তালা ভেঙে আ’লীগ অফিসে পুলিশ : গ্রেফতার শতাধিক
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আক্রানে-র পরিচয় ঃ ১০০ জন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী
কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঢাকা
সময়- বিকাল, সোমবার, মার্চ ১, ২০০৪
আক্রমণ করেছিল বিএনপি সরকারের পুলিশ বাহিনী পরিচয়
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশ তালা ভেঙে আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে।
শিরোনাম ঃ তালা ভেঙে আ’লীগ অফিসে পুলিশ : গ্রেফতার শতাধিক
আক্রানে-র পরিচয় ঃ ১০০ জন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী
থানা/উপজেলা ঃ রমনা
জেলা ঃ ঢাকা
সময় ঃ বিকাল, সোমবার, মার্চ ১, ২০০৪
আক্রমনকারীর পরিচয় ঃ পুলিশ
বিবরণ ঃ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে তিনটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর পুলিশ তালা ভেঙে আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। আওয়ামী লীগ বলেছে, পুলিশ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও তছনছ করেছে। সোমবার বিকালে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের অদূরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র ও পীর ইয়েমেনী মার্কেটের কাছে পর পর দুটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের এক সদস্য আহত হয়। পুলিশ বলেছে, আওয়ামী লীগ অফিস থেকেই বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালানোর জন্য এটা একটি ‘সাজানো নাটক’। ক্ষুব্ধ পুলিশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে এবং দু’দিক থেকে আওয়ামী লীগ কার্যালয় ঘেরাও করে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার এই পুলিশি অভিযানে শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। এই ঘটনা ও ড. হুমায়ুন আজাদের প্রাণনাশের চেষ্টার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ আগামী ৬ মার্চ সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। পুলিশ বলেছে, আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে বোমা নিক্ষেপ করে পুলিশকে আহত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় কার্যালয়ে পুলিশি হামলা এবং বোমা বিস্ফোরণের জন্য সরাসরি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী এবং পুলিশকে উত্তেজিত করে তুলছেন। পাতানো খেলা খেলছেন। তিনি আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা ও গণগ্রেফতারসহ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে জানান। দলীয় কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশি এবং নেতাকর্মীদের ওপর হামলার খবর পেয়ে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসতে চাইলে পুলিশ বিভিন্ন স'ানে দফায় দফায় তার গাড়িবহরের গতিরোধ করে। এ সময় কয়েক দফা পুলিশি বাধা ডিঙ্গিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। বিকাল পৌনে ৬টায় তিনি দলের ধানমণ্ডির কার্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দেন। পুলিশ প্রথমে কাঁটাবন মোড়ে তার গাড়ির বহর আটকে দেয়। এ সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে ‘কী কারণে তার গাড়ি আটকে দেয়া হয়েছে’ জানতে চেয়েও কোন সদুত্তর পাননি। এভাবে পুলিশ শাহবাগ মোড়, মৎস্য ভবন চত্বর ও শহীদ নূর হোসেন স্কোয়ারে শেখ হাসিনার গাড়ির বহর আটকিয়েছে। শেখ হাসিনা সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কার্যালয়ের ভেতরে আটকেপড়া নেতাকর্মীসহ কার্যালয়ের সামনে ও আশপাশে যাকে পেয়েছে, তাকেই লাঠি-রাইফেলের বাঁট দিয়ে পুলিশ মারধর করেছে। বিকাল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পশ্চিম প্রানে--র কাঁটাতারের বেষ্টনীর (মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্রের সামনে) কাছে একই সঙ্গে তিনটি বোমা বিস্ফোরণের পর সেখানে কর্তব্যরত পুলিশের হাবিলদার নুর মোহাম্মদ মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। একটি বোমা তার মাথায় আঘাত হানে। সঙ্গে সঙ্গে চার যুবক তাকে চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতালে নেয়। ওই সময়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে রমনা ভবন সংলগ্ন ফুটপাতের কাছাকাছি স'ানেও বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, ওই এলাকার কোন একটি ভবনের ছাদ থেকে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। বোমা বিস্ফোরণের আগমুহুর্তে আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে শ’খানেক কর্মীসহ সাধারণ মানুষ ঘোরাঘুরি করছিলেন। পুলিশ ওই সময় মারমুখো হয়ে বেধড়ক লাঠিচার্জসহ ধাওয়া করলে কার্যালয় এলাকা ফাঁকা হয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশ অফিস ফেরত মানুষ ও নিরীহ পথচারীসহ সামনে যাকে পেয়েছে, তাকেই পিটুনি দিয়েছে। দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেছে। চার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের এই হামলার সময় নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেয়। পুলিশ গেটের সামনে অবস'ান নেয় এবং গেট ভাঙার চেষ্টা করে। এ অবস'ায় আটকেপড়া নেতাকর্মীদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ৫টা ২০ মিনিটের সময় আওয়ামী লীগ অফিসের পশ্চিম প্রানে-- পরপর দুটি বোমা বিস্ফোরিত হলে পুলিশ আবারও মারমুখো হয়ে পড়ে। এ সময় তারা ফুটপাতের দোকানিসহ নির্বিচারে সবাইকে বেধড়ক পিটিয়েছে। দোকানপাট তছনছ করেছে। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আবদুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট রহমত আলী, মোতাহার হোসেন মোল্লা ও মাহবুব উদ্দিন আহমেদ অবরুদ্ধ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এসে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান। এর পরপরই পুলিশ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের গেট ভাঙতে শুরু করে। এ সময় ফটো সাংবাদিকরা ছবি তুলতে চাইলে পুলিশ ঢাল দিয়ে তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে তালা ভেঙে কয়েকজন পুলিশ কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে দরজা-জানালায় লাথি মারতে থাকে। প্লাস্টিকের চেয়ার ছুড়ে মারে। তারা যুবলীগ কার্যালয়ে গিয়ে নেতাকর্মীকে ঘিরে ফেলে এবং আসবাবপত্র তছনছ করে। ঘটনার ৭ মিনিট পর পুলিশ সাংবাদিকদের ভেতরে যেতে দেয়। এ ঘটনার সময় বেগম মতিয়া চৌধুরী, আবদুল জলিল, মোহাম্মদ হানিফ, ওবায়দুল কাদের, মুকুল বোস, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, আবদুর রহমান, মাহমুদুর রহমান মান্না, আক্তারজ্জামান, দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, ড. হাসান মাহমুদ, হাবিবুর রহমান সিরাজ, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, মির্জা সুলতান রাজা এবং আফম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ নেতারা এসে পুলিশের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন। এদিকে শেখ হাসিনা আটকেপড়া কর্মীদের উদ্ধারের জন্য কার্যালয়ের দিকে আসতে থাকেন। এ সময় আবদুল জলিলসহ কয়েকজন নেতা দলীয় প্রধানকে এগিয়ে আনতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের দিকে কয়েকটি গাড়ি আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে আসে। এরপর তারা কার্যালয়ের ভেতর থেকে শ্রমিক লীগের সভাপতি আবদুল মতিন মাস্টার, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হারুনুর রশিদ, মাহবুবুর রহমান হিরণ, অধ্যাপক এবিএম আমজাদ হোসেনসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে তিন দফায় তিনটি গাড়িতে করে নিয়ে যায়। পুলিশ তাদের পেটাতে পেটাতে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলে। শেখ হাসিনা সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কার্যালয়ে এলে আকস্মিকভাবে বিদ্যুৎ চলে যায়। এ সময় পুলিশের একজন সদস্য বোমা বিস্ফোরণের আলামত হিসেবে জব্দকৃত সরঞ্জামাদি শেখ হাসিনাকে দেখিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ অফিস থেকে নিক্ষিপ্ত বোমায় পুলিশের একজন সদস্য আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জানতে চান, পুলিশের এই সদস্য নিজ চোখে আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে বোমা মারার দৃশ্য দেখেছেন কিনা। তাছাড়া পুলিশও যে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়নি তার প্রমাণ কি। শেখ হাসিনা কার্যালয়ের ভেতরে গিয়ে পুলিশি তাণ্ডবের দৃশ্যাবলী সাংবাদিকদের দেখান এবং পাঁচতলা ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে আটকে থাকা নেতাকর্মীদের বের করে এনে রাত পৌনে ৮টায় চলে যান। যুবলীগ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক বোমা হামলার জন্য সরকারি দলের ক্যাডারদের দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, বিএনপির সশস্ত্র কর্মীরা একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্রের সামনে এসে বোমা হামলা চালালেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করেছে। শেখ হাসিনা কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সন্ত্রাসী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে তার ক্যাডার বাহিনী পুলিশের ওপর বোমা হামলা করেছে। যুবলীগের সমাবেশ ঠেকাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বর্বর হামলা চালানো হয়েছে। তিনি পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের ছাদ থেকে কেউ বোমা নিক্ষেপ করেনি। যারা বোমা মেরেছে পুলিশ তাদের দেখেও গ্রেফতার করেনি। তাছাড়া বোমা উদ্ধারের নাটক তো সাজানো। পুলিশ বোমার নামে যা উদ্ধার করেছে, ওটা তো রাবার স্ট্যাম্পের কালির বোতল। আসলে ড. হুমায়ুন আজাদের প্রাণনাশের চেষ্টার বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সরকার পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্রের কারণে আহত হয়েছেন পুলিশের একজন সদস্য।
সূত্র ঃ দৈনিক যুগান-র, মার্চ ২, ২০০৪। পৃষ্ঠা-১
১৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
এখানে সেরা ইগো কার?
ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।
‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন
মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন