হেলসিংকি শহর (ছবি গুগল)
লাগেজ নিয়ে অনেক ঝামেলার এ পর্যায়ে মূল কাজ হলো সাজ্জাদ ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করা. আমরা এসে পৌঁছেছি ঘন্টাখানেক হয়নি. সাজ্জাদ ভাইকে আগেই ফেসবুকে বলা আছে, যেন এই সময়ে থাকে. উনি ফিনল্যান্ডে পা রেখেছেন এক মাসের বেশি সময়. বাড়িতে লোকজনের সাথে কথা বলার পর আমি ও মনজু ভাই দুইজনই হাওয়া খাওয়ার বিরতিতে এবং একই সাথে সাজ্জাদ ভাইয়ের জন্য অপেক্ষাপর্ব পার করতেছি. সাজ্জাদ ভাইয়ের দেয়া মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলাম কি অবস্থা জানার জন্য.
তখন এই তুষার পড়ার সময় হয়নি, এটা কিছুদিন পরের ছবি. সিটি সেন্টার. হেলসিংকি শহর, রেলস্টেশন
তখনই তিনি জানালেন, তার একটা চাকরি যোগাড় হয়েছে. এই সময়ে তার আসা সম্ভব না. কারণ তাকে আসতে গেলে প্রায় ১ ঘন্টা আবার যাওয়া এই নিয়ে বেশ সময় পার হবে. সুতরাং তিনি আসবেন না. কিছুটা হতাশ তো হইলামই. কিন্তু কাজ ফেলে জনসেবা করার জন্য তাকে বিরক্ত না করাই ভালো মনে করলাম. তবে, সমাধান পাওয়া গেলো সাজ্জাদ ভাইয়ের কাছেই.
রেলস্টশনের বাইরে. এটা মিউজিক সেন্টার মুসিক্কি তালো
মুসিক্কি তালো
তিনি জানালেন মুকিত নামে একজনকে ফোন করে পাঠাবেন.আমরা যেন তার জন্য অপেক্ষা করি. আসলে মূলত অপেক্ষা করার কাজ আমার. কারণ বাসের সময় ঘনিয়ে আসলে মনজু ভাই চলে যাবেন. এখানে বাস যেহেতু মিনিট পাঁচেক আগে (একটু দূরের বাস) বা ঠিক সময়ের একটু আগেই স্ট্যান্ডে আসে তাই বাসের স্ট্যান্ডে না বসে ভেতরে বসাই ভালো. তো, এই মুকিত আপাতত নতুন বাসা পায়নি, উঠেছে সাজ্জাদ ভাইয়ের সাথেই. সপ্তাহখানেক আগেই সে এসেছে. অপেক্ষার এক পর্যায়ে মুকিতকে পাওয়া গেলো. হাফ ছেড়ে বাচলাম. কারণ ঠিকানা বুঝে, চিনে তারপর সাজ্জাদ ভাইয়ের বাসায় যাওয়া কিছুটা, ঠিক কিছুটা না, বলা যায় বেশ মুশকিলই মনে হয়েছিল. এখন তা থেকে নিস্তার পাওয়া গেলো. হাসি খুশি মুকিত আসার এক পর্যায়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই মনজু ভাই এর বাস এসে গেলো, তিনিও আমাদের বিদায় জানালেন. আমরা দুইজন এখন রাজধানী হেলসিংকির এক প্রান্তে এসপো (espoo) এলাকায় যাব. যেখানে আপাতত ঠিকানা কয়েক দিনের জন্য. বাস এখান থেকে নিয়ে যাবে সিটি সেন্টার, প্রায় ৫০ মিনিট লাগবে. তারপর সেখান থেকে আবার আরেক বাসে উঠা লাগবে.
হেলসিংকি সেন্টার, রেল স্টেশন (ছবি-গুগল)
এটাও একই এঙ্গেলের ছবি- কিন্তু আমি তোলার সময় এই মেরামত কাজ সামনের দৃশ্য হাওয়া কইরা দিছে.
বাইরে এসে মিউজিক সেন্টারের দিকে যেতে
মুকিত বাসে উঠার আগেই বলতেছিলো, ভাই- জ্যাকেটটা লাগায় নেন. ঠান্ডা আছে. আমি কিছুটা কান না দিলেও একটু পরে যখন ঠান্ডা লাগা শুরু করলো তখন নিজেই ব্যাকপ্যাকের মধ্য থেকে বের করে গায়ে জড়ালাম. ঠান্ডা লাগার আশংকা থেকে শীতের দুয়েকটা কাপড় উপরের দিকেই রেখেছিলাম. আকাশ স্বচ্ছ এবং রোদেলা হলেও ঠান্ডা যখন লাগতেছে, তখন ব্যবস্থা নেয়াই ভালো. সাবধানের মাইর নাই. বাস চলার এক ফাঁকে কোথায় দেখলাম মাইনাস ৪ তাপমাত্রা. তখন কারণ টের পেলাম ভালো করে.
হেলসিংকির বিনোদন পার্ক লিননান ম্যাকি এখানে গেছিলাম একবার, এই খান থেকে নামার পর আমার মাথা ঘুরছিল কমপক্ষে ১৫ মিনিট. পুরাই কট অবস্থা.
যা হোক. আমার গন্তব্যস্থল হেলসিংকি না, আমি যাবো হেলসিংকি থেকেও প্রায় হাজার কিলোমিটার উত্তরে লাপল্যান্ডে. কিন্তু এখানে যাত্রা বিরতির সিদ্ধান্ত সাজ্জাদ ভাইয়ের সাথে আলাপ করেই করা. তার বাসায় কয়েকদিন থাকা ও রাজধানীটা একটু চিনে যাওয়া এই দুই বিষয়কে কেন্দ্র করে তার সাথে একটা অগ্রিম চুক্তি করি আসার আগেই. চুক্তি হলো আমি এসে এখানে কয়েকদিন থাকবো, ঘুরবো. সাজ্জাদ ভাই কিছু ঘুরিয়ে দেখাবে. আর তার বিনিময়ে রান্না বান্না বিষয়ক কিছু কাজ আমার করা লাগবে. কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হবেই. আবার যদি হয় বিদেশ. তাহলে তো এটাই নিয়ম. ফ্রি পাওয়া এখানে অসম্ভব ব্যাপারই বটে!
পেছনে যে ৬১৫ নং দেখছেন-সেটাই নিয়ে আসে এয়ারপোর্ট থেকে সেন্টারে রেল স্টেশনে (ছবি- গুগল)
আপনারা হয়তো মনে করছেন- আমি বুঝি আসার পর থেকে ভাত-তরকারি প্রস্তুত ও রান্নার কাজে লেগে গেলাম. আসলে তা না. চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিলো- আমি যেহেতু কোরবানির ঠিক কয়েক দিন পরেই আসতেছি, সুতরাং কোরবানির মাংস তাদের জন্য আনতেই হবে. এখানে কোরবানি বা কোরবানির মাংস পাওয়া যাবে না. আর দেশের কোরবানির মাংস - সে অন্যরকম বিষয়. চুক্তি অনুযায়ী মাংস আম্মা রান্না করে দিলো. সেগুলা আবার শুকনো করে আবার প্যাক করা হলো প্লাস্টিক জারে ঢোকানোর পর. আর ঐটাই ছিলো রান্না বিষয়ক কাজের প্রধান অংশ যেটা আমি সাথে নিয়ে এসেছি.
এসপো Espoo নোকিয়া অফিস যা এখন মাইক্রোসফট অফিস, গন্তব্যস্থলে যাবার পথেই চোখে পড়ে (ছবি-গুগল)
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, লাগেজ যেহেতু হারানো গেছে, আর এখনই পাওয়া যাবে না. বড় কথা হলো- আমি সেটা ছাড়াই এসেছি, তাহলে চুক্তির কি হবে! বিষয়টা সহজ-চুক্তির অবস্থা সামাল দেয়া গেছে. কারণ এইটা ছিলো ব্যাকপ্যাকের মধ্যে, এখানে ভারী যাবতীয় কিছুর বড় একটা ফ্রাইপেনসহ আরো অনেক ভারী জিনিস. তাই যাত্রায় রক্ষা হলো. আমিও বাঁচলাম. --কিন্তু এই নিয়েই কিভাবে চলবে- বইসা থাকলে তো হবে না. সাজ্জাদ ভাই, মুকিত দুজনই দেখি সময় সময় কাজে যায়, কাজ খুঁজতে যায়. আমি কি ঘরে একা বইসা থাকবো. আমার আবার বাস কার্ড নাই. আর কার্ড ছাড়া ঘুরলে নিজেরে সহ বিক্রি কইরা রাস্তায় ঘুরা লাগবে. কারণ ক্যাশ টাকা টাকা যা আছে তা এখন খরচ করলে বাকি আসল সময় তো পড়েই আছে.
হেলসিংকির এক বাস স্টপে অপেক্ষার সময় দাড়িয়ে মেঘ দেখা
একটা বাস কার্ড (এক সপ্তাহের) আর কিছু কাজ খুঁজবো এই সিদ্ধান্ত নিলাম. বইসা না খাইয়া, কাজও খোঁজা হবে আবার শহরও ভালো করে দেখা হবে এই দুই চিন্তা করে বাস কার্ড একটা নেয়াই ঠিক বলে সাজ্জাদ ভাই, মুকিত দুজনই মত দিলো. কার্ড একটা কিনলাম. ১২ ইউরোর মতো ছিলো. বাসে ঘুইরা বেড়াইতে ভালোই লাগলো, নতুন অভিজ্ঞতা. এখন সামনের কয়েকদিন কিছু খরচ ব্যাকআপ দেয়ার চিন্তা.
একদিন একেবারে ভোর ৭ টায় কি কারণে মেট্র্রো স্টেশনে, তখন দেখি 'কোথাও কেউ নেই!' কারণ দিনটা ছিল রোববার সকাল
হেলসিংকির দক্ষিণ সমুদ্রঘেরা কাইভোপুইসতো (kaivopuisto) সবুজঘেরা পুরোটাই. (ছবি- গুগল)
হেলসিংকির কাইভোপুইসতো তে একদিন সূর্যাস্ত দেখা.
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪৮