ব্যাগ গুছিয়ে এবার যাবার পালা. ইউরোপে, তাও আবার এমন দেশে যেখানে শীত নিয়েই যত কাজ কারবার. কাপড় থেকে শুরু করে সবকিছুতে নজর ছিলো যাতে শীতকে কোনোভাবেই অবহেলা না হয়. বাক্স পেটরা গুছিয়ে গেলাম বিমানবন্দরে. বাসা থেকে মা.বাবা- ভাই বোন, ফুপি সবাই আসলো. অনেক উপদেশ মাথায় নিয়ে. কান্না ঘেরা পরিবেশে ঢুকলাম বিমানবন্দরে লাগেজ নিয়ে.
তাকিয়ে দেখি সময় আরো বাকি. মনজু ভাই আসার কথা. সেও যাবে ফিনল্যান্ড পড়তে. সে তখনো আসেনি. মনজু ভাই ভর্তি হয়েছিল এখানে তুরকু নামক শহরে. বেচারার সাথে দেখা হয়েছিলো দিল্লীতে, ভিসা আবেদন করার সময়. তো আগে থেকেই ঠিক করেছিলাম যেহেতু দূর দেশে, একই জায়গায় যাবো. তো দুজন একসাথেই যাই.
টার্কিশ এয়ারের লাইন তেমন লম্বা নয়. ভাবলাম সে আসার আগেই নিজের কাজ কিছু গুছিয়ে নেই. কাউন্টারে গিয়ে বোর্ডিং পাস নিতে গেলাম. সমস্যা হয়ে দাড়ালো ওজন. লাগেজের ওজন হয়ে গেলো ৫০ কেজির বেশি. অথচ নেয়া যাবে ৪০ কেজি. ব্যাগ খুলে নতুন করে আবার এখানে সেখানে স্থান বদল শুরু করলাম, ল্যাপটপের ব্যাগে বেশ কিছু ভারি জিনিস চালানের সেটার আকৃতি প্রায় ৩/৪ গুণ বেশি হয়ে গেলো. হাতে আরেক ব্যাগে আরো কিছু. এরপর বলে কয়ে ৪৩ কেজি দিয়ে কোনোভাবে চালিয়ে দেয়া গেলো. যাত্রীর একখান ফরম নিয়ে পূরণ করতে দাড়িয়ে গেলাম. এরমাঝেই মনজু ভাই চলে এলো. বেচারার সেই একই সমস্যা, ওজন নিয়ে দেন দরবার. সে আবার ওজন কমাতে কিছু জিনিস ফেরতও দিয়া আসলো বাইরে একজনকে.
অপেক্ষার পর এক সময় লাইনে দাড়িয়ে বিমানে চড়ে বসলাম. জানালার পাশে হওয়ায় ভালোই লাগছিল ঢাকা শহরকে আবার উঁচু থেকে দেখতে. আমার পাশে বসেছিলেণ এক ভদ্রলোক, যাবেন বাহরাইন. সেখান থেকেই এসেছিলেন, এখন ফেরত যাচ্ছেন. তিনি সেখানে একটা কোম্পানিতে কাজ করেন. বেচারা দুই বছর পরপর তিন মাসের জন্য ছুটি পায়. পরিবারকে দেখতে আসে, আবার ফেরত. তার সাথে কিছু কথা হলো.
খাবার খাওয়ার সময় কখন আসবে এই নিয়া দুশ্চিন্তার এক পর্যায়ে চলেই আসলো. খাবার খাওয়ার চেয়ে ড্রিংকস খাবার প্রতি বেশি মনোযোগী ছিল মনজু ভা্ই. আমিও তার সাথে যোগ দিলাম. শীতল পানীয় কিছু খেয়ে লম্বা এক ঘুম. ইস্তাম্বুল পৌঁছার আগেই হুড়মুড় করে ঘুম ভাঙ্গল. এখন আবার হেলসিংকির বিমান খুঁজে সেটাতে বসে থাকার অপেক্ষা. যাত্রা বিরতি সম্ভবত প্রায় ৩ ঘন্টা ছিলো, মনে পড়ছে না ঠিক. কোথায় বসি আর কোথায় গিয়ে পরের ফ্লাইট ধরতে হবে এই নিয়ে গবেষনা করলাম দুজন.
একজনকে জিজ্ঞাসা করে আসল পথ পাওয়া গেলো. এখন কোথাও বসে একটু বিশ্রাম নেয়ার পালা. বসার জায়গা খুজতে গিয়ে এক বাঙ্গালীর দেখা পাওয়া গেলো যে যাচ্ছে একই পথে. মেয়েটির নাম ভুলে গেছি, তার স্বামী ঢাকায় গ্রামীণফোনে কর্মরত, সে হেলসিংকিতে তার চাচার কাছে থাকে, চাকরিও করে. দেশ থেকে ঘুরে এসেছে. কিছুদিন পর তার স্বামীও আসবে এমন আরো তথ্য. গায়ে পড়ে ভাব জমানোর চেষ্টা করতে যাবো- এমন চিন্তা আর বেশি দূর এগোলো না. পরে তার সাথে আর কোনোদিন দেখাও হয় নাই.
তো , যাই হোক, অনেক ক্ষণ ধরে মনজু ভাই ও আমি গোপনীয় জায়গা খুঁজতেছি, কিনন্তু বুঝে উঠতে পারছিলাম না ঠিক কোথায়. বাতাস খাওয়ার জন্য এখানে নির্দিষ্ট জায়গা আছে. সেটা খুঁজতেছিলাম. মেয়েটাকে ব্যাগ দেখতে বলে দুজন সেই কাজই করছি. ঘুরে ঘুরে অবশেষে পেয়ে দুজন মহাখুশি, ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্টের এক কোণে উপরে শেড দেয়া বেশ সুন্দর জায়গা. একটু খোলা হওয়ায় ভালো ঠান্ডাও লাগছিল. তো সেখানে গিয়ে বেনসন জ্বলে উঠলো. সাথে আরো অনেক বাতাস খাওয়ার জনগন সেখানে.
এরপর কিছু দোকান পাট অার বিশাল এয়ারপোর্ট দেখে পরের ফ্লাইটে চড়ার সময় এসে গেলো. চড়ে বসলাম টার্কিশ এয়ারের পরের ফ্লাইট টু হেলসিংকি. এসে পোঁছালাম ফিনল্যান্ড. এয়ারপোর্টে লাগেজ, বাক্স সব নিয়ে খুঁজতে লাগলাম দোকান, যেখানে পাওয়া যাবে সিম কার্ড, দেশে ফোন করে জানাতেই হবে যে ঠিকভাবে এসেছি. আমার চেয়ে মনজু ভাইর তাড়া যেন যেন সয় না. এখনই তার সিম কার্ড কিনতে হবে. ঠিক আছে এক দোকান পাওয়া গেলো. সেটা ৬ ইউরো দাম দিয়ে দুজন দুইটা কিনলাম. সাথে কিছু টকটাইম ফ্রি পাওয়া গেলো. বাসায় ফোন করে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গেলো. তবে কিছুক্ষণ মনজু ভাই বললো- এ কি বলে টাকা নাই. আসলে উনি যে ঘরের সবার সাথে একের পর এক কথা বলতেছিল তাতে এ অবস্থা হওয়ারই কথা.
মনজু ভাই তুরকু চলে যাবে, এয়ারপোর্ট থেকে সেখানে বাস যায়. আমি হেলসিংকি থাকবো কয়েকদিন. এরপর নিজের গন্তব্য. তো সে কারণে আমার অপেক্ষা সাজ্জাদ ভাইয়ের.
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪৬