মাঝে ১ যুগেরও বেশী সময় কেটে গেছে, আমার আর শেয়ারবাজারে নামা হয়নি। প্রথম কারণ, আর্থিক ভাবে তেমন একটা সবল না হওয়া আর দ্বিতীয় কারণ '৯৬ এর মত আরেকটা ধ্বসের ভীতি। কিন্তু ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও শেয়ারবাজারে জড়িয়ে গেলাম ২০০৯ সালে যখন পিপিও তে কিছু শেয়ার পেলাম। এই শেয়ার বিক্রি করতে পারবো আরো ১ বছর পরে।তাই নিজের গরজেই অল্প অল্প করে খোঁজ খবর নিতে লাগলাম 'ষাঁড়ের লড়াই আর ভল্লুকের জ্বরের' এই বাজার সম্পর্কে।
২০১০ এর প্রথম দিকে ব্যাংক গুলো যখন ডিভিডেন্ট দিচ্ছিলো তখন একবার ভেবেছি কিছু শেয়ার কিনে রাখি। তারপর চিন্তা করলাম ডিভিডেন্টের নিউজের কারণে এমনিতেই দাম অনেক বেড়ে গেছে। এখন কিনলে কী আর লাভ হবে? আর ডিভিডেন্ড দেয়ার পর শেয়ারের দাম নিশ্চয়ই পড়ে যাবে। এইসব ভাবাভাবি করে শেয়ার আর কেনা হলোনা। অল্প কিছু টাকা তখন ছিলো হাতে, ব্যাংকেই পড়ে রইলো। (পরে অবশ্য বুঝতে পেরেছি চরম বোকামী হয়েছে!)
গত নভেম্বর থেকে আবার শেয়ারবাজার নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করলাম। তখন বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তথাকথিত বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই মন্তব্য করতেন শেয়ারবাজার অতি মূল্যায়িত, যে কোন সময় বাজার পড়ে যাবে। আর আমিও অপেক্ষায় থাকতাম, কখন বাজার পড়বে। কিন্তু সেই দিন আর আসেনা তাই একদিন একটা ব্যাংকের ২ টা লট কিনে নেমেই পড়লাম লোভ লালসার এই বাজারে।
খুব শিগগিরই বুঝলাম ভুল শেয়ার কিনেছি। যে ব্যাংকের শেয়ার কিনলাম তার ইপিএস বেশ খারাপ। তাই বেশ কিছুদিন পর সামান্য বাড়ার পর আর বাড়েনা। কিন্তু অন্য ব্যাংকের শেয়ারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিলো। তখন মনে হলো ইপিএস জিনিসটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের শেয়ারবাজার পিই রেশিও খুব একটা না মানলেও ইপিএস মোটামুটি মানে। প্রতিটা সেক্টারে, যে কোম্পানীর ইপিএস যত বেশী তার দামও তত বেশী (কিছু ব্যতিক্রম বাদে)।
তারপর আরেকটা জিনিস খেয়াল করলাম, কোম্পানী গুলো রাইট শেয়ার বা স্প্লীটের ঘোষণা দেয় সেটা বাস্তবায়ন হওয়ার বহু আগে। যেমন ইউসিবিএল রাইটের ঘোষণা দিলো মনে হয় নভেম্বরে। কিন্তু এরপর ইজিএম হবে, তারপর এসইসির অনুমোদনের ব্যাপার আছে। অর্থাৎ আপনার একাউন্টে রাইট শেয়ার যেতে আরো ৭/৮ মাস লাগবে। সত্যি সত্যি যদি রাইট শেয়ার খেতে চান তাহলে এত আগে শেয়ার কেনার কোন দরকার নাই। তবে শর্ট টাইমে লাভ করতে চাইলে কেনা যেতে পারে।
খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হচ্ছে এই বাজার কখনোই নরমাল পথে চলেনা। যখন মার্কেট খুব দ্রুত বাড়তে থাকে তখনি এসইসি কোন না কোন পদক্ষেপ নিয়ে বাজারের গতি থামিয়ে দেয় (মার্জিন লোন কমানো, চেক দিয়ে শেয়ার কেনা বন্ধ ইত্যাদি)। আবার যখন মার্কেট কোন কারণে দ্রুত পড়তে থাকে তখনও এসইসি তৎপর হয়ে যায়। কাজেই মার্কেটের অস্বাভাবিক গ্রোথের সময় শেয়ার কেনা বা অস্বাভাবিক পতনের সময় শেয়ার বেচা দুটোই বোকামী। কারণ আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন এসময় এসইসি কোন না কোন পদক্ষেপ নিবেই।
কোম্পানীগুলোর গ্রাফ বিশ্লেষণ করতে পারাও একটা দরকারী স্কীল। পত্রিকায় প্রাইস সেনসিটিভ ইনফরমেশন আসার অনেক আগেই কিন্তু বহু মানুষের কাছে সেই তথ্য চলে যায়। এবং তারা সেই তথ্যের মেরিট অনুযায়ী রিঅ্যাক্ট করা শুরু করে। আপাত:দৃষ্টিতে কোন কারণ ছাড়াই কোন শেয়ারের দাম বাড়তে থাকলে বুঝতে হবে এরকম কোন ইনফরমেশন আছে। একটু খোঁজ খবর নিলে ইনফরমেশন টা কি সেটাও জানা যেতে পারে।
নিয়মিত শেয়ারবাজার সম্পর্কে আপডেট থাকতে হলে কিছু ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করা জরুরী। তবে এক সাইটে সব কিছু পাওয়া যায়না বলেই আমার ধারণা। আমি মোট ৩টা ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করি।
http://stockbangladesh.com/symbols/sectorwise
নিউজ আর্কাইভের জন্য এই সাইট চমৎকার! সাথে গ্রাফটাও ভাল। খেয়াল করে দেখুন যে কোন গুরুত্বপূর্ণ নিউজ ঠিক কবে প্রকাশিত হয়েছে আর শেয়ারের দাম তার কত আগে থেকে বাড়তে শুরু করেছে। এই সাইটে ইপিএস সহ আরো নানা তথ্যও পাবেন।
http://biasl.net/CompanyInfo.aspx
শেয়ার বিক্রির ভলিউম দেখার জন্য এই সাইট বেশ ভাল। সারাদিনে কোন প্রাইসে কত ভলিউমে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হলো তা জানতে পারবেন। এখান থেকে একটা জেনারেল জিনিস শিখেছি, বিক্রী করা উচিৎ একেবারে ফার্স্ট আওয়ারে আর কেনা উচিৎ শেষ ঘন্টায় (সব সময় না অবশ্যই)।
http://www.bdstockprice.com/
যেকোন কোম্পানীর হিস্টোরিকাল প্রাইস জানার জন্য এটা একটা চমৎকার সাইট। গত বছরের শেয়ারের মুভমেন্ট আর এই বছরে শেয়ারের মুভমেন্ট এক্জাক্টলি একই হয়না কিন্তু কিছু কিছু প্যাটার্ন কিন্তু রিপিট হয়। যেমন ডিভিডেন্ড ঘোষণার আগে শেয়ারের দাম বাড়ে, রেকর্ড ডেট শেষ হয়ে গেলে কমে যায়। কোয়ার্টারের আয় ঘোষণা, রাইট শেয়ারের ঘোষণা ইত্যাদি ঘটনায়ও শেয়ারের দামের যে মুভমেন্ট হয়, পরবর্তীতেও কিন্তু সেটা রিপিট হবার সম্ভাবনা থাকে।
আগামী পর্বে শেয়ার কখন ধরে রাখতে হবে আর কখন ছেড়ে দিতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা রইলো।
নোটঃ আমি একেবারেই নবীন বিনিয়োগকারী, টাকা পয়সাও খুব কম। তাই অভিজ্ঞদের পরামর্শ আর আমার মত নবীনদের কাছ থেকে আরো আলোচনা আশা করছি।