হলমার্ক গ্রুপের ৫ হাজার ২৪২ কোটির বেশি টাকা মূল্যের সম্পদের হিসাব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৪৯ একর ১২ শতাংশ জমি, অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি। ওই পরিমাণ জমির মূল্য ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৮২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাকি ২ হাজার ২৬০ কোটি টাকার সম্পদের মধ্যে রয়েছে_ শিল্প-কারখানা, বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য সম্পদ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হলমার্কের ওইসব সম্পদের হিসাব সংগ্রহ করেছে। হলমার্ক কেলেঙ্কারির দায়ে করা মামলার চার্জশিট আদালতে পেশ করার পর
ওইসব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আবেদন জানানো হবে। সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংক থেকে আত্মসাৎকৃত ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকার জামানত হিসেবে এরই মধ্যে ১৩০ একর জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে। এর মধ্যে ৬০ একর জমির দলিল জামানত হিসেবে অফিসিয়ালি গ্রহণ করা হয়েছে বেশ আগে। আরও ৭০ একর ৬ শতাংশ জমির দলিল জামানত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় আছে। জামানত হিসেবে হস্তান্তর করা সাভারের হেমায়েতপুরের ওই জমির প্রতি শতাংশের গড়মূল্য ২০ লাখ টাকা হিসাবে ১৩০ একর ৬ শতাংশ জমির মূল্য ২ হাজার ৬০০ কোটি ১২ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। রফতানির নামে জালিয়াতি করে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা (সাবেক শেরাটন) থেকে ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে হলমার্ক। ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখার ডিজিএম মো. আবুল হাশেম সমকালকে বলেন, ৬০ একর জমির দলিল বেশ আগে জামানত হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। আরও ৭০ একর ৬ শতাংশ জমির দলিল জামানত হিসেবে গ্রহণের প্রক্রিয়ায় আছে। আদালতের আদেশ অনুযায়ী ৭০ একর ৬ শতাংশ জমির দলিল পাওয়া গেছে, যা ব্যাংকের আইনজীবী দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। আবার আদালতের আদেশ
অনুযায়ী তা জামানত হিসেবে গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, আদালতে অবকাশকালীন ছুটি ছিল। এখন আদালত খুলেছে। আদালতের নির্দেশে ৭০ একর ৬ শতাংশ জমি জামানত হিসেবে গ্রহণ করা হবে।
সম্পদের বিবরণ
সূত্র জানায়, হলমার্ক গ্রুপের সম্পদের মধ্যে রয়েছে_ সাভারের হেমায়েতপুর ও গাজীপুরে তানভীরের মোট জমি ১৪৯ একর ১২ শতাংশ। গড়ে প্রতি শতাংশের মূল্য ২০ লাখ টাকা হিসাবে ১৪৯ একর ১২ শতাংশ জমির মূল্য হয় ২ হাজার ৯৮২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। রাজধানীর আগারগাঁও ও তালতলা এলাকার ২ একর ৬৫ শতাংশ জমিতে দুটি ৬ তলা ভবন, একটি ৪ তলা ভবন, ৩টি ফ্ল্যাট ও ১৫টি প্লটের মূল্য ধরা হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা। সাভারের হেমায়েতপুরে প্রায় ১০০ একর জমির ওপর স্থাপিত ৭ তলা বিশিষ্ট ৪টি বিল্ডিং ও ৮০টি পাকা শেডের মূল্য ১ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এ ছাড়া গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির ভেতরে নিট পোশাক তৈরির ১০০ লাইন ও ওভেন পোশাক তৈরির আরও ১০০ লাইনের মেশিন, বস্ত্রশিল্প ইউনিটের ৪৫ টন ডায়িং, ২০০ নিটিং মেশিন, স্পিনিংসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতির মূল্য ধরা হয় ৪০০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে গ্রুপের ৮৪টি গাড়ির মূল্য ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা।
আরও সম্পদ
অন্যান্য সম্পদের মধ্যে কয়েক হাজার গরু রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার গাভী থেকে প্রতিদিন পাওয়া যায় ৮০০ লিটার দুধ, যা বনফুল সুইটসের কাছে বিক্রি করা হয়।
জালিয়াতি করে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ুন কবির ও সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখার সাবেক ডিজিএম একেএম আজিজুর রহমানসহ ২৭ জনকে আসামি করে গত বছরের ৪ অক্টোবর ১১টি মামলা করেছে দুদক। এ মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে আদালতে চার্জশিট পেশ করা হতে পারে।
Click This Link