বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিম
খোদাই ষাঁড়
দুই সপ্তাহ আগে একটা সেমিনারে সিঙ্গাপুর যাচ্ছিলাম। ফ্লাইটটা ছিল ভোর পাঁচটায়। আড়াইটার দিকে গাড়ী যখন এয়ারপোর্টের খুব কাছাকাছি, রাস্তার পাশে বেশ বড়-সর এক গরু দেখতে পেলাম। বুঝলাম খোদাই ষাঁড় হবে হয়ত। এখন ঢাকায় খোদাই ষাঁড় কম দেখতে পাই। আমার ছোটবেলায় এগুলো অনেক ছিল। প্রকৃত পক্ষে এগুলো হচ্ছে এক বিশেষ সম্প্রদায়ের খোদার উদ্দেশ্যে ছেড়ে দেয়া মালিক হীন (পুরুষ)গরু, এই অতিরিক্ত গরু গুলো তাদের কাছে বোঝা স্বরুপ। অনেকটা নেড়ি কুকুরের মত এদের জীবন। কেউ এদের কোন খোঁজ খবর রাখেনা, ভালো খারাপের পাত্তা দেয়না। They live on their own. আমার হিসাবে এরা হচ্ছে Stray cow অনেকটা stray dog এর মতই। যেহেতু নাম খোদাই ষাঁড়, কোন সাধারন লোভী লোক বা অভাবী লোক এগুলোর মালিকানা দাবী করেনা এবং এগুলো থেকে কোন ফায়দাও নেয়ার চেষ্টা করেনা, গাঁয়ে পড়ে কেউ এদের সাহায্যও করে না। তবে এদের অনেকেরই শেষ গন্তব্য হয় কোন লোভী কসাইয়ের চাপাতির নিচে।
পরিবারকে বিদায় দিয়ে প্লেনের অপেক্ষায় আছি, একপত্রিকার আন্তর্জাতিক পাতায় চোখ বুলাচ্ছিলাম। ব্রাজিলের জাহাজ ডুবিতে ৪৮০০ গরুর মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানাতে ভারত ব্রিক্স(BRICS) থেকে বেরিয়ে আসছে। প্রতিদিন ৬৭,৮৬০টি গরু জবাই করার অপরাধে শিবসেনা ভারতের সকল ম্যাকডোনাল্ডস সিলগালা করে দিয়েছে। এবং ভারত বিফ রপ্তানী থেকে সড়ে দাড়িয়েছে। তিনটা একি রকম ভারতীয় খবর। ভাবছিলাম মোদির লোকজন ভাত খায় না কি আফিম?!!!
আন্তর্জাতিক পাতা পড়তে পড়তে সময় পার হয়ে গেল। বিমানে চড়ে বসলাম। আসন গ্রহনের সময়ই পুলকিত হলাম এই ভেবে যে আমার ডান পাশের সিটে মুশফিকুর রহিম বসেছে। ভাবলাম সময়টা ভালোই কাটবে, বাকি পত্রিকায় চোখ বুলিয়ে নেই। অবশেষে পুলিশ মুখ খুলেছে, উনাদের ধারনা (ডাঃ ইকবালের ভাতিজা) ফারিজ রহমান কোন ধরনের সড়ক দূর্ঘটনার সাথে জড়িত নয়। কোন এক দুষ্কৃতিকারী ফারিজ রহমানের মুখাবয়বের অনুরূপ মুখোশ পড়ে(after all জঙ্গিরা পুলিশের চেয়ে টেকনিক্যাললি সাউন্ড) উক্ত দূর্ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু গোয়েন্দারা হার মানেনি প্রকৃত অপরাধিকে খুঁজে বের করা হবেই হবে। এই সব নাটক সরকার এবং তার সাথে সম্পর্কিত লোকজনকে বেকায়দায় ফেলার একটা চেষ্টা মাত্র। আর নাটোরে দূর্গা পূজার রাতে ৬ মুর্তি ভাঙ্গার দায়ে গ্রেফতার বিকাশ চন্দ্র কর্মকার আগে যেমন ধারনা করা হয়েছিল তেমন জামাত-শিবিরের কর্মি নয় বরং তার সাথে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সখ্যতার প্রমান স্বরূপ জিহাদী বই পুস্তক পাওয়া গেছে এবং সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের কেউ কেউ এতে আই-এস-আই এর ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছেন। মনে মনে ভাবলাম আমাদের দেশে আফিম সহজ প্রাপ্য নয়, ইনারা ভুলেই গেছেন বছরের পর বছর নেতাদের বাড়ির উচ্ছিষ্ট-পঁচা-পানি মেশানো ভাতে খেতে খেতে তাদের নেশা হয়ে গেছে তাতে মস্তিষ্কের স্নায়ু গুলো মরতে শুরু করেছে।
মুশফিকুর রহিমের সাথে পরিচিতি পর্ব শেষ হতেই জিজ্ঞাস করলাম
আমি- কোথায় যাচ্ছেন সিঙ্গাপুর না অস্ট্রেলিয়া ?
মুশি- অস্ট্রেলিয়া
আ- কেন?
মুশি- ছোট একটা ইঞ্জিউরি আছে।
আ- কৈ পত্রিকায় তো দেখলাম না?
মুশি- ভাই বিসিবির সব কথা কি পত্রিকায় আসে?
আ- তাই বলে জনগন জানবে না? আপনার এত ফ্যান?
মুশি- জনগন জানলে সমস্যা নাই, সাংবাদিকরা এখন জানলে সমস্যা।
আ- মানে?
মুশি- ভাই সিরিজের সময় ইঞ্জিউরির কথা জানলে, আগামী সিরিজ খেলা কনফার্ম কইরা দিবে সাংবাদিক ভাইরা আর সিরিজের আগে জানলে সিরিজতো বাদ হইতেই পারে, ক্যারিয়ারও বাদ হইতে পারে।
আ- তবুয় পাবলিকের দোয়া নিবেন না?
মুশি- ভালো কইসেন ভাই, ভাই কি চান্দে থাকেন? কুরবানির ছবিটা আপলোড কইরা আমি ১০% ফ্যান হারাইছি আর ঐটা ডিলিট কইরা ৯০%। পাবলিকের বদদোয়ার কারনেইতো আমার ইঞ্জিউরি!!!
আ- বলেন কি? আমারতো মনে হয় ছবিটা আপলোড করে আপনি কোন অপরাধ করেন নাই আর পরে ছবিটা ডিলিট করে আপনি অনেক বেশী ম্যাচিউরিটির পরিচয় দিয়েছেন।
মুশি- ভাই ম্যাচিউরিটি কিনা জানি না তবে, আই পি এল তো আমার জিবনেও খেলা হবে না। আর ধর্মনিরপেক্ষ কিছু বড় ভাই ফোনে যে পো**নিটাদিল!!! ভাবলাম বিসিসিয়াই যদি বলে যেই টিমে (গোমাতা হত্যাকারি)মুশফিক আছে ঐ বাংলাদেশের সাথে আমরা খেলব না!! ভাই ক্যারিয়ার শেষ।
আ- হুম......।
মুশি- ভাই কি দেখসেন ফাপর ফাপন(পাপন) আর লোটা(ডাইরিয়া কামাল) এর কারনে আমাদের টাইগ্রেসরা পাকিস্তান সফর করতে বাধ্য হইল, কেউ কি তাদের পকেটের খবর নিসে? এখন দেখেন অস্ট্রেলিয়া তো টিম পাঠাইলোই না, বড় দেশ গুলা মহিলা টিমও পাঠাইতেসে না।
আ- তা বুঝলাম, কিন্তু আপনি আনফিট হইলেতো আমাদের লিটন দাস রেডিই আছে তাই না?
মুশি- হা হা... না ভাই ওরতো আমার চেয়ে বড় অভিশাপ লাগসে, আপনার বাম পাশের সিটে দেখেন ওই ও আমার সাথে একি কাজে একি যায়গায় যাইতেসে। আগেই কইসিলাম সব ফ্যানদের একচোখে দেখিস না। সবাই তোরে মাঠে মালা**ন বইলা গালিদেয় না।
আ- হ্যালো! লিটন দাস , আপনাকেতো চিন্তেই পারি নাই।
লিদা- হাই! না ঠিক আছে, সেঞ্চুরি করাতো শুরুই করি নাই!!
আ- ফ্যানদের অভিশাপের ব্যাপারটায় কি আপনি একমত।
লিদা- হতেও পারে , তারাইতো আমাদের সব কিছু, প্লাস সবাইতো আর এক না, সবাইকে ঐভাবে গালি দেয়া ঠিক হয় নাই!!
আ- আপনার কি মনে হয় ব্যাপারটা নিয়ে আপনি বেশী ইমোশানাল হয়ে গিয়ে ছিলান?
লিদা- ভাই ভ্রামান হচ্ছেন আমাদের(হিন্দুদের) আল্টিমেট ঈশ্বর, ভ্রামানকে আমারা কল্পনাও করতে পারি না, আমারা হচ্ছি আত্মান(যাদের আত্না আছে)। ভ্রামানকে আমারা ভ্রম্মা(সৃষ্টিকর্তা), ভিষ্ণু(রক্ষক), এবং শিভা(ধ্বংস কারক, পুনঃ সৃষ্টি কারক)এর মূর্তি দেই। উনারাই হচ্ছেন আমাদের ত্রিমুর্তি বা ত্রিদেব।
আ- হুম...।
লিদা- তেমনি আমাদের ত্রিদেবী হচ্ছেন। মা স্বরসতী, মা লক্ষ্মী , আর মা পার্বতি(দূর্গা/কালী)। মা স্বরসতী হচ্ছেন ভ্রম্মার প্রতিরূপ উনিই নতুন সৃষ্টি করেন তাই উনিই জ্ঞান দান করেন। মা লক্ষ্মী হচ্ছেন ভিষ্ণুর প্রতিরূপ উনি রক্ষা করেন তাই মানুষের বস্তুগত আর অবস্তুগত সকল ধরনের সম্পদের রক্ষা করেন। মা পার্বতি হচ্ছেন শিভার প্রতিরূপ উনি ধ্বংস করেন তাই যাবতীয় খারাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন তিনি।
আ- হুম......।
লিদা- মা পার্বতি কে কেউ গালি দিলে ইমোশানালতো হবারই কথা।
আ- ঠিক , একদম ঠিক । আমি ধার্মিক, আমি চাই না আমার ধর্মিয় বিষয়ে কেউ সমালোচনা করুক, তাই অন্যের ধর্মিয় বিষয়কে গালি দেবার আমার কোন অধিকার নাই।
লিদা- আপনারা যেমন প্রকাশ্যে গরু কোরবানী দিচ্ছেন আমরা প্রকাশ্যে মুর্তি পূজা করলে কি সমস্যা?? তাই না। প্রকাশ্যে মুর্তি পূজা করলে আপনাদের কারো কারো যেমন কষ্ট লাগে অধর্ম মনে হয় প্রকাশ্যে গরু কোরবানী দিলেও আমাদের কারো কারো মনে খুব যন্ত্রনাই বোধ হয়। আপনারাতো অন্য কোন পশু কুরবানী দিলেই পারেন...............।
স্বপ্নটা ভেঙ্গে গেল। এতক্ষন স্বপ্নই দেখছিলাম। ভালো স্বপ্ন প্লেনের একপাশের সিটে মুশি আরেক পাশে লিটন দাস। নিজেকে ভি-আই-পি মনে হচ্ছিল। লিটন দাসের সাথে আরো কিছু কথা বলার ছিল। জানিনা উনি কি উত্তর দিতেন। যাইহোক গরুর ধর্মিয় মহত্ত্ব সম্পর্কে আমার কিছু বলার আছে।
যদিও গান্দিজী মনে করতেন যে “The central fact of Hinduism is cow protection.”
এবং তিনি বলেছেন “Our mother, when she dies, means expenses of burial or cremation. Mother cow is as useful dead as when she is alive. We can make use of every part of her body — her flesh, her bones, her intestines, her horns and her skin. ”
উনার এই মন্তব্যে আমার দুইটা সমস্যা
প্রথমত, আমার মা কে আমি গরুর মত একটা প্রানীর সাথে তুলনাই করতে পারি না। আর গরুকে মায়ের থেকে ভালো বলা তো দূরেই থাক।
দ্বিতীয়ত, উনি বলেছেন গরুর ফ্লেস তথা গোশত আমাদের কাজে লাগে, আমি সবার কাছে জানতে চাই গোশত না খেলে আর কি কাজে লাগতে পারে??
আমি হিন্দু ধর্মে গরুর পবিত্রতার স্থানটা কোথায় তা জানতে চাচ্ছিলাম। যা জানলাম তা হচ্ছে মোটামুটি নিম্ন রূপ।
ভিষ্ণুর দশটা অবতার, যারা যুগে যুগে পৃথিবীতে এসে বখে যাওয়া মানুষকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছেন বা করবেন। উনারা হলেনঃ
১) মাৎস – মাছ
২) কুরমা- কচ্ছপ
৩) ভারাহা- শুকর (বন্য শুকর)
৪) নরসিমহা- অর্ধেক মানুষ+অর্ধেক সিংহ
৫) ভামানা- খর্বাকৃতির মানুষ
৬) পার্শুরাম- আদ্য মৃত কিন্তু উনি কলকি অবতারের এক ধরনের গুরু হবার কথা। উনাকে এবং উনার পিতাকে কোন এক ঋষি কামধেনূ( সকল গরুর মা এবং ইচ্ছা পুরন কারিদেবী) নামক গরু খাইয়েছিলেন।
৭) রাম
৮) কৃষ্ণ – উনার আরেক নাম “গোভিন্দা” যার অর্থ হচ্ছে গরুর রক্ষক বা গো-পালের রক্ষক।
৯) বুদ্ধা
১০) কলকি
আসলে খুব সম্ভবত গরু হচ্ছে প্রাচুর্যের প্রতীক, হিন্দুরা মনে করেন মানুষের জীবনে এবং জীবন ধারনের জন্য গরু যে ভাবে সহায় হন, অন্য কোন প্রানী সেই রকম হতে পারে না তাই গরু তাদের কাছে পূজনীয় পবিত্র। আমার আর একটা ধারনা হল এই যে দশ অবতারের একজন কৃষ্ণ যেহেতু গরু পছন্দ করতেন এবং গরুর রক্ষাকর্তা, তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের কারনে হিন্দুরা গরুকে পূজনীয় মনে করেন। বা শুধু মাত্র কামধেনূ দেবীর কারনেই গরু তাদের কাছে পূজনীয়।
কিন্তু সমালোচনা হচ্ছে এই যে,
এটা তাদের মধ্যে প্রচলিত যে তারা ষাঁড় গরু বা বলদ গরু দের না খেতে দিয়ে মেরে ফেলেন আবার কখনবা অযত্নে অবহেলায় গৃহ ত্যাগে বাধ্য করেন।
আরো সমালোচনা হচ্ছে এই যে,
যদিও দশ অবতারের মধ্যে এক অবতার কৃষ্ণের বা গোভিন্দার সম্মানের বা ভালোবাসার কারনে গরুর পূজা করে পবিত্র মনে করে একে কষ্টদানে বিরত থাকার চেষ্টা করলেও প্রথম তিন অবতার মাছ, কচ্ছপ আর শুকর নির্দয় ভাবে খেয়ে যাচ্ছেন।
মোট কথা হচ্ছে আমি গরুর পবিত্রতার এবং পূজনীয় হবার পিছনের দর্শনটা বুঝতেই পারি নাই। যদি প্রাচুর্য দানে সক্ষমতার জন্য এই সম্মান হয় তবে এই ক্ষেত্রে আমার কাছে মনে হয় মহিষ , ছাগল বা ভেঁড়া একই রকম সম্মান পাবার যোগ্য।
সত্যি বলতে স্বামীবিবেকানন্দের একটা কথায় আমি আরো কনফিউজড হয়েগেছিঃ (Hinduism's greatest propagator Swami Vivekanand said, “You will be surprised to know that according to ancient Hindu rites and rituals, a man cannot be a good Hindu who does not eat beef”)
এমন এক সময় এই লেখা লিখছি, যখন মানুষ শুধু মাত্র লেখার কারনেই পৃথিবীতে বাস করার যোগ্যতা হারাচ্ছে। যখন ৪৪ বছরের ক্রমাগত স্বজন প্রীতিতে রাষ্ট্রযন্ত্র এতটাই দূর্বল যে, রাষ্ট্রের দ্বায়িত্য প্রাপ্ত ব্যাক্তি বর্গ স্বিকার করে নেন যে জঙ্গিরা ট্যাকনিক্যাললি তাদের চেয়ে মোর সাউন্ড!!! বলতে বাধ্য হচ্ছি রাষ্ট্রের কাছে আমরা সাধারন মানুষ খোদাই ষাঁড়ের চেয়ে মূল্যবান কিছু না।
উৎসর্গঃ মন গড়া মিথ্যা লেখার জন্য জনপ্রিয় কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী।
বিঃদ্রঃ
এই লেখা মিথ্যায় ভরপুর।
সত্য যতটুকু আছে তার সোর্স উইকিপিডিয়া।
ছবি – গুগোল (তথ্য উপদেষ্টার আইডিয়া ছিল এটা)
হিন্দু ধর্মের গরুর ফিলোসফিটা বুঝতে চাই। আশা করি প্রকৃত জ্ঞানী কেউ মন্তব্যে বুঝিয়ে দিবেন।