আমি আর সিফাত হেঁটে যাচ্ছিলাম আর আমাদের জীবন ও যৌবনের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছিলাম।পূর্ণিমা আসন্ন, পরিষ্কার চাঁদের আলোর কারণে আমাদের কোন আলাদা টর্চলাইটের প্রয়োজন ছিল না । কেবল গল্পেই মশগুল ছিলাম, আমাদের অন্য কোনদিকে খেয়াল ছিল না।। হঠাৎ .....................আমরা দেখলাম রাস্তার উপর কেমন একটা জিনিস , আমরা ভাবলাম কোন ভ্রম হচ্ছে। নিজেদের সন্দেহটাকে দমাতে আমরা জিনিসটার আরও কাছে গেলাম। মাথা নিচু করতেই আমাদের চমকে দিয়ে জিনিসটা উঠে বসল । আশেপাশে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ ছাড়া কোন শব্দ ছিল না। চাঁদের আলো জিনিসটার আসল অবয়ব বোঝানোর জন্যে যথেষ্ট ছিল না। আমরা হঠাৎ লক্ষ্য করলাম ওটা আমাদের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে বলছে ‘ কী???’ আমি আর সিফাত কোনমতে প্রাণ হাতে নিয়ে ছুটে পালালাম। দৌড়ে ডরমের বারান্দায় আসতেই ওরা বলল, ওরা একটু আগে শুচিকে ওদিকটায় যেতে দেখেছে। ও নাকি শুয়ে শুয়ে চাঁদ দেখছিল। আমি কাহিনীর সত্যতা যাচাইয়ের জন্যে শুচির কাছে গেলাম। ও যা বলল তাতে আমার কাঁপুনি শুরু হল। ও বলল, ‘ ও নাকি ফেরার পর থেকে ওর রুমেই বসে আছে। ওর ভাই এসেছে দেখা করতে। ওখান থেকে সরবার ফুরসত পায় নি এক মুহূর্তের জন্যেও । তাহলে প্রশ্ন হল ‘ডরমের উঠোনে আমরা কাকে দেখেছি, কেই বা আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসল, আর বাকিরা যাকে ওদিকটায় যেতে দেখেছে সে আসলে কে ছিল ।’
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে যাচ্ছিল নির্ঝর , ওর বিধ্বস্ত চেহারা এর হিমশীতল কণ্ঠই বলে দিচ্ছিল ওর ভয় অমূলক নয় ।
হঠাৎ নোমান বলে উঠল , ‘ নিশ্চয়ই শুচি তোমার সাথে মজা করছিল।’
‘গত আড়াই বছরে শুচিকে আমি যা চিনেছি , এইসব বিষয় নিয়ে মজা করার মত মেয়ে ও না ।’ শুচিকে সকলেই বেশ ভাল করেই চিনে। তাই নির্ঝরের কথার সাথে অমত করবে এমন কেউ এখানে ছিল না।
আলাপ হচ্ছিল অশরীরী বস্তুর উপস্থিতি নিয়ে। অবস্থানস্থল; ডরমেটরী, রুম নং ২০৪ FIVDB খাদিম নগর, সিলেট। এই ডরমেটরী নাকি একসময় হাসপাতাল ছিল। নানা ধরণের অশরীরী বিষয়ের উপস্থিতি মালিককে বাধ্য করে হাসপাতালটি বেঁচে দিতে। শোনা কথাকে অস্বীকার করার উপায় নেই, প্রত্যেকটা রুমেই প্রমাণস্বরূপ রয়ে গেছে একটি করে হাসপাতালের বেড। অনেক কিছু শোনার পরও ব্যাপারগুলো নিয়ে আমরা হাসাহাসি করেছি। সন্ধ্যায় এখানকার কেয়ারটেকার আমাদের হাস্যরসে হস্তক্ষেপ করে বললেন, ‘ ভুতে একবার ধরলে কুন মুল্লাও পাওয়া যাইত’না ছাড়ানির লাইগা।’ খাস সিলেটী ভাষার টানে সেই কথাগুলো মাথায় ঘুরতে লাগল আর সাথে কিছু প্রশ্ন ...
-‘ বাথরুমের কল দিয়ে যে আয়রনের পানি পড়ে তা এত লাল কেন??’
-‘শুধুই রাতেই কেন পানির এ অবস্থা হয়? দিনে কেন পানি এত পরিষ্কার থাকে?’ এই ব্যাপারগুলো আর পাশ কাটানো গেল না।
ডরমেটরী, রুম নং ২০৪ FIVDB খাদিম নগর, সিলেট। বসে ছিলাম আমরা বেশ ক’জন। আমি , সুমি, রিনি, মালিহা,স্মিতা,সিল্ভিয়া , হিতৈষী, অস্মিতা অভি , রাকিব, নির্ঝর , নোমান , গালিব, আরশাদ আর আনন্দ ভাইয়া । নিজেদের মধ্যে চলমান ভয়গুলোকে আমরা খুব রেখেঢেকে কথা বলছিলাম। কিন্তু খুব বেশিক্ষণ আর গোপন করা গেল না।
..........................................
লাবনী নিঃসন্দেহে অসম্ভব সুন্দরী একটা মেয়ে । বিশেষ করে সে যখন তার জিহবাটাকে বিশ্রাম দিয়ে মৌনতা পালন করে তখন তাকে অপ্সরীর মত দেখায়। যদিও এ সৌভাগ্য আমাদের সচরাচর হয় না। কিন্তু এই প্রথম তার মৌনতা নিয়ে আমাদের মধ্যে বিশাল এক সংশয়, সমস্যা দেখা দিল। ওর বড় বড় চোখ দুটো দেখে মনে হল ঠিকরে মণি বের হয়ে আসবে।পলকহীন চোখের সাদা অংশটা রক্ত লাল হয়ে আছে। দেখতেই হিমশীতল হয়ে গেলাম আমরা। ও রুমের খানিকটা ভিতরে ঢুকে নোমানের সামনে দিয়ে এক চক্কর কেটে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। আমরা হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
পাড় হল কিছুক্ষণ ... খুব অল্পসময় ... বোধ হয় পাঁচ সাত মিনিট । লাবণী আবার আসল ... এসে নোমানের পাশে বসতেই উঠে দাঁড়াল ছেলেটা। রুম জুড়ে কেমন একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হল। নোমান , গালিবসহ অন্য ছেলেরা রুম ছাড়ল । আমরা মেয়েরা ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিলাম। ‘ ধুরু , ও ফাজলামি করছে। এই লাবণী ???’ আমরা একজন আরেকজনের সাথে বলাবলি করতে থাকলেও কোন জোর ছিল না , কথাগুলোতে । দশ পনের মিনিট পাড় হয়ে গেল... লাবণী এখনও পলকহীন ... দু’চোখের মণির আশপাশগুলো লাল হয়ে আছে ওর । ওর হাতপাগুলো স্থির ঠিক ওর মতই । বিশ মিনিট হয়ে গেল। লাবণী এখনও খাটে বসে আছে।
নাহ... এবার কিছু একটা করতে হয়। আমরা সবাই ঠিক করলাম রুম থেকে একসাথে বেড়িয়ে যাব । আমি , সুমি, রিনি, মালিহা,স্মিতা,সিল্ভিয়া , হিতৈষী, অস্মিতা। আমরা সবেমাত্র বের হলাম, হঠাৎ দেখি রুমের আলো নিভে গেল। আমরা আঁতকে উঠলাম। নাহ! লাবণির পক্ষে এতদূরে হাত দিয়ে লাইট নিভানো সম্ভব না। সুইচ-বোর্ড আর লাবণী রুমের দু’ প্রান্তে।
‘তাহলে??’ – সুমি আর্তনাদ করে উঠল
‘থাম তোরা , দেখতে দে ব্যাপারটা ।’ আমাদের কোন কথা শুনল না নির । ছেলেটা রুমের দরজার কাছে যেতেই কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখলাম মেঝেতে পড়ে আছে । ওর পুরো শরীরের অর্ধেকটা রুমের ভিতর, অর্ধেকটা দরজার বাহিরে। অকস্মাৎ , আমাদের চমকে দিয়ে রুমের ভিতর থেকে আর্তনাদ করতে করতে বেড়িয়ে এল রাকিব। কি আশ্চর্য !!!! আধঘণ্টার বেশি সময় ধরে আমরা ডরমের বারান্দায়, অথচ...... খেয়ালই করি নি যে, রাকিব আমাদের মাঝে নেই...। কি করছিল ও এতক্ষণ ওই অন্ধকার ঘরে ?? কোন সারা-শব্দ ছিল না কেন ওর ? হঠাৎ কি দেখেই বা এত চিৎকার করে উঠল ??? প্রশ্নের উত্তর পাবার সুযোগ হয় নি, বাইরে এসেই লুটিয়ে পড়ল রাকিব। ওর অজ্ঞান চেহারায় আমরা পানি ছিটাতে লাগলাম ।জ্ঞান ফিরতেই রাকিব পানি পানি বলে চিৎকার করে উঠল । আর বলতে লাগল ভিতরে কি হয়েছে এ নিয়ে ওকে যাতে জিগ্যেস না করা হয়। আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কি হচ্ছে এসব ।
ডরমেটরী, রুম নং ২০৪ FIVDB খাদিম নগর, সিলেট। আমরা ছিলাম ক’জন। এখন। রুমের বাহিরে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আশেপাশের মানুষ জড়ো হয়ে গেছে। কোন সমাধান ছিল না কারও কাছে। রুমের ভিতরটা অন্ধকার এখনো। আমরা অন্যান্যদের ঘটনাগুলো একের পর এক বর্ণনা করছিলাম। খেয়াল ছিল না রুমের দিকে হঠাৎ তাকিয়ে দেখি রুমের লাইট জ্বালানো , দরজার ঠিক মাঝামাঝিতে এতক্ষণ পড়ে থাকা নির্ঝরের নিথর শরীরটা খানিকবাদেই উঠে দাঁড়াল । আমরা ওর কাছে লাবণীর অবস্থা জানতে চাচ্ছিলাম। নাহ!!! আমাদের হতাশ করে দিয়ে নিরও বলে উঠল তাঁকে যেন কিছু জিগ্যেস করা না হয়।
পুরো রুম আলো হয়ে যাবার পর একটু সাহস আসল আমাদের মনে।আমাদের অনেক অনুরোধে নোমান গেল লাবণীর অবস্থা দেখতে। লাবণী এখনও পলকহীন .....................
দু’চোখের মণির আশপাশগুলো লাল হয়ে আছে ওর । প্রথম দিকে আমরা ভাবছিলাম এগুলো ওর ফাজলামি। নানাভাবে মানুষকে ভয় দেখিয়ে, বিরক্ত করেই লাবণীকে আনন্দ পেতে দেখেছি এতদিন। নোমান লাবণীর চোখে পানি দিল। একদম চোখের মণি বরাবর ।আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এবার বেশ জব্দ হবে মেয়েটা । আমাদের ভয় দেখানো ? চোখে পানি পড়বে ... পলক পড়ার সাথে সাথেই পাকড়াও করব ওকে? কিন্তু লাবণী..................এখনও পলকহীন ।
বিশ্বাস অবিশ্বাসের মাঝখানে ছিলাম আমি। বুঝছিলাম না কি হচ্ছে। অশরীরী ব্যাপারগুলো গল্পের বইয়ে যতটা বাস্তব, সামনা সামনি ততটাই হাস্যকর । একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। খুব সম্ভবত হিতৈষী আর অস্মিতারও একই অবস্থা ছিল । আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম শেষ একটা চেষ্টার ।
‘এই লাবণী অনেক হয়েছে। উঠ তো ! উঠ এবার। রাত দু’টা বাজে । আর মাথা গরম করাস না সবার। এবার বেশি হয়ে যাচ্ছে ।’
আমরা তিনজনই বলতে লাগলাম । আর অস্মিতা ওর গায়ে হাত দিয়ে আলতো ঝাঁকানি দিল।
‘কি!!!! কি বললি তুই! কি বললি আমাকে?’
এই দু’ ঘণ্টায় আমরা প্রথমবারের মত ওকে কথা বলতে দেখলাম। কথা বলল বললে ভুল হবে। ও হাত পা সর্বস্ব দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল অস্মিতার উপর তারপর আবার বসে পড়ল ঠিক সেই জায়গায় যেখানে ও বসে ছিল এতক্ষণ। আমরা অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে ছিলাম একবার ওর দিকে, আবার অস্মিতার হাতে সৃষ্টি হওয়া ঘা এর দিকে। মনে হচ্ছিল কোন বন্যপ্রাণীর আঁচড় ।
................................................
‘এই লাবনী আইসক্রিম খাবি?’
সিফাত এতক্ষণ ছিল না বলে কিনা জানি না, আমাদের আতঙ্কগ্রস্ত চেহারা, আশেপাশের পরিবেশ, রাকিব, নির্ঝরের অভিব্যক্তি কোনটাই ওকে স্পর্শ করল না। ও সোজা ২০৪ নম্বর রুমে ঢুকে বলতে লাগল , ‘ চল লাবনী আইসক্রিম খাবি।’
সিফাতকে ঘটনার তাৎপর্য না বুঝে আলগা ফাজলামি করার জন্যে আমি এক বস্তা গালি দিতে দিতে হঠাৎ লাবণীর ঠোঁটের দিকে লক্ষ্য করলাম। বহুক্ষণ পর ওর শরীরের কোন একটা অংশ হলেও নড়ছে ।আমি সিফাতের দিকে ইশারা করলাম ওর সাথে যেন কথা বলে।
‘ওই , হইসে উঠ উঠ উঠ ! শেষবারের মত বলছি ! এর জীবনেও কিন্তু আমার কাছ থেকে এই অফার পাবি না ।’
এরপরই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল লাবণী । হাসতে হাসতে অস্মিতাকে জড়িয়ে ধরে বলল , ‘ স্যরি দোস্ত , অস্মিতা ; ব্যাথা পাইসিশ??’
সর্বনাশ !!!! এতক্ষণ তাহলে নাটক চলছিল ???????
‘অভিনয়টা ভাল ছিল, নির ... সত্যি!!!’
‘সত্যি দ্বিতীয়া , তোর মনে হচ্ছিল আমি অভিনয় করছি??? এইসব ব্যাপার নিয়ে??? আমি তোর কাছ থেকে এটা আশা করি নি।’
আমি দ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম। ছেলেটা আমার সাথেও অভিনয় করছে কেন? হঠাৎ পিছনে ফিরতেই দেখি নোমান দাঁড়িয়ে আছে। ওহহো !!!! এই ঘটনা !!!
.................................
‘রাত ১২টা বাজে। আমি তাকিয়ে দেখলাম মেয়েটা সত্যি সত্যি কাঁদছে। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ ; গাল গড়িয়ে পানি পড়ছে , তার মানে গুরুগম্ভীর পর্যায়ের কান্না। মানে কি?? সিরিয়াসলি ??? যেই মেয়েটা কথাবার্তা ছাড়া আজকে বনে বাঁদাড়ে টইটই করে বেড়িয়েছে । লাউয়াছড়া বনে তড়তড় করে গাছে উঠে গেছে সেই মেয়েটা ভুতে ভয় পায় । ভুতে????
-অ্যাই সুমি, অ্যাই ! কাঁদতেছিস কেন ? ভয়ের কি আছে ? আরে অসীম তোকে মজা করে ভয় দেখাইসে , বুঝিস না তুই??
-তুই তোর বোরখা নামা।
(আমি ফ্যানের নিচে শুকোতে দেওয়া আমার বোরখার দিকে তাকিয়ে বললাম)
-আমার বোরখাতে কি সমস্যা??
-অন্ধকারে তোর বোরখা উড়তে দেখলে আমি ঘুমাতে পারব না।
আঃরে যন্ত্রণা ! আমি বোরখা ধুয়ে শুকাতে দিসি। অন্য কোথায় দিব??
-না নামা তুই নামা
আমি অবস্থা বেগতিক দেখে বোরখা আমার বালিশের পাশে মেলে দিলাম, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হতে লাগল ।’
ঘটনাগুলো আমি স্মিতাকে বলছিলাম। হঠাৎ ও বলে উঠল ‘ চলো আমরা নোমানকে ভয় দেখাই; নোমান নাকি অনেক ভয় পায়।’ সবার আগে সুমিই আনন্দে লাফিয়ে উঠল । অন্যের ভয়ে ঘায়েল হবার ব্যাপারটা অত্যন্ত নির্মম লাগলেও , অন্যকে ভয় দেখানোতে যে এক প্রকার পৈশাচিক আনন্দ আছে, বিষয়টা তাহলে অসত্য নয় । আমরা প্রবল উৎসাহে ডরমেটরীর দিকে হাঁটতে লাগলাম।
....................................
ডরমেটরী, রুম নং ২০৪ ; আমি একটু কাজে নিচে গিয়েছিলাম। ফিরে রুমটার দিকে উঁকি মারতেই দেখলাম ‘ গালিব এন্ড গ্যাং’ হাজির। বুঝলাম স্মিতা, হিতৈ এবং বান্ধবীরা তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে । কিছুক্ষণ পর রহস্যের গন্ধ পেয়ে আনন্দ ভাইয়া আর নির্ঝর আমাদের দলে যোগ হয়ে গেল । আমরা গালিব , নোমান আর আরশাদের কাছে নোমানের ভয় পাওয়ার গল্প শুনছিলাম। আমরা বসেছিলাম খুব এলোমেলোভাবে । আমার পাশে ছিল স্মিতা আর অস্মিতা । নোমান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে ভৌতিক বিষয়গুলো নিয়ে নানা ব্যাখ্যা দিচ্ছিল । হঠাৎ কোথা থেকে যেন ‘ নো......মাআআআআআআআআ...ন’ আঁতকে উঠল নোমান । চোখগুলো দেখে মনে হচ্ছিল ঠিকড়ে বের হয়ে আসবে। আমরা সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম । স্মিতাটা পারেও ...
স্ক্রিপ্টের শুরুটা ছিল খুব ছোট । সবাই নিত্যনতুন কাহিনী আর যার যার প্রতিভা দিয়ে স্ক্রিপ্টের বাহিরে অভিনয় করে কাহিনীকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে লাগল। এই যেমন আজকে সন্ধ্যায় ‘শুচির পূর্ণিমা-দর্শন’ বিভ্রাটে বিভ্রান্ত হবার কাহিনীটাকে নির মোটামোটি একটা অশরীরী ব্যাপার বানিয়ে ফেলল । আনন্দ ভাই অন্ধকারে তার ‘ পারফেক্ট কার্ল’ চুলের সৌজন্যে ছেলেটাকে মোটামোটি আধমরা বানিয়ে ফেলল ।
এমনকি এসব কাহিনীর পর নোমান যেই খাটটাতে বসতে খাটের পাটাতন উঁচু নিচু হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম আমাদের হয়ে খাটটাও অভিনয় করে দিচ্ছে।
আমরা ভয় দেখানোর ব্যাপারটায় ধীরে ধীরে ইতি আনতে আরম্ভ করলাম । হঠাৎ লাবণীর আবির্ভাব । আমাদের মাথার কিল্বিলানো বাঁদরটা বলে উঠল , ‘চলুক না আরও কিছুক্ষণ’ পিছন থেকে ইশারা করতে লাগলাম সবাই লাবণীকে ও যাতে কোন কথা না বলে । মেয়েটা চলে যেতেই পিছন পিছন হিতৈষী গিয়ে বুঝিয়ে আসল ওর দায়িত্বটা ; ওর ভাষায় ‘ আগুনে ঘি ঢেলে দিয়ে এসেছি ’
..........................................
আমার ঘনঘন চোখের পলক পড়ে , একদিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারি না, চোখে পানি পড়বার পরও চোখ খোলা রাখব??? না ভাই ! আমার পক্ষে সম্ভব না । যার পক্ষে সম্ভব সে নিঃসন্দেহে প্রতিভাবান । সুতরাং পুরো কাহিনীর অর্ধেক কৃতিত্বর দাবিদার লাবণী। স্ক্রিপ্টের বাহিরে অভিনয় করে ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্যে রাকিব , নির্ঝরের জন্যে অজস্র প্রশংসা । জল্পনা পরিকল্পনার শুরুর দিকে আমি ছিলাম না সেখানে। হঠাৎ যেয়ে দেখলাম 'নাটেরগুরু ' হিতৈ ক্লাসের ফার্স্ট বয় গালিবকে স্রিপ্ট বুঝাচ্ছে। আরো অবাক হলাম যখন শুনলাম মানুষকে ভয় দেখানোর ইনিংসে আমাদের এটা প্রথম হলেও গালিবের হ্যাটট্রিক চলছে ভদ্র এবং লক্ষ্মী টাইপ ছেলে অভি হঠাৎ করে নোমানের পিছন দিয়ে যেয়ে রুমের বাহিরের জানালা দিয়ে লাইটের সুইচবোর্ড নিয়ন্ত্রণে এনে প্রমাণ করে দিয়েছে ‘ ভাই!! আমি অতটাও ভদ্র নই।’