মাঝে মাঝেই মনটা ভীষন খারাপ হয়। মনে হয় সবকিছু ছেড়ে দিয়ে কোথাও চলে যাই- দূরে, বহুদূরে। যেখানে এই সভ্য সমাজের কলুষতা থাকবে না, কপটতা থাকবে না, থাকবে শুধু ফুলের সুগন্ধ আর পাখির কোলাহল। দিনে শোনা যাবে ঢেকিতে ধান ভানার শব্দ আর রাতে তন্ময় হয়ে যাবো পরিচিত গলায় কারো সুরেলা গায়কীতে। ত্তীব্র গরমে অফিসের এসিটাকে হয়তো মিস করবো, কিন্তু রাতের ঘুমটা কিন্তু হবে নিপাট, স্বপ্নময়!
আমার স্ত্রী হয়তো চিকিৎসক কিংবা প্রকৌশলী হবেনা, হবে সাধারন কোন মেয়ে...কিন্তু সে নিশ্চই আমাকে বুঝবে। ঘরে ঢুকেই জামা-কাপড়-জুতো সব ছুড়ে ফেলে বিশৃংখলা তৈরী করবো জেনেও যে আমার ভালোবাসবে; ভাববে ছেলেরা একটু এমনই হয়! যাকে নিয়ে বৃষ্টির রাতে শুনবো প্রকৃতির গান। হয়তোবা সে কিশোরীর ন্যায় উতলা হয়ে ভিজতে চাইবে বৃষ্টিতে, কিন্তু ভালোবাসার হাতছানিতে থোড়াই কেয়ার করবো সর্দি-জ্বরের হুঙ্কারকে! এশুধু আমাদের দুজনার পৃথিবী- আমি আর সে, সে আর আমি, আমরা দুজন...
আমার ছেলেটা হয়তো খুব ডানপিটে হবে, গাছ থেকে পেয়ারা পাড়তে গিয়ে দুএকবার পড়েও যেতে পারে! কিন্তু তাই বলে ওর মার কথায় ওকে গাছে উঠতে মানা করবো এমন বাবা আমি নই। ও যতোই মাকে ভালোবেসে কথা দিয়ে থাকুক, স্কুলে যাওয়ার আগে বলবো, “কেও দুটো মারলে অন্তত একটা মেরে আসবি, নইলে বাসায় ভাত নেই!”। মাঝে মাঝে এজন্যে হয়তো স্কুলে গিয়ে আমাকেই মাথা নিচু করে সন্তানের সাথে শিক্ষিকার ভৎসনা শুনতে হবে, তাতে কি আসে যায়, আমি কারো পরোয়া করি নাকি?
মেয়েটা আমার ন্যাওটা হবে জানি, কিন্তু ওর গানের গলা যে মায়ের থেকে এসেছে, সে আর কাউকে বলে দিতে হবেনা। আমার মেয়ের পুতুলের বিয়েতে একমাত্র বরযাত্রীই তো আমি! দুষ্টুটাকে কাধে চড়িয়ে সারা গাঁ চষে বেড়াবো, চেনাবো কোনটা কোন গাছ আর কোনটা কি ফুল; ওর মুখে তখন থাকবে বড় ভাইকে পরাজিত করে বাবার কাধে চড়তে পারার বিশ্বজয়ী হাঁসি!
সন্তানের জন্য সারাটি জীবন খেটে এখন বিশ্রাম নেয়ার সময় আমার বাবা-মার, আর আমার সময় এসেছে আস্তে আস্তে করে নিজেকে, নিজের বংশধরকে আরো একটু উপরে নিয়ে যাবার। বাবা-মা হয়তো খুব রাগ করবেন শহরে ভালো চাকুরি ছেড়ে এতো বিদ্ব্যার্জনের পর গাঁয়ে থেকে চাষাভুষা সাজার জন্যে। কিন্তু আমার দুষ্টগুলোকে সামলাতে সামলাতে কখন যে বেলা গড়িয়ে সাঝবেলা চলে আসবে, টেরই পাবেননা ওনারা।
আর এভাবেই কেটে যাবে দিন, মাস, বছর...ভালোবাসাময় প্রতিটি মুহুর্ত, আমাদের জীবনে!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১১ দুপুর ১:৩৪