somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রামায়ণ বালিবধ

২২ শে নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাম ঋষ্যমুকে চুপচাপ এভাবে বসে থাকতে পারে না, বার বার জানতে চায় সুগ্রীবের কাছে সীতার কথা, খুব কি কান্নাকাটি করছিল? —সুগ্রীব রামকে আশ্বস্ত করে বলে,কোনও চিন্তা নেই আপনার।আমাদের কিষ্কিন্ধ্যার অনেক সেনা,ঠিক আমরা ্সীতাকে

উদ্ধার করব।কিন্তু কিষ্কিন্ধ্যায় আগে যাই।
রাম তখনই যেতে চায় ,বলে চলো সুগ্রীব,আজই গিয়ে বা্লিকে মেরে তোমাকে রাজা বানিয়ে ফেলি।
সুগ্রীব রামকে বোঝায়,আমি কাছে গেলে তবেই বালি যুদ্ধ করবে নইলে নয়।সে ধার্মিক লোক,তোমার মত অপরিচিত মানুষের সঙ্গে সে কখনও যুদ্ধ করবে না,আর আমি যদি তার কাছে একবার যাই,তার এত রাগ আমার উপরে যে তখনই মেরে ফেলবে আমাকে।তোমাকে সেই ক্ষণেই একবাণে বালির প্রাণ নিতে হবে।
রাম রাজি,বলে ,তুমি জান না সুগ্রীব,আমার কাছে কত অস্ত্র আছে।সুগ্রীব বলে তুমিও বালিকে জান না।চারটি পাহাড়ের মাথায় উঠে সে পুজা করে সন্ধ্যায়।তার গতি মারাত্মক,তার বাহুবলে দেবতারাও বার বার পরাজিত হয়েছে।স্বয়ং রাবনকে একবার বালি চার সাগরের জলে নাকানি চোবানি খাইয়ে ছেড়েছিল।রাবন অনেক ক্ষমা চেয়ে ছাড়া পেয়েছিল।তোমাকে দেখাতে হবে আগে নিজের বীরত্ব,নইলে নিজের জীবনের ঝুঁকি আমি নিতে পারব না রাজা।
রাম তখন নানাভাবে বাণ মেরে ,সব অস্ত্র বার করে দেখালো।অনেক বুঝিয়ে সুগ্রীব রাজি হল।পরদিন সকালে পাঁচজন বানরজাতের লোক ,রাম ও লক্ষ্মন রাজধানীতে গেল।সুগ্রীব দরজার কাছে গিয়ে খুব গলা ফাটিয়ে ডাকল—সাহস থাকলে বেরিয়ে আয় ,পাজি বালি।আমি লড়াই দিব আজ।বালি বাইরে এল,অবাকও হল একটু তারপরে মেরে আধমরা করে দিল-ব্যাটার সাহস বেড়ে যাচ্ছে এত!-- এদিকে মহাবীর রাম একটা গাছের আড়ালে তীর হাতে অপেক্ষা করছিল।কিন্তু বালি আর সুগ্রীব যে যমজ,একই চেহারার ,এটা রাম জানত না।কাকে মারবে,সে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।সুগ্রীব তখন দে দৌড় দে দৌড়!
পাহাড়ে পৌঁছে সুগ্রীব প্রবন অভিমানে,রাগে চুপ করে থাকে।অত্যন্ত আহত হয়েছে সে।বালি মেরে একেবারে হালুয়া টাইট করে দিয়েছে।রামকে নানাভাবে সে গালি দিল,বলল আমি আগেই জানতাম তোমার খেমতা,কি দরকার ছিল তোমার আমাকে মার খাওয়ানোর।
রাম বুঝিয়ে বলে,যে একেই তোমাদের উপজাতির সকলকে একই রকম লাগে আমার চোখে,তার উপরে তোমরা একই রকম পোশাকে,দুই ভাই হুবহু এক।---
তখন বুদ্ধিমান লক্ষ্মন উপায় বাতলালো।লক্ষ্মন নিজে হাতে ফুল তুলে মালা গেঁথে রাখল,সেই মালাই হবে সুগ্রীবের চিহ্ন।মালা ছেঁড়ার আগে বালিবধ হওয়া দরকার।–সুগ্রীব বলল,যদি তুমি মারতে পারো বালিকে-তাহলে সীতা আমি উদ্ধার করবই। সকালে আবারও সুগ্রীব গিয়ে হাঁকাহাকি শুরু করল।এবার কিন্তু অনেকেই সন্দেহ করল,এত সাহস সে পাচ্ছে কীভাবে।রানীরাও বালিকে বলল,বীর,এইসব সামান্য ব্যাপারে পাত্তা দিও না।কিন্তু বালি কাউকে তোয়াক্কা করে না,সে জানে যুদ্ধএ তাকে হারানোর মত কোনও বান্দার আজও জন্ম হয়নি।আর হলও তাই,এসেই এক থাপ্পড়ে বালি শুইয়ে দিল সুগ্রীবকে,তারপরে তার বুকের উপর উঠে দাঁড়াতেই...গাছের আড়াল থেকে রাম বাণ মারল,একটার পর একটা।মুনি ঋষিদের স্নেহের দান এই অস্ত্র,তারা যদি দেখত,এই কাপুরুষ সুলভ আচরণ—ভক্তিমান কবি কৃত্তিবাসও গাইলেন
কৃত্তিবাস পণ্ডিতের রহিল বিষাদ.।
ধার্মিক রামের কেন ঘটিল প্রমাদ।।
বালিকে মেরে রাম ধীরে ধীরে কাছে এল।বালি তাকে দেখেই ঘৃণায় মুখ কুঁচকে বলল,তুমি রাম না? খবর পেয়েছি তুমি সাধুসঙ্গ কর,এই তোমার পরিচয়? চোরের মত মারলে? সামনে এলে একটি চড়ে তোমায় মেরে ফেলতাম আর এই ভয়েই তুমি সামনে এলেনা ।মানুষ খাদ্যের প্রয়োজনে পশু হত্যা করে,-তুমি কিসের জন্য এই কাজ করলে? রাম অস্ফুটে জানায় রাবন রাজার কাছ থেকে সীতা উদ্ধারের অন্য পথ ছিল না--
বালি বলে, তুমি আমার কাছে সাহায্য চাইলে না কেন রাম? রাবনকে আমি চার সাগরের জলে নাকানি চোবানি খাইয়েছি একদিন।রাবনকে বেঁধে এনে তোমার চাকর করে রেখে দিতাম আমি।তার জন্যে এতবড় পাপ করলে তুমি? বালি মৃত্যুর দিকে ক্রমে চলে যাচ্ছিল,প্রচুর রক্তক্ষরণে,বালির স্ত্রী তারাদেবী খবর পেয়েছে অন্দর থেকেই,স্বামীর দেহের কাছে কান্নায় ভেঙে পড়ে তারা,তারপরে ঘুরে রামকে বলে-ছিঃ রাম! বৌকে ফিরে পেতে আমাকে বিধবার বেশ পরালে তুমি,বিরহ যন্ত্রণা দিলে? তাও যদি যুদ্ধ করতে সাহস করতে বুঝতাম বীর স্বামী আমার যুদ্ধে মারা গেছেন,আমি তোমাকে আজ অভিশাপ দিলাম,তুমি কোনওদিন সীতাকে নিজের করে পাবে না।উদ্ধার কর আর যাই কর,সীতা তোমার কাছে কখনও থাকবে না। বালি নির্দেশ দিয়ে গেলেন কোনওক্রমে যে পুত্র অঙ্গদ যেন কাকার কাছে তার অনুচর হয়েই থাকে,সুগ্রীব গিয়ে বালির বুকের থেকে তীর তুলে নিতেই বালির মৃত্যু হল।রাম ঘোষনা করল—কিষ্কিন্ধ্যার রাজা হল সুগ্রীব আর অঙ্গদ যুবরাজ!সুগ্রীব গোপনে জানান,রানী তারার কথাটা,আগে একবার তারাকে রানী পেয়েও ছেড়ে দিতে হয়েছিল,রাম তখন ঘোষনা দিল-মহারানী তারা আজ থেকে সুগ্রীবেরও মহারানী হবে!
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×