আগের পর্বে বলছিলাম ফিনল্যান্ড এসে পৗেঁছানোর কথা. সেই পৌঁছানোর গল্পের মাঝের চুম্বক অংশটুকু নিয়ে আজকের গল্প. আসা মানেই যে বিমানে উঠলাম, বসলাম, পৌঁছে গেলাম, ঘরে এসে বিশ্রাম বিষয়টা সব সময় তেমন হয়না ভ্রমণের ক্ষেত্রে. আমারও হইছিলো সেই অবস্থা. টার্কিশ এয়ার হেলসিংকি আসার পর বেশ খুশি খুশি ভাব মনজু ভাই ও আমার. আইসা পৌঁছেই গেলাম অবশেষে. এখন আর কি চিন্তা. কিন্তু ফ্লাইট এসে জায়গামতো পৗেঁছলেও গন্তব্যে যাওয়া নিয়ে দেখা দিলো অনিশ্চয়তা.
হুম, বলছি সে কথা. বিমান থেকে নামার পর পাসপোর্ট, ভার্সিটির ভর্তির কাগজপত্রসহ আরো অন্যসব নিয়ে লাইনে দাড়িয়ে গেলৈাম। বিশাল লম্বা লাইন. কিন্তু কিছু করার নাই. প্রায় আধ ঘন্টা পর যখন কাউন্টারে গেলাম তখন শুরু হলো আরেক কাহিনী. বেচারী কতক্ষণ পাসপোর্ট দেখে ডাকলো আরেকজনকে. সে এসে কতক্ষণ টাইম পাস করতেছে. এমন সময় আরো দুই একজন পুলিশ আসলো. দেখি আমারেই বলতেছে, লাইন ছেড়ে বেলাইন হয়ে তাদের সাথে সাথে যাবার জন্য. আমার অবস্থা তখন কেরোসিন. কি হইতেছে কিছুই বুঝতাছি না. এর মাঝে মনজু ভাই আমার আগেই পার হইয়া গেছে.
তো পুলিশ দুইজন নিয়া আমারে বসাইলো দুইতলায় আরেক জায়গায়. সেখানে গিয়া দেখি বিদেশী আরো কয়েকজন আছে. আমি ভাবতেছি, এখন কি আমারে আবার ফেরত পাঠায় দেয় নাকি. কিন্তু কারণ কি সেইটাই বুঝার চেষ্টা করতেছিলাম. যা হোক হাজার চিন্তার মাঝে বসাইয়া রাখলো আধা ঘন্টা. আমি তো চিন্তায় অস্থির. কি যে করি. এমন না যে কাউরে ফোন কইরা কিছু পরামর্শও নিমু. যাই হোক এরপর এক সুন্দরী আ্সলো একটা ফর্ম নিয়া. কলম দিয়া বললো, ঐটা ফিলাপ করতে, পাসোপার্টটা সাথে কইরা নিয়া গেলো. আর কোনো কথা নাই. ঠিক আছে, কি করো, কেন আসছো, কোথায় যাবা, কি করবা এই জাতীয় হাজার প্রশ্ন ঐখানে. পুরণ কইরা আবার বইসাই রইলাম. এখন আবার কি কয় কে জানে.
এর মাঝেই কয়েক মিনিট পর সেই সুন্দরী আইসা কাগজটা নিলো আর বললো আরেকজনকে অনুসরণ করতে. সাথে আমার সেই হেভি ল্যাপটপ ব্যাগ যেখানে প্রায় ১০ কেজি ওজন. আছে আরেকটা ব্যাগ এবং কাগজপত্র ফাইল. এই নিয়া এখানে, সেখানে করতে করতে অবস্থা খারাপ. তো, তারা আমারে নিয়া আর কিছু না বইলা দরজা দিয়া সোজা এক্সিট. মানে হইলো লাগেজ এরিয়ার দিকে সরাসরি পাঠায় দিলো. যাক বাইচা গেলাম. এন্ট্রি হইলো ফিনল্যান্ড. এখন লাগেজ খোঁজার পালা. লাগেজ বলতে একটা বড় ব্যাকপ্যাক, বড় লাগেজ আরেকখান, আর বাকী সব তো হাতেই.
সেখানে গিয়া দেখি চারদিক সুনসান, কোথাও কেউ নাই. সবাই যার যার মাল লইয়া উধাও. আমি পড়লাম আবার বিপদে. অর্ধেক আছে তো বাকি অর্ধেক নাই. কি করি. ব্যাকপ্যাক টা পাইলাম, আসল লাগেজের খবর নাই. নাই তো নাই. কোনোখানেই খুঁইজা পাইলাম না. সব মালপত্র তো ঐখানেই. এখন আমার কি হবে. ৪৩ কেজির লাগেজ ছাড়া বিদেশে আমি যে কি করমু সেই চিন্তায় আমার হায় হায় অবস্থা. এদিক যাই, ওদিক যাই কেউ তার হদিস কইতে পারে না. এই করতে করতে গেলো আরো ঘন্টা খানেক সময়. এদিকে মনজু ভাই এই এলাকা থাইক্যা আরো আগেই চলে গেছে. তারে নিয়া যে দৗেড়াবো, জিজ্ঞেস করবো কাউকে, সেটাও হচ্ছে না. এত বিপদ দেইখ্যা কান্দাকাটির বাকি ছিলো.
যাই হোক. লাগেজ পাওয়ার আশা বাদ. একজন পরামর্শ দিলো নিজের বিস্তারিত লেইখ্যা, ঠিকানাসহ রাইখ্যা যাইতে, মিসিং লাগেজ পরে সেখানে পাঠানো হবে. আমার যেহেতু আর কিছু করার নাআি, সেই পরামর্শ নিয়ে ঠিকানাসহ বিস্তারিত লেখলাম. লাগেজ ছাড়াই এবার বিমানবন্দর থেকে বাইর হইলাম. কিছু দূরে গিয়ে পাওয়া গেলো মনজু ভাইর।. সে এক জায়গায় বইসা ছিলো. কেন এতো দেরি, কি করতেছিলাম এতক্ষণ সেই গল্প তারে বিভিন্নভাবে বুঝানো হইলো, আর কিছুক্ষণ হা হুতাশ, মন খারাপ পর্ব চললো. লাগেজের চিন্তা ই বড় আপদ হয়ে রইলো.
ছবির স্বত্ব: অন্যের, গুগল থেকে.
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪৬