somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিংস্র শ্বাপদদের নখর কেবল শাণিত হয় প্রভাবশালীদের প্রশ্রয়েঃ অরিত্রীরা মরে যুগে যুগে

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সময় বড় স্মৃতি বিস্মৃত । ভিকারুননিসা নূন স্কুলের উগ্র শিক্ষিকাগণও এক সময় প্রয়োজনীয় প্রভাবশালী লোকজনকে হাত করে নিরাপদে স্বপদে ফিরে আসবেন। আচরণে উগ্রতার ব্যারোমিটার ক্রমশঃ বাড়বে। অরিত্রীরা গুমড়ে কাঁদবে, কাঁদবে মানবতা, কাঁদবে শিক্ষাব্যবস্থা। প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে আরো কতো অরিত্রী বলি হবে ওদের শাণিত নখরের আঘাতে। কতো অরিত্রী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হবে, অসুস্থ হবে। দুঃসহ হবে তাদের শৈশব, কৈশোরের শিক্ষাজীবন, ম্লান হবে আনন্দময় নির্ভিক স্বপ্নগুলো। তার হিসেব কে কত রাখবে?

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারী। পরিক্ষা কক্ষে মোবাইল ফোন নেবার অপরাধে তাকে বহিস্কারসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে অধ্যক্ষা, উপাধ্যক্ষার, রূঢ় আচরণ, অভিভাবককে অপমান সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি এই কিশোরী। ফলশ্রুতিতে লজ্জা ও চরম অভিমানে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সে। এটা অতি সাম্প্রতিক ঘটনা।
নব্বইএর দশকে তৎকালীন ঢাকা চারুকলা ইন্সটিটিউটে (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) এমনই একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছিল। মাসুদ নামে একজন মেধাবী ছাত্র জলরঙ পেইন্টিংএ তার সুখ্যাতি ছিল। অঙ্কন পাগল এই মাসুদ ছবি আঁকার নেশায় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চষে বেড়াতেন। একারণে একটি বিষয়ে তত্ত্বীয় ক্লাসে তার উপস্থিতির হার কিছুটা কম ছিল, দায়িত্বশীল শিক্ষিকার দাবী শ্রেণি পরীক্ষা নাকি দুএকটা বাদ ছিল। সকল বিষয়ের শিক্ষকদের ছাড় পেলেও এই একজনের কঠোর অবস্থানের কারণে তাকে প্রি ডিগ্রী (উচ্চমাধ্যমিকের সমতূল্য) পরিক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছিল। কোনভাবেই তিনি টললেন না মাসুদের করুণ আর্তির কাছে। প্রতিভাদীপ্ত মাসুদ হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন।

দুটো ঘটনা প্রায় একই সূত্রের। ছাত্রের প্রতি শিক্ষকের অনমনীয় রূঢ় আচরণ।

অরিত্রীর ঘটনাটা নিয়ে প্রতিবাদ চলছে। মাসুদের বেলায়ও প্রতিবাদ হয়েছিল। পুরো চারুকলার ছাত্র-ছাত্রীদের ঘৃনাভরে নিক্ষিপ্ত থুথুয় ভিজেছিল সেই উগ্র শিক্ষিকার বস্ত্র, দেহ। অনেকদিন চারুকলা অঙ্গনে আসতে পারেননি তিনি। তৎকালীন প্রভাবশালী এক শিক্ষকের প্রশ্রয়ে পুনর্বাসিত হয়েছিলেন পরে এবং অধিকতর দাপুটে হয়ে উঠেছিল তার আচরণ। কোন ছাত্রই তাকে মন থেকে সম্মান করতে পারেনি। তাকে দেখলেই মাসুদের নিথর মরদেহটার কথা মনে ভাসতো। মনে হতো এই খুনী নারী মাসুদের দেহটার উপর দিয়ে উচু জুতায় হনহন করে হাঁটছে। সবাই হিংস্র শ্বাপদের মতোই তাকে ভয় পেতো, ঘৃনা করতো।

ছাত্র-ছাত্রীদের সব দোষই ক্ষমা করে দিতে হবে এমন তো নয়। তাকে যেমন স্নেহ দিতে হবে, তেমনই শাসনও প্রয়োজন। একজন শিক্ষককে সবার আগে ছাত্রের বন্ধু হতে হবে, তার সাথে একাত্ম হয়ে তাকে গড়ে তোলার মন্ত্রণা দিতে হবে। অযথা ভারিক্কী ভাব দেখিয়ে দুরত্ব বজায় রেখে শিক্ষাদানের দিন ফুরিয়েছে অনেক আগেই। যুগ পাল্টেছে, পাল্টেছে শিক্ষা পদ্ধতিও। সময়ের সাথে শিক্ষককেও আপডেট হতে হয়। কিন্তু এখনো কিছু শিক্ষক সেই মান্ধাত্বার অহমবোধ, রূক্ষ আচরণ বজায় রাখেন ছাত্র ও অভিভাবকদের প্রতি। সুযোগ পেলেই ফৌজদারী দিন্ডবিধি প্রয়োগ করতে চান এখানে। এটা অন্যায়। সমাজে সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন পেশা শিক্ষকতা, কতিপয় দুষ্টু লোকের কারণে তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। ভাল শিক্ষকগণ লজ্জা পান এদের কর্মকাণ্ডে।

একজন শিক্ষক, একজন শিক্ষা প্রশাসকের কি গুনাবলী থাকতে হয় সে বিষয়গুলো বিবেচনা না করে তাদের নিয়োগ দিলে একটা দুটো স্কুল শুধু নয়, আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম সত্যিকারের নির্ভিক ও স্বাবলম্বী মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারবে না কখনোই।

আত্মহনন কখনোই ভাল কোন সমাধান হতে পারে না। কঠিন বাস্তবতায় সংগ্রাম করে বাঁচাই শ্রেয়। জীবনের প্রতি মানুষের ভালবাসা গভীর। কোন অবস্থাতেই সে মরতে চায় না, তারপরও কখনো কখনো মৃত্যুর বিভীষিকা তাকে আঁকড়ে ধরে। কোন পরিস্থিতিতে সে এই করুণ মৃত্যুকে স্বেচ্ছায় আলিঙ্গন করে, তা অনুধাবন করতে হবে। যে যায়, সে আর ফিরে আসে না, ফিরে আসবে না অরিত্রী, মাসুদ বা এমন আরো অনেকেই। হয়তো এমন করে আরো কেউ কেউ চলে যাবে। তবে এই অবরুদ্ধকর পরিস্থিতির সমাধান করা প্রয়োজন সময় থাকতেই। আমরা চাই না এধরনের আত্মহননের পুনরাবৃত্তি হোক। চাইনা শাণিত হোক শিক্ষক নামে কোন হিংস্র শ্বাপদের নখর।

(অরিত্রীর মৃত্যু নিয়ে যে কোন রাজনৈতিক খেলা বর্জন করা উচিত)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:১৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য



চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি তাদের কাছেই যাবে তারা তোমার মূল্য বুঝবে....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৪


মৃত্যুর পূর্বে একজন পিতা তার সন্তানকে কাছে ডেকে বললেন, 'এই নাও, এই ঘড়িটা আমি তোমাকে দিলাম। আমাকে দিয়েছিলো তোমার দাদা। ঘড়িটা দুইশত বছর আগের। তবে, ঘড়িটা নেওয়ার আগে তোমাকে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×