বয়স বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে আগের ভালো লাগা গুলো কমে যাচ্ছে।ছোটবেলাতে বর্ষিক পরীক্ষাটা দেবার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যেত ক্রিসমাসের উৎসব। হোস্টেলেও থাকার সময় আমরা পরীক্ষা দিয়ে প্রায় ৭-১০দিন পরে বাড়ী যেতাম। ঐ টাইমটা হৈ-হুল্লোড় করে কাটাতাম। সবচেয়ে নিরস ক্রিসমাসের সময় মনে হয় এইবারই কাটালাম। সামনে ক্রিসমাস....শপিং করছি একটু একটু করে,ঘর সাজাচ্ছি তা-ও আগের মতন আর আনন্দ লাগে না কেন জানি।বয়স আর বাস্তবতা মনে হয় আমাদের জীবনের অপরিসীম আনন্দগুলো এভাবেই কেড়ে নেয়। যাইহোক নিরস এই টাইমে অতীতের জাবরকাটতে বসে বসে।গতকাল রাতে কে ফোন করেছিলো সেটা ভুলে যাই কিন্তু অতীতের সুন্দর-অসুন্দর সব স্মৃতিই যেন মাথায় ঘাপটি মেরে বসে থাকে সবসময়....
আমার মা ইন্টার পর্যন্ত আমার জামা কিনার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিলো মানে আমার কোন নিজস্ব পছন্দ ছিলোনা। মা যা দিবে তাই পড়বো (কত্তো লক্ষী মেয়ে আমি মা সেটা আজো বুঝলো না)।একবার তো ক্লাস ফাইভের পড়ার ক্রিসমাসে সব লাল দিলো পায়ের জুতা-মোজা থেকে শুরু করে মাথার ক্লিপটাও পর্যন্ত। এটা আমি খেয়াল করেছি মায়েরা তাদের একমাত্র মেয়েরে বেশী আহলাদ করে লাল কামা-কাপড় পড়ায়। জীবনে এত লাল জামা পড়েছি যে এখন লালের সাধ মিটে গেছে শপিং এ গিয়ে লাল জামা কিংবা শাড়ী দেখলেই আমি উল্টা দিকে হাটা দেই। বিরক্তি আর অপছন্দের কোন কালার যদি নাম বলতে হয় তাহলে নিঃসকোচে লাল বলে দিবো। যেবার প্রথম স্বাধীনতা পেলাম নিজের পছন্দমতন জামা কিনতে সেবার ৩ টা জামা বানালাম....বাসায় নিয়া ও আসলাম পরে মা বলে বসলো এগুলো জামা নাকি মশারি (শিফনের কাপড় পাতলা থাকাতে বলেছে)। এর পরেরবার কি করলাম কালো জর্জেট কাপড়ে ভারী সিলভার কালারের এম্ব্রোডারীর কাজ করালাম। ২ দিন পরে দেখি কাপড়ের তুলনায় কাজ এত ভারী হয়ে গেছে যে জামা ফেসে যাচ্ছে ....এত বছরের সব ক্রিসমাসে সবচেয়ে সুন্দর জামা ছিলো সেটা কিন্তু ৬ মাস ও পড়তে পারিনি ভালো করে। মন খারাপ লাগে সেই জামাটার জন্য !
আগে কোন কিছুই সহজে পছন্দ হত না। মার্কেট ঘুরতে ঘুরতে পা ব্যাথা হয়ে যায় কিন্তু জামা পছন্দ হয়না। কি মনে করে জানি ক্লাস নাইনে পড়ার সময় মা আমাকে আন্টির সাথে পাঠালো জামা কিনতে সেখানেও পছন্দ আন্টির আমি শুধু সাথে থাকবো।আন্টি বেশী উদার হয়ে আমারে বললো "তোমার যা ইচ্ছা পছন্দ করো"। এটা শুনে সেই দুপুর থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত ঘুরে কিছুই পছন্দ করতে পারলাম না দেখে আন্টি বিরক্তি দেখাতে লাগলো। শেষে যাও একটা পছন্দ হলো কিনে বাসায় এনে পরেরদিন সকালে দেখি ক্যাটক্যাটা কমলা কালারের জামার উপরে পুরা জরির কাজ করা জামা । রাতে কালার বুঝতে পারিনাই বলে এমন ক্যাটক্যাটা কালার নিয়া আসলাম। সেই জামাটা পড়ে কোথাও গেলে মনে হত বিদেশে কিছু দৈত্য সাইজের পাকা মিষ্টি কুমড়া থাকে না ....আমি হেটে কোথাও গেলেও সেই মিষ্টি কুমড়ার কথা মনে পড়ত !
ভাইরা আর আমি মিলে ক্রিসমাসে বাসা সাজাতাম আগে। বড় ভাই তেমন কিছু করত না মানে সে টিউশনিতে থাকত কিন্তু রাতে বাসায় ফিরে যখন দেখত ছোটো আর আমি ঘর সাজানো শেষ।সে খুব হাসাহাসি করত আর বলত"এটা এমন হয়েছে,ঐটা উল্টা হয়ে আছে,দুই গাধায় কি সাজাইছে "....আর এমন করে গা জ্বালানি হাসি দিত দেখে আমরা অনেক রাগ হতাম।অনেক বছর পর এইবার ছোটো বললো "চলো আগের মত পুরা ঘর সাজাই"। ১৬ই ডিসেম্বর তার ছুটি থাকাতে লাইট,বেলুন আর রিবন দিয়ে ঘর সাজালাম।তবে বড়ভাইকে এবার ঘর সাজানোর সময়ে মিস করেছি অনেক আর ছোটোকে দেখলে অনেক ভালো লাগে আর অবাক হয়ে দেখি আমার দেড় বছরের ছোট ভাই এখনো বয়স আর বাস্তবার চাপে আমার মতন বুড়িয়ে যায়নি সেই সাথে আগের মতই মতন হাসি খুশী থাকে !
শুধু ক্রিসমাসেই না অন্য যেকোন অনুষ্ঠানে যাবার আগে কেন জানি মুখ হাড়ির তলার মতন কালো (মায়ের ভাষ্যমতে) আর মেজাজ খারাপ করে রাখি। আরো আশ্চর্যের ব্যাপর হলো অনুষ্টান শেষ হবার সাথে সাথে বত্রিশ দাত বের করে হাসি আর ফুরফুরা মুডে চলে আসি। ছোটবেলা থেকেই এই বাজে স্বভাবের সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। বছর দু'য়েক আগে ইয়োলো কালারে জামদানী শাড়ীতে গোল্ডেন সুতার কাজ এমন একটা শাড়ী কিনলাম। ম্যাচ করে চুড়ি,টিপ,কানের দুল সব কিনে ক্রিসমাসের দিনে রেডি হয়ে যখন চার্চে যাবো তখন ধুম করে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। এমনই মেজাজ খারাপ যে আমি আর গেলামই না চার্চে। সবাই চলে গেলে পরে পুরা বাড়ী এই সাজুগোজু আর শাড়ী পড়া অবস্হায় কয়েজ রাউন্ড ঘুরনা দিলাম তারপর ঘরে বসে বসে ফ্যাচ ফ্যাচ করে কান্নাকাটি করলাম এরপর সব ঠিক। সবাই ফিরে এসে দেখে দাঁত কেলিয়ে হাসছি যত জানতে চায় কি হয়েছে ততই বলি আমি জানি না। আসলেই জানি না কি হয় মাঝে মাঝে। গতবার ও সবই ঠিক ছিলো ,একবারেই শাড়ী পড়ে চার্চে বসে আমি আবার এফবিতে স্ট্যাটাস ও দিলাম কিন্তু একটু পরে দেখি মেজাজ খারাপ হচ্ছে। কারণ খুবই সাধারণ....মাথার সামনে চুল ছোট ছোট করে কাটা ছিলো বার বার চুল সরাতে গিয়ে মাথা হালকা ঝাকুনি দেই....একটু পরে দেখি মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে রীতিমতন মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। কাউরে কিছু না বলে চুপচাপ বাড়ী চলে আসলাম আর সবাই খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। আরেকবার ঠিক করলাম কারো সাথেই হ্যান্ডশেক করবো না কারণ শীতে হাত খসখসা অবস্হা। সেইবার সুয়েটার পরে চার্চে গিয়ে সারাক্ষণ দু'হাত সুয়েটারের পকেটে ভরা ছিলো। কেউ শুভেচ্ছা দিলে আমি শুধু মাথা নেড়ে বলি "হ্যাপী মেরী ক্রিসমাস" !
সাধারণত আগেভাগেই শুভেচ্ছা জানাতে ওস্তাদ। এটা অবশ্য অন্য আরেকটা কারণেও করি কারণ ২০১২ সালে থাকবো কিনা সেই গ্যারান্টি দিতে পারলে ও একটু পরে যে পিসি অফ করে আবার কোন দরকারে শান্তিমতন অন করে কাজ করতে পারবো সেই গ্যারান্টি দিতে পারি না । এমনই লক্করঝক্কর মার্কা পিসি নিয়া চলি......এই জন্য আগেই ক্রিসমাসের শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলাম।আজকে অবশ্য পোস্ট ম্যালা মনের দু:খে লিখলাম। সকালবেলা কয়েকদিন বাদে রোদের মুখ দেখে এতগুলা কাপড় পরিস্কার করার জন্য রেডি হলাম..বাড়ীওয়ালা একটু আগে বলে গেল বিল্ডিং এর ড্রেন বন্ধ হয়ে গেছে পানি নামছে না... পানি যাতে কম ইউজ করি। এইটা কোন কথা হলো?? সারাদিন পানির কাজ তো করতেই হয়। সেই দু:খ কাটাতে কাজ বাদ দিয়া পোস্ট লিখলাম সকাল থেকে বসে বসে
♥♫♪♥♥ ♫♪ Merry Chritmas ♫♪ ♥♥ ♫♪♥