আমাদের প্রিয় ব্লগার "আরিফ জেবতিক" ভাইয়ের লেখা। সোনালি ব্যাংকের আকাশে বাতাসে উড়ছিল ৩টি শাখার অবাধ লুটপাটের কাহিনী। কিন্তু সবগুলো শীর্ষ কর্মকর্তা চোখ বন্ধ করে রাখছিলেন, বালিতে মাথা গুজে পড়েছিলেন চুপচাপ।
এই সময় এক মধ্যসারির কর্মকর্তা কৌতুহলী হয়ে এই শাখাগুলোতে অডিটের উদ্যোগ নিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর জিএম এর অফিসে অনুমতি চাইতে গিয়ে খেলেন ধমক। বলা হলো, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মঈনুল হকের ইন্সট্রাকশন আছে যে মঈনুলের অনুমতি ছাড়া কোনো শাখায় অডিটে যেতে পারবে না কেউ।
মধ্যসারির সেই কর্মকর্তা লিখিত ইন্সট্রাকশন চাইলেন, সেটা তাঁকে দেয়া হলো না। বরং জিএম সাহেব তাকে ধমক মেরে বললেন, 'নিজের সর্বনাশ ডেকে আনছেন!' এবারে কৌশলী হলেন সেই মাঝারি কর্মকর্তা। তাঁর এক সঙ্গীকে নিয়ে তক্কে তক্কে থাকলেন, যেই মাত্র ডিএমডি ছুটিতে গেলেন, তখনই ডিএমডির অনুপস্থিতির সুযোগে ইস্যু করিয়ে ফেললেন অডিট নোট।
খবর বেরিয়ে গেল।এবার শুরু হলো ইঁদুর বেড়াল খেলা। একদিকে প্রবল প্রতাপশালী ডিএমডি আর তাঁদের লুটেরা দোসররা, আরেকদিকে কয়েকজন সাধারণ ব্যাংক কর্মকর্তা। ধমকে অনুরোধে চাপে অস্থির তাঁদের নিদ্রাহীন রাত, অভুক্ত দিন। ব্যাংকের শাখায় গেলে তাঁরা অডিট করতে দিতে চায় না। হেনতেন নানা টালবাহানা।
তারপর, ঠিক অডিটের আগের রাতে আর দিনে জিএম সিরাজী আর সেই কর্মকর্তাকে বদলি করে দেয়া হলো ঢাকার বাইরে। তাঁরা আবার কৌশল খাটালেন। পোস্ট ডেটে অডিট অর্ডার জারি করে দিলেন কেউ কিছু বুঝবার আগেই। অনেক ধমক, লোভ, ইঙিতের বেড়াজাল উপেক্ষা করে ক্ষুদ্র ক্ষমতার অডিট টিম উদঘাটন করে বসল বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে বড় ব্যাংক লুটের ইতিহাস- দ্য হলমার্ক কেলেংকারি।
আমি জানি, এই হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় লুটে চোখ বুজে থাকলেই এই মধ্যম সারির কর্মকর্তার পকেটেও অনায়াসে ঢুকে পড়ত ৮/১০ কোটি টাকা। এখন তাঁর পোস্টিং থাকত ঢাকাতেই, তার সন্তানরা ভালো ভালো স্কুলে পড়তে পারত, অবসর নেয়ার পরে বনানীর ফ্ল্যাটটাতে ভাড়াটিয়া বসিয়ে দিয়ে তিনিও সপরিবারে কানাডায় মাইগ্রেশন নিয়ে ইউরোপে হলিডে করতে যেতে পারতেন।
কিন্তু তিনি আজ পড়ে আছেন কোনো এক অজঁ পাড়া গায়ে। নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে ফুরিয়ে অবসরকালে তাঁকে ফিরে যেতে হবে হয়তো বাপের ভিটায়। এমন বোকা হয় মানুষ!
তবু আমি জানি একদিন আমি এই লোকটার নামধাম খুঁজে বের করব। আমার সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে আমি তাঁকে দেখতে যাব সেই সুদূর মফস্বলে। আমার সন্তানরা তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম করবে, সত্যিকারের মানুষ দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁরা ফিরে আসবে। ফেরার পথে আমি তাঁদের কানেকানে বলব, ' অগোচরে থেকে যাওয়া এসব ছোটখাটো মানুষদের জন্যই এখনও বাংলাদেশকে জলোচ্ছাসে ভাসিয়ে দেয়নি বঙ্গোপসাগর, এখনও বৈশাখী ঝড়ে উড়ে যায়নি গোটা দেশ। ঐ সব চোর-বাটপার-লুটেরারা দেশপ্রেম শব্দটিকে যতই অপবিত্র করার চেষ্টা করুক, এইসব লুকিয়ে থাকা মানুষেরাই এদেশের সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। এসব মানুষের ত্যাগে ও ঘামেই একদিন এই দেশ ঘুরে দাঁড়াবে। তাই কখনোই এদেশের উপর থেকে আশা হারিও না, কক্ষণো না।
লেখকের বিনা অনুমতিতে কপি করলাম। আশাকরি ক্ষমা করবেন। (ফেবুক থেকে)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:১৯