ভালোবাসার জৈবিক বিজ্ঞানঃভালোবাসার ধাপ গুলো
আল্লাহ দাওয়া মানুষের শরিরকে বিজ্ঞান সাধারনত ১১ টি system(বা তন্ত্রে) ভাগ করে থাকে, এর মধ্যে দুইটি system ১)nervous system(বা স্নায়ু তন্ত্র) ২)endocrine system(বা অন্তঃ ক্ষরা গ্রন্থি তন্ত্র) হল মানুষের শরিরের প্রধান পরিচালক। শরিরের একটাও কোষ এদের পরিচালনার আওতার বাইরে না। আর nervous system ও endocrine system একটি আর একটির উপর এমন ভাবে নির্ভর করে, যে এটা বলা কঠিন, এদের মধ্যে কে কার পরিচালক।
আমরা সকলেই জানি জিবনের একটা পর্যায় থাকে, যখন আমারা প্রেম-ভালোবাসা-যৌনতা বোধ মুক্ত থাকি, এমন কি এই concept টাই আমরা বুঝিনা, এই পর্যায়টা হল বাল্ল্যকাল। বাল্ল্যকাল পেরিয়ে আমরা বয়ঃপ্রাপ্ত হই, হঠাৎ করেই, কয়েকটি দিন এর ব্যাবধানেই প্রেম-ভালোবাসা-যৌনতা এগুলো কি তা বুঝতে শুরু করি, বা বলা যায় বুঝতে বাধ্য হই।
বয়ঃপ্রাপ্তি,
মানুষের brain এ limbic system বলে বেশ বড় একটা অংশ থাকে যা নির্দিষ্ট সময়ে hypothalamus কে জানিয়ে দেয়, যে আমাদের শরির ও মন এখন বয়ঃপ্রাপ্তির যোগ্য।
এই সময় আমাদের hypothalamus GnRH(gonadotropin releasing hormone) নামক হরমন তৈরি করে। এই GnRH হরমন আমাদের pituitary কে নির্দেশ দেয় LH(luteniging hormone) এবং FSH(folical stimulating hormone) নামক হরমন তৈরি করতে।
এই LH আর FSH ছেলেদের testis এবং মেয়েদের ovary কে দারুন ভাবে কর্মচঞ্চল করে তুলে, ফল রুপে ছেলেদের testosterone এবং মেয়েদের estrogen হরমনের প্রাচুর্যের সৃষ্টি হয়। এখানেই সকল কাহিনির শুরুটা আমরা অনুভব করি, বা বলতে পারেন, আমাদের brain আমাদের অনুভব করায়।
কিন্তু প্রকৃত পক্ষে কাহিনির শুরু আরো আগে, এই নিয়ে অন্য আর এক দিন বলব, আজ শুধু এই টুকু বলে রাখি, যে limbic system এর development নির্ভর করে olfactory bulb এর উপর, এই olfactory bulb এর অবস্থান হল আমাদের নাকের উপর কিন্তু খুলির ভিতরে, যা আমাদের সুগন্ধ ও দুর্গন্ধের অনুভুতি দেয়। জন্ম থেকে যদি কারো গন্ধের অনুভুতি না থাকে তবে তার যৌনতা বলে কিছু থাকেনা।
বয়ঃপ্রাপ্তির পর, লজ্জায় লাল হওয়া গাল, ধুপ ধাপ ধুপ ধাপ করে হৃদপিন্ডের লাফালাফি, হিমশিতল হয়ে যাওয়া হাত-পা, হতে পারে আপনার প্রেমে পড়ার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু আপনার শরীরের ভিতরের নির্দিষ্ট রাসায়নিক পরিবর্তন প্রমান করতে পারে যে, আপনি খালি প্রেমে পড়েন নাই প্রেমও আপনার উপরে পড়েছে।
এক ভাবে বলতে গেলে ভালোবাসা শুধুই জৈব রসায়নের দয়া।
একজন শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা গবেষক হলেন “ Helen Fisher of Rutgers” (University of New Jersey) ।
উনি বলেছেন যে “প্রেমে পড়ার তিনটি পর্যায় আছে এবং এই তিনটি ধাপের প্রতিটিতেই জড়িয়ে আছে আলাদা আলাদা হরমনের কারসাজি”।
এই তিনটি ধাপ ভালোবাসার অল্প স্থায়ি dimension(স্বামী-স্ত্রীর একবার মিলিত হওয়া) এবং দির্ঘ স্থায়ি dimension(প্রথম দেখা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়) দুইটাই বর্ননা করে।
ভালোবাসার প্রথম ধাপটি হল যৌন কামনা(বা যৌন লালসা)(Lust)
ভূমিকাঃ এই পর্যায়, কোন ছেলের কোন মেয়ে কে দেখে ভাল লাগে অথবা কোন মেয়ের কোন ছেলেকে দেখে ভাল লাগে। বা স্বামী স্ত্রীর প্রতি, স্ত্রী স্বামীর প্রতি যৌন উত্তেজনা অনুভব করে এবং পরস্পর পরস্পরের যৌন সঙ্গ কামনা করে।
বিজ্ঞানঃ যৌন কামনার তৈরি করে testosterone এবং oestrogen নামক হরমোন গুলো। বাংলায় এই দুই হরমোনকে লিঙ্গ নির্ধারক হরমোন বা যৌনতার হরমোন বলা যেতে পারে। Testosterone হরমোনটি শুধুই পুরুষের একার সম্পদ নয়। একজন মহিলার যৌন কামনার সৃষ্টিতে এই হরমোনটি বিশেষ গুরুত্ত পুর্ন ভূমিকা পালন করে। এই হরমোন দুটি আপনাকে যৌন কামনায় পাগল প্রায় করতে পারে। বিজ্ঞানীদের ভাষায় “These hormones will get you out looking for anything”।
ভালোবাসার দ্বিতীয় ধাপটি হল ভালোবাসায়-চিত্তহরন(বা আকর্ষন) (Attraction)
ভূমিকাঃ এ ধাপটা হল ভালোবাসার বা প্রেমের হাবু-ডুবু ধাপ। এই ধাপে ভালোবাসার মানুষ ছাড়া অন্য কোন কিছু চিন্তা করা দায়। এই সময় প্রেমিক মানুষটি ক্ষুধা মন্দায় ভুগতে পারে, রাতের পর রাত জেগে কাটাতে পারে, এমন কি ঘন্টার পর ঘন্টা দিবা স্বপ্নো দেখে কাটিয়ে দিতে পারে। আর এই সময় “অন্য মানষ্ক” থাকাটাই, তার কাছে হয় স্বাভাবিক ব্যাপার। যৌন মিলনের মুহুর্তে বা যৌন মিলনের ঠিক আগ মুহুর্তে যেমন দুনিয়ার অন্য কিছু আমাদের খেয়াল থাকেনা।
বিজ্ঞানঃ ভালোবাসায়-চিত্তহরন পর্যায় এক গুচ্ছো 'monoamine' নামক neuro-transmitter(স্নায়ুর সংযোগ রক্ষাকারি রাসায়নিক) গুরুত্ব পুর্ন ভূমিকা পালন করে।
এগুলো হলঃ
১) Dopamine – মস্তিষ্কে Dopamine এর কার্যক্রম “cocaine” এবং “nicotine” এর কারনেও বাড়ে। বুঝতেই পাড়তেসেন “cocaine” খাইলে বাড়ে।
২) Norepinephrine – এটি “Noradrenalin” নামেও পরিচিত। এটি ঘাম বাড়ায়, হৃদ স্পন্দন বাড়ায়।
৩) Serotonin - ভালোবাসার জৈব রসায়নে এটি খুবই গুরুত্ত পুর্ন, এই রাসায়নিক পদার্থই আমাদেরকে অস্থায়ি ভাবে “উন্মাদ” বানায় বা আমাদের বুদ্ধিরভ্রংশ ঘটায়।
এই ৩ রাসায়নিক পদার্থ হলো “local hormone”(আপাতত এইটা কি ব্যাক্ষা করবো না)
ভালোবাসার তৃতীয় ধাপটি হল ভালোবাসার বন্ধন(বা আসক্তি, বা অনুরাগ) (Attachment)
ভূমিকাঃ ভালোবাসায়-চিত্তহরনের পরেই ভালোবাসার বন্ধন হতে হবে। যদি দুটি মানুষের যোজন টিকতে হয়, তবে এই রকমই হতে হবে, নয়ত সব শেষ!!! চিত্তহরনের পর্যায় কেউই চিরকাল থাকে না। যদি থাকতো তবে দুনিয়া চলত না। ভালোবাসা বলেও কিছু থাকতো না, কারন সবাই হত উন্মাদ। বন্ধনটাই দির্ঘস্থায়ি বোঝাপরার সৃষ্টি করে। যার ফলে বিয়ে, সন্তান, ও সর্বপরি পরিবারের সূচনা হয়।
বিজ্ঞানঃ এই ধাপের গুরুত্ত পুর্ন হরমন দুটি সরাসরি মস্তিষ্কের হাইপোথেলামাস নামক অংশ থেকে তৈরি হয়, এবং এরা সামাজিক বন্ধন তৈরি করে।
এগুলো হলঃ
১) Oxytocin – মায়েরা যখন সন্তান প্রসব করেন তখন তাদের hypothalamus থেকে প্রচুর পরিমানে oxytocin নিঃশরিত হয়। এই oxytocin জরায়ুর সঙ্কোচন করতে এবং মায়ের বুকের দুধ বের হতে সাহায্য করে। বাচ্চা যখন মায়ের দুধ পান করে তখন মায়ের hypothalamus থেকে oxytocin নিঃশরিত হয়। এই oxytocin মা ও শিশুর বন্ধন জোড়ালো করে।
যৌন মিলনের সর্বচ্চ পর্যায়(অর্থাৎ রাগমোচনকালে or climex কালে) প্রধানত oxytocin(কিছু vesopressin) নারীর hypothalamus থেকে নিঃশরিত হয়। এবং এই সকল পর্যায়েই oxytocin তার স্বামীর প্রতি নির্ভরতা ও ভালবাসা বাড়ায়।
২) Vasopressin – এটিও দির্ঘস্থায়ি সম্পর্কের জন্য জরুরি একটি হরমন যা hypothalamus থেকে নিঃশরিত হয়। যৌন মিলনের সর্বচ্চ পর্যায়(অর্থাৎ রাগমোচনকালে or climex কালে) vasopressin(কিছু oxytocin) প্রধানত পুরুষের hypothalamus থেকে নিঃশরিত হয় এবং তা তার স্ত্রীর প্রতি তার আকর্ষন বৃদ্ধি করতে থাকে।
ফলে স্বামী-স্ত্রী যত বেশী মিলিত হয়, oxytocin ও vasopressin এর কারনে, ততই তাদের সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। বার বার মিলিত হবার ফলে যে বন্ধনের দৃঢ়তা বাড়ে তা পুরুষের ক্ষেত্রে বেশি প্রজোয্য। আর স্ত্রীরা তাদের স্বামীকে অনেক বেশি ভালোবাসতে থাকে যখন তারা ঐ স্বামীর সন্তানকে বুকের দুধ পান করায়।
কিছু অতি জরুরি কথাঃ
১) কোন ভাবেই ভাব বার কারন নাই যে নারীর যৌন চাহিদা পুরুষের চেয়ে কম। বরং এই ভাবে বলা যায় যে নারীর চাহিদা চক্রাকারে আবর্তিত হয়। আর পুরুষেরটা মোটা মোটি constant, কিন্তু আবার স্বামীর চাহিদা স্ত্রীর চাহিদা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়(এই নিয়া পড়ে লিখব ইনশাল্লাহ)।কিন্তু স্ত্রীরটা এই রকম না।
২) যৌন চাহিদার শুরু হয় বয়ঃপ্রাপ্তির সাথে সাথেই, so in male it is around the age of 11-14, and in female it is 9-12, আমাদের দেশ সাপেক্ষে, কারন আমাদের দেশে tropical আবহাওয়া বিদ্দ্যমান। পশ্চীমা দেশ গুলোতে আর একটু দেরি হয়(দুই-এক বছর) কারন ওদের শরির temperate climate টে অভ্যস্ত।
৩) যেহেতু যৌন চাহিদা কৈশরেই শুরু হয়, তাই কৈশরেই বিয়ের ব্যাপারটা আমাদের ভাবা উচিত। কারন, যারা আমাদেরকে শিখাইসে যে ৩০, ৪০ বছর বয়সে বিয়ে করতে হবে, এটা শরিরের জন্য ভাল, তারা কিন্তু তাদের দেশ গুলোতে class 5-6 এই sex education দেয় এবং free contraceptive material(eg. Condom, OCP, diaphragm………etc) বিতরন করে school এর class থেকেই । সে সব দেশে ১১-১৪ বছরের মেয়েরা অহরহই মা হন।
হা, তবে এটা ঠিক যে তারা ৩০,৪০ নয়, কেউ কেউ ৬০ বছর বয়সেও তাদের জিবনের প্রথম বিয়ে করে।
৪) যেহেতু কোন নির্দিষ্ট দিন খনের জন্য ভালোবাসার জৈবিক প্রক্রিয়া অপেক্ষা করবে না, সেহেতু valentine’s day নামক ভ্রান্ত ধারনা থেকে বের হয়ে এসে, ভালোবাসার মানুষের কাছে প্রতিদিনই চরম ভালোবাসা আশা করা যে তে পারে।
৫) কেউ যদি valentine’s day নামক দিনটিতে প্রিয়জনের কাছে বিশেষ কোন প্রেমের আচোরন আশা করেন, আর তার প্রিয়জনের রক্তে testosterone বা estrogen যদি প্রয়োজনের চেয়ে কম হয়, তবে হিতে-বিপরিত হতে পারে।
৬) অতৃপ্ত যৌন লালসার ধাপটির কারনে সমাজে যে অবক্ষয়, তা নিয়ে seriously ভাব বার দরকার আছে, কারন যৌন লালসার জন্য মানুষটির দায় নাই, দায় হল, limbic system, hypothalamus, pituitary, testis, ovary, adrenal gland, এবং তাদের হরমন গুলোর, আর দায় হল যারা আল্লাহের দেয়া নিয়ম কে উপহাশ কইরা, নিজেদের আবল-তাবল নিয়ম বানাইসে, তাদের।
৭) শুধু ছেলেরাই ধর্ষন করে না, মেয়েরা ও ছেলেদের ধর্ষন করে। মেয়েরাও তাদের যৌন কামনা লুকাতে পাড়ে না এবং কোন না কোন ছেলেকে তাদের চাহিদা পুরনে ব্যাবহার করে। এবং পুরা পৃথিবীতেই তা হয়।
৮) কারো দ্বারা নিজের চিত্তহরনের আগে, বুঝে নেয়া উচিত, যে সেই মানুষটিও আপনার প্রতি যৌন লালসা অনুভব করে কি না? নাইলে খবর আসে, এই ভুল অপূরনিও।
৯) স্ত্রীর climax যৌনতার চাইতেও বেশি, brain এর ভালোবাসা ভালো লাগার উপর নির্ভরশিল, তাই যদি বন্ধন চান, ওদের ভালবাসা ভাল লাগার গুরুত্ত দিন। স্ত্রীর climax হইল? কি হইল না? তার প্রচন্ড গুরুত্ত দিন। মেয়েদের climax পুরুষের climax এর চেয়ে অনেক বেশি complicated process(এখন explain করতে পারবনা)
১০) স্ত্রীরা স্বামীদের মাঝে মাঝে একটু দয়া করবেন, আপনাদের ইচ্ছা না থাকলেও, স্বামীদের যৌনতায় সাড়া দিবেন, এতে আপনাদের লাভই হবে কারন, আপানর প্রতি তার আকর্ষন বাড়তেই থাকবে, TV তে Angelina jole, charliz theron, কারিনা, কাট্রিনা, তিসা, তিন্নি, জয়া………… ইত্যাদি কে দেইখা উহঃ আহঃ করা কইমা যাবে।
১১) যারা মা হতে যাচ্ছেন তারা একান্ত বিপদে না পড়লে সিজারিয়ান operation করাবেন না কারন এতে বাচ্চা এবং স্বামীর প্রতি আপনার ভালোবাসা তেমন একটা নাও বাড়তে পারে, যা খুবই জরুরি, যেহেতু oxytocin কম পাবেন বন্ধন্ টা হবে হাল্কা । তা ছাড়াও normal delivary তে যে প্রচুর oxytocin আপনি পাবেন তা আপনার uterus এর normal involution হতে সাহায্য করবে। বাচ্চাকে breast feed করালে ও আপনি same উপকার গুলোই পাবেন।
শেষ কথাঃ
যৌন কামনা বা যৌন লালসাই ভালোবাসার শুরু এবং শেষ নয়,
প্রকৃত ভালোবাসা হইল জীবনের শেষ দিকে,
যখন নাতি-নাতনির সাথে বইসা বুড়া-বুড়ি গল্প করবেন তখন,
যখন বুড়া-বুড়ি একসাথে হাত ধরাধরি কইরা চা খাবেন তখন,
যখন বুড়া-বুড়ি যৌবনের করা কষ্ট কে হাইসা উড়ায়া দিবেন তখন,
আরো কত কি যে বুড়া-বুড়িরা করে……………..
আজ এই পর্যন্তই , ভালোবাসা নিয়া অন্য কোন দিন আরো কথা হবে, ইনশাল্লাহ, আল্লাহের রহমতে সবার জীবন ভালোবাসায় পুর্ন হোওক।
আসসালামুআলাইকুম, আল্লাহের এত এত নিয়ামতের সন্তুষ্টি প্রকাশ করুন, আল্লাহের নামে পবিত্রতা ঘোষনা করুন।
ভালোবাসার জৈবিক বিজ্ঞানঃ হস্তকর্ম