“ ভাই ভাই রেস্টুরেন্ট “ ।
সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে শাহাদাত হা করে একটা নিশ্বাস ছাড়ল । ইদানিং রেস্টুরেন্টগুলোর নাম পড়লে মনে হয় কত মোহাব্বত দিয়ে রাখা নাম কিন্তু আসলে আদৌতেই তাদের মধ্যে কোনও মিল নাই । এই ভাই ভাই রেস্টুরেন্ট এর মালিকের সাথে তার ভাইয়ের ঝগড়া অনেকদিনের । প্রায় মারমার কাট কাট টাইপের কিন্তু রেস্টুরেন্টের নাম শুনে যে কেউ ভাববে তাঁরা মাণিকজোড় । যাই হোক নামে কি আসে যায় , আমার ভাত খাওয়ার দরকার আমি ভাত খাবো । রেস্টুরেন্টে ঢুকার আগে শাহাদাত মাটির দিকে ঝুকে তাকালো , কিছুক্ষন চোখের পলক না ফেলে রুষ্ট নয়নে মাটিকে শাসিয়ে দিলো । মাটি বিকিরন ছড়ালো তাহাতে চোখ আধালাল শাহাজালাল রুপ ধারন করল । পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে তার মধ্যে ছোট্ট আয়নায় চোখটা একটু দেখে নিলো । হ্যা এবার হয়েছে , পুরাই গাঁজা খাওয়া চোখের মতন দেখাচ্ছে । হোটেল বয় গুলা বড্ড ত্যাদর , বাকিতে খায় বলে ভাল মন্দ ত দিবেই না উপরন্ত এক প্লেট ভাতের পর দ্বিতীয় প্লেট ভাত আসতে আসতে বাইরে গিয়ে বাদাম কিনে খেয়ে আবার বসা যাবে এত সময় নেয় তাঁরা । গাট্টামতন এক লোক একদিন রেস্টুরেন্টে ঢুকেই তাকালো বয় দের দিকে , চোখজোড়া লাল টকটক করছিলো । অর্ডার ও দেয়া লাগে নাই ২ প্লেট ভাত আর ডাল দিয়ে দিলো । এক প্লেট খাবার পর তারপর জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো “ স্যার কি খাইবেন ? গরু , খাসি , বট , বোয়াল মাছ , পাঙ্গাশ মাছ । পাঙ্গাশ নাম পুরোটাও বলতে পারেনি বেচারা তখন ই লোকটা সিনেমার ভিলেনের দৃশ্যের মতন “ হুহ “ বলে তাকালো । অগ্নিশর্মা নয়ন পানে তাকিয়ে পাঙ্গাশ এর পা বেড়িয়ে এলো “ঙ্গাশ” থেকে গেলো ভিতরে , তড়িঘড়ি করে বয় অর্ডার দিয়ে দিলো ঐ স্যারের লাইগ্যা একটা সইস্যা ইলিশ আর চিংড়ী ভুনা ল ।। ব্যাপারটা দেখে সেদিন হা হয়ে গিয়েছিলো শাহাদাত । তারপর থেকে শাহাদাত বুঝতে পারলো সব হল ভাবের দুনিয়া । কিন্তু তার চশমার নিচে চোখজোড়া এত ছোট লাগে সেখানে লাল করা দুঃসাধ্য এবং তার চেয়ে কঠিন হলো গাঁজা খাওয়া তার পক্ষে অসম্ভব । এটা নিয়ে অনেক ভেবে শেষ মেষ এক বন্ধু বললো মাথা অনেকটা ঝুকে অপলক চেয়ে থাকবি মাটির দিকে দেখবি চোখ অনেকটা লাল হয়ে যাবে , হয়েছে ও তাই ।
ঐ ভাইয়ের টেবিলডা মুইছা দে , কি খাইবেন ভাইয়া ?
হুহ ! করে শাহাদাত তার জলন্ত জলিল দৃষ্টি নিক্ষেপ করল লেদুর দিকে । লেদু “ভাই ভাই রেস্টুরেন্টে” সেই অল্প বয়স থেকেই চাকুরী করছে , বেচারা যা বেতন পায় তা পুরোটাই বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় । থাকা খাওয়া সব এখানেই হয়ে যায় । শাহাদাত তাকে খুব পছন্দ করে কারন একটাই ডালের মধ্যে মাঝে মাঝে গোল একটা ছোট পোড়া মরিচ তাকে দেয় সবসমই । পড়ালেখা ততটুকু করেনি তবে যতটুকুই করেছে এটাই নাকি তার কাছে বেশি আর বাকি টুকটাক কাস্টমারদের কাছ থেকে শিখে নিবে । তারই কথা এগুলো । চারুকলার ছাত্র আসলে অঙ্কন এর টিপস শিখবে , সাংবাদিক আসলে সাংবাদিকতার টিপস খুজবে আর বেকার রা আসলে নিজেকে উচ্চমরগিয় ভাবে তুলে ফেলবে । শাহাদাত হল শেষের কাতারের ছেলে , লেদু মাঝে মধ্যেই তার কাছে ভাব তোলে । ব্যাটা এমন নচ্ছার যেনো হোটেলের চাকুরী সে বিনে সার্টিফিকেটে পেয়েছে আর অভিশাপ বেকার সার্টিফাইড হয়ে ও তার কাছে নগন্যের পাত্র । সেদিন চারুকলার এক ছাত্রের কাছে সে টিপস চাচ্ছে – ভাইয়া টাক মাথার পিছে চুল আইক্ক্যাম কেমনে ? সামনে টাক পিছে চুল এই দুজ্ঞা এইগুইন আইক্কাম কেম্নে ? চারুকলার ছাত্রটির চেহারা হইছিলো দেখার মতন । সে অপলক দৃষ্টিতে ভাই ভাই রেস্টুরেন্টের ক্যাশিয়ারে বসা বড় ভাইয়ের দিকে তাকালো । ক্যাশিয়ারে বসা ভাই ভাই এর বড় ভাই মাথা থেকে টুপি সরিয়ে টাক মাথায় হাত বুলিয়ে আবার টুপি পড়ায় ব্যাস্ত ।
ভাইয়া ও ভাইয়া কি ভাবতেছেন , কি খাইবেন কননা ক্যারে ?
লেদুর ডাকাডাকিতে সে আবার ফিরে এলো বাস্তবে । শাহাদাত ভেবেছিলো বলা লাগবে না ভাত চলে আসবে ২ই প্লেট কিন্তু হায় এখন ও ১ প্লেট ও এলো না । সে বিমর্ষ মুখে বললো “ ভাত ল আগে “
- চিকনডা না মোডাডা
- তুই জানস না আমি কোনটা খাই
- না জাআআনি কিন্তু আইজকা চিকন্ডা শেষ এল্লেইগা জিগাইলাম , মোডাডা দিয়া খান আইজ
- এত বড় রেস্টুরেন্ট আর ভাতই শেষ , এইডা কিছু হইলো । যা ল । মোডাডাই ল
- ঐ ভাইয়েরে একটা মোডা দে । ভাইয়া লগে কি খাইবেন ? কলিজা ভুনা আছে ফ্রেশ দিমু !
- না ওইসব তেল খেয়ে গ্যাস্টিক বেড়েছে , মাছের মধ্যে কি আছে
- তেলাপিয়া , রুই আর টেংড়া মাছে আছে
- কোনটা ভাল হইছে তুই বল
শিট ম্যান ! এই কথাটা বলা একদম ই উচিত হয়নি শাহাদাতের । এসব বেয়ারাদের উপর যেটা ভাল হবে বললে অনেক সময় উল্টোটাও হয় । সবচেয়ে খারাপ টাই নিয়ে আসবে , আসলে ওদের অইটা ফেবারিট কিন্তু আমার ত নাও হতে পারে নাকি । ভুলে একদিন লেদুর পছন্দ অনুযায়ী একটা আইটেম বলাতে সে মুরগীর গিলা কলিজা নিয়ে এসেছিলো । শাহাদাত জানে যে কাওরান বাজারের আশেপাশ থেকেই এসব মুরগীর ছাল বাকলা নিয়ে আসে , কয়েকটার আবার লোমকূপ দেখা যাচ্ছিলো । তরকারির দিকে চেয়ে লেদুর দিকে তাকাতেই সে ৪ হলুদ দাঁত সহ বলতে লাগল – ভাইয়া হেব্বি টেস্ট আমি খাইয়া দেখছি । এখন বেয়ারাদের প্রিয় খাবার ও খেতে হবে । গা ঝাড়া দিয়ে শাহাদাত বলে উঠল
- না না থাক তোর পছন্দ না , তুই বরং রুই মাছ নিয়ে আয় ঠিক আছে
শাহাদাত রুই মাছ দিয়ে খাচ্ছে , খাওয়া শেষের দিকে কিন্তু এখন ও লেদুর স্পেশাল ডালপোড়ামরিচ ভার্সন এলো না । শাহাদাত মৃদু স্বরে লেদুকে বলল – কিরে ডাল দিবি না ? লেদু একবার তার দিকে তাকালো তারপর কাউকে কিছু না বলে লেদু নিজে গিয়ে কিচেনে ঢুকে ২ পেয়ালা ডাল নিয়ে এলো । একটা মাশকলাইয়ের ডাল আরেকটা প্রতিদিনের সেই ডালপোড়ামরিচের ডাল । মাশকলাই ! উফফ অনেকদিন খাওয়া হয় না । কিছুক্ষন তাকিয়ে লেদুকে বলতেই যাচ্ছিলো লেদু বলে ফেললো – ভাইয়া আর দুগগা ভাত দিই , মাশকলাইয়ের ডাইলডা দিয়ে খাইয়া দেহেন । শাহাদাত হাসি দিয়ে শুধু বলল – দে । খেতে খেতে শাহাদাত যেনো গ্রামে চলে গেলো । গ্রামে মায়ের মাশকলাইয়ের ডাল , আহা ।
খাওয়া শেষে বাইরে দারিয়ে দাঁত খিলি দিচ্ছিল শাহাদাত , মৃদু পায়ে লেদু পাশে এসে দাড়ালো কখন টেরই পাইনি । নরম করে লেদু বলে উঠলো “ভাইয়া “ । ফিরে তাকিয়ে তার প্রশ্নবোধক মুখ দেখে বলল “ কিরে কিছু বলবি “ ?
- জী ভাইয়া মানে অভয় দিলে একটা কতা কইত্যাম
- কি কথা বল , কোন ও সমস্যা হইছে ? মালেক ভাই কিছু কইছে ( ভাই ভাই রেস্টুরেন্টের বড় ভাই) ।
- না না ভাইয়া আমার কুনোউ সমস্যা নাই , নু ফবলেম । খালি আম্নেরে একটা কতা কইতাম
- অ আচ্ছা তা ভয়ের কি আছে লেদু , বলে ফেল
- না মানে ভাইজান আপ্নে ইয়্যানে আহেন অনেকদিন ধইর্যাই । আমি আম্নেরে কয়েকদিন ধরে খেয়াল করতাছি, বিশয়ডা জিগামু কিন্তু সাহসে কুলায় না
- কি হয়েছে সরাসরি বল
- না মানে আম্নের চোখ ......
- আমার চোখ ? কি হয়েছে চোখে আবার
- কইদিন ধইর্যা দেকতাছি অনেক লাল থাহে , আম্নেরে কি কেউ মাইচ্চে টাইচ্চে নাহী ।
- কি সব জাতা বলছিস মারবে ক্যান
- তাইলে কি ভাই ছ্যাঁক খাইছেন নাকি , অনেক কান্নাকাটি কইল্ল্যে এর্যাম অয় । আমি ও ভাই কানলে এমন অয়
- কি কছ না কছ । যাহ্ ভাগ । যত্তসব আউল ফাউল কথা । আমার মাথা ব্যাথা উঠলে এরকম হয় বুজেছিস
লেদু কি বুঝলো জানি না শুধু “অ” বলে ঘাড় ঘুরিয়ে চলে গেলো । শাহাদাত ভাবতে লাগলো । নাহ আসলে জোরজবরদস্তি করে পৃথিবীতে কিছু পাওয়া যায় না । মাটিতে তাকিয়ে চোখ লাল করার দিন শেষ , যা করতে হবে মাথা উচু করে । যা চাইতে হবে ভালবেসে । আজকের মাশকলাইয়ের ব্যাপারটাই ত একটা উদাহরন । শাহাদাত মাথা উচু করে আকাশের দিকে তাকালো , চোখের রক্ত নিচে নেমে আসতে লাগল । পকেট থেকে মানিব্যাগে থাকা আয়নাটা বের করে দেখলো চোখের আয়নায় আকাশের নীল রঙ ধারন করেছে ।
[ কিছু কথা - আমি নতুন লেখুয়ে । চেস্টা করছি তাই ভুল ত্রুটি মার্জনীয় । গল্পের চেয়ে কবিতা লেখা আমার কাছে অনেক সহজ মনে হয় । গল্প লেখায় যে ৩টি মোস্ট ইম্পরট্যান্ট সমস্যায় পড়ছি তা হচ্ছে -
1/ গল্পের নাম নির্ধারণ
২/ চরিত্র নির্ধারণ
৩/ গল্প লিখি একটা মাঝে এসে ঘুরপাক খেয়ে চলে যায় অন্যদিকে
এগুলো সমাধান হলে কিছুটা সিথিলতা আসবে বলে মনে হয় আমার মনে ]