জন্য অন্যদের ল্যাং মারা নাকি ভালোদের ভালো হয়ে জয়ী হওয়া?
আমারা ইউটোপিয়ায় বসবাস করিনা। নিজে সব কিছু ঠিক ঠাক করলেও সব কিছুর ফলাফল আমরা ঠিক ঠাক পাই না। তাই বলে কি ভাল কারার, ভাল বলার, ভাল বানানোর ইচ্ছা আমাদের থাকবে না? সমস্যা হল আমরা নিজদের জীবনে ইউটোপিয়া চাই আর অন্যের জন্য ডিসটোপিয়া!! একটা কি সম্ভব? আমার বাচ্চাটা ভালো হোক আর আমার বাচ্চার বন্ধুগুলো খারাপ হোক এটা কি সম্ভব?
কিছু বড় বড় বা নামকরা স্কুল ঐ গুলোই ভালো স্কুল? আসলেই কি তাই? সব স্কুলেই কি ভালো শিক্ষক আর খারাপ শিক্ষকের মিশ্রন নয়? আসলেই কি শিক্ষকের মানের উপরে স্কুলের সুনাম, নাকি যে স্কুলে যত ভালো ছাত্রের স্বেচ্ছা বা জোড়পূর্বক সমাগম সেই স্কুলই ভালো? যে ছেলেটা তথা কথিত ভালো স্কুলে ভালো ফলাফল করছে সে কি অন্য একটা তথাকথিত সাধারণ স্কুলে পড়লে ভালো ফল করতে পারত না? চিন্তা করে উত্তর দিন? যদি নাই পারে তবে ও ভালো হইল কি ভাবে? আর যদি পারে তাহলে কেন বাসার পাশের স্কুল রেখে গাধার খাটুনি খেটে অনেক দূরের তথাকথিত ভালো স্কুলে যেতে হবে? ভালো স্কুল মানে কি? ভালো স্কুল মানে কি এই, যে স্কুলের সিলেবাস কঠিন? যা শেষ করতে আমার কোমলমতি বাচ্চা হিমশিম খাবে? নাকি যে স্কুলে এমন কিছু জিনিশ পড়াবে যা আমার বাচ্চা ও তার সহপাঠিরা সহজে বুঝবে না? নাকি যে স্কুলে শুধুই বাচ্চাটাকে চাপমুক্ত রেখে আগামী ক্লাসের পড়া বুঝবার জন্য যত টুকু তৈরি কারা প্রয়োজন ততটুকুই তৈরি করা হবে? কঠিন কঠিন বই পড়ে লাভ কি , এস,এস,সি আর এইচ,এস,সি পরীক্ষাতো একি সিলেবাসে একি বই থেকেই হবে , নাকি অন্য কিছু? তখনতো সবার পরীক্ষাও একই হবে, নাকি? খোজ নিন তথা কথিত ভালো স্কুলের কতগুলো বাচ্চা বুয়েট, মেডিক্যাল, আর ডি-ইউতে পড়ে!! শতকরায় হিসাব করবেন? অবাক হয়ে যাবেন!! কারন আমাদের দেশে ভালো পড়ালেখা মানেতো এগুলোই!!!! আরো খবর নিন, যারা শেষ পর্যন্ত বুয়েট , মেডিক্যাল আর ডি-ইউতে ভর্তি হল, তারা কি সব সময়ই ক্লাসের ভালো ছাত্র ছিল কি না? যদি না হয়ে থাকে তবে তাদের স্কুলের সহপাঠি তথাকথিত ভালো ছাত্রদের এখন কি অবস্থা???
“Most teachers waste their time by asking questions that are intended to discover what a pupil does not know, whereas the true art of questioning is to discover what the pupil does know or is capable of knowing.” – Albert Einstein
“Education is what remains after one has forgotten what one has learned in school.” – Albert Einstein
আচ্ছা আপনাদের কেন মনে হয়, শুধু মাত্র ঐ তিনটা প্রতিষ্ঠানে চান্স পেলেই আপনার বাচ্চার জীবন সফল? ভালো করে খোজ নিন, দেখবেন এদের অনেকেই ভবিষ্যৎ চিন্তায় বিষণ্ণ, কারন মনে মধ্যে সব সময়েই অনেক পাওয়ার পরেও আরো কিছু পাবার ইচ্ছা। এদের ড্রপ আউটের খবর কেউ রাখেই না।। হা হা!! এরা যখন সাধারণ মানের রেজাল্ট করে বের হয়ে, কর্ম জীবনে যায়, এদের ঐ সহপাঠিরা যারা নামকারা এই তিন প্রতিষ্ঠানে চান্স পাওয়ার স্বপ্নও দেখে নাই, তারাই ঐ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হয়ে যায়। এমন ও হয়!!!
“Once we accept our limits, we go beyond them.” – Albert Einstein
নিজের বাচ্চার উপর হতাশ হবেন না, তার জন্য আল্লাহের কাছে দুয়া করুন ও যেন সুখে থাকে, ওর যে অন্যের মুখাপেক্ষি হতে না হয়, ও যেন সদা সন্তুষ্ট জীবন সঙ্গী পায়। সবাই তো স্টিফেন হকিং, কার্ল মার্ক্স আর হুমায়ূন আহমেদ হবেন না!! কে জানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মততো হতে পারে। আল্লাহের উপরে ভরসা রাখুন, নিজের বাচ্চার উপর ভরসা রাখুন, ওদের টর্চার করবেন না।
আজকাল স্কুলের ড্রয়িং শেখার জন্যও নাকি কোচিং করতে হয়। বাচ্চাদের ছবি আঁকার ব্যাপারটায় অন্তত স্বাধীনতা থাকা উচিৎ। কারন এর সাথে তার কল্পনাশক্তির সম্পর্কটা সরাসরি জড়িত। কেন একটা মানুষ অন্যার ইচ্চায় ছবি আঁকবে? আমি বুঝিনা!! সবাই যেমেন বিজ্ঞানী হবে না তেমনি সবাই চিত্র শিল্পীও হবে না, তবে কেন অন্যার কাছ থেকে শিখবে? আমি যত দূর জানি আর্ট কলেজে বিভিন্ন ট্যাকনিক্যাল ব্যাপার শিখানো হয়, কাগজ কেমন? রঙ কেমন? তেল কেমন? পানি কেমন? আঠা কেমন? মাটি কেমন? কাঠা কেমন... ইত্যাদি ইত্যাদি কাউকে ছবি খুব সম্ভবত আঁকা শেখানো হয় না। আর তা না হলে চিন্তা করুন জয়নুল আবেদীন ভেন গগের কাছে ছবি আঁকা শিখছেন!! কেমন হবে ব্যাপারটা? বা এর উল্টা?
“Imagination is more important than knowledge. For knowledge is limited, whereas imagination embraces the entire world, stimulating progress, giving birth to evolution.” – Albert Einstein
“The true sign of intelligence is not knowledge but imagination.” – Albert Einstein
আমার এক চাচাতো বোনের মেয়ে এই বার পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ে, বেচারি সপ্তাহে দুইদিন সকাল সাড়ে ৬ টায় বাড়ী থেকে বের হয়ে বাসায় ফিরে সন্ধ্যা ৭টায়। আর বাকি ৩ দিন বিকাল সাড়ে ৫টায়। ছুটির দিনে আবার গৃহ শিক্ষাক!!! তথা কথিত ভালো স্কুলের ছাত্রী। ওর মুখ দেখলেই বুঝা যায় ও কতটা ক্লান্ত!! নিশ্চয়ই মন আরো বেশী ক্লান্ত। ক্লান্ত মন নিয়ে সে ভাববে কখন? কখন কল্পনা করবে? কল্পনা না করলে মেধা বাড়বে কি ভাবে? জ্ঞানের সৃষ্টি হবে কি ভাবে? এখানে লাভটা কার? কে লাভোবান হচ্ছে? এই কোচিং নামের সুগার কোটিং কি থাকবে? টিকবে এই সুগার কোটিং? অনেক সময় খুব তিতা ঔষধ গুলোতে সুগার কোটিং দেয়া হয় যেন মুখে তিতা না লাগে, কিন্তু যদি হঠাৎ একটা ডেকুর উঠে তখন এর আসল মজাটা বুঝা যায়। চলুন এই আর্টি ফিসিয়াল কোটিং নেয়া আমারা একজন দুজন করে সবাই নেয়া বন্ধ করে দেই। খেয়াল করুন যে ঔষধ গুলো মিষ্টি তাদের কিন্তু অযথা সুগার কোটিং দেয়া হয় না।
সূরা ৯৬, আয়াত ১ঃ
(
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ )
কাছাকাছি বাংলাঃ (পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন)
মুসলমানদের জন্য জ্ঞান অর্জনকে ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহের নাম নিয়ে পড়তে বলা হয়েছে। এই ব্যাপারে চুরি বাটপাড়ির প্রশ্নই আসে না। আর আপনার সন্তানের সাথে এমন কিছুই করা উচিৎ না যাতে সে ক্রমেই জ্ঞান অর্জন থেকে দূরে সরে যায়। মানে এমন বারাবারি করা বা এমন চাপাচাপি কারা যা তার মনকে পড়ালেখা থেকে দূরে ঠেলে দেয়!! নরম মাটি যত চেপে ধরতে যাবেন হাত থেকে তা ততই বেড়িয়ে যাবে।
সূরা ২ আয়াত ২৬৯ঃ
( يُؤْتِي الْحِكْمَةَ مَن يَشَاءُ وَمَن يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ )
কাছাকাছি বাংলাঃ (তিনি যাকে ইচ্ছা বিশেষ জ্ঞান দান করেন এবং যাকে বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়, সে প্রভুত কল্যাণকর বস্তু প্রাপ্ত হয়। উপদেশ তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানবান।)
খেয়াল করেন , বিশেষ জ্ঞান পাবার ব্যাপারে আল্লাহের সরাসরি হাত আছে, এই জিনিস চাইলেই অর্জন করা যাবে না। তাই অনেক জ্ঞানী হওয়া অনেক মেধাবী হওয়া ,আর জ্ঞান দিয়ে পৃথিবীতে বিশেষ কিছু অর্জন করা নিতান্তই আল্লাহের ইচ্ছার ব্যাপার, বাবা মায়ের ইচ্ছার ব্যাপার না বা, বাবা-মা কত সুন্দর ভাবে সন্তানদের ম্যানুপুলেট করতে পারল তার ব্যাপারো না। কিংবা তাদের পিটাইলেই তারা পড়া লেখা করে নিজেদের মেধাদিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে তাও না!! জ্ঞানও একটা রেসপনসিবিলিটির ব্যাপার, জ্ঞান ও একটা আল্লাহের পক্ষ থেকে পরীক্ষা। এক ইহুদী বিজ্ঞানী শুধু মাত্র এসিটোনের সস্তা বাণিজ্যিক উৎপাদন কৌশল বের করার বিনিময়ে ব্রিটিশদের কাছ থেকে ঈসরাইল রাষ্ট্র অর্জন করতে পেরেছিলেন। আল্লাহ কাকে কখন কি জ্ঞান দিবেন ঐ জ্ঞান দিয়ে সে কি অর্জন করবে তা কারো চাপা চাপিতে নির্ধারিত হবে না!! তাই দয়া করে আপনি শুধু সন্তানকে অপনার জানা মতে ভালো মানুষ হবার শিক্ষা দিন।
“Try not to become a man of success, but rather try to become a man of value.” – Albert Einstein
সূরা ২০ আয়াত ১১৪ঃ
(
فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ وَلَا تَعْجَلْ بِالْقُرْآنِ مِن قَبْلِ أَن يُقْضَى إِلَيْكَ وَحْيُهُ وَقُل رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا )
কাছাকাছি অর্থঃ (সত্যিকার অধীশ্বর আল্লাহ মহান। আপনার প্রতি আল্লাহর ওহী সম্পুর্ণ হওয়ার পূর্বে আপনি কোরআন গ্রহণের ব্যপারে তাড়াহুড়া করবেন না এবং বলুনঃ হে আমার পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।)
দেখুন এই আয়াতের শেষ অংশ আমরা প্রায়ই পড়ে থাকি জ্ঞান বৃদ্ধির আকাঙ্কখায়, কিন্তু দেখুন এখানে জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাও আবার না করা হচ্ছে আমাদের মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ মানুষটাকে। তাহলে আপনি কেন চাবেন না যে আপনার সন্তান, তার নিজের গতিতে ধিরে ধিরে জ্ঞানী হয়ে উঠুক? অনুরোধ থাকবে কুরয়ানে এর আগের ও পরের কিছু আয়াত পড়ে দেখবেন, ভালো অনুধাবন করতে পারবেন।
সূরা ২৬ আয়াত ৮৩-৮৪ঃ
( رَبِّ هَبْ لِي حُكْمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ )
( وَاجْعَل لِّي لِسَانَ صِدْقٍ فِي الْآخِرِينَ )
কাছাকাছি অর্থঃ (হে আমার পালনকর্তা, আমাকে প্রজ্ঞা দান কর এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত কর, এবং আমাকে পরবর্তীদের মধ্যে সত্যভাষী কর।)
দেখুন জ্ঞান অনেকের থাকে, কিন্তু প্রজ্ঞা থাকেনা। প্রজ্ঞা হচ্ছে জ্ঞানকে ব্যাবহার করার ক্ষমতা। প্রজ্ঞার দ্বারা নতুন জ্ঞান এর সৃষ্টি হবে, এজন্যই ঐ জ্ঞানটাও যেন সত্য বা নির্ভুল হয় তার জন্য পরবর্তিদের কাছে সত্যভাষী হবার ইচ্ছা করে দোয়া করা হয়েছে। আমার মনে হয় না বাবা-মায়ের চাপাচাপি, কোচিং এর গুতাগুতি, ক্রমাগত নানান রকমের লঞ্ছনা, হেরে যাবার ভয় প্রজ্ঞাবান মানুষ তৈরি করবে। বরং নিজের ইচ্ছায় জ্ঞানী, স্বাধীন চেতা, কল্পনা করার ক্ষমতা, জয় করবার ইচ্ছা একটা বাচ্চাকে ক্রমেই প্রজ্ঞাবান করবে।
ব্লগ বলে এখান থেকে দেখা যায় না, কিন্তু বাস্তবে আমার বাংলা হাতের লেখা খুব খারাপ, বাংলা বানানেও প্রচুর ভুল হয়। এই দুইটা ব্যাপার নিয়ে আমাকে ছোট বেলায় প্রচন্ড এবং খুব খারাপ ভাবে বকাবকি করা হয়েছে, প্রায় ৫ বছর ধারাবাহিক ভাবেই করা হয়েছে। এমন বলা হয়েছে যে আমি জীবনে কিছুই করতে পারবোনা আমার এই বানান ভুল আর লেখা খারাপের জন্য, আমি নাকি নাম্বারই পাবো না। আমার জিদ ছিল, আমি এই জিনিশ ঠিক করব না। না করেই সফল হব। শীর্ষে যাব। আমি আল্লাহের রহমতে গিয়েছে। হতে পেরেছি। সবাই পারবে না। কারন একেক জনের দুর্বলাতা একেক রকম। ভাগ্যিস আমার এইচ,এস,সির পড়ে সব পড়ালেখা ইংরেজী ভাষাতে ছিল, তাও আবার বিশেষ রকমের প্রফেশনাল ভাষা , সাধারণ ইংরেজি নয়। সবার ভাগ্য এরকম হবে না। ভুল ঠিক করার ইচ্ছা হয় এমন ভাবে বুঝাতে হবে। কটু কথা বা মারা মারি করে না। আমার বাংলা ভাষা বলা, লেখা আর বানানের অবহেলা কখনোই ঠিক হবে বলে আমার মনে হয় না। আমার নিজের অজান্তেই এখন এই ভুল হয়। যা ঠিক করার বোধ আমার মনে নাই বললেই চলে। আমি কেয়ারও করি না। কিন্তু যারা আমার এই ব্যাপারটা ঠিক করতে চেয়েছিলেন, তারা আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন, কিন্তু আমার জন্য তাদের ম্যাথড আর তার ফলাফল অশুভ ছিল।
“Everything is determined, the beginning as well as the end, by forces over which we have no control. It is determined for the insect, as well as for the star. Human beings, vegetables, or cosmic dust, we all dance to a mysterious tune, intoned in the distance by an invisible piper.” ― Albert Einstein
কুরয়ানেও একি কথা বলা আছে অন্য ভাবে।
সূরা ৬ আয়াত ৫৯ঃ
(
وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلاَّ يَعْلَمُهَا وَلاَ حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الأَرْضِ وَلاَ رَطْبٍ وَلاَ يَابِسٍ إِلاَّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
)
কাছাকাছি অর্থঃ
(তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে।)
সূরা ৫৭ আয়াত২২-২৩ঃ
( مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِّن قَبْلِ أَن نَّبْرَأَهَا إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ
)
(
لِكَيْلَا تَأْسَوْا عَلَى مَا فَاتَكُمْ وَلَا تَفْرَحُوا بِمَا آتَاكُمْ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ
)
কাছাকাছি অর্থঃ
(পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না; কিন্তু তা জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।এটা এজন্যে বলা হয়, যাতে তোমরা যা হারাও তজ্জন্যে দুঃখিত না হও এবং তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তজ্জন্যে উল্লসিত না হও। আল্লাহ কোন উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না)
তবে কেন বিপদের আশংকা করে ভয়ে মরবেন? মরার আগেই? বিপদে পড়ার আগেই ?
“Nothing truly valuable arises from ambition or from a mere sense of duty; it stems rather from love and devotion towards men and towards objective things.” – Albert Einstein
জ্ঞান অর্জনের প্রতি তিক্ততা চলে আসলে। সব শেষ।
“Insanity: doing the same thing over and over again and expecting different results.” – Albert Einstein
যদি দেখেন শাসন করে পড়ালেখায় মন যোগ বাড়ছেনা, তাহলে আর একি চেষ্টা বারবার করবেন না।
“I have no special talent. I am only passionately curious.” – Albert Einstein
কিভাবে কিউরিয়াস হবে, আপনারাতো শুধু ট্যালেন্ট চান। সারাক্ষন বই, খাতা, স্কুল, কোচিং নিয়ে ব্যাস্ত থাকলে ওর কিউরিয়াস হবার সময় কই?
“It’s not that I’m so smart, it’s just that I stay with problems longer.” – Albert Einstein
কি ভাবে ওরা নিজের সমস্যা সমাধান করবে বা করতে শিখবে? আপনারাতো ওকে সমস্যাতেই পড়তে দিতে চান না। ওর সকল সমস্যা সমাধানো আপনারাই করেন!!
বুঝি না সকল মা-বাবারা , বিশাল এক পাগলের কারখানা তৈরি করছে? নাকি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে??