

বাংলাদেশের ব্যান্ড নিয়ে টুকটাক লিখার ইচ্ছে ছিল অনেকদিন আগে থেকেই। কিন্তু প্রথম পাতায় অ্যাকসেস পাচ্ছিলাম না। আজ পেলাম, তাই ভাবলাম আজই লিখে ফেলি।
বাংলাব্যান্ড – শব্দটি এখন সাধারণ শ্রোতাদের কাছে একটি বিরক্তিকর শব্দ। শুনলেই মনে হয়, এই যে শুরু হল, হাবিজাবি ভারী ভারী শব্দ আর দ্রিম দ্রিম টাইপের আওয়াজ, সেই সাথে কানের বাজলো বারোটা। এল আর বি, জেমস, হাসানের আমলে বাংলা ব্যান্ড ততটা জনপ্রিয় না হলেও ব্যান্ডের একটা গ্রহনযোগ্যতা সাধারণ মানুষের কাছে ছিল। এখন সেই গ্রহনযোগ্যতা সাধারণ মানুষের কাছে তেমন একটা নেই। এখন মিউজিকটা মিউজিশিয়ানদের মাঝেই সীমাবদ্ধ কিংবা যেসব শ্রোতারা ইংলিশ গান অতিরিক্ত শোনেন তাদের কাছে হয়তো বর্তমান বাংলা ব্যান্ড মিউজিকের গ্রহনযোগ্যতা আছে। আমি জানি অনেকেই আমার এই কথাগুলোর বিরোধীতা করবেন। বলবেন, ব্যান্ড মিউজিকে এখন বিপ্লব চলছে। চলছে না, তা বলব না। তবে সেই বিপ্লব কিন্তু মিউজিশিয়ানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
কথাগুলো শুনে মনে হতে পারি আমি মনে হয় শুধু জেমস, এল আর বি, মাইলস ইত্যাদির গানই শুনি,বর্তমান ব্যান্ডদের গান শুনি না। ব্যাপারটা তা নয়। আর্টসেল, ব্লাক, নেমেসিস, অর্থহীন, পাওয়ার সার্জ, রেডিও অ্যাকটিভসহ সবই আমার ভালো করে শোনা। কিছু কিছু গান গীটারে তোলাও আছে। প্রথম এসব গান অসম্ভব ভালো লাগতো, সারাদিন শুনতাম। হঠাত করে খেয়াল করলাম, জিনিসগুলোতে কেমন যেন এক ঘেয়েমি চলে এসেছে। প্রতিটা গান শোনার পর মনে হচ্ছে ঘুরে ফিরে সেই একই জিনিস যেটা এল আর বি, মাইলসের গানে ছিল না। তাই আস্তে আস্তে বাংলা ব্যান্ড শোনাই ছেড়ে দিয়েছিলাম।
কিন্তু বাংলা ব্যান্ড থেকে দূরে থাকতে পারলাম কই? কিছু গান আবার আমাকে ফিরিয়ে আনলো। গানগুলো আমার কাছে সাধারণের মধ্যে দারুন অসাধারণ কিছু মনে হয়েছে। সেই গানগুলো নিয়েই এই পোষ্ট। ভাবলাম গানগুলো শেয়ার না করলে বিরাট অন্যায় হয়ে যাবে।
১.
গানঃ আজ রাতে কোন রুপকথা নেই
ব্যান্ডঃ ওল্ড স্কুল
ডাউনলোড লিংক ঃ আজ রাতে কোন রুপকথা নেই

বিবরণঃ গানটি শুনলে মনে হবে ফোক গান জাতিয় কিছু। গানে ড্রামসের বদলে তবলা ব্যবহার করা হয়েছে। গানটির সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হচ্ছে লেইরিক্স আর ভোকাল। ব্যান্ডটির ভোকাল হচ্ছেন “মোবাসসের”। তিনি নর্থ সাইথ ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন। এই গানটিতে ভোকালের নৈপূন্য দেখলে হতবাক না হয়ে পারা যায় না। গলার আপ-ডাউনগুলো দারুন বিস্ময়কর যা প্রফেশনালী ট্রেইন্ড ভোকাল ছাড়া গাওয়া অসম্ভব। গানটিতে অন্যান্য ইন্সট্রুমেন্টের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অ্যাকোষ্টিক গীটার, মাঝখানে ছোট-খাট একটা লীড গীটারের পার্টও আছে। আর লিরক্সটা এ সব কিছুকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই গানটিকে বাংলা ব্যান্ডের জগতে একটা বিপ্লবের মত মনে হয়েছে আমার কাছে। তবে ইন্সুট্রুমেন্টালী তেমন আহামরী কিছু নেই গানটিতে।
২.
গানঃ কবে
ব্যান্ডঃ নেমেসিস
ডাউনলোড লিংক ঃ কবে (অফিসিয়াল ভিডিও)

বিবরণঃ গানটি অবশ্য খুব বেশী ইউনিক কিছু না, অনেকটা গতানুগতিক ধারার গানই, গানটিতে ব্লাক (Black) ব্যান্ডের এর কিছুটা প্রভাব রয়েছে। তারপরও কেন এখানে দিলাম গানটি? কারণ হচ্ছে, গানটিতে ভোকালের অংশটি সত্যিই আলাদা কিছু। পুরো গানটি ভোকাল একাই নিয়ন্ত্রন করেছেন। গানের আপ-ডাউনের জন্য সাধারণত ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে ভোকালকে একটা প্লাটফরম বানিয়ে দেয়া হয়, কিন্তু এই গানটা শুনলে মনে হবে গানটা ভোকাল একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছে। গানটি নেমেসিসের বেশ আলোচিত একটি গান।
৩.
গানঃ সাদা তুলির আচর
ব্যান্ডঃ টিয়ারস অফ সাইলেন্স
ডাউনলোড লিংক ঃ
@ সাদা তুলির আচড় (গিটার অনলী)
@ সাদা তুলির আচড় (কমপ্লিট)

এটি অনেকটা পপ ধাচের গান। লিরিক্স আর ভোকালও পপ ধাচেরই অনেকটা। ব্যান্ডের স্বাদ অনেকটাই অনুপস্থিত। তবে যে জিনিসটি গানটিকে গতানুগতিক ধারার বাইরে নিয়ে গেছে তা হচ্ছে এ্যাকোস্টিক গীটার। পুরো গানটিই এ্যাকোস্টিক গীটার নির্ভর, সাথে কিবোর্ডের ব্যাক আপ আছে এবং শুনতে অনেক টাচি। আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে গানটির দুটো ভার্সন পেয়েছি আমি। একটা অ্যাকোষ্টিক দিয়ে করা পুরোটাই। সেটার লিংকও দিয়ে দিলাম।
৪.
গানঃ ফেলানী
ব্যান্ডঃ শহরতলী
ভিডিও এর লিংকঃ ফেলানী (ভিডিও)

এই গানটির লিরিক্স শুনে আমার রক্তে এক ধরনের উন্মাদনা অনুভব করেছিলাম। মাঝখানে কিছু কবিতার আবৃতি আছে, সেটা শুনে সত্যিই আমি অনেকক্ষন থমকে ছিলাম, কবিতাটি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লার “বাতাসে লাশের গন্ধ” কবিতার অংশ বিশেষ। গানটি শোনা শেষ হওয়ার সাথে সাথে লিরিক্সটি যিনি লিখেছেন তার প্রতি অসম্ভব শ্রদ্ধা আসছিল। অনেক অনেক শক্তিশালী একটি লিরিক্স আর গায়কের গলাও অসাধারন।
আরো কয়েকটি গান আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে তবে সেগুলোর ডাউনলোড লিংক আমি কালেক্ট করতে পারিনি। ডাউনলোড লিংক পেলেই সেগুলোও শেয়ার করার চেষ্টা করব।
আজকে প্রথম পাতায় অ্যাকসেস পেয়ে দারুন ভালো লাগছে। তারচেয়েও বেশী ভালো লাগছে গানগুলো শেয়ার করতে পেরে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১:৪১