সাকিবের কথা আমার বিশ্বাস হয়েছ। কিন্তু প্রথম আলোতে তারেক মাহমুদ সাকিবকে আসামির কাঠ গোড়ায় দাড় করিয়ে দিয়েছে।আপনাদের কি মনে হয়?
রিপোর্টটি নিচে হুবহু দেওয়া হলো-
কোনো তল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে কেন অমন কাঁটা কাঁটা কথা বলে গেলেন সাকিব আল হাসান? অধিনায়ক হিসেবে কোথায় একটু আগে হেরে যাওয়া দলের পাশে থাকবেন তা নয়, নিজেই সমালোচনার ছিপি খুলে দিলেন! একাদশ গড়া, দলের পারফরম্যান্স—সবকিছু নিয়েই তাঁর তীব্র কটাক্ষ!
কাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের দল নিয়ে অধিনায়ক নিজেই প্রশ্ন তোলায় যারপরনাই বিস্মিত নির্বাচকেরা। সাংবাদিকদের কাছ থেকে সংবাদ সম্মেলনের বিস্তারিত জেনে প্রধান নির্বাচক রফিকুল আলম ফোনে কথা বলেছেন সাকিবের সঙ্গে। তাতে তিনি একটু ‘আশ্বস্ত’ যে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আসলে গুরুতর কিছু বলেননি, ‘আমি সাকিবের সঙ্গে কথা বলেছি। ওর দাবি, টিমওয়ার্ক ভালো না হওয়ার কথাই নাকি বলেছে সংবাদ সম্মেলনে।’ কিন্তু এরপর যখন আরও একবার প্রসঙ্গ ধরে ধরে তাঁকে সাকিবের বক্তব্যগুলো জানানো হলো, প্রধান নির্বাচক দ্বিমত পোষণ করলেন, ‘১৫ জনের দল বা একাদশ নির্বাচনে সব সময়ই অধিনায়কের গুরুত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এবারও তাই হয়েছে। কোচ, অধিনায়ক সবার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষেই দল হয়েছে।’
বাংলাদেশে প্রায় তিন বছর কাটিয়ে দেওয়া জেমি সিডন্স বাংলা এতই সামান্য বোঝেন যে তা দিয়ে সাকিবের কথার মর্মোদ্ধার সম্ভব নয়। নয়তো কাল রাতে টেলিভিশনে অধিনায়কের কথা শুনে ভড়কে যেতে পারতেন কোচ। তা না গেলেও তিনি আকাশ থেকে পড়লেন টেলিফোনে এই প্রতিবেদকের কাছে ঘটনা শুনে। প্রধান নির্বাচকের মতো সিডন্সও সাকিবের অভিযোগটা নিলেন না, ‘দল নির্বাচনে আমি যেমন আমার মতামত দিই, অধিনায়ক হিসেবে সাকিবও তা দেয়। সে অবশ্যই দল নির্বাচনের অংশ। অধিনায়ক, আমি ও প্রধান নির্বাচক আলোচনার মাধ্যমে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেই এসব ক্ষেত্রে।’
সাকিব তাহলে কেন এমন বললেন? দলে দুজন ক্রিকেটারের অনুপস্থিতির কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে কেন বিব্রত করলেন অন্যদের! কোনো ব্যাখ্যা নেই এসবের। এমনকি সংবাদ সম্মেলন শেষে ড্রেসিংরুমে ফেরার পর তাঁর নিজের কাছেও নাকি মনে হয়েছে, যা বলে এসেছেন সবই ‘উল্টাপাল্টা’। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের এক ক্রিকেটার বলেছেন, ‘বুঝতে পারছি না কেন সে এভাবে বলল। হারার পর সাংবাদিকদের সামনে ক্যাপ্টেনের এভাবে বলাটা ঠিক হয়নি। কোনো ক্যাপ্টেন এটা করবে না। তবে ড্রেসিংরুমে ফিরে কিন্তু সে নিজেও আমাদের বলেছে, সংবাদ সম্মেলনে উল্টাপাল্টা বলে এসেছে।’ দলের আরেক ক্রিকেটারও দিলেন একই তথ্য, ‘সাকিব এসে বলল, “কী যে বলে এসেছি নিজেও জানি না। যা-তা বলেছি। আমি আগে কখনো এভাবে বলিনি। আজ আমার যাওয়াই (সংবাদ সম্মেলনে) উচিত হয়নি।” এই দুই ক্রিকেটারেরই ধারণা, পরাজয়ের পর অতিরিক্ত হতাশা থেকেই সাকিব অমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কিন্তু হতাশা-রাগে-দুঃখে তো মানুষের মন থেকে সে কথাই বেরিয়ে আসে, যেটা স্বাভাবিক মেজাজে প্রকাশ না করে থাকা গেলেও মনের মধ্যে তার বসবাস আসলেই থাকে! সাকিবের অভিযোগগুলো যদি সত্যি না-ই হয়, রাগের মাথায়ও তো ওসব কথা তাঁর বলার কথা নয়!
বিসিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় নিজেদের কাঁধেই নিচ্ছেন, ‘সাকিবকে এমন অন্যায়ের দিকে তো আমরাই ঠেলে দিয়েছি। অধিনায়ক হতে না চাইলে তাকে জোর করে অধিনায়ক করা কেন? তা ছাড়া গত বোর্ড সভাতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ১৫ জনের দলে থাকলে মাশরাফিই অধিনায়ক, সহ-অধিনায়ক আগের মতো সাকিবেরই থাকার কথা। সেটা কী করে বদলে গেল?’
জানা গেছে, আজ পুরো বিষয়টি নিয়ে সাকিবের সঙ্গে কথা বলবেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির প্রধান। সাকিবের মাঠের বাইরের ‘অধিনায়কত্ব’ দেখে কি আবারও সিদ্ধান্ত বদলাবেন তাঁরা?