আমি যখন বেশী প্যানপ্যান করি তখন আমার পরিচিত একজন ঝাড়ি দিয়া বলে "কচকচ কম করেন"। এই কচকচানির মানে কি সেটা অবশ্য ডিকশেনারি ঘেটে বাইর করার সময় হয় নাই কিন্তু শব্দটা মনে ধরছে আর কি। এখন মাঝে মধ্যে আমি ও কথাটা জনে জনে কথার ফাঁকে ডেলিভারি দিয়ে বসি। এটা বহু পুরাতন সমস্যা পোস্ট লেখা শেষ কিন্তু শিরোনাম বড্ড ভোগায়। আজকে না হয় আরেকজনের কথা ধার নিয়ে শিরোনাম হিসেবে চালিয়ে দিলাম.. খিক
১.
পানির সাথে আমার মেজাজের কি যে পিরিতে সর্ম্পক বলে বুঝাতে পারবো না। গতমাসে যেদিন বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের ফাইনাল খেলা ছিলো সেদিনই এই সমস্যা দেখা দিছে। বান্দর কেয়ারটেকার রাতে পানি না তুলে ভোশ ভোশ কইরা ঘুমাইছে।তার উপরে ভাব নিয়া বলে "ঘুম পাইলে কি করুম,বুঝেন-ই-তো ভালা ঘুম না হইলে কেমন লাগে"।আগে সারাদিন পানি থাকত অথচ ধরা পানি দিয়া কাজ করতে গিয়া মেজাজ চরম খারাপ থাকে। তার উপরে কেয়ারটেকারে নবাবী কথা শুনে ৩য় দিন রাগে ঝাড়ি দিয়া কইছি " ফাউল কতা কইলে ধইরা আছাড় দিমু "। উপরতলার আন্টির আবার মুখ সেইরকম সে বলে " এইটা কি দেশের বাড়ী নাকি যে ইয়ে করতে জংগলে যামু,ঘরে তো ইয়ে করার ও পানি নাই"। যাইহোক পানি আসছে পরে আরো মজা। যতটুকু পানি আসে তাতে ৩য় তলা পর্যন্ত যায় আর ৪র্থ,৫ম তলার যারা পানি পায় না তারা চেইত্যা শেষ।২য় তলায় বসে আমি পানি পাই বলে পুরা ঠান্ডা থাকি আর উপরের তলার লোকদের চিল্লাইতে দেখলে মনে মনে হাসি।
ভাবের কথা: দুনিয়াতে মানুষ কতটা শ্রেষ্ঠ জীব জানিনা তবে নিঃসন্দেহে স্বার্থপর জীব বটে।
২.
আমার ধারনা আমি কলেজ লাইফে ম্যালা ক্ষ্যাত আছিলাম। সেই ঘাটতি পূরণেই আজকাল বুড়া বয়সে ফ্যাশন করার শখ জাগে। এজন্য মাঝে মাঝে নিজেরে গিনিপিগ বানাইয়া নানা এক্সপেরিমেন্ট ও চালাইতে ভুলি না।এইবার নয়া শখ মাথায় ঢুকছে চুলে অন্য কালার করার। স্বভাবতই মানুষের পূর্ব-পুরুষ যে বান্দর ছিলো সেটা ভুলে যায় আর সেইসব বান্দরীয় স্বভাব হুট করে মাথায় চাড়া দিয়া উঠলে যতসব আজব কাজ করা শুরু করে। নিজেরে বান্দরনী হিসেবে জাহির করতে চুলে নয়া কালার দিয়া মহা সুখে আছি। এর মাঝে গ্রামের বাড়ীতে গেলাম এক অনুষ্ঠানে। সেখানে আমারে দেখে আমার এক কাজিনের ও বান্দরনী হবার শখ জাগলো। সে পারে তো তখনই চুলে মাল্টিকালার দিয়া বসে থাকে। বেশী খুশীতে সে তার এক ভাবীরে দেখাইয়া বলে " দেখো চুলের রংটা অনেক সুন্দর। আবার রোদে গেলে লালচে বেগুনী ভাব আসে"। ভাবী উল্টা মুখ ঝামটা দিয়া আমারে শুনাইয়া তারে বলে "আমার (ভাবীর) চুল এমনিতেই লাল।হুদাই পয়সা খরচ কইরা এমন অকামের দরকারডা কি "
ভাবের কথা: একজন আরেকজনের নাচন-কুর্দন দেখে নিজের সাথে তুলনা করার সাথে সাথেই চুলকানি শুরু হয়ে যায়।
৩.
এলাকার সচিবদের কোয়ার্টারের ভিতরে হাটতে গিয়ে এক আন্টির সাথে পরিচয়। ওনার স্মার্টনেসের তুলনা নেই। পাশে দাড়িয়ে কথা বলার সময় নিজের ফুল টুকানি মনে হয়। যাইহোক,কথা হলো উনি আমারে পছন্দ করে কারণ উনার একমাত্র ছেলে বিয়ের একমাস পরেই দেশের বাইরে চলে গেছে। উনার ছেলের বউ বীথির সাথে নাকি আমার চেহারার ব্যাপক মিল। ছেলের বউরে এত পছন্দ করে দেখে মনে মনে বলি " আল্লা এত ভাল শ্বাশুড়ী হয় নাকি"? প্রথমে আমি ভাবছি উনি বোধহয় কোয়ার্টারের ভিতরে দেখলেই আমারে চিনে। এই ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিয়া দেখি আজকাল রাস্তায় ও ডেকে কথা বলে। অপরিচিত মানুষ যদি এভাবে পছন্দ করে আর সেটা বুঝে ফেলি বড়ই অস্বস্তি লাগে আবার ভালো ও লাগে।
ভাবের কথা: ১.স্বার্থ ছাড়া দুনিয়া চলে না অথচ এরই মাঝে অপরিচিতদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা বড্ড বিস্মিত করে।
২.নিজের পরিচিত বলয়ে মানুষ যথাযথ সম্মান,ভালোবাসা সবসময় পায় না যতটা অপরিচিতদের কাছে পায়।
৪.
নববর্ষের দিন বিকালে একঘন্টার জন্য বাইরে গিয়া রাস্তায় ৩ পাগলের দেখা পেলাম। একজন তো দেখি ভালোই অভিশাপ দিতাছিল সবাইরে নববর্ষে এমন আনন্দ করতে দেখে। সেই পাগলের ভয়ে আমি দৌড়ে রাস্তার অপর পাশে চলে গেলাম। এমনিতেই সবাইরে অভিশাপ দিচ্ছে তার উপর যদি দেখে লাল জামা পড়ে সাজুগোজু করে সামনে পড়ছি তখন দৌড়ানি দিলে কই যাবো ? দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশী ভয় পাই পাগল,কুকুর আর ভূত।যাইহোক তাদের দেখে মনে হলো পাগলামি করে আর মানুষরে অভিশাপ দিয়া তারা মহাসুখেই আছে।
ভাবের কথা: পাগলরা আছে মহাসুখে। দুনিয়ার ভালোলাগা,খারাপলাগা কোনকিছুতেই তারা বিচলিত হয় না।