আগের পর্ব
শেয়ারবাজারে ভাল করতে হলে প্রথমে আপনার চিন্তাধারার মধ্যে ফান্ডামেন্টাল কিছু পরিবর্তণ আনতে হবে। আপনাকে 'গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের' প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
একটু মজা করলাম! আসল কথা হচ্ছে, আপনাকে এটা মেনে নিতে হবে যে, আপনি কি ভাবছেন, তথাকথিত বিশেষজ্ঞগণ কি ভাবছেন সেটা মোটেই ইমপরটেন্ট না বরং মার্কেট সম্মিলিত ভাবে কি ভাবছে সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই খেলার নিয়মকানুন অধিকাংশ খেলোয়াড় (বা প্রভাবশালী খেলোয়াড়বৃন্দ) মিলে যেটা ঠিক করবে সেই নিয়মের মধ্যেই আপনাকে খেলতে হবে।
উদাহরণ দেই। ইনসুরেন্স কোম্পানীগুলোর পিই রেশিও তো প্রায় আকাশে গিয়ে ঠেকেছে (বেশীরভাগই ৬০ এর উপর)। বিশেষজ্ঞরা বলেন পিই ৩০ এর উপর গেলে শেয়ার কেনা রিস্ক। কিন্তু মার্কেট যখন উঠতি ছিলো তখন ইনসুরেন্সের শেয়ারের দাম কি বাড়েনি? আর যখন মার্কেট ফল করেছে তখন এই সেক্টরের দাম কি অন্য সেক্টরের তুলনায় বেশী পড়েছে? প্রথম প্রশ্নের উত্তর যদি 'হ্যাঁ' আর দ্বিতীয়টার যদি 'না' হয় তবে ধরে নিন ইন্সুরেন্স সেক্টরের পিই ৬০ বা তার উপরে হবে এটা মার্কেট মেনে নিয়েছে এবং এর উপরেই আপনি খেলতে পারেন।
কোম্পানীর ফান্ডামেন্টাল ইনফরমেশন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ তবে তার চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ট্রেন্ড এনালাইসিস।
কখন কিনবেন, কখন ছাড়বেন আর কখন চুপ করে বসে থাকবেন
আইডিয়াল সিনারিও হচ্ছে (মানে আমরা যেটা চাই) গ্রাফের একেবারে বটমে থাকার সময় (দাম বাড়তে শুরু করার আগে) শেয়ার কেনা আর গ্রাফ একেবারে শীর্ষে যাওয়ার সময় (দাম কমতে শুরু করার আগে) শেয়ার বেচা। কিন্তু আমরা তো সৃষ্টিকর্তা নই যে সবকিছু আগেভাগে জেনে বসে থাকবো। তাই আমাদের জন্য নিরাপদ হচ্ছে ট্রেন্ড ফলো করা।
কোন শেয়ারের দাম পর পর ২ দিন (বা ৩ দিন) মার্কেট ইনডেক্সের চেয়ে বাড়লে সেটা কেনা যেতে পারে। ধরেন ইনডেক্স বাড়লো ২% আর আপনার কাংখিত শেয়ারের দাম বাড়লো ৫-৬%, তখন আপনি ঐ শেয়ারের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে দেখতে পারেন। ফান্ডামেন্টালস (ইপিএস, নেট এসেট ভ্যালু) কেমন? কোন নিউজ আছে কিনা? ইত্যাদি। যদি কোন কিছু খুঁজে না পান তাহলে ২টা জিনিস হতে পারে-
১. আসলেই হয়ত কোন নিউজ আছে যদিও আপনি সেটা জানেন না। যারা বেশী দামে শেয়ারটা কিনছে তারাও আপনার-আমার মতই জ্ঞানবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। কোন কারণ না থাকলে কি তারা শেয়ার কিনতো? উদাহরণ: এসআইবিএল এবং ইউসিবিএল দুটোরই রাইট এর ঘোষণা আছে। হঠাৎ যদি দেখেন এদের যে কোন একটার দাম লাফ দিয়ে বাড়া শুরু করেছে (পুরো মার্কেটের তুলনায়) তাহলে বুঝতে হবে এসইসি রাইটের এপ্রুভাল দিয়ে দিয়েছে।
২. গ্যাম্বলারদের কারসাজি চলছে
তবে সবচেয়ে বেশী খেয়াল করতে হবে সেই সব শেয়ার, যেগুলো মার্কেট ফল করার সময়ও বাড়ে। এনবিএলের কথাই ধরুন, গত ২০ তারিখের পর থেকে ইনডেক্স যাই হোক না কেন এনবিএলের দাম বেড়েছে।
একটা জিনিস মাথায় রাখবেন, এসইসি বলে একটা জিনিস আছে। কয়েকটা শেয়ারের দাম বাড়া এক জিনিস, আর পুরো মার্কেট ধেই ধেই করে বাড়া আরেক জিনিস। এরকম হলে এসইসি অবশ্যই কিছু না কিছু করে মার্কেটকে থামিয়ে দেবে। (গত ৭/৮ তারিখে যেমন ঘটেছিলো) মার্কেট ধেই ধেই করে বাড়ার সময় অবশ্যই কোন কিছু কেনা ঠিক হবেনা, সেটা যত লোভনীয় শেয়ারই হোক না কেন। একই ভাবে পড়তি ট্রেন্ডেও শেয়ার কেনা ঠিক নয়, পড়তে পড়তে একেবারে তলানিতে ঠেকুক, তারপর কিনবেন।
শেয়ার কেনার জন্য আরো কিছু নিয়ম আছে সেগুলো পরে আলাপ করার ইচ্ছা রইলো।
শেয়ার বিক্রির জন্যও একই রুল। পরপর ২ দিন বা ৩ দিন কমলে ঐ শেয়ার ধরে রাখার কোন মানে হয়না। সবচেয়ে বিপদজনক হলো মার্কেট বাড়ছে কিন্তু আপনার শেয়ার কমছে। আর পুরো মার্কেটই যদি পড়তে থাকে তাহলে ২/৩ দিন দেখে সব শেয়ারই ছেড়ে দেয়া ভাল। এখানে আমরা যেই ভুলটা করি আমরা কেনা দামের সাথে তুলনা করি। উদাহরণ দিয়ে বুঝাই। ধরা যাক আপনি এবি ব্যাংক কিনেছিলেন ১২০০ টাকায় অক্টোবর মাসে। ধরে নেই আগামী মার্চ-এপ্রিলে এই শেয়ার ২০০০ টাকায় যাবে। তাহলে সরল হিসাবে আপনার লাভ ৮০০ টাকা প্রতি শেয়ার। মাঝখানে এই শেয়ারের দাম ১৮০০ পর্যন্ত গেল, আপনি বুকে ধরে রাখলেন। না, ২০০০ গেলে তারপর বেচুম। তারপর দাম কমতে লাগলো ১৬০০, ১৫০০, ১৪০০ এমনকি ১৩৭৫ও হইছিলো। আপনি চোখ বন্ধ করে আছেন, কারণ আপনিতো এখনো লাভে, ১২০০ টাকায় কিনছেন। কিন্তু এটা কি সঠিক স্ট্র্যাটেজি?
একদম পিকে থাকা অবস্থায় প্রেডিক্ট করা সম্ভব না যে কাল থেকে দাম কমবে। কাজেই আপনি ১৮০০ টাকায় বেচবেন এই আশা আমি করিনা। কিন্তু কয়েকদিন পর যখন আপনি দেখলেন মার্কেট ক্রমাগত ফল করতেছে তখন ১৬০০ টাকায় আপনি বেচতে পারতেন। আপনার লাভ থাকতো ৪০০ টাকা। পরে ১৪০০ টাকায় আবার কিনে মার্চ-এপ্রিলে ২০০০ টাকায় বেচলে আপনার টোটাল লাভ হতো ১০০০ টাকা। মজার ব্যাপার হচ্ছে যারা ১৮০০ টাকায় কিনেছেন তাদেরও ১৬০০ টাকায় বেচা উচিত ছিলো কারণ তাহলে পরে ১৪০০ টাকায় আপনি আবার কিনতে পারতেন এবং আপনার লস কিছুটা কমতো।
তবে মার্কেট ধেই ধেই করে ফল করার সময় কখনো শেয়ার বেচবেন না। কারণ নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন। হ্যাঁ, আমাদের বন্ধু এসইসি সবসময় আমাদের পাশে আছে। সে কিছু একটা ব্যবস্থা নেবেই। তখন মার্কেট কিছুটা স্ট্যাবল হবে। যদি মার্কেট ফল করার সলিড কারণ থাকে (যেমন উচ্চ কলমানি রেট, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রেশার, বছর শেষে লাভ উঠিয়ে নেয়া) তাহলে এই স্ট্যাবিলিটি সাময়িক। মার্কেট আবার পড়বে। কাজেই এই সাময়িক স্ট্যাবিলিটির সময়টাতেই শেয়ার বেচে দিতে পারেন।
ভোলাটাইল মার্কেটে সব টাকা ক্যাশ করে চুপ করে মজা দেখাই বুদ্ধিমানের কাজ (তবে এনবিএলের মত কিছু শেয়ার যদি এর মধ্যেও বাড়ে সেটার কথা আলাদা)। মার্কেট স্ট্যাবল হতে দেন, ইনডেক্স পর পর কয়েকদিন উপরে উঠুক, তারপর বিসমিল্লাহ বলে আবার শুরু করেন।
নোট: আমি একেবারেই নতুন বিনিয়োগকারী। আমার অবজারভেশন বা শিক্ষাগুলোকে অব্যর্থ বা খুব নির্ভরযোগ্য মনে করার কোন কারণ নাই।