করোনাকালীন সময়ে যখন মুখে মাস্ক পড়া লাগত তখন থেকেই এই অদ্ভুত অভ্যাস দেখা দিল।মাস্ক পড়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যাই পরিচিত মানুষরা,রিলেটিভরা এমনিকি আমার কাছের একবান্ধবী ও দেখি আমাকে চিনে না।বান্ধবী পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে আর আমি মাস্কের আড়ালে মুচকি মুচকি হাসছি।এর পর থেকেই যখন তখন অনেকেই দেখলেই তাড়াতাড়ি নাকের মাস্ক টেনে প্রায় চোখ পর্যন্ত উঠিয়ে আনি যাতে করে সামনের মানুষটা আমাকে না চিনে ফেলে। অনেকবার ভেবেছি আমি কি অন্যদের কাছে থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি? শেষে বুঝলাম আমি আসলে নিজের কাছ থেকে নিজেই পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
এভাবে পালিয়ে কতদিন আর বাঁচা যায়।ফোন আছে,ফেসবুক,নানা মেসেঞ্জার সাইট তো আছেই।তো সেখানে ও এই খেলা শুরু করে দিলাম।ফোন ধরা অফ,ইচ্ছা করেই ফোন সাইলেন্ট রাখি।অফিসের কাজে শুধু কথা চলত।কোন কোন সময় তো কথার মাঝেই ফোন কেটে দিয়ে বসে আছি।কেন জানি না আর কথা বলতে, কথা শুনতে ভাল লাগত না।পরে কেউ যখন জানতে চাইত অমুকদিন কথার মাঝে ফোন কেটে দিলাম কেন? তখন ভাব নিয়ে বলতাম, ব্যালেন্স ছিল না কিংবা ফোনের ঝামেলা ছিল।কয়েকদিন আগে ও আমার দেশের বাইরে থাকা বান্ধবীর সাথে কথা বলার মাঝেই ওয়াইফাই কানেকশন অফ করে দিয়ে বসে আছি। যখন সারা সপ্তাহে ফোন এভোয়েড করতাম তখন শুক্রবার অফডেতে সকালে টাইট করে নাস্তা খেয়ে তারপর সারা সপ্তাহের মিসডকল ঘেটে ঘেটে তাদেরকে কলব্যাক করে শর্টকাটে সরি আর হাই-হ্যালো বলতাম।
হুট করে কেন সবকিছু থেকে দূরে থাকছি কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখলাম অন্যদের সাথে ফোনে,মেসেঞ্জারে যখন বলি তখন বেশির ভাগ সময়ই সত্য বলিনা।ব্যাপারটা এমন ফোন দিয়ে কেউ যখন জানতে চায়, কেমন আছ? উত্তর দেই, ভাল আছি(কিন্তু আসলে আমি মোটেও ভাল নেই)।জব কেমন চলের জবাব দেই মোটামুটি (অথচ প্রায় দিনই মেনে হয় জব ছেড়ে দেই)।এমন টুকটাক মিথ্যা কথা বলা থেকে নিজেকে মুক্তি দিতেই মাস্কের আড়ালে চলে গেছি। আমার যখন টিনেজ চলছিল তখন আমি পুরাই এক্সট্রোভার্ট (বহির্মুখী) টাইপের ছিলাম।সারাদিন হাহা,হিহি চলত।ক্লাশে ননস্টপ কথা বলার জন্য আমার বাংলা টিচার কবিতাদিদি আমাকে টকিং মেশিন নাম দিছিল,মাঝে মধ্যে কানে ধরে দাঁড় করিয়ে ও রাখত।আমার স্কুলজীবন কেটেছে এক মিশনারি হোষ্টেলে। সেখানে আমাকে বানানো হইছে সেকেন্ড মনিটর। যার কাজ হলো যারা স্টাডি টাইমে কথা বলে তাদের নাম লিখে জমা দেয়া।অথচ নিজের বকবকানিই থামে না, অন্যদের মনিটর কিভাবে করব? এরপর কলেজ লাইফে এসে অ্যাম্বিভার্ট টাইপের (উভয়মুখী) হয়ে গেলাম। মুডের এমন অবস্থা এই গ্রীষ্ম, এই বর্ষা,এই শীত।কখনো অনেক আনন্দে থাকি কখনো কান্নাকাটি করে নায়িকা অঞ্জু ঘোষের(ছোটবেলায় আমি অঞ্জু ঘোষ হতে চাইতাম) মতন চোখ মুছি আবার আয়নায় দেখি কান্নাকাটি করার পর দেখি চেহারা্য় অন্যরকম ঝিলিক মারে। আর বয়স ত্রিশের কোটা পেরোতেই পুরাপুরি ইন্ট্রোভার্ট (অন্তর্মুখী) স্টেজে চলে গেছি এবং সেটা এখনো চলছে। দুনিয়ার সবকিছু থেকে যত গুটিয়ে নেওয়া যায় ততই শান্তি লাগে।
একটা সময় রাত দিন এক করে ব্লগে থাকা মানুষ কিভাবে জানি নিজেকে গুটিয়ে ফেললাম।নিজের বাড্ডে আর ব্লগ বাড্ডে জুলাই মাসে হওয়াতে সব সময় ব্লগ বাড্ডেতে ঘটা করে পোস্ট দিতাম।২০১৩ সালে লাস্ট ব্লগ বাড্ডেতে পোস্ট দিয়েছিলাম।যাইহোক,এখন ২০১৪-২০২৩ সাল থেকে সব অর্থাৎ ষষ্ঠ - পঞ্চদশ ব্লগীয় বর্ষপূর্তির আনন্দে অবশেষে পোস্ট দিলাম
সবাই ভাল থাকবেন......শুভ ব্লগিং