"শব্দকর" শব্দটির মাঝে কিছুটা কাব্যিক গন্ধ আছে। কিন্তু এদের জীবনটা বড় অসহায়, সেখানে অপমান আছে, না পাওয়ার কষ্ট আছে, অবহেলার অভিমান আছে, আছে লাঞ্চনা আর বঞ্চনার ইতিহাস কিন্তু কোন কাব্য নেই!
শব্দকর বা ডুকলা বা ঢুলি দের সম্পর্কে আমার কোন ধারণা ছিলনা। ব্লগার কাজী মামুন হেসেনের শব্দকরদের করুন অসহায়ত্বের গল্প : আমরা কি মমতার হাত বাড়াতে পারিনা ? পোস্ট পড়ে এদের অবর্ণনীয় জীবন যাপনের কথা জানলাম। একই দেশে, একই মাটিতে, একই বাতাস আর জলের সুবিধা ভোগ করেও শুধুমাত্র বর্ণবাদ আর জাতপাতের জালে আটকে আছে হাজারো মানুষের জীবন।
মামুনের পোস্ট থেকে একটু আবার পড়ে দেখি-
*************
সিলেটে প্রচলিত একটি প্রবাদ আমার জীবনে সহস্রাধিক বার শুনেছি তা হল
"হকল ঘাট পাও ধইলে জাত যায় না
ডুকলার ঘাট পাও ধইলে জাত যায়"
তার মানে হল, " সকল ঘাটে পা ধুইলে জাত (!) যায়না, ডুকলার ঘাটে পা ধুইলে জাত (!) যায় "। যাদের ব্যাবহৃত ঘাটে পা ধুইলে জাত যায়, তাদের স্পর্শ করলে কি হতে পারে তা নিশ্চয়ই ধারনা করতে পারছেন ?
সিলেটে অনেক গালী প্রচলিত আছে তার মধ্যে সবচেয়ে সমাধৃত এবং বহুল ব্যাবহৃত গালী হল "ডুকলা"।
**************
বুঝতেই পারছেন মানুষগুলোর জীবন কি অমানবিক!!
এই পোস্টেই আরো কিছু লাইনের কথা উল্লেখ করা জরুরী ও প্রাসংগিক-
***************
সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের মাধ্যমে কোন এক স্থানীয় মুসলিম অথবা হিন্দু পরিবারের কাজ শেষ করার পর, সকল শ্রমিককে নিজেদের ব্যাবহৃত থালা বাসনে খাবার সরবরাহ করলেও, ডুকলাদেরকে খাবার সরবরাহ করা হয় হাসের খাবার পাত্রে অথবা পরিত্যাক্ত কোন পাত্রে।
****************
হায় মানবতা!!!
এতক্ষন না হয় পোস্টের লেখকের কথা শুনলাম। এবার আসুন ঐ এলাকার একজন নিবাসী, ব্লগার মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় তার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে কি বলছেন দেখা যাক-
" দুর্গা পূজোর সময় যেসব ডূগলারা আমাদের বাড়িতে আসে ঢাক বাজানোর জন্য তাদেরলে উঠোনের মধ্যে খেতে দেয়া হয়। আমাদের ঘরের ভেতরে ঢুকাও তাদের জন্য নিষিদ্ধ । অনেক চেষ্টা করেও আমি পারি নি তাদেরকে ঘরের ভেতর নিয়ে আসতে । তারা নিজেরাও আসে না , মনে করে পাপ হবে ।"
খেয়াল করে দেখুন জাত পাত আর পাপের ভয়ে নিজেদের মানুষ ভাবাটাও ভুলে গেছে এই মানুষগুলো। ব্লগার চেষ্টা করেছেন এই অচলায়তন ভাঙার। কিন্তু... ...
অনেক কিছু জানলাম এবার কি??
-------------------------------------------------------------------
এটাই মূল প্রসংগ। এই মানুষগুলো আমাদের মতই হাত-পা-রক্তে গড়া মানুষ। আমরা কি পারিনা এদের জীবনোন্নয়নের জন্য কিছু একটা করতে। এই আধুনিক যুগে আমাদের পাশের বাসায়, পাশের ঘরে মধ্যযুগীয় এই চিন্তাধারাকে ভেঙে দিতে আমরা কি আমাদের কিছু সময়, চিন্তা, মেধা ব্যয় করতে পারিনা!
কি করা যেতে পারে?
কি করা যেতে পারে- এই প্রশ্নে আমি অন্ধকারে। এতটুকু বুঝতে পারছি সমস্যাটা "একরাতে" সমাধানের নয়। সমস্যা কেউ একাও সমাধান করতে পারবেনা। এরজন্য চাই পরিকল্পনা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
এই প্রসংগে সবার মতামত আশা করছি। নিজের মনুষত্যের কাছে, বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন। প্লিজ এগিয়ে আসুন!!