(পুরাটাই আমার নিজস্ব মূল্যায়ন, হতে পারে সময়ের সাথে বদলে যাবে তবে এটাই বর্তমান অবস্থান। আসিফ ভাই এর লেখায় আনুপ্রানিত হয়ে লেখা ।
যৌনগাঁথা
“তেইশ বছরের ক্ষুধার্ত শিশ্ন শুধু বোঝে যোনির চিৎকার, স্তনের সুড়সুড়ি আর ঠোঁটেদের কাড়াকাড়ি। এখানে পবিত্রতা, ন্যায়শাস্ত্র বলে কিছু নেই,উত্থিত পুরুষাঙ্গ খুঁজবেই নরম খাবার। নীলছবি আর সস্তা হস্তমৈথুনে বিরক্ত দন্ড ধর্ম, গন্তব্য, উদ্দেশ্য বলতে বোঝে একটাই, জরায়ুর দেয়াল”
মতবাদ তথা নীতিনৈতিকতাজনিত বেশ বড় ধরণের সমস্যা রয়েছে আমার। ব্যক্তিগতভাবে আমি মোটেও সমাজসিদ্ধ অথবা ধর্মীয় জীবনযাপনে অভ্যস্ত নই আর একারণেই সেলফ ডিফেন্সের প্রয়োজনেও আমি খুব একটা সহজে ধর্মকে ডেকে আনি না। এথিক্স জিনিসটাকে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভয়ানক জিনিস মনে হয়, অনেকটা মাদার অফ কনফিউশনের মত। এথিকালী আমার অবস্থান কতটা সমর্থনযোগ্য এসব নিয়েও মাথা ঘামাই না মোটেও। যাহোক, মূল প্রসঙ্গ হচ্ছে যৌনতা ভয়াবহ অশ্রাব্য, অসমর্থনযোগ্য একটা কন্সেপ্ট আমাদের সমাজে, এ নিয়ে কথা বলাটাও ভয়াবহ অশ্লীল যদিও ঐ একই পন্থা অবলম্বন করে গোটা জীবজগতকে পৃথিবীতে টিকিয়ে রাখতে হয় প্রাণের স্পন্দন। মানুষ সঙ্গম করতে পারবে আর সেই সঙ্গমের বর্ণনা পড়লে তার ঘেন্না ধরে, ব্যাপারটা সাংঘর্ষিক হলেও তার চরিত্রে স্পষ্টভাবে বিদ্যমান। মানুষের চরিত্রে দ্বিচারিতাটা স্পষ্টভাবে লক্ষ্যণীয় আর তা নিয়েই একরকম দম্ভ করে সে বেঁচে থাকে। যেহেতু যৌনতা একটা ভয়াবহ কন্সেপ্ট আমাদের সমাজে তাই একরকম লুকোচুরি করেই এবং স্পষ্টতই যুদ্ধ করে এসম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হয় যাহাকে শুদ্ধভাষায় অশ্লীলতা ছাড়া অন্য কিছু বলা যাবে না। সঙ্গমজনিত জ্ঞান না থাকলেও নারীর শরীর যে আনন্দের উৎস তা আদিমতার হাত ধরে সকল পুরুষই বুঝতে পারে তবে প্রশ্ন হচ্ছে নারী শরীর দেখলেই আমি কেন কামুক হয়ে উঠি অথবা কুকুরের মত পিঠে চরে বসতে ইচ্ছা জাগে? এর সহজ সমাধান হচ্ছে আমার মগজ ডিডেক্ট করতে জানে কোনটা মানুষ আর কোনটা মানুষ না? মানুষ ডিটেক্ট করতে পারলে তার জন্য অটোম্যাটীকালী একটা সম্মানবোধ জন্মায়, অন্যথায় না। সহজ ভাষায় বলি, পুরুষেরা মানুষ আর নারীরা হচ্ছে শুধু নারী। জন্মের পর আমি যে সমাজে বড় হয়ে উঠেছি তা আমাকে প্রত্যক্ষভাবে শিখিয়েছে পুরুষ হচ্ছে পরিবার তথা সমাজের প্রধান, পুরুষ নামক বিশেষ্যের পরেই বিশেষণ হিসেবে এসেছে মানুষ, এখানে মানুষকে বিশেষ্য না ভাবাটাই যৌক্তিক হবে। পুরুষ মানুষ প্রগতির ধারক আর নারী হচ্ছে অবলা, দুর্বল, তাকে পেটেভাতে রাখাটা পুরুষ মানুষের জন্য ভালো মানুষী ছাড়া অন্য কিছু নয়। আর এই অবলার জন্য কিভাবে সম্মান জন্মানো সম্ভব আমি জানি না, ভালো মানুষ হলে সহানুভূতির প্রশ্ন আসত কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তা অমূলক। অনেকেই বলতে পারে তোমার মা, বোন তো নারী, তাদেরকে তুমি সম্মান করো না? আমি অদ্ভুতভাবে বুঝতে পেরেছি আমার চোখে আসলে তারা নারী না, তাদের প্রথম পরিচয় তারা মানুষ, নারী মানুষ। জগতের খুব বেশি নারীকে আমি নারী মানুষ ভাবতে পারি না, আর এজন্যই সদাক্ষুধার্ত শিশ্ন একরকম পেয়ে বসেছে আমায়, এ আমার মগজেরই দৈনতা।
পুরুষ মাত্রই ধর্ষক,আমার এমনটাই মনে হয়। আসলে মানুষ নিজেকে দিয়ে আশেপাশের সবাইকে বিবেচনা করে তাই আমার এহেন আক্রমণাত্মক মন্তব্য আপনাদের কারো আঁতে ঘা লাগার কারণ হবে বলে মনে করছি না। আমার ক্ষেত্রে নারী কি ধরণের পোশাক পরছে তা বিবেচ্য না, মগজ নারী ডিডেক্ট করার সাথে সাথে চোখ বুক এলাকায় একটা থার্মাল স্ক্যান চালাবে তা একটা চিরায়ত সত্যে পরিণত হয়েছে। বোরকা পরলেই সমস্যার সমাধান হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না, কারণ বিক্রিয়াটা দ্বিমুখীটা। বোরকার নিচে মেয়েটা কি পরেছে, অন্তর্বাসের রঙটা কেমন এসব ভেবে শিশ্নকে আরাম দেয়া পুরুষের সংখ্যা নিতান্ত কম নয় বলেই আমার বিশ্বাস। একজন মেয়ে বোরকা পরবে না বিকিনি পরবে তা তার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত তবে বিকিনি পরিহিতার দিকে নজর বেশি পরবে এটাই স্বাভাবিক। যেহেতু ধুপধাপ ইরেক্টেড হবার সমস্যাটা শুধুই পুরুষের কাজেই এর সমাধান আমাদেরই বের করতে হবে। এটাকে প্রাকৃতিক, সহজাত বলে পার পাওয়া যাবে না। যেমন নারীকে পিরিয়ড জাতীয় সমস্যার ভেতর দিয়ে যেতে হয় আর অকওয়ারড পরিস্থিতির সামাল দিতে ন্যাপকিন ব্যবহার করতে হয় তেমনি আমাদের মগজের এবং শিশ্নের উত্থানজনিত সমস্যার সমাধান আমাদেরই করতে হবে। আন্ডারওয়ার দিয়ে হয়ত শিশ্নকে সাময়িক দমন সম্ভব তবে মগজকে ঠিকভাবে নাড়াচাড়া করতে না জানতে এ সমস্যার সমাধান অসম্ভব। সঙ্গম একটি উভমুখী বিক্রিয়া, নারী পুরুষের সম্মতি ছাড়া যা অসম্ভব। কাজেই ধর্ষণের সাথে যৌনতাকে মিশিয়ে ত্যানাপ্যাচানি করা বন্ধ করেন। ধর্ষণ কোন যুক্তিতেই সমর্থনযোগ্য নয় এবং ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেওয়া হোক।
হে ঈশ্বর, আমি দুঃখিত, পলিগামীকে আমার কাছে অনেক শুদ্ধ, আকর্ষণীয় মনে হয়। যেহেতু আমি পীর নই এবং আমার কোন মুরিদ নেই আর নতুন কোন ধারা সৃষ্টি করার ইচ্ছা অথবা ক্ষমতা কোনটাই আমার নাই, কাজেই সুবিধা অসুবিধার কোন কেয়ার না করে আমি আমার মন্তব্য করে গেলাম। তবে মনোগামীকে পবিত্র বলে মুখে ফ্যানা তোলা লোকদের একটা কথা বলার খুব জরুরত অনুভব করছি, আপনারা যারা ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ তারা কেন এতটা প্রকটভাবে শরীরের পবিত্রতায় বিশ্বাসী, সন্দিহান থাকেন বিশ্বস্ততার প্রশ্নে ? আপনাদের ভালোবাসা ওতটা শক্তিশালী হলে তো এমনই হবার কথা যে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ নারী পুরুষ পরপুরুষ অথবা পরনারীর প্রতি কোন প্রকারের যৌন আকর্ষণ অনুভব করবে না আর এজন্যই শরীরের পবিত্রতা তো ভাবনার কোন বিষয়ই হবার কথা নয়। কাগজ বহির্ভূতভাবে যোনিপথে পুরুষাঙ্গের চালনায় যদি নারী শরীরের পবিত্রতা নষ্ট হয় তবে সমভাবে পুরুষের শরীরের পবিত্রতাও নষ্ট হয় বিশ্বাস করতে শেখেন, যদিও এরকম কোন কনসেপ্ট হজম করা আমার পক্ষে যথেষ্ট কষ্টসাধ্য।
আমাদের কান্দাপাড়াটাকে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে, এতে নাকি কলঙ্কমুক্তি ঘটেছে টাঙ্গাইলের। সমাজবিজ্ঞান আমার মাথায় ধরে না তবে যৌনপ্ললীকে আমার কখনই কলঙ্ক মনে হয়নি বরং প্রয়োজনীয়তা মনে হয়েছে। একাধিক মেয়েকে বিছানায় নিয়ে যাওয়াকে স্মার্টন্যাস মেনে নেওয়া ছেলেটাও এখন প্রচণ্ড রক্ষণশীল এবং ধার্মিক সেজে বলবে ছি ছি, যৌনকর্মী কলঙ্ক না তো কি!! যৌনবৃত্তি আমার কাছে একটা পেশা, অর্থের বিনিময়ে শারীরিক সুখ লাভ, ফেয়ার এনাফ ডিল। পতিতা শব্দের অর্থ পাপী, কি সাংঘাতিক!! যদিও আমি শরীরের পবিত্রতায় বিশ্বাসী না তবুও যদি আমাকে প্রশ্ন করা হয় যে একটা ছেলে যদি মিথ্যে সম্পর্ক গড়ে কোন মেয়েকে বিছানায় নিয়ে যায় আর কেউ যদি পতিতাগমন করে কোনটিকে তুমি বাজে দৃষ্টিতে দেখবে তাহলে আমার উত্তর হবে নিঃসন্দেহে যে মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছে আর এখানে অপরাধটা যৌনসম্পর্ক নয় বরং প্রতারণা। আমি পতিতাদের পাপী মনে করি না কাজেই এখানে পতিতা শব্দের অর্থ শুধুই যৌনকর্মী। সমাজ পতিতাদের ঝেড়ে ফেলতে চায় অথচ পতিতাগমনকারীদের ঝেড়ে ফেলার কথা ভাবতেও পারে না। তবে পতিতাপল্লী উঠিয়ে দেওয়ায় শুধু একটা কথা ভেবেই শান্তি পাচ্ছি তা হল সবাই না হলেও অনেকেই হয়ত এই অস্বস্তির পেশা থেকে বের হয়ে আসতে চাচ্ছিল, তারা এখন একটা সুযোগ পাবে। আসলে পতিতাপল্লীতে যারা আসে তাদের বেশিরভাগই প্রতারিত হয়ে অথবা বাধ্য হয়ে এই পেশাতে আসে আর একারণেই যারা অনিচ্ছার সাথে এই পেশাতে লেগে আছেন তারা যদি কোনভাবে সরে আসতে পারত তাহলে আসলেই তা প্রচণ্ড সুন্দর অথবা স্বস্তিকর হত। তবে তা সম্ভবত হচ্ছে না কারণ পুনর্বাসনের কোন ব্যবস্থা না নিয়েই ধুমধাম এদের উঠিয়ে দেয়া হল যার মানে হচ্ছে তারা এখন সস্তাদরে দৌলতদিয়ায় বিক্রি হবে অথবা গোটা শহরে ছড়িয়ে পরবে। যৌনবৃত্তি নামক পেশাটা যদিও আত্মসম্মানকে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করে দেয় তবুও যারা স্বেচ্ছায় এই পেশায় আসতে চায় তাদের বিপক্ষে আমার কোন অনুযোগ নেই। ভেবে নিচ্ছি যারা আত্মসম্মানের বিলোপকে সহ্য করতে পারছিল না, যারা এই চক্র থেকে বের হয়ে আসতে চাচ্ছিল তারা একটা সুযোগ পেয়েছে, অন্তত কলঙ্কমুক্তির নামে হলেও তাদের মুখে হাসি ফুটুক।
শেষমেষ, নারীরা নারী থেকে নারী মানুষ হোক। প্রত্যেকটি সম্পর্ক টিকে থাকতে হলে তার পেছনে নুন্যতম পরিমাণে হলেও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের প্রয়োজন পড়ে আর একারণেই নারী পুরুষের প্রথম পরিচয় হোক মানুষ। একথা তো সবারই জানা, মালিক আর ভৃত্যের মধ্যে কোনভাবেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। অবলা, অসহায়, বালছাল, ধুনফুন টাইপ বিশেষণ থেকে বের হয়ে আসুক মেয়েরা, মানুষ হোক সবাই। সমাজপতিদের ভাষায় আমার মত বিকৃত মানুষেরা স্বাভাবিক হোক, পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক।