এ বোল্ট ফ্রম দ্যা ব্লু
১
প্রচন্ড গরম! বৈশাখ মাস প্রায় শেষ, কাল-বৈশাখীর দেখা নাই। আম পাকছে না কেন? কোনার ছোট আমগাছটাতে আম পাকে সবচেয়ে আগে, মনে হচ্ছে রাকিবের মত এই গাছ গুলোও কোন কারনে খুব বিরক্ত! তিন-চার বার ঢিল মেরেও কাচ-মিঠা গাছেটা থেকে একটা আম ফেলতে পারলনা রাকিব। মায়া সামনে থাকলে নির্ঘাত তাকে নিয়ে হাসত আর বলত বিসমিল্লাহ বলে মার, আল্লাহ দিবেন। উফ, বিরক্তি কর। কথায় কথায় আল্লাহ-বিল্লাহ......ফা*, চিন্তা করতে করতে রাকিব বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
বকশিবাজারের মোড় থেকে জগন্নাথ হলের পথটুকু আসতেই উত্তর,পূর্ব আর পশ্চিমদিক ঘুট ঘুটে অন্ধকার হয়ে গেল, বাতাসটা এখনও ছাড়েনি, কিন্তু অসাধারন সৌন্দর্য আর বিকট শব্দ নিয়ে বিজলী চমকাচ্ছে। রাকিব তুলনা করতে পারছেনা কে বেশী সুন্দর বেগুনী-নীল আলোতে উজ্জ্বল বিজলী গুলো নাকি মায়া? একটা ঘোরের মধ্যে আছে রাকিব! আজ আর বিজলী চমকানো তার ভয় লাগছে না, মনের অন্তঃস্থল থেকে আশা করছে যেন একটা তার ভিতর দিয়ে চলে যায়! ব্যাস সব ল্যাটা চুকে যাক!
২ ঘন্টা বাকি আছে এখনো, মায়ার সাথে দেখা হতে। সোজা শাহাবাগ যাবে নাকি বামদিয়ে ফুলাররোডের দিকে যাবে চিন্তা করছিল সে, হুট করে একটা রিকশা এসে থামল, রিকশায় জেনি
জেনিঃ কিরে দোস্ত রাস্তার মাঝখানে কি করস? জান দিবি নাকি?
-না, মানে, তুই ...!!?
জেনিঃ আমার সাথে উঠ মাঠে যাই, আজকে আমাগো পলাপাইনের ফুটবল খেলা
-না, তুই যা, আমার কাজ আছে
জেনিঃ হুম গোপনে গোপনে প্রেম কর? মায়া কৈ?
-ধুর, তুই যা!!
জেনির রিকশা চলে যাচ্ছে মাঠের দিকে, পিছন পিছন রাকিবও হাটা দিল। ভাবতে থাকল জেনির সাথে কেন প্রেম করলাম না!?
২
জিম পর্যন্ত পৌছে গিয়েও, মাঠে না ঢুকে ইউটার্ন নিল রাকিব, আজকের ঝড়টা সে একা মোকাবেলা করতে চায়। মায়ার কাল্পনিক আল্লাহ তার কোন ক্ষতি করতে পারে কিনা দেখতে চায়!! রাকিবের আফসোস হয় কেন সে মায়াকে ঐ দিন জিজ্ঞাস করেছিল , “ তোমার আল্লাহ কি এমন বড় একটা কবিতা লিখতে পারবে যা সে নিজেই পড়ে শেষ করতে পারবে না? ” ব্যাস এক প্রশ্নেই সব শেষ!! প্রশ্নটা রাকিব না করলেও পারত। ভালইতো ছিল সে তার ইসলাম নিয়ে ব্যাস্ত, নাই বা জানত যে রাকিব নাস্তিক, ঐ মেয়ের কটকটানি হঠাৎ কেন যে বিরক্তিকর হয়ে উঠল ঐদিন!!!!?? অন্যের বিশ্বসে আঘাত করাতো নাস্তিকের কাজ না, মনে মনে ভাবে রাকিব, বড্ড বড় ভুল করে ফেলেছে সে, মায়াকে হারানো তার কাছে এখন হৃদস্পন্দন হারানোর মতই!! মায়া তার আত্মাকে গোলাম বানিয়ে ফেলেছে!! ধুর কি ভাবছি আমি? আস্তিক হয়ে গেলাম নাকি? যতসব বুলসিট, আত্মা বলেতো কিছুই নাই।
৩
(হঠাৎ) ক্রিং ক্রিং ক্রিং
-রাকিব আমি এখনি আসছি,
রাকিবঃ ঠিক আছে,
-ওখানেই থেকো
রাকিবঃ ঠিক আছে
-তুমি কি পৌছাতে পারবে? কারন আমার ১০ মিনিটের বেশি লাগবে না
রাকিবঃ ঠিক আছে।
টুট টুট টুট.................................।
মায়ার সাথে আজ হবে তার শেষ দেখা!!!! তারাতারি পা চালায় রাকিব। এখনি স্বাধিনতা উদ্যানের দক্ষিন পাশের বেঞ্চ গুলোর একটা দখল করতে হবে তার। ওগুলোতে বসতেই তার ভালো লাগে।
৪
বেঞ্চেবসে আছে ২ মিনিট হল। বিশাল বড় আর ভীষণ সুন্দর এক বিজলী চমকালো মনে হল যেন রমনা পার্কের কোন গাছের উপরে পড়েছে। কিন্তু শব্দটা হল অনেক ক্ষণ পরে। তাতে নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় দূরত্বটা আরো অনেক বেশীই হবে!! মানে ৪ দিয়ে সেকেন্ডকে ভাগ করলে প্রায় তিন পাওয়া যাচ্ছে, হবে হয়ত সাড়ে তিন কিমি দূরে!!! রহমতুল্লাহ স্যারের কথা মনে পড়ে গেল, স্কুলের ক্লাস ফোরে থাকতে শিখিয়ে ছিলেন, তাও সমাজ-বিজ্ঞান ক্লাসে!! এই রকম একজন ভালো শিক্ষককে পোলাপাইন কেন যে “গোবরেরচপ” নামে ডাকত তার কারন খুজে পায় না রাকিব। স্যারের অবশ্য একটু ভুল ছিল, আসলে বিজলী কত দূরে চমকালো তা বের করতে হলে, বিদ্যুৎ চমকাতে দেখা আর নাদ শুনার মধ্যে অতিক্রান্ত সময়(সেকেন্ডে) কে ৩ দিয়ে ভাগ করতে হবে যদি উত্তর কিমিতে পেতে হয়, আর ৫ দিয়ে ভাগ করতে হবে যদি মাইলে পেতে হয়। কিন্তু সে এখনো কেন জানি ছোট বেলার মত ৪ দিয়েই ভাগ করে, কেন তা সে নিজেও জানে না, যদিও সে জানে তা ভুল।
বৃষ্টি শুরু হল ঝুম বৃষ্টি, সাথে গগন বিদারি সব বজ্রনাদ আর ঝড় বাতাস। মায়ার সাথে শেষ দেখেটাও কি হবে না!! ভাবে রাকিব। বেঞ্চ থেকে নেমে যেতে বাধ্য হয় সে। বাতাসের তোরে প্রায় উড়েই যাচ্ছিল, পানিতে পা ঝুলিয়ে দিল, ভাবতে লাগল মায়ার জন্য কি আবার মুসলিম হওয়া যায় কিনা?? “না” তা কি করে হয়!!!?? ভালো লাগেনা তার এই সব কাল্পনিক আল্লাহ ভীতি। যেখানে বিজ্ঞান দিয়ে বজ্রপাতের দূরত্ব ২ সেকেন্ডে বের করা যায়, হাইস্পিড ক্যামেরা দিয়ে এটা পর্যন্ত আজকাল দেখাযায়, যে বজ্রপাতের প্রক্রিয়া মাটিথেকেই শুরু হয় মেঘ থেকে নয়। এই রকম যৌক্তিক বিজ্ঞানের যুগে স্বর্গ আর নরকের বুলশিট কিন্তু মায়ার আল্টিমেট ভালোবাসার ডেফিনেশন নাকি সূরা রূম আয়াত ২১। (وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ ) অর্থঃ (আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। )
মায়া বলতে চায় সে যার সাথে শান্তিতে থাকবে, যে তার প্রতি সম্প্রীতি দেখাবে এবং যখন প্রয়োজন তখন তাকে দয়া করবে সেই তার প্রকৃত ভালোবাসা!!! শান্তি আর সম্প্রীতি বুঝলাম কিন্তু ভালবাসার মধ্যে দয়া কোথা থেকে আসল?? এই সব কুরয়া্ন কুরয়ান প্যাচর প্যাচর বুলসিট আর ভালো লাগেনা রাকিবের। তাই মুখ ফসকে ঐ প্রশ্নটা মায়াকে করে ফেলেছিল রাকিব। ভালোবাসা মানে ইনফ্যাকচুয়েশন, ল্যাস্ট আর শুধুই এই মানব প্রজাতিকে টিকিয়ে রাখা আরতো কিছুই না!!
৫
প্রায় ১০ মিনিটের মত পার হয়ে গেল। বৃষ্টি কমছেই না! গুড়ুম গুড়ুম বজ্রনাদ গুলো রাকিবের কান দিয়ে ঢুকে একেবারে বুকের মধ্যে কোন একটা যায়গায় বাড়ি খাচ্ছে, ঠিক ঐ যায়গাটায় যেখানে মায়ার কথা ভাবলে শিহরণ অনুভূত হয়। এই শব্দ কিভাবে ঐখানে পৌছায় সে বুঝতে পারেনা। বৃষ্টি একটু বেড়ে গেলো, রাকিবের স্মার্ট ফোন অনেক আগেই ভিজে আনস্মার্ট, মায়াকে আর ফোনেও পাওয়া যাবেনা। দূরের গাছগুলোর সাথে সাথে রাকিবের ভবিষৎটাও যেন ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে। বারবার শুধু মায়ার ঐ ডায়লগটা মনে পড়ছে , “ যার সাথে আল্লাহ আর তার রাসূলের ভালোবাসা নাই তার সাথে আমারো ভালোবাসা নাই ” কি অযৌক্তিক ভালোবাসা, কোন যুক্তি খুজে পায় না, রাকিব।
একটা কে যেন আসছে দূরে দেখতে পায় রাকিব। আবছা , হ্যাঁ কোন মেয়েই আসছে। কমলা রঙের একটা পরি সামনে এসে দাঁড়ালো, ভিজে চুপচুপা পরি মাথার চুল এই প্রথম দেখল রাকিব। তার প্রশ্নের উত্তর পেল রাকিব, হ্যাঁ! মায়াই এই চমকানো বিদ্যুতের চেয়ে বেশি সুন্দর। ভেজা খোলা চুলে মায়া আরো ১০০গুন মায়াময় লাগছে। প্রিয় সোনালু ফুলগুলোকে বড় বেশি মলিন মনে হচ্ছে!! মনে হচ্ছে ঐ গুলোর রঙ কমলা নয় কেন?? কোন দিন ছুঁয়ে দেখা হয়নি তাকে, আজ এই অসময়ে খুবি ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু সাহস হচ্ছে না!! কিছুই বলতে পারছেনা রাকিব গলায় ক্যামন যেন চাপা ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে, জিব্বাটাকে ভারি খুবই ভারি মনে হচ্ছে!!
৬
-কেন এত দিন মিথ্যা বলেছ?
রাকিবঃ হুম?
-কেন এত দিন মিথ্যা বলেছ?
রাকিবঃ কোন ব্যাপারে?
-নামায?
রাকিবঃ !!!!
-গত দুই বছরে রোজা নিয়েও মিথ্যা বলেছ
রাকিবঃ ???
-কেন আসতে বলেছ?
রাকিবঃ আমাকে দয়াকরে মাফ কর, তুমি তোমার মত থাক আমি আমার মত ধর্ম বিহীন থাকি, দুজনের ভালোবাসা থাকুক।
-কিন্তু তুমিতো ভালোবাসায় দয়াকরা বা মাফকরার ব্যাপার গুলো বিশ্বাস কর না।
রাকিবঃ !!!
রাকিবঃ তুমি কি মনে কর যে কুরয়ান হাদিসের দোহাই দিয়ে তুমি আমাকে উড়িয়ে দিতে চাচ্ছো তার সব কিছুই যৌক্তিক?
-আমিতো বিশ্বাসী, তাই আমার কাছে এটা তোমার ভুল প্রশ্ন, আপাত দৃষ্টিতে, যা কিছুই অযৌক্তিক মনে হোক, তা হয় অতীতে কোন এক সময় যৌক্তিক ছিল অথবা ভবিষতে যৌক্তিক হবে,ভুললে চলবে না সময়ের শেষ পর্যন্ত থাকবে এগুলর অস্তিত্ব।
-আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবেসে ফেলে ছিলাম!! (বৃষ্টির মধ্যেও মায়ার কান্নাটা বোঝা যাচ্ছে)
রাকিবঃ তুমি চাইলে তা এখনো সম্ভব!!
-“না”
রাকিবঃ আচ্ছা মায়া তোমার ভালোবাসার যে মূলমন্ত্র, সেই সূরা রুমের ২১ নম্বর আয়াত তাঁরই দুই আয়াত পড়ে ২৪ নম্বর আয়াতটা কি পড়ে দেখেছো? (একটু রূঢ় ভাবেই জিজ্ঞাস করে রাকিব)
-হুম প্রায় প্রতিদিনই পরি, ঐ আয়াত গুলো ভালো লাগে আমার!
(وَمِنْ آيَاتِهِ يُرِيكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَطَمَعًا وَيُنَزِّلُ مِنَ السَّمَاء مَاء فَيُحْيِي بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ ) এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল মায়া।
রাকিবঃ ঠিক এটাই এটার অর্থ হয় (তাঁর আরও নিদর্শনঃ তিনি তোমাদেরকে দেখান বিদ্যুৎ, ভয় ও ভরসার জন্যে এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তদ্দ্বারা ভূমির মৃত্যুর পর তাকে পুনরুজ্জীবিত করেন। নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমান লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। )
রাকিবঃ মায়া এখানে তোমার আল্লাহ বিদ্যুৎ দিয়ে ভয়তো দেখান অবশ্যই কিন্তু বিদ্যুৎ দিয়ে ভরসা দেখান কি ভাবে ?? আর মাটিকে পুনরুজ্জীবিতই বা করেন কি ভাবে। তোমার কুরয়ানে সূরা রাদের ১২ নম্বর আয়াতেও একি কথা বলা আছে। এই ভাবে যে (তিনিই তোমাদেরকে বিদ্যুৎ দেখান ভয়ের জন্যে এবং আশার জন্যে এবং উক্ষিত করেন ঘন মেঘমালা।) কি আশা বা ভরসা পাও তোমরা এই বিদ্যুতে?
-তুমি অন্ধ ও বোধহীন হয়েগেছো রাকিব!! বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া একজন ছাত্রের মুখে এই প্রশ্ন শুনে অবাক হলাম!!!
রাকিবঃ মানে কি?
-মানে আবার কি তোমার মত অন্ধদের দুইয়ে দুইয়ে যে চার হয় তাও মেলানোর ক্ষমতা থাকে না............। (চরম বিরক্তি নিয়ে বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ায় মায়া)
রাকিবঃ সোজা ভাবে বললেই তো হয় !!
-নাইট্রোজেন চক্র পড় নাই তুমি? নাইট্রোজেন ফিসক্সেশন কি কি ভাবে হয় জানো না তুমি? যাক তোমার সাথে আর কথা বাড়াতে চাই না।
৭
মায়া কালী মন্দিরের দিকে হেঁটে চলেছে, বৃষ্টির মধ্যে চিৎকার করে কথা বলতে আর ভালো লাগছে না তার। বৃষ্টি সামান্য কমেছে, তবুয় অনেক। মাঠে যায়গায় যায়গায় অনেক পানি জমেছে, পায়ের জুতা একেবারেই বালি বালি হয়েগেছে। রাকিব পিছন পিছন হাটছে। না, মায়াকে ছাড়া থাকা যাবে না, অসম্ভব!! রাকিবের মনে পড়ে যায় নাইট্রোজেন ফিক্সেশন। (নাইট্রোজেন অক্সিজেন বজ্রপাত থেকে সৃষ্ট অতিউচ্চ চাপ তাপ বিদ্যুৎ নাইট্রাসক্সাইড নাইট্রিকঅক্সাইড বৃষ্টি নাইট্রেট মাটির উর্বরতা, মোট নাইট্রোজেন ফিক্সেশনের প্রায় অর্ধেকটাই করে বজ্রপাত, তাইতো কেমন যেন একটা ধাক্কা লাগে তার )
মায়া কালী মন্দিরের কাছাকাছি এসে গেছে পিছন ফিরে দেখল তার থেকে অনেক দূরে সে প্রায় দেখাই যাচ্ছে না। ভুল করেছে সে রাকিব কে পছন্দ করে। এই ভাবে এগুলতো হবার কথা ছিলনা। আজকের এই কষ্ট তার করতে হত না, যদিনা সে শুরুতেই ভুলের মধ্যে জড়িয়ে না পড়ত। আসলে কিছু মানুষের কখনোই কোন ভুল করতে নেই, নিয়মের বাইরে জেতে নেই, মায়াও সেই রকম, তার ভুল মানেই অসীম যাতনা সেই ছোটবেলা থেকেই দেখছে সে। এদিকে আজকের ঝড়ে কালী মন্দিরের অবস্থা বেশ খানিকটা নাজুক। এই জায়গাটা ভালো লাগে মায়ার কেমন যেন এক শান্তি শান্তি ভাব আছে ঠিক স্কুলের সময়ের হলিক্রস চার্চের ভিতর যেমন অনুভূতি হত তার ঠিক সেই রকম। পুকুর পারের বেঞ্চে বসে মায়া, কেন মন্দিরের এই অবস্থা, ভেবে খারাপ লাগে তার। সরকার কি নাই এই দেশে? হযরত ওমরের কথা মনে পড়ে তার উনি গির্যার দুয়ার পরিষ্কার করে দিতেন আর আজকের মুসলমান মন্দিরের জন্য টাকা দিলে ধর্ম শেষ, মায়া ভাবে ওমরের চেও বড় মুসলমান আজকের আমরা!!!!
৮
মায়ার পাশে এসে একটু ঘেষে বসল রাকিব। কোন দিন এভাবে বসেনি সে। বিদ্যুৎতের গতিতে সারা শরির একটা ঝাকি দিয়ে উঠে। একটু বিরক্তি নিয়ে তাকায় মায়া কিন্তু সরে যায় না সে। বরং মায়া একটু নরম হয়। পুকুর পারের গাছ গুলোকে রাকিবের আরো সবুজ মনে হয়, মনে হয় ওরা সবাই হাসা হাসি করছে বৃষ্টির শেষ দিকে এসে।
-তুমি কি জানো পৃথিবীর মোট বজ্রপাতের ৭০% ভুমিতেই পড়ে? সমুদ্র বা নদীতে বাকিটা।
-তুমি কি জানো প্রতি সেকেন্ডেই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও ১০০টা বজ্রপাত হচ্ছে, কয়টাতে মানুষ মারাযায়? বল রাকিব ভয়টা নিব নাকি ভরসা নিব??
রাকিবঃ (কিছু ক্ষন চুপ থেকে) আশাটাকেই নাও।
এই যন্ত্রনার মধ্যেও মনে মনে হাসে রাকিব (وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ )=( তাঁর প্রশংসা পাঠ করে বজ্র ) এই লাইনের কথা ভেবে!! কুরয়ানের প্রতি তার তাচ্ছিল্য বেড়েই চলছে! সে জানে এই লাইনের কোন ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারবেনা, কিন্তু মায়াকে আর চটাতে চায় না রাকিব। মায়া একটু দূরে সরে বসে এইবার, নিজের ভুলের কারন খুজে সে। আসলে রাকিবের মিথ্যাই তার ভুলের কারন।
-ঠিক আছে আশাটাকেই নিলাম, আশা করছি তুমি তোমার ইমান নিয়ে আমার কাছে আবারো আসবে। এছাড়া আমার কাছে তোমার আর কোন গুরুত্ব বা অস্তিত্ব নাই!
-আমি গেলাম, হয়ত আর কখনো দেখা হবে না।(কাঁদতে কাঁদতে উঠে রাস্তার দিকে হাঁটা শুরু করল মায়া, আর বিড় বিড় করে বলল ইয়া হাইউল-কাইয়ুম আমাকে ক্ষমা কর,অস্তাগফিরুল্লাহ ইন্নাললাহা গাফুরুররাহিম)
রাকিবের চোখ অন্ধকার হয়ে আসতে থাকে, মনে হতে থাকে একঝড়ের রাতে একা হাটছে সে, চারপাশ অন্ধকার, প্রকান্ড সব বিজলী চমকাচ্ছে, ঐ আলোতে একটু একটু করে আগে বাড়ছে রাকিব, বজ্রনাদ আর তার কানে পৌছাচ্ছে না, বুকের মধ্যে আঘাতো করছে না। কখনো সামান্য ঝগড়াও হয়নাই রাকিব আর মায়ার। হঠাৎ রাকিবের এ বোল্ট ফ্রম দ্যা ব্লু “ এ বোল্ট ফ্রম দ্যা ব্লু” এ বোল্ট ফ্রম দ্যা ব্লু............এই ফ্রেজটা মনে পড়তে থাকে!
***************************************************
ব্লগের সকল ছোট গল্পের লেখক লেখিকারা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
***************************************************
উৎসর্গঃ সবাইকে যারা গতকাল আর পরশু ঝুম বৃষ্টিতে ভিজেছেন আর গুড়ুম গুড়ুম বজ্রনাদ ইঞ্জয় করেছেন।
ছবিঃ গুগোল